নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি: অন্তর্জাল।
ইসলামে সময়ের গুরুত্ব ও নববর্ষ পালন নিয়ে কিছু কথা
২০২২ সাল। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে যোগ হয়েছে নতুন একটি বছর। নতুন একটি বছরে পদার্পন করেছি আমরা। আনন্দ নিয়ে নতুন এই বর্ষকে স্বাগত জানিয়েছে অনেকে। বস্তুত: সময়ের পরিক্রমায় বছর ঘুরে আবারও আসবে নতুন বছর। আবারও স্বাগত জানানো হবে আসন্ন সেই বছরগুলোকে। কিন্তু আমাদের আত্মোপলব্ধি, আত্মসমালোচনা এবং আত্মোন্নয়নের সময় কখন আসবে? নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর চেয়েও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তো আমরা অকপটেই ভুলে যাই এই সময়টা এলে। আমরা হয়তো ভুলে যাই যে, সময় মহান আল্লাহ তাআলার সেরা দান। শ্রেষ্ঠতম নেআমত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সময়ের সমষ্টিই আমাদের এই জীবন। মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, তাই সময়ের মূল্যায়ন করা অপরিহার্য। সময়ের আলোচনা পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন স্থানে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন,
وَالْعَصْرِ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ
‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত, কিন্তু তারা নয়; যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য ধারণে সহায়তা করে।’ -সুরা আসর, আয়াত: ১-৩
সময়ের হিসাবের নিমিত্তে আল্লাহ তাআলা চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন। কুরআনুল কারিমের বর্ণনা,
الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ بِحُسْبَانٍ
সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে। -সুরা আর রহমান, আয়াত ৫
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের মনজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ -সুরা: ১০ ইউনুস, আয়াত: ৫
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ
‘আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, ইহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনজিল; অবশেষে সেটি শুষ্ক বক্র পুরোনো খর্জুর শাখার আকার ধারণ করে।’ -সুরা: ৩৬ ইয়াসিন, আয়াত: ৩৮-৩৯
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ
‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী-পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস ১২টি।’ -সুরা: ৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬
নতুন বছরের আগমনের প্রাক্কালে চাই ফেলে আসা বছরটির মূল্যায়নে আত্মসমালোচনা:
নতুন বছর মানে নতুন দিনে পা রাখা। নতুন সূর্যোদয়ে নতুন দিনে প্রবেশ করা। নতুন সম্ভাবনার দ্বারে উপনীত হওয়া। আবার জীবনের নির্ধারিত হায়াত থেকে একটি বছর চলে যাওয়াও। অকল্যাণের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে কল্যাণের পথে ধাবিত হওয়ার শুভ যাত্রা শুরু করা। তাই নতুন বছর এলে শুধু আনন্দ উল্লাস নয়। শুধু ফুর্তিতে মেতে ওঠা নয়। এ সময়ে চাই ফেলে আসা পুরনো বছরটির মূল্যায়নে আত্মসমালোচনায় মগ্ন হওয়া। ফেলে আসা বছরটিতে কি কি কাজের অপূর্ণতা রয়ে গেছে তা হিসেব কষে সেগুলো সম্পাদনে মগ্ন এবং নিমগ্ন হওয়া। দরোজায় কড়া নাড়া নতুন বছরটি যাতে কল্যানকর হিসেবে ধরা দেয় সে জন্য মহান মালিকের কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে পাঠ করা যেতে পারে,
‘ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি ওয়াল আবছার, ইয়া মুদাব্বিরাল্লাইলি ওয়ান্নাহার; ইয়া মুহাওয়িলাল হাওলি ওয়াল আহওয়াল, হাওয়িল হালানা ইলা আহ্ছানিল হাল।’
অর্থাৎ ‘হে অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ পরিবর্তনকারী! হে রাত ও দিনের আবর্তনকারী! হে সময় ও অবস্থা বিবর্তনকারী! আমাদের অবস্থা ভালোর দিকে উন্নীত করুন।’ -আন নাহজুল বালাগা
যেহেতু নতুন বছরটিও নতুন একটি মাস দিয়েই শুরু হয় সেহেতু নতুন বছরের প্রথম মাসে সময় এবং মহাকালের মালিকের কাছে জানাতে পারি আবেগঘন আবেদন,
اَللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَ الْاِيْمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَ الْاِسْلَامِ وَ التَّوْفِيْقِ لِمَا تُحِبُّ وَ تَرْضَى رَبُّنَا وَ رَبُّكَ الله
‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমান, ওয়াছ ছালামাতিয়াল ইসলাম; রব্বি ওয়া রব্বুকাল্লাহ; হিলালু রুশদিন ওয়া খায়র।’
অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আপনি এই মাসকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, প্রশান্তি ও ইসলামসহযোগে আনয়ন করুন; আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। এ মাস সুপথ ও কল্যাণের।’ -তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৫১, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪০০
চাই অতীতের পাপরাশির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা ও ভবিষ্যতের উত্তম আমলের অঙ্গিকার:
অতীতের পাপরাশির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ও ভবিষ্যতে পাপকাজ না করার অঙ্গীকার হওয়া চাই নতুন বছরের প্রত্যাশা। কুরআনে হাকিমে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা,
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
‘আমি জিন ও মানুষকে আমার ইবাদত করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে সৃষ্টি করিনি।’ -সুরা জারিয়াত: ৫৬
আমাদের জীবন পরিচালিত করা চাই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অমোঘ এ ঘোষণাকে মাথায় রেখে। মনে রাখতে হবে আনন্দ-উৎসবে আল্লাহর অবাধ্যতা বাঞ্ছনীয় নয়, বরং আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমেই মুসলিমের আনন্দ নিহিত। মুসলিম জীবনের প্রতিটি কাজে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, তাদের ঈমান, আখিরাতের প্রতি অবিচল বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা।
নিজেকে পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত নেয়ার এটাই হোক মোক্ষম সময়:
সময়ের পরিক্রমায় দিন শেষে রাত আসে। রাত পোহালে আবার দিন। দিন, সপ্তাহ, মাস ঘুরে বছর আসে। নববর্ষ এই অনন্ত ধারাবাহিকতারই অংশ মাত্র। নববর্ষ হলো সময়ের একটি অংশ থেকে অন্য অংশে পদার্পণ। এটি হলো নিজেকে পরিবর্তন ও উন্নয়নের একটি সুযোগ। এ সময় উচিত জীবনের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া করা, হায়াতের জন্য দোয়া করা। অতীতের গুনাহ ও ভুলের জন্য তওবা–ইস্তিগফার বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা। কারও জান, মাল ও ইজ্জতের ক্ষতি করে থাকলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ও সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে নেক আমলের সংকল্প করা।
মুমিনের নওরোজ প্রতিদিনই:
ইমাম আযম আবু হানিফা (র.)-এর পিতা ছিলেন ছাবিত (র.)। এই ছাবিত র. কে পারস্যের নওরোজের দিনে হযরত আলী (রা.)-এর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ইমাম আযম আবু হানিফা (র.)-এর দাদা। সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন কিছু হাদিয়া, যা তিনি পেশ করেছিলেন আলী (রা.)-কে। মূলত: সেই হাদিয়াটি ছিল নওরোজ উপলক্ষে। তখন আলী (রা.) বলেছিলেন, ‘নওরোজুনা কুল্লা ইয়াওম।’
অর্থাৎ ‘আমাদের নওরোজ তো প্রতিদিনই।’
বস্তুত: মুমিন ব্যক্তি প্রতিদিনই তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নব উদ্যমে আখিরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে। -আখবারু আবি হানিফা র.
মুমিন ব্যক্তির প্রতিটি দিনই তার কাছে নতুন দিন। প্রতিদিনের প্রতিটি সূর্যোদয় তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান। ফেলে আসা দিনটির অর্জন নিয়ে সে ভাবে। আত্মসমালোচনায় মগ্ন হয়। ব্যর্থতা থেকে সে শিক্ষা নেয়। গ্লানিকর কিছু ঘটে থাকলে সে জন্য অনুশোচনায় অনুতপ্ত হয়। তাওবা ইসতিগফারে নত-বিনত হয়ে মহান মালিকের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে ক্ষমাপ্রার্থনায় মগ্ন-নিমগ্ন হয়। নতুন দিনটিতে তার পথচলায় আরও পরিশীলিত, আরও মার্জিত এবং আরও পরিচ্ছন্ন জীবনবোধের সংকল্প নেয়। সত্যালোকে জাগ্রত হতে সংকল্প নেয়। জীবনের ধারাবাহিকতায় প্রতিটি নতুন প্রভাতই তাকে আলোকের পথে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন:
চমৎকার মন্তব্য রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা অশেষ।
২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৯
জ্যাকেল বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। আমি আরেকবার এসে ভাল করে চোখ বুলিয়ে নেব ইনশা আল্লাহ।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন:
শুকরিয়া। জাজাকুমুল্লাহ।
৩| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ইমাম আবু হানিফা অবাধ্য লোক ছিলেন।
০৫ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৩৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনি দয়া করে ইমাম আবু হানিফা রহ. কে নিয়ে পূর্বে প্রকাশিত আমার এই লেখাটি একটু পড়ে দেখবেন-
ইমাম আবু হানিফা রহ. এর জীবন ও কর্ম এবং হাদিস ও ফাতাওয়ায় তার অবদান
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:০৩
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: গত (অতীতের) দিনের কাজের যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে আগামী (ভবিষ্যতের) দিনের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথনির্দেশনা পাওয়া যায়।
আর আত্মসমালোচনা মানুষকে সে পথেই চলতে সাহায্য করে। মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে অতীতের ভূল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত বির্নিমানে সাহায্য করুন।