নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

শা‘বান-রমযান: রহমত ও মাগফিরাতের মওসুম

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:২৭

শা‘বান-রমযান: রহমত ও মাগফিরাতের মওসুম

ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

দেখতে দেখতে শা'বান মাস আমাদের অতি নিকটবর্তী হয়েছে। হিজরি ১৪৪৬ সালের আজ ২৬ রজব, ইয়াওমুল ইসনাইন। ইসলামে শা‘বান ও রমযান মাস দুটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। এই মাসগুলোতে আল্লাহ তাআলার রহমত, মাগফিরাত এবং বরকতের ধারা অবিরাম প্রবাহিত হয়। শা‘বান মাস রমযানের প্রস্তুতির মাস এবং রমযান হলো আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। কুরআন ও হাদিসে এই মাসগুলোর গুরুত্ব অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শা‘বান: প্রস্তুতির মাস

শা’বান আরবী শব্দ। এর অর্থ বিস্তৃত হওয়া, চারদিকে ছড়িয়ে পড়া। এ মাস রহমত ছড়িয়ে পড়া বা বিস্তৃত হওয়ার মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীবাসীর উপর তাঁর বিশেষ রহমত বিস্তার করেন, এ কারণে এ মাসকে শা’বান মাস বলা হয়। রমযানের পূর্ব প্রস্তুতির মাস শা’বান। এটা ইবাদত-বন্দেগীর মাস। মূলতঃ রমজানুল মুবারকের পূর্ববর্তী মাস বলেই শা‘বান মাস ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রমযানের আগমনী বার্তা দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা‘বান মাসে অধিক নফল রোযা রাখতেন। হাদিসে এসেছে:

**عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ قَطُّ إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ فِي شَهْرٍ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ**

*“উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমযান ছাড়া আর কোনো পূর্ণ মাসে রোযা রাখতে দেখিনি। আর শা‘বান মাসের মতো অন্য কোনো মাসে তাকে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”* -সহিহ বুখারি: ১৯৬৯; সহিহ মুসলিম: ১১৫৬

শা‘বান মাস হলো এমন একটি সময়, যখন মুমিন রমযানের আত্মিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নেয়। এই মাসে ইবাদতের মাধ্যমে আত্মাকে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়।

মর্যাদাপূর্ণ শা'বান মাস

হাদীসে শা'বান মাসকে আমলের চারায় পানি সেচের মাস বলা হয়েছে। চারা গাছের সঠিক পরিচর্যা এবং পানি সেচ ছাড়া যেমন ভালো ও অধিক সফল পাওয়া অসম্ভব। তেমনি এ মাসে আমলের অনুশীলন ছাড়া রমযানে বেশি বেশি নেকী কামাই করাও কষ্টসাধ্য।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসের সম্বন্ধ তাঁর নিজের দিকে করেছেন। এতে এ মাসের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা, একটা নিয়ম আছে, যে জিনিসের সম্বন্ধ যত বড় ব্যক্তি ও অতি প্রিয়জনের প্রতি হয় তার মূল্য ততই বেড়ে যায়। হযরত উসমান রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শা’বানু শাহরী ওয়া রমযানু শাহরুল্লাহ......। অর্থাৎ, শা’বান মাস আমার মাস, আর রমযান হলো আল্লাহর মাস। সুতরাং, তোমরা শা’বানের চাঁদের সঠিকভাবে হিসাব রাখ। কেননা শা’বানের চাঁদের হিসাব সঠিক হলে রমযানের চাঁদের হিসাব সঠিক হতে সহায়ক হবে। -বাইহাকী

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমনিভাবে সমস্ত নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তেমনিভাবে এ মাসকে তাঁর দিকে নিসবত করার কারণে শাবান মাস রমযান ব্যতীত অন্যান্য সকল মাস থেকে শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম। শা’বানের ফযীলতের কারণেই বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য সব মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, শাবান মাসের রোযা আমার নিকট অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক প্রিয়। -ইবনে মাজাহ

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি শা’বান মাসে এত বেশি রোযা রাখেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ মাসে মালাকুল মাউত -এর নিকট ঐ সমস্ত লোকের তালিকা দেয়া হয় যারা এ বছর মারা যাবে। সুতরাং আমি চাই যে, আমার মৃত্যুর পরোয়ানাটা এমন সময় লেখা হোক যে সময় আমি রোযাদার। অপর হাদীসে আছে, তোমরা যেভাবে মৃত্যুবরণ করবে সেভাবে হাশরে উঠবে। আর তোমাদের মৃত্যু সেভাবে হবে যেভাবে তোমরা জীবন-যাপন করবে। -মিশকাত

শা‘বানের মধ্য রাত্রির ফজিলত

শা‘বানের ১৫তম রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতকেলাইলাতুল বরাতও বলা হয়। এটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ রাত। আল্লাহ তাআলা এই রাতে বান্দাদের প্রতি রহমত ও মাগফিরাত বর্ষণ করেন। হাদিসে এসেছে:

**إِنَّ اللَّهَ يَطَّلِعُ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ، إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ**

*“শা‘বানের মধ্য রাত্রিতে আল্লাহ তাআলা তার সমস্ত সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং তাদের সবাইকে ক্ষমা করেন, তবে মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত।”* -ইবনে মাজাহ: ১৩৯০

এই রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে বান্দারা নিজেদের পাপ থেকে মুক্তি পেতে পারে।

রমযান: রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস

রমযান মাস আল্লাহর বিশেষ রহমত ও বরকতের মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলা কুরআন নাজিল করেছেন, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত। কুরআনে এসেছে:

**شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًۭى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَـٰتٍۢ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِ**

*“রমযান হলো সেই মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের স্পষ্ট প্রমাণ।”* -সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৫

এই মাস তিনটি ভাগে বিভক্ত: প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

**أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ**

*“রমযানের প্রথম অংশ হলো রহমত, মধ্যভাগ হলো মাগফিরাত এবং শেষাংশ হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি।”* -বায়হাকি: ৩৪৩৮

সাওম (রোযা): তাকওয়ার শিক্ষা

রমযানের মূল ইবাদত হলো রোযা। রোযার মাধ্যমে মুমিন তার আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং তাকওয়া অর্জন করে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

**يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ**

*“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।”* -সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩

রোযা মানুষকে ধৈর্যশীল হতে শেখায় এবং আল্লাহর প্রতি বিনম্র বান্দা হতে উদ্বুদ্ধ করে।

কুরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ

রমযানে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

তাহাজ্জুদ নামাজও এই মাসে বিশেষ গুরুত্ব পায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

**مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ**

*“যে ব্যক্তি রমযানে ইমান ও সওয়াবের প্রত্যাশায় তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”* -সহিহ বুখারি: ২০০৯; সহিহ মুসলিম: ৭৬০

লাইলাতুল কদর: হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ

রমযানের শেষ দশকের অন্যতম একটি ফজিলতপূর্ণ রাত হলো লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা বলেন:

**لَيْلَةُ ٱلْقَدْرِ خَيْرٌۭ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ**

*“লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।”* -সূরা আল-কদর, আয়াত: ৩

এই রাতে ইবাদতকারী আল্লাহর অপার রহমত ও ক্ষমা লাভ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

**مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ**

*“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ইমানের সাথে সওয়াবের প্রত্যাশায় ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”* -সহিহ বুখারি: ১৯১০

রমযানের শেষাংশ: তাকওয়ার পূর্ণতা

রমযানের শেষ দশকে ইতিকাফ একটি বিশেষ ইবাদত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন এবং আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। ইতিকাফের মাধ্যমে মুমিন আল্লাহর নৈকট্য লাভে নিজেকে নিবেদন করে।

উপসংহার

শা‘বান ও রমযান মাস আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসগুলোতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ অবারিত। মুমিনের উচিত শা‘বান মাসে রমযানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া এবং রমযানে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে শা‘বান ও রমযানের ফজিলত থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানু্ল মুবারক সন্নিকটবর্তী এ সময়টিতে বিশেষ যে প্রার্থনাটি করতেন, আমরাও একই ফরিয়াদ জানাই রব্বে কারিমের কাছে-

**اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبَ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ**

*“হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শা‘বান মাসকে বরকতময় করুন এবং আমাদের রমযান পর্যন্ত পৌঁছানোর তাওফিক দিন।”* -মুসনাদে আহমাদ: ২৩৪৬৪

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমল আর ফজিলত মুসলমানদের অলস করে তুলছে।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ইয়া রব তোমার ইবাদত সঠিকভাবে পালনের তৌফিক দান কর আমাদের

জাজাকাল্লাহ খইর

৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
রাজীব ভাই ,

অলস ব্যক্তিরা কখনো প্রতিদিন ফজরে ঘুব থেকে উঠে না।
বাদ বাঁকি না হয় বাদই দিলাম।

৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১১

জটিল ভাই বলেছেন:
আল্লাহ্ সবাইকে কবুল করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.