![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
রমজানের বিদায়: ভারাক্রান্ত্র হৃদয়ের অশ্রুসিক্ত অনুভূতি ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।
দেখতে দেখতে রমজানুল মোবারক বিদায়ের পথে। এই পবিত্র মাস আমাদের জীবনে আসে অনিঃশেষ শান্তি, আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অপার সুযোগ নিয়ে। কিন্তু যখনই রমজানের শেষের দিকে পা রাখি, মন কেন যেন ক্রমশ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এই ভারাক্রান্ত হওয়ার কারণ শুধুই রমজানের বিদায় নয়, বরং এই মাসের মাধ্যমে পাওয়া আত্মিক প্রশান্তি, ইবাদতের মিষ্টি স্বাদ এবং আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরে যাওয়ার আশঙ্কা।
রমজানের শেষে এই ভারাক্রান্ত অনুভূতির কারণ হলো, আমরা জানি না এই মাসের মতো আরেকটি পবিত্র সময় আবারও আমাদের জীবনে ফিরে আসবে কিনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"رَمَضَانُ شَهْرٌ أَوَّلُهُ رَحْمَةٌ، وَأَوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ، وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ"
(রমজান এমন একটি মাস, যার শুরুটা রহমত, মাঝখানটা মাগফিরাত এবং শেষটা জাহান্নাম থেকে মুক্তি।)
এই হাদিসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, রমজানের শেষ দিনগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত ও ক্ষমার সুযোগ। কিন্তু এই সুযোগ কি আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পেরেছি? এই প্রশ্নই আমাদের হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে তোলে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
"يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ"
(হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।) -সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩
এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, রমজানের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। কিন্তু রমজান শেষ হওয়ার পরও কি আমরা এই তাকওয়া ধরে রাখতে পারব? এই চিন্তাই আমাদের মনকে ভারাক্রান্ত করে।
রমজানের শেষ দিনগুলোতে আমাদের উচিত বেশি বেশি ইস্তেগফার করা, নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা এবং গুনাহ থেকে তাওবা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
"مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ"
(যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমজানের রাতে ইবাদত করে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।)
এই হাদিস আমাদের উৎসাহ দেয় যে, রমজানের শেষ মুহূর্তগুলোও আমাদের জন্য ক্ষমা ও মুক্তির সুযোগ।
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
**"وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ ۖ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ"**
(আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আমি তো নিকটেই আছি। আমি ডাকনেওয়ালার ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তাদের উচিত আমার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা সঠিক পথ পায়।) -সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৬
এই আয়াত আমাদেরকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার করার প্রেরণা দেয়।
রমজানের বিদায় আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এই পৃথিবীর সবকিছুরই একটি শেষ আছে। রমজানের মতো পবিত্র সময়ও আমাদের জীবনে সাময়িক। কিন্তু এর শিক্ষা ও প্রভাব আমাদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে রমজানের শেষ দিনগুলোকে যথাযথভাবে ইবাদত ও তাওবার মাধ্যমে কাটানোর তাওফিক দিন। আমিন।
রমজান আমাদেরকে শেখায় ধৈর্য, সংযম এবং মানবিকতা। এই মাসে আমরা নিজেদের ভুলত্রুটিগুলোকে সংশোধন করার চেষ্টা করি, আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং নিজেদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি। কিন্তু রমজানের শেষের দিকে এসে মনে হয়, এই সুযোগ কি আবার পাবো? এই রহমত, মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস কি আবার ফিরে আসবে আমাদের জীবনে?
রমজানের শেষের দিনগুলোতে মন কাঁদে। কাঁদে এই ভেবে যে, এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি? এই মাসের বরকত, ইবাদত এবং তাওবার সুযোগকে কি পুরোপুরি গ্রহণ করতে পেরেছি? এই প্রশ্নগুলো মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। কিন্তু এই ভারাক্রান্ত হওয়ার মধ্যেও রয়েছে এক গভীর আন্তরিকতা। রমজানের শেষে আমরা আল্লাহর দরবারে হাত তুলি, প্রার্থনা করি যেন এই মাসের বরকত আমাদের জীবনে স্থায়ী হয়, যেন আমরা এই মাসে অর্জিত তাকওয়া এবং আত্মিক উন্নতিকে ধরে রাখতে পারি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন,
**"الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ"**
(পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।)
এই হাদিস আমাদেরকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার এবং ছোট গুনাহগুলোর জন্য তাওবা করার তাগিদ দেয়।
রমজানের বিদায় আমাদেরকে নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে। প্রতিজ্ঞা করি, রমজানের শিক্ষাকে ধারণ করে চলবো, আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা অব্যাহত রাখবো এবং মানবিকতা ও সংযমের পথে অটুট থাকবো। রমজানের বিদায় যেন আমাদের জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়, যেখানে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অবিচল থাকি।
রমজানের শেষের এই মুহূর্তগুলো হৃদয়ে এক গভীর আবেগের সৃষ্টি করে। এই আবেগ আমাদেরকে আল্লাহর দিকে আরও নিকটবর্তী করে, আমাদের অন্তরকে আরও কোমল করে। রমজানের বিদায় যেন আমাদেরকে নতুন করে চিন্তা করতে শেখায়, নতুন করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার প্রেরণা জোগায়।
রমজানুল মোবারকের বিদায় আমাদের হৃদয়ে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে, কিন্তু এই শূন্যতা যেন আমাদেরকে আল্লাহর পথে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি দেয়। আসুন, রমজানের শেষের এই মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগাই, আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং এই মাসের বরকতকে আমাদের জীবনে ধরে রাখার চেষ্টা করি।
রমজানের বিদায়ে রমজানের শিক্ষা ও প্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে যেন আমাদের জীবনে নতুন এক সুন্দর অধ্যায়ের শুরু হয়। আমীন।
২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৭
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার মন্তব্যে সত্যিই গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। আপনি সঠিক বলেছেন। রমজান মাসে শান্তি, রহমত ও ক্ষমার বার্তা আসলেও, ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘটনা হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। এই ধরনের নৃশংসতা সত্যিই অপ্রত্যাশিত এবং আমাদের মর্মাহত করে তোলে। ফিলিস্তিনিরা প্রায় প্রতি বছর রমজান মাসে এমন অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকেন, যা সবার জন্যই একটি বড় দুঃখজনক বিষয়।
আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি, আল্লাহ যেন তাদেরকে সহ্যশক্তি ও শান্তি দান করেন, এবং তাদের এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ সুগম হয়। একে অপরের জন্য সহানুভূতি ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে, আমাদের দায়িত্ব হল এই বিষয়গুলোর প্রতি সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং শান্তির পক্ষে কাজ করা। ঈমানের শক্তি ও আন্তরিকতা নিয়ে আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করতে থাকা, যেন তাদের দুর্ভোগ কমে যায়।
ইনশাআল্লাহ, একদিন শান্তি ফিরে আসবে।
২| ২১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭
কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: আরো একটি রমজান চোখের নিমিষেই শেষ হয়ে গেল, বুঝতেই পারলাম না। আল্লাহ সবাইকে মাফ করুন।
২১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৬
নতুন নকিব বলেছেন:
এটাই রমজানের সৌন্দর্য, সময় যেন দ্রুত চলে যায়, তবে এর শিক্ষা ও রহমত আমাদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের আমলগুলো কবুল করুন। রমজানের মাসের পরও যেন আমরা তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে ভালো কাজের পথে চলতে পারি। আমিন।
৩| ২২ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: যাক। রমজান যাক।
২২ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৫
নতুন নকিব বলেছেন:
রমজান চলে গেলে আপনারও তো লস! পেটপুরে ইফতার তো আর খেতে পাবেন না।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: সবই মোটামুটি ঠিক ভাবে চলছিল।কিন্তু রোজার মাসে নিরীহ ফিলিস্তিনি দের উপর হামলার ঘটনায় পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছি। প্রতি বছর রমজান মাসেই এমন ঘটনা ঘটে৷