![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘বাসার সিঁড়িতে আগুন। বের হওয়ার কোনো পথ নেই। বাঁচার জন্য স্ত্রী ও বাচ্চাকে দোতলা থেকে নিচে ফেলে দিই। পরে নিজেও ঝাঁপ দিই নিচে।’
গত বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান কার্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় পরিবার নিয়ে বেঁচে যাওয়ার এই বর্ণনা লাইনম্যান আবদুল আওয়ালের (গ্রেড-১)। ধ্বংসস্তূপে বসে গতকাল শনিবার দুপুরের খাবার হিসেবে এক টুকরো পাউরুটি মুখে দিতে দিতে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিলেন তিনি, ‘তারপর এককাপড়ে পালিয়ে যাই। পরে ফিরে এসে দেখি কিচ্ছু নেই। সব লুট করে নিয়ে গেছে। যা নিতে পারেনি, তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গেছে। বাচ্চার খেলনাটা পর্যন্ত নেই। কাছে টাকা আছে কি না, কী খাচ্ছি, কোথায় থাকছি—খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই।’
আবদুল আওয়ালের মতোই বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপকসহ ৪৮টি পরিবার এককাপড়ে কোয়ার্টার থেকে বের হয়ে গেছে সেদিন। আশ্রয় নিয়েছে পরিচিতজন, বাচ্চার বন্ধুর বাড়ি অথবা বিদ্যুতের গ্রাহকদের বাড়িতে।
তিন দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকা ছাড়া ১৫ ইউনিয়নের ৫৮ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন আছেন, ভেঙে পড়েছে বোরো খেতের সেচব্যবস্থা। বাস চলাচল বন্ধ। ঠিকমতো দোকানপাটও খুলছে না। এই অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাঁদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়ন সদরে বিদ্যুৎ সমিতির এই কার্যালয় অবস্থিত।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত-শিবিরের এই হামলায় বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎব্যবস্থা কবে সচল হবে, তা তারা বলতে পারছে না। কর্মচারীরা জানান, তাঁদের কার্যালয়ের কিছুই অবশিষ্ট নেই। তাঁরা নতুন খাতা কিনে এনে হাজিরা স্বাক্ষর করেছেন। গত শুক্রবার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মইন উদ্দিন এসেছিলেন। তাঁকেও তাঁরা বসতে দিতে পারেননি।
গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের বাইরের লোহার গেট নেই, ডিউটি রুমের থাই গ্লাস, গ্রিল কিছুই নেই। সব লুট করে নিয়ে গেছে জামায়াত-শিবির। কর্মচারীরা জানান, হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর থেকে পুলিশ এর পাহারায় রয়েছে। তিনতলা অফিস ভবনটিতে আগুন দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ভেতরে সব পুড়ে কয়লা। এর পেছনে সমিতির গুদাম। আগুনের তাপে লোহা, অ্যালুমিনিয়াম-তামা পুড়ে বেঁকে গেছে। দুই দিন পরেও একটা ট্রান্সফরমার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
সমিতির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম-প্রশাসন) রেজাউল করিম বলেন, গুদামে তাঁদের প্রায় ১১০ কোটি টাকার মালামাল ছিল। একটিও আর অক্ষত নেই। আর অফিস ভবন, বিশ্রামাগার ও পাঁচটি আবাসিক ভবনের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৯০ কোটি টাকার। কর্মচারীদের প্রায় ৪০টি মোটরসাইকেল, মহাব্যবস্থাপকের জিপ ও একটি পিকআপ পুড়ে গেছে। এর বাইরে আর কার কত ক্ষতি হয়েছে, তা তাঁরা এখনো মূল্যায়ন করতে পারেননি।
আগুনে আবাসিক এলাকার তিন-চারটি আমগাছও পুড়ে গেছে। মহাব্যবস্থাপকের একতলা কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, এর ভেতরে কয়লা ছাড়া আর কিছু নেই। সহকারী মহাব্যবস্থাপক বলেন, তাঁরা শুধু জীবন নিয়ে বেরিয়ে যেতে পেরেছেন।
আবাসিক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিজ কোয়ার্টারের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে প্রিয় সন্তানের কোনো জিনিস অবশিষ্ট আছে কি না, তাই খুঁজে দেখছেন লাইনম্যান (গ্রেড-১) রেজাউল হক। তিনি বলেন, ‘নামাজ পড়ে উঠেছি। আমার স্ত্রী বললেন, তোমাকে ভাত দেব। নিচ থেকে পানি নিয়ে এসো। নিচে এসে দিখে মেইন গেটের দিকে ওরা মোটরসাইকেলে আগুন লাগাচ্ছে। দেখে আমি পানির জগ ফেলে দিয়ে নিজের মোটরসাইকেলটা বাসার ভেতরে নিয়ে আসি। কিছুক্ষণ পরে ওরা আমাদের কোয়ার্টারেও চলে আসে। ভয়ে স্ত্রী ও পাঁচ বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে টয়লেটের ভেতরে লুকোই। বাসায় আগুন লাগানো হচ্ছে বুঝতে পেরে আমি তাদের হাতে-পায়ে ধরে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাসার বাইরে আসার সুযোগ পাই। পরে বউ-বাচ্চা নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া টপকে পাগলা নদীর ধরে একটি গমখেতে লুকিয়ে থাকি। সেখান থেকে তাকিয়ে দেখি আমাদের বাসা দাউ দাউ করে জ্বলছে। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পরে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে ফিরে এসে দেখি কিছুই আর অবশিষ্ট নাই। সেই রাতে কোথাও যাব—সেই জায়াগাও নেই। ঠিক একাত্তরের মতো অবস্থা। আমার ছেলে প্লে-তে পড়ে। তার এক সহপাঠীর বাসা চেনা ছিল। ওই ভরসায় সেখানেই যাই। স্ত্রী-সন্তানদের ওখানেই রেখেছি। আর আমি রয়েছি এককাপড়ে এখানে। নিজের তিন হাজার টাকা ছিল অফিসের ড্রয়ারে। সব শেষ। এখন কিছুই নেই।’
আনসার বাহিনীর সদস্য কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা নয়জন মেসে ছিলাম। আমাদের কক্ষের বাইরে তালা দিয়ে ওরা আগুন ধরিয়ে দেয়। আমরা জানালা দিয়ে প্রাণভিক্ষা চাই। পরে কে একজন এসে দরজা খুলে দেয়। সন্ত্রাসীরা বানের পানির মতো আবাসিক এলাকায় ঢুকছিল। আমরা রাইফেল লুকিয়ে কোনোরকমে সরে পড়ি।’
ভান্ডাররক্ষক আবদুল হামিদের ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার বই-পুস্তক এমনকি পরীক্ষার প্রবেশপত্রটাও পুড়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক খলিলুর রহমানের বড় ছেলের পরীক্ষা সনদও পুড়ে গেছে। ছোট ছেলেরটা বাইরে পানিতে পাওয়া গেছে।
কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুর থেকে ওরা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। এর মধ্যে পুলিশ বা প্রশাসনের কারও দেখা মেলেনি। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসেছে সন্ধ্যার পরে।
গতকাল দুপুর একটার দিকে কর্মচারীরা খাওয়ার জন্য বাইরে গিয়ে দোকানপাট খোলা পাননি। তাঁদের একজন কোথায় থেকে একটি পাউরুটি নিয়ে আসেন। সেটাই এক-দুই টুকরা করে আট-দশজন ভাগাভাগি করে খান।
কানসাট এলাকা গতকালও থমথমে ছিল। রাস্তায় দু-একটা ভটভটি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন ছিল না। রাস্তায় সেদিনের ইটের টুকরো গুঁড়ো হয়ে লাল হয়ে রয়েছে।
মূল সংবাদ এখানে : Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
আহলান বলেছেন: আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করো .... এইসব ঘটানোর জন্য সরকারের দূর্বলতা দায়ী ... তারা জনগনের জান মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ... .