| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
নতুন নকিব
	যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
মহানবী (সা.)-এর যুগে লবণ উৎপাদন ও পরিচ্ছন্নতার উপকরণসমূহ
 ছবি, এআই দিয়ে তৈরিকৃত।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ এখন থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বের। সেই সময়ে আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির ছোঁয়া ছিল না বললেই চলে। দৈনন্দিন জীবনের অত্যাবশ্যকীয় অনেক উপকরণই তখনকার মানুষের কাছে এখনকার মতো সহজলভ্য ছিল না। তবু প্রকৃতির দানকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতেন। রান্নায় লবণ কীভাবে তৈরি হতো? কাপড় চোপড় ধোয়া বা শরীর পরিষ্কার করতেই বা তারা কী ব্যবহার করতেন? এসব প্রশ্ন অনেকের মনেই উঁকি দেয়। আজ আমরা ঐতিহাসিক সূত্র, হাদিস ও কুরআনের আলোকে এর উত্তর খুঁজে নেব। এই জ্ঞান শুধু ইতিহাস নয়, বরং ইসলামী জীবনধারার সরলতা ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শিক্ষাও বহন করে।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে (৫৭০-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) আরব উপদ্বীপ মূলত বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। এ অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান লোহিত সাগর, পারস্য উপসাগর, মরুভূমি ও পাহাড়ি এলাকা প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার ছিল। সমাজ ছিল বেদুঈন (যাযাবর), কৃষিভিত্তিক (তায়েফের মতো উর্বর অঞ্চল) ও বাণিজ্যনির্ভর (মক্কার কুরাইশ বণিকরা)। আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকলেও তারা সূর্যের তাপ, সমুদ্রের জল, উদ্ভিদের গুণ ও বাণিজ্যপথের সুবিধা কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতেন। নিম্নে লবণ উৎপাদন এবং পরিচ্ছন্নতার উপকরণসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো, যা হাদিস, কুরআন ও বিশ্বস্ত ঐতিহাসিক সূত্রের আলোকে গ্রন্থিত।
১. লবণের উৎপাদন ও সংগ্রহ
লবণ ছিল রান্না, খাদ্য সংরক্ষণ (যেমন মাংস শুকানো বা লবণাক্ত করে রাখা), চিকিৎসা (ক্ষত পরিষ্কার) এবং বাণিজ্যের অপরিহার্য একটি উপাদান। বলা বাহুল্য, এটি খাদ্যের স্বাদ বাড়াতো এবং দীর্ঘদিন সংরক্ষণে সাহায্য করতো। আরব উপদ্বীপে লবণের প্রধান উৎস ছিল সমুদ্র, লবণাক্ত হ্রদ, খনি ও বাণিজ্যপথ। আধুনিক কারখানা না থাকলেও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লবণ সংগ্রহ করা হতো, যা পরিবেশবান্ধব ও টেকসই ছিল।
সমুদ্র থেকে বাষ্পীভবন পদ্ধতি: লোহিত সাগর বা পারস্য উপসাগরের উপকূলে অগভীর খাত বা পুকুর খনন করে সমুদ্রের জল ভর্তি করা হতো। সূর্যের প্রখর তাপে জল বাষ্পীভূত হলে লবণের সাদা স্ফটিক জমা পড়তো। এগুলো সংগ্রহ করে বাঁশ নির্মিত বা অন্য কোন ঝুড়ি বা পাত্রে রেখে শুকিয়ে নেওয়া হতো। এ পদ্ধতি প্রাচীন মিশরীয় ও ফিনিশিয়ান সভ্যতা থেকে আরবে প্রচলিত হয়েছিল। মক্কা ও মদিনার বাণিজ্যিক কাফেলা এ লবণ বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করতো, যা তৎকালীন আরবের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল [১]।
লবণ খনি ও হ্রদ থেকে সংগ্রহ: হিজাজ অঞ্চলে লবণাক্ত মাটি বা শিলা থেকে লবণ খনন করা হতো। উদাহরণস্বরূপ, তায়েফের নিকটবর্তী পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক লবণের স্তর পাওয়া যেত, যা হাতিয়ার দিয়ে কেটে নেওয়া হতো। এছাড়া, মৃত সাগর (Dead Sea) যা আরবের উত্তরে অবস্থিত, সেখান থেকে উচ্চমানের লবণ সংগ্রহ করা হতো। নাবাতীয় বাণিজ্যপথ (পেট্রা হয়ে) দিয়ে এ লবণ আরবে আসত, যা প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রমাণিত [২][৩]।
বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রাপ্তি: মক্কা ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেন্দ্র। সিরিয়া (শাম), ইয়েমেন, ইরাক ও ভারত থেকে লবণ আমদানি হতো। কুরাইশ গোত্রের বণিকরা উটের কাফেলায় এগুলো পরিবহন করতেন। প্রাক ইসলামী যুগ থেকেই লবণ বাণিজ্যের মূল্যবান পণ্য ছিল [১][২]।
হাদিসে লবণের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে: “لَبِسَ الطَّعَامُ بِالْمِلْحِ” (লবণ খাবারের সর্দার) [৪]। 
অন্য হাদিসে খাবারের স্বাদের প্রসঙ্গে লবণের উল্লেখ আছে [৫]। 
এটি প্রমাণ করে যে, লবণ দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং প্রাকৃতিকভাবে সংগ্রহ করা হতো। রান্নার গ্রন্থে (যেমন Kitab al-Tabikh) লবণের ব্যবহার বর্ণিত [৬]।
২. কাপড় ধোয়া ও শরীর পরিষ্কারের উপকরণ
আধুনিক সাবান (সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডভিত্তিক) না থাকলেও তৎকালীন যুগে প্রাকৃতিক উপাদানে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হতো। ইসলামে পবিত্রতা (তাহারাত) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, হাদিসে এটিকে ঈমানের অর্ধেক সাব্যস্ত করা হয়েছে। [৭]। 
কুরআনুল কারিমে কাপড়ের পবিত্রতার নির্দেশ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে: “وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ” (আর তোমার কাপড় পবিত্র কর) [৮]। 
ওযু, গোসল, কাপড় ধোয়া ও নাপাকি দূর করার নির্দেশনা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সেকালে প্রধান উপকরণসমূহ নিম্নরূপ।
পানি প্রধান উপকরণ: শরীর ও কাপড় ধোয়ার মূল মাধ্যম ছিল খাঁটি পানি। কূপ (যেমন জামজাম), ঝরনা, নদী বা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করা হতো। হাদিসে বলা হয়েছে: “الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ” (পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক) [৭]। 
পানির অভাবে তায়াম্মুমের অনুমতি ছিল।
প্রাকৃতিক সাবানের বিকল্প:
উশার (সোপওয়র্ট বা Saponaria officinalis): আরবে ‘উশার’ নামে পরিচিত এ উদ্ভিদের শিকড় বা পাতা পানিতে ডলে ঘন ফেনা উৎপন্ন হতো। এটি প্রাকৃতিক সার্ফ্যাক্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করত। কাপড় ধোয়া, চুল পরিষ্কার ও শরীর মাজায় ব্যবহৃত হতো। রাসূল (সা.) এর অনুমতি দিয়েছেন [৯]।
ছাই (আল ক্বালি বা পটাশ): খেজুর গাছ বা কাঠ পোড়ানো ছাই পানিতে মিশিয়ে ক্ষারীয় দ্রবণ তৈরি করা হতো। এটি তেল, ঘাম ও ময়লা দূর করত। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া থেকে এ পদ্ধতি আরবে প্রচলিত ছিল।
মাটি বা বালি: পানি না থাকলে পরিষ্কার মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করা হতো: “فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ” [১০]। কাপড়ের দাগ দূর করতে নরম বালি বা মাটি ঘষা হতো, যা বেদুঈনদের মধ্যে সাধারণ ছিল।
সুগন্ধি উদ্ভিদ ও তেল: মিশক, আম্বর, গোলাপজল বা জলপাই তেল শরীরে মাখা হতো। রাসূল (সা.) গোসলের পর সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, যা আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত [১১]। এগুলো পরিষ্কারের পাশাপাশি সুগন্ধ প্রদান করত। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে: “حُبِّبَ إِلَيَّ مِنْ دُنْيَاكُمُ الطَّيِّبُ وَالنِّسَاءُ” (আমার প্রতি তোমাদের দুনিয়া থেকে সুগন্ধি ও নারীকে প্রিয় করা হয়েছে) [১২]।
কাপড় ধোয়ার পদ্ধতি: কাপড় পানিতে ভিজিয়ে রেখে পাথরে ঘষে, পায়ে মাড়িয়ে বা লাঠি দিয়ে পেটানো হতো। রাসূল (সা.)এর স্ত্রীরা (যেমন আয়েশা রা.) নিজেরাই কাপড় ধুতেন, যা সীরাত গ্রন্থে বর্ণিত [১]। নাপাক কাপড়ের জন্য বিশেষ নিয়ম ছিল তিনবার ধোয়া বা সাতবার (মাটি দিয়ে)।
এসব পদ্ধতি ছিল পরিবেশবান্ধব, সহজলভ্য, স্বাস্থ্যকর এবং ইসলামের সরল ও টেকসই জীবনধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এগুলো থেকে আমরা শিখতে পারি প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অপচয় এড়ানোর গুরুত্ব।
রেফারেন্স
[১] ইবন হিশাম এর আস সীরাত আন নাবাওয়িয়্যাহ (খণ্ড ১, পৃ. ১২৫ ১৩০): আরবের বাণিজ্যপথে লবণ আমদানি ও দৈনন্দিন জীবনে স্ত্রীদের কাপড় ধোয়ার বর্ণনা।
[২] ইবন কাসীর এর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (খণ্ড ২, পৃ. ২৯৫ ৩০০): প্রাক ইসলামী যুগে লবণ খনি, সমুদ্র ও হ্রদ থেকে সংগ্রহ; হিজরতের সময় মদিনায় লবণের ব্যবহার।
[৩] আত তাবারী এর তারীখ আল উমাম ওয়াল মুলূক (খণ্ড ২): লবণাক্ত হ্রদ থেকে উৎপাদন; প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ (পেট্রার নাবাতীয় খনি)।
[৪] আল মু'জাম আল কাবীর লিত তাবারানী (হাদিস নং ১৩৬৭৫): “لَبِسَ الطَّعَامُ بِالْمِلْحِ”।
[৫] সহীহ বুখারী (হাদিস নং ২৪৮): “إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ... وَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اللَّهَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ”।
[৬] Kitab al Tabikh (ইবন সায়্যার আল ওয়াররাক): লবণের রান্নায় ব্যবহার ও প্রাচীন আরবীয় খাদ্য সংরক্ষণ পদ্ধতি।
[৭] সহীহ মুসলিম (হাদিস নং ২২৩): “الطَّهُورُ شَطْرُ الْإِيمَانِ”।
[৮] কুরআন, সূরা আল মুদ্দাসসির, আয়াত ৭৪:৪: “وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ” (আর তোমার কাপড় পবিত্র কর)।
[৯] সুনান আত তিরমিযী (হাদিস নং ৭৮৮): “رَأَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ امْرَأَةً تَغْسِلُ رَأْسَهَا بِالْعُشَرِ فَقَالَ: لَا بَأْسَ”।
[১০] কুরআন, সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৫:৬: “فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ”।
[১১] সহীহ বুখারী (হাদিস নং ৫৯২৯): “كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اغْتَسَلَ مِنَ الْجَنَابَةِ دَعَا بِشَيْءٍ يُشْبِهُ الْحِلَابَ فَيَأْخُذُهُ بِيَدِهِ فَيَدَّهِنُ بِهِ”।
[১২] সুনান আন নাসাঈ (হাদিস নং ৩৯৩৯): “حُبِّبَ إِلَيَّ مِنْ دُنْيَاكُمُ الطَّيِّبُ وَالنِّسَاءُ”。
 
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫  সকাল ১১:১৪
নতুন নকিব বলেছেন: 
লবন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন বলে ধন্যবাদ।
পোস্ট পড়েছেন? পড়েননি। পড়লে "শিরোনামের সাথে লেখার তো মিল নাই", এমন কথা বলতেন না। 
আরবের লোকদের পেশা ডাকাতি ছিল- এটা কার থেকে জেনেছেন? গার্বেজের কাছ থেকে? সমস্যা হচ্ছে, গার্বেজ উদ্ভট কথা বেশি বলে।
২| 
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫  সকাল ১১:১৩
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন: 
সৌদী এলাকা ছিলো ভয়ংকর মরু; সেখানে রোমান বা পারসিকরা যেতে পারেনি। পশু চারণ ছিলো, কোন ধরণের চাষবাস ছিলো না,
নবী পড়ালেখা জানতেন না।
 
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫  সকাল ১১:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন: 
ধন্যবাদ। 
নবী পড়ালেখা জানতেন না।
-এটা নতুন কোন আবিষ্কার নহে। সকলেই জানেন, তিনি নিরক্ষর ছিলেন কিন্তু তিনি মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে জ্ঞানী ছিলেন।
৩| 
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫  সকাল ১১:৫৯
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: বুড়ো শকুন যখন উড়তে না পারে; খাবার সহজে সংগ্রহ করতে না পাড়ে -তখন শুধু অন্যের দোষ ধরে ! বুড়ো শকুন এখন টাওয়ার অব সাইলেন্স -এ কোন খাবার না পেয়ে অস্থির তার পিংপং সাইজের ঘিলুতে নিউরন ঠিকমতো কাজ করে না -তাই বিশ্ব মানবতা ও মানব জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ-কে নিয়ে এধরনের মন্তব্য করতে পারে। 
--হেদায়েত সবার নসীবে থাকে না; মহান রাব্বুল আলামীন হেদায়েত দান করুন, আমীন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৫  সকাল ১১:০২
রাজীব নুর বলেছেন: হ্যা লবন খুবই গুরুত্বপূর্ন।
শিরোনামের সাথে লেখার তো মিল নাই।
আরবে লোকজন বানিজ্য করতে যেতে ভয় পেতো। আরবের লোকজনের আসল পেশা ছিলো ডাকাতি।