নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নামসেন

নাইম আকন

নাইম আকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তরাধিকার

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২৮

পিরোজপুর জেলা সদরে যাবার বড় রাস্তার পাশে মার্বেল খেলতে খেলতে হঠাৎ জহির উদাস হয়ে ভবিল কী সূখেই না ছিলাম। আবার ভাবে না সেখানে কোন স্বাধীনতা ছিল না। এখন আমি মুক্ত, স্বাধীন , না এই ভাল আছি। হঠাৎ জহির দেখল সেই লোকটাকে জহির যাকে দাদা বলে ডাকে, তাদের বাড়ির দিকে যাচ্ছে। এই লোকটাকে মনে মনে ভালবাসে আবার ভয়ও পায়। জনাব একরাম উদ্দিন পর পর দুবার গ্রামের মেম্বার ছিলেন। তার আত্নবিশ্বাস পরেরবার চেয়ারমানিতে দাড়ালে পাস করে ফেলত। তার জায়গা-জমি দেখাশুনা করার জন্য বছরচুক্তিতে সতের বছর ধরে কাজ করছে রুস্তম মালিক। খুব সাধারন জীবন যাপন করে। পেট পুরে অনায়াসে খেয়ে ফেলে একসের চালের ভাত, ক্লান্তিহীন খাটে, সুযোগবুঝে এটা-সেটা চুরি করে। আর পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং রাত নয়টায় বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। খুব প্রয়োজন না হলে স্ত্রীর কাছেও ঘেসে না, একটা যন্ত্রের মত জীবন চালিয়ে যাচ্ছে গত বিশবছর যাবদ। এনিই হলেন আমাদের জহিরের পিতা। আজ বুধবার, হাসনা বেগমের সাথে দেখা করার দিন। হাসনা বেগম একটা আবদার করেছিল। তিন ভরি সোনার লকেটওয়ালা চেইনের। ফুরফুরে মেজার নিয়ে হাসনা বেগমের ঘরে ঢুকল। কিন্তু কেউ নেই, সব খালি খা খা করছে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল একরাম উদ্দিনের। হঠাৎ পিছন থেকে বেগম চোখ চেপে ধরল। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়েছে তবুও তার এসব রঙ, তামাসা খুব ভাল লাগে। নীজেকে তরূন লাগে, ক্ষানিক সব কিছু ভুলে যান। এ ব্যাপারে তার নিজস্ব যুক্তি এটা মনের খোড়াক বৌউটা মিটাতে পারে না।“ আপনি ত আমাকে ভুলে গ্যাছেন” অনুযোগ করে বলল হাসনা বেগম। কার প্রেমে নতুন করে মজেছেন বলেন ত। তিনি মিটমিট হাসছেন, মনে মনে হাসনা বেগমের বিস্মিত আনন্দিত মুখটা কল্পনা করছেন।জহির ঘরে ঢুকেই বলল, ভালো আছেন দাদা?জহিরকে একশ টাকা দিয়ে সিগারেট আনতে বাজারে পাঠালেন। আচমকা শাড়ির আচটা খসাইয়া ফেলল, দুহাতে মুখ ঢেকে ফেলল হাসনা। তার হঠাৎ মনে হল সে এখন সে আর পাচ সন্তানের জননী নয় সেই কিশোরী মেয়েটি। সেই আচেনা-আজানা সুখানুভূতি তাকে গ্রাস করে ফেলল। কানের পাশে নি:শ্বাসে সম্ভিত ফিরিয়ে দিল, দৌড়ে রূমে ঢুকে গেল। আধশোয়া অবস্হায় তার কপালের ঘাম মুছে বলল আপনি আমাকে আগের মত আদর করেন না ভালও বাসেন না। পাঞ্চাবীর পকেট থেকে চেইনটা বের করে হাতে দিল। সে ঠান্ডা গলায় বলল আপনি পড়িয়ে দিন। জহির এসে পড়ল। প্যাকেট খুলে সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, যাই কাজ আছে। তা ত যাবেনই, আপনার দরকার ত শেষ। রাস্তায় হাটতে হাটতে ভাবল মেয়েমানুষ বড়ই আশ্চর্য। তিনি বোধহয় কখনও বুঝবেন না। জহির খেতে বসে জিঙ্গাস করল দাদা ক্যান আইছিল মা? কিছু না বলে গোসলে চলে গেল। জহিরের তার বাবার সাথে তেমন সখ্যতা নেই, মায়ের প্রতি তীব্র ক্ষোভ কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবে পালিয়ে অনেকদূরে চলে যাবে। সংকল্প করে কাল যাব কিন্তু পারে না। মনের মাঝে হাজার চিন্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।একরাম উদ্দিন রাতের খাবার শেষে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ভাবল ছেলেটার জন্য কিছু করা দরকার। সে অবশ্য ঢাকাতে ছেলের বাসায় কাজে দিয়েছিল, থাকেনি। এরপর মেয়ের বাসায় দিয়েছিল তাও চলে আসছে। ভাবল কিছু জমি লিখে যেতে হবে । মনে মনে হাসনা বেগমকে গালি দিয়ে ঘুমতে গেলেন।মেয়েটা তাকে জানাইনি তার সন্তান আসছে। সাত মাসের সময় দাওয়াত দিয়ে খুব আদর আপ্যায়ন করল। পান হাতে দিয়ে বলল একটা কথা জরুরী কথা আছে। কাপড়ে জড়ানো বই হাতে দিয়ে শপথ করাল।হেসে বলল আমাদের মহব্বতের একটা চিহ্ন পৃথিবীতে রেখে যাব। আমার পেটে তোমার সন্তান. হাত দিয়ে দেখেন খুব দাপাদাপি করছে। আপনার মত হবে। তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল তবুও শান্ত থাকল।এটা জানাজানি হলে সমাজে তিনি ধূলায় ভেসে যাবে। এমনিই এখানে আশার জন্য সে ্অনেক খুয়িয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা তার ছেলেমেয়ারা গায়ে থু থু দেবে। কেউ বুঝবে না তার মনের কথা বোঝানও যাবে না কাউকে। উজ্বল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হারিয়েছে, স্ত্রীর গাল-মন্দ সহ্য করেছে, সমাজের টিপ্পনী সহ্য করেছে। তবুও হাসনা বেগমের মায়া ছাড়তে পারেনি। চেষ্টা করেছিল অনেক, অবশেষে হাল ছেড়ে ভা্গ্যের হাতে সমার্পন করেছে নীজেকে। কিন্তু যখন সন্তান ও তার নীজের পরিবারের কথা মনে ভাবে তখন চরম আত্নদ্বন্ধে ভূগে গর্দান এগিয়ে দেয় ভাগ্যের হাতে। মুক্তি খোজে নীজের ভিতর আবিরাম। কখনও মনে মনে কল্পনা করে তাকে নিয়ে নতুন দেশে চলে গিয়ে নতুন শুরু করে। তার বাঞ্চার বলেছিল কিন্তু বেগম একবাক্যে না করে দেয়।সাথে সাথে বুড়ো বয়সে ভিমরতি হয়েছে বলে গালি দেয়। হাসনাবেগম মুখে কত রকম ভাবে বারন করে তাকে বুঝায় কিন্তু সেও তার ত্বীব্র প্রেমের আবেদন উপেক্ষা করতে পারেনা।মনে মনে অপেক্ষায় থাকে কখন সে আসবে। তার জন্য কলঙ্ক গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে শাড়ির মত। সন্তানদের ঘৃনা, উপেকক্ষা মেনে নেয় শান্তচিত্তে। স্বামীর উদাসীনতা তাকে কষ্ট দেয়। সব আবার ভুলে যায় তার পাশে বসে গল্প করে। হৃদয়ের উত্তাপ ভাগাভাগি করেই নতুন মানুষ হয়ে উঠে প্রতিবার। ভাবে পৃথিবীতে তার কোন দু:খ নেই।সে জগতের মহারানী ! মাথা ঠান্ডা রেখে হাসি মুখে আগ্রহ নিয়ে জিঙ্গাস করল এটা আমাকে আগে বলনি কেন।ব্যপারটা কী অন্য কেউ জানে?। আমার স্বামী জানে আর চাচাত শ্বাশুড়ী। খানিকভেবে পকেট থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা এগিয়ে দিয়ে বলল এটা রাখ। আর আল্লাহর কসম করে বল আমি মারা যাবার আগে কেউ জানবে না। সন্তানের যাবতীয় ব্যাবস্হা আমি করে যাব। জহির স্বন্ধ্যায় হাত ভেঙে বাড়ি ফেরে। তখনই তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। ব্যান্ডিস গলায় ঝুলিয়ে রাত দশটায় দিকে ঘরে ফিরল।মায়ের ঝাঝালো বকাঝকা শুনে খেয়ে শুয়ে পড়ল। গভীর রাতে মোম জ্বালিয়ে জহিরের কাছে আসল হাসনা বেগম. লাল আলোয় ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে কাদতে লাগল। ছেলের অন্ধকার ভবিষৎত ভেবে আঝোরে কাদতে কাদতে পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কনকনে পাচটি শীতকাল অতিবাহিত হল।জহির এখন চৌদ্দতে পা দিয়েছে। মাদ্রাসা আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্তফা দিয়েছে। এখন তার অনেক বন্ধু জুটেছে, বাজারে আড্ডা দেয়, রাত করে বাড়ি ফেরে। মন চাইলে ক্ষেতে কাজ করে অথবা ভাইয়ের সাথে গাড়ির হেলপারি করে। তার সবচেয়ে ভাল লাগে কয়জন মিলে রাতেরবেলায় এ বাড়ির ফল ও বাড়ির কবুতর চুরি করতে ।ধানক্ষেত হাস ধরে দূরে রাতেরবেলা পিকনিক করতে ধারুন লাগে। রাতের জমাটবাধা থো আন্ধকার ভাল লাগে জহিরের। স্বচ্ছ পানিতে রাতের আকাশ-তারকা ও গাছপালার প্রতিবিম্ব দেখে পুলকিত হয়। আর আনন্দ পায় তিনজন লুকিয়ে বড় আম গাছটায় উঠে সিগারেটের ধোয়ার কুন্ডলি তৈরি করতে। এখনও ঝা ঝা করা গ্রীষ্মের দুপুরে পৃথিবীতে স্বর্গশয্যা পাতেন একরাম উদ্দিন ও হাসনা বেগম। আর তখন খা খা রোদে একরাম উদ্দিনের জমি চাষ করে চলছে সুঠামদেহী রুস্তম মালিক। একরাম উদ্দিন খুব অসুস্হ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবরটা শুনে সকল লাজলজ্বা বিসর্জন দিয়ে জহিরকে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন। জহিরকে দেখে মৃদ হেসে হাতটা ধরল। ইশরায় সবাইকে ডেকে বড় ছেলের হাতে জহিরে হাতটা দিয়ে অস্ফুট স্বরে বলল, এ তোমাদর ভাই। বৃহস্পতিবার রাত দুপুর দেড়টা, উনিশশ সাতানব্বই সাল, হাসন বেগমের মায়ার উর্দ্ধে চলে গেলেন একরাম উদ্দিন। হাসনবেগম অনেক কাদলেন, বিকেলবেলা দূরে দাড়িয়ে কবরে নামনো দেখলেন। শেষবারের ছূয়ে দেখতে পারলেন।গত দুইদিন জহিরের কোন খবর নেই, বাড়ি ফিরেনি।গভীর রাতে দুইজন বিস্বত্ব সহযোগী নিয়ে ঘরের চারপাশে প্যাট্রোল ছড়িয়ে দিয়ে একটা কাঠি ছুড়ে মারল। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে যাওয়া মুগ্ধ হয়ে দেখল দুদন্ড। অমাবশ্যার ঘুটঘুটে আন্ধকার আলোকিত করে দাউ দাউ করে জ্বলল বাড়িটা। জহির প্রানপনে দৌড়াতে লাগল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.