![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ট্র্যাজেডি: এই জাতি সত্যিকারের মানুষ হবে কবে? জনবহুল ঢাকার রাতের ছবিটি উইকি থেকে নেওয়া।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ট্র্যাজেডি আজ আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমরা শোকাহত, আমরা বাকরুদ্ধ। আমাদের চোখের সামনে একদল নিষ্পাপ শিশুর প্রান ঝরে গেছে। আকাশ থেকে ভেঙ্গে পড়া বিমানের ভয়াবহ আঘাতে। যে শিশুরা স্কুলে গিয়েছিল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে, তাদের আর ফেরা হলো না। গোটা জাতি আজ শোকাচ্ছন্ন, কিন্তু এই শোক কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে — সেটাই বড় প্রশ্ন। এই শোক থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা নিজেদের পরবর্তী দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে সঠিক পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগী হব?
আসলে আমরা এমন এক জাতি, যারা প্রতিটি দুর্ঘটনার পরে কিছুদিন শোক পালন করি, কিছুদিন আবেগ প্রকাশ করি, তারপর সব ভুলে যাই। একেকটি দুর্ঘটনার পরপরই টিভিতে বিশেষ আয়োজন হয়, পত্রিকায় ‘বিশ্লেষণধর্মী’ প্রতিবেদন ছাপা হয়, কখনো কখনো কালো ব্যাজ পরে শ্রদ্ধা জানানো হয় — তারপর? তারপর আবার স্বাভাবিক জীবন। একটা সময় সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। পুরনো হয়ে যায়। তখন কেউ আর জানতে চায় না, তদন্ত হলো কি না, দোষী শাস্তি পেলো কি না, নাকি আবার ফাইলটা ধুলোমাখা টেবিলের নিচে হারিয়ে গেলো।
এই দুর্ঘটনার পর যেসব প্রশ্ন উঠে এসেছে — সেগুলো কি শুধুই আবেগের বশে বলা? একটুও না। বরং প্রতিটি প্রশ্ন রাষ্ট্রের গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা আর দায়িত্বহীনতার স্পষ্ট দলিল। এত বছরের পুরনো বিমান এখনো কীভাবে আকাশে উড়ছে? প্রশিক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাতিলপ্রায় প্রযুক্তি ব্যবহার করার সাহস কে দেয়? বিমানটির ফিটনেস সার্টিফিকেট কে দিয়েছে? কে যাচাই করেছে? সেটি কি নিয়মমাফিক হয়েছিল, নাকি বরাবরের মতো চোখ বন্ধ করে সই পড়ে গেছে? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — জনবহুল আবাসিক এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান ওড়ানোর অনুমতি কে দিলো? কেন দিল? ঢাকার বাইরে কি ফাঁকা আকাশ নেই?
আমরা জানি, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের দেওয়া হবে না। আমাদের বলা হবে — ‘তদন্ত চলছে’। আমাদের অভিজ্ঞতা বলে, এই ‘তদন্ত’ মানেই চেপে যাওয়া, ধামাচাপা দেওয়া, এবং কালের গর্ভে হারিয়ে ফেলা। কিছুদিন পর আমরা শুনবো — “কারিগরি ত্রুটি ছিল”, কিংবা “প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে।” আর যদি খুব বেশি চাপে পড়ে যায় কর্তৃপক্ষ, তাহলে বড়জোর একজন মাঝারি স্তরের কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে দায় সারার আয়োজন করা হবে। অবশ্য, সেই ব্যক্তি যে কয়েক মাস পরেই প্রমোশনসহ আবার ফিরবেন আগের দায়িত্বে — সেটা নিশ্চিতভাবেই ধরে নেওয়া যায়।
এটা নতুন কিছু নয়। বরং নৈমিত্তিক এক চিত্র। প্রশ্ন হলো — কতবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে আমাদের টনক নড়বে? আর কত শিশু মরলে, আর কত ট্র্যাজেডি ঘটলে আমরা আসলেই নড়েচড়ে বসবো? কত মানুষের জীবন গেলে আমরা আমাদের সিস্টেমকে গোড়া থেকে সংস্কার করতে সচেষ্ট হব? ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের এই দেশের সবকিছু কেন ঢাকা-কেন্দ্রিক হতে হবে? কেন আমরা অন্য বিভাগ বা জেলা নিয়ে ভাবতে পারি না? এই একমুখী, একচোখা এবং প্রতিবন্ধী চিন্তা থেকে আমরা কবে মুক্ত হব?
এবার একটু ভিন্ন এক সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে — মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছে, প্রতিবাদ করছে। কিন্তু এই প্রতিবাদ যদি সুশৃঙ্খল হয়, সংগঠিত হয়, আইন প্রণেতা মহোদয়গণসহ সুশীল সমাজ এবং দেশের কর্তা ব্যক্তিদের বিবেকের দরজায় ধাক্কা দেয় — তবেই কোনো পরিবর্তনের আশা করা যায়। নইলে এই ক্ষোভও এক সময় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ আর ফেসবুকের টাইমলাইনে হারিয়ে যাবে। আমরা হয়তো আবার নতুন কোনো ট্র্যাজেডির অপেক্ষায় থাকবো — প্রতিবাদ করার নতুন কোনো উপলক্ষে।
এই দুর্ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় — রাষ্ট্রের ভেতরে দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার কতটা অভাব। রাষ্ট্র যেন প্রশ্ন শুনলেই ভয় পায়। জনগণ যখন জবাব চায়, তখন রাষ্ট্র তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। বলা হয় — “এটা সেনাবাহিনীর বিষয়, কথা বলার অধিকার নেই”, কিংবা “এটা জাতীয় নিরাপত্তা, কথা বললেই রাষ্ট্রবিরোধী তকমা জুটবে।” কিন্তু আমাদের ভুলে গেলে চলবে না — এই রাষ্ট্র জনগণের টাকায় চলে, নৌ, সেনা, বিমান - এইসব বাহিনীর অস্তিত্বও জনগণের কল্যাণেই হওয়া উচিত। তাহলে জনগণ প্রশ্ন তুলবে না কেন? প্রশ্ন করলেই কি রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে যায়?
দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো, এই প্রশ্ন তুললেই আপনাকে 'দেশবিরোধী', 'উস্কানিদাতা' বা 'অপপ্রচারকারী' বানিয়ে দেওয়া হয়। যেন সত্যের চেয়ে ভয়ই বড় হয়ে উঠেছে। অথচ রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শক্তি হওয়া উচিত — সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস। এই সাহস যদি রাষ্ট্র না দেখায়, তবে দুর্ঘটনা হবে। বারবার হবে। হতেই থাকবে। সুশৃঙ্খল আধুনিক রাষ্ট্রের জন্য জবাবদিহিতা অপরিহার্য্য এবং অনস্বীকার্য। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বিপদ সংকুল দুর্বিসহ দুর্বিনীত জিঘাংসায় ঘেরা ফ্যাসিবাদ।
তবুও সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। যদি মানুষ সচেতন হয়, লেখকরা কলম ধরেন, সাংবাদিকরা সত্য খোঁজেন, জনপ্রতিনিধিরা দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে জবাবদিহি দাবি করেন — তাহলে কিছু পরিবর্তন আসতে বাধ্য। তখন হয়তো কোনো মায়ের মুখে আর শোনা যাবে না — “আমার ছেলে স্কুলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।”
আমরা যারা লিখি, প্রশ্ন তুলি, ভাবি — আমাদের কাজ কেবল আবেগে ভেসে যাওয়া নয়। আমাদের দায়িত্ব সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানো। আমাদের কাজ প্রশ্নকে তীক্ষ্ণ করা। যেন রাষ্ট্র বুঝতে পারে — এই জাতি আর চুপ করে থাকবে না। এই শিশুদের মৃত্যু যেন কেবল শোকের কারণ না হয় — তারা হয়ে উঠুক আমাদের বিবেকের জাগরণ। আমরা যেন আর কখনও না বলি, “সব ভুলে গেছি।” বরং বুক উঁচিয়ে বলতে পারি, “এই ভুল আমরা আর কখনও হতে দেব না।”
২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৫৬
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি ঠিকই বলেছেন, রাষ্ট্রের টাকায় শুধু পিতার মূর্তি বানানোই নয়, জন্ম শতবর্ষ পালনের নামে বছর জুড়ে কোটি কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করা অতিব জরুরি ছিল। আধুনিক প্রশিক্ষণ বিমান ক্রয় করে পাইলটদের জীবন ঝুঁকিমুক্ত করা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ই ছিল না।
২| ২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১১:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আমাদের মানসিকতা হচ্ছে কারো কাঁধে দোষ চাপিয়ে দেওয়া।
মন্দের ভালো হলেও আওয়ামীলীগ ভালো।
আমাদের দেশে আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য কোনো হাসপাতাল ছিলো না। শেখ হাসিনা একটা বিশাল বার্ন হাসপাতাল করেছেন।
২৪ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৪
নতুন নকিব বলেছেন:
ভালোই বলেছেন। ধন্যবাদ। তবে হাসিনা শুধু মন্দেরই ভালো নয়। হাসিনা হচ্ছেন মন্দের মন্দ। জঘন্যতম খুনি। গুমকারী। টাকা পাচারকারী। ব্যাংক লুটপাটের হোতা। মাফিয়া সময়্রাজ্ঞী। ভিনদেশের তাবেদার। ধর্মের লেবাসে নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট মানসিকতার ক্ষমতা লোভী।
৩| ২৬ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ২:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
২৬ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:০১
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার আগের মন্তব্যের উত্তরটা পড়েছেন?
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ১০:৩৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: তাদের পিতার মূর্তি বানানো, তাকে নিয়ে শতবর্ষ পালনে যে টাকা খরচ করেছে তা দিয়ে নতুন প্রশিক্ষন বিমান কেনা যেত।