নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাজিয়া রিফকা

আমি সাধারণ ।

নাজিয়া রিফকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বিয়ে... অতঃপর!

১২ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৪

আমি তখন অনেক ছোট, ক্লাস টু-তে পড়ি । এক বিয়ের দাওয়াত, বিয়ে আব্বুর কাজিনের, হবে এক বিখ্যাত চাইনিজ রেস্তোরায় ।

বাসায় সবার তখন চোখ উঠেছে, আমি আর আব্বু বাদে । আমি জানিনা এই রোগকে কেন চোখ ওঠা বলে, আগে আমার ধারনা ছিলো এই রোগে সম্ভবত মানুষের কপালে অথবা মাথার পিছে এক্সট্রা একটা চোখ ওঠে, তারপর ডাক্তার সেটা অপারেশন করে ফেলে দেয় । আর যাদেরটা অপারেশন করা যায়না তারা দৈত্য-দানব হয়ে সুন্দরবনে ঘুরে বেড়ায় । আর রুপকথার বইতে তাদের কথা লেখা হয় ।:D

কিন্তু দেখলাম যে চোখ উঠলে আসলে তেমন কিছু হয়না, যা হয় তা মোটামুটি পানসে ব্যাপার । শুধু চোখটা লাল হয়ে যায় । দেখতে অবশ্য ভালো লাগে, কি সুন্দর বজ্রপাতের মত ডিজাইন হয়ে থাকে! আবার মাঝে মাঝে বৃষ্টির মত পানিও পড়ে ! :P

আচ্ছা যা বলছিলাম, বিয়ের দাওয়াত, কিন্তু বাসার সবাই অসুস্থ্য । বিয়েতে যাওয়া হলোনা । কিন্তু বৌভাতেও যদি না যাওয়া হয় তাহলে ক্যামনে হবে… অনেক ক্যালকুলেশনের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে আমি আর আব্বু যাবো । নাই মামার চেয়ে যেমন কানা মামা ভালো তেমনি কেউ না যাওয়ার চেয়ে দুইজন যাওয়া ভালো ।

বৌভাত ছিলো শুক্রবার । আব্বু জুম্মার নামাজ পড়ে আসার পর রওনা দিলাম । কিন্তু টম যেমন জেরির জন্য এই জীবনে কোন কাজ শান্তিতে করতে পারেনাই আমিও তেমন আমার ছোট ভাইয়ের জন্য শান্তিতে কোথাও একা যেতে পারিনাই । শেষ মুহূর্তে সে বাড়ির দরজার সামনে শুয়ে থেকে আলটিমেটাম দিলো যে তাকে সাথে না নিলে সে রাস্তা ছাড়বেনা । দরকার হলে সারাদিন শুয়ে থাকবে, তবু বিনা যুদ্ধে একচুল নড়বেনা । তাকে জোর করে তুলে আনতে গেলেও সমস্যা । এমন চিৎকার দেয় যে চিৎকার সম্ভবত জুলু যোদ্ধারাও দেয়না । তারপরের ইতিহাস বড়ই করুণ । দ্বিপাক্ষিক পারিবারিক সংলাপে তাকে রাজী করাতে না পেরে পুনঃসিদ্ধান্ত হলো তাকেও সাথে নেয়া হবে । সংলাপ নিম্নরূপ-

- আব্বু সরো, আমাদের যেতে দাও ।

: আমি দাব । (মানে আমি যাব)

- ছোটআপি কাঁদবে তো...

: আমি দাব ।

- আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসব ।

: আমি দাব ।

- এখন কিন্তু মারবো ।

: আমি দাব ।

X(

তো তাকেও সাথে নেওয়া হলো । আমার ছোটভাই দেখতে মাশআল্লাহ্ ভালো, শুধু চোখে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে । এই অবস্থায় তাকে নিয়ে আমরা রওনা দিলাম এবং যথাসময় পৌঁছে গেলাম । যে চাইনিজে আয়োজন সেটা ঢাকা শহরে মোটামুটি ভালো বিখ্যাত, সামনে অনেক বড় একটা পার্কও আছে । পৌঁছোনোর পর দেখলাম সাদা শার্ট আর কালো টাই প্যান্ট পরা একজন ওয়েটার আব্বুকে দেখে সেজদা বলে প্রায় বাংলা ছবির নায়িকার মত দৌঁড়ে এসে কোলাকুলি করলেন । কুশল, বাকিরা কোথায়, কেন আসলোনা জিজ্ঞেস করলেন । ভাবলাম উনি মনে হয় পরিচিত । আমার চোখ তখন বিয়ের বর আর কনেকে খুঁজছে । বিয়েবাড়িতে ছোট বাচ্চাদের কাছে মূল আকর্ষন হলো বিয়ের কনে । ভিডিও করার সময় গম্ভীর মুখে কনের পাশে বসে থাকা, মাঝে মাঝে তার আঁচল, টিকলি ঠিক করে দেওয়া এগুলো তাদের অতি প্রিয় দায়িত্ব । যে যত বেশীক্ষন কনের সাথে থাকে সে অন্যদের কাছে তত জনপ্রিয়তা পায় । এমনকি কনের পাশে বসা নিয়ে ঝগড়াও হয় । আব্বুর দেখলাম এসব নিয়ে কোন আগ্রহ নাই, উনি মনের আনন্দে সেই ওয়েটারের সাথে গল্প করছেন, সাথে আমার চাচা চাচী ফুপুসহ আরো কয়েকজন আছে । আমি তো এদিকে বউ দেখার জন্য ছটফট করছি, টিকতে না পেরে শেষে আব্বুর কানে কানে বললাম, “আব্বু বউ কই?”

:-*

ওই ওয়েটার আঙ্কেল দেখলাম সাথে সাথে আব্বুসহ আমাকে নিয়ে রওনা দিলেন । মিশন কনে দেখা । গেলাম, ওয়েটার আঙ্কেল কনেপক্ষের সবার সাথে আব্বুর পরিচয় করিয়ে দিলেন । আমি ততক্ষনে উনার কর্মদক্ষতা আর আন্তরিকতায় মোটামুটি মুগ্ধ! কি সুন্দর ঘরের মানুষের মত সবার সাথে মিশে গেছেন! আরো অবাক হলাম বিয়ের কনের সাথে তার ব্যবহারে! কনের সাথে তার তুমি তুমি সম্পর্ক । কনেও তার সাথে কনেসুলভ লজ্জা পাচ্ছেনা! ঠিক যেন আপন বড় ভাই!

খাওয়ার সময়ও একই ব্যাপার । আমরা চাচা ফুপুসহ সবাই একসাথে খেতে বসেছি । ওয়েটার আঙ্কেল পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের খাওয়া তদারক করলেন, আমাদের পাতে চিকেনের বড়বড় টুকরো তুলে দিলেন! অন্য ওয়েটারদের বললেন এই টেবিলের জন্য ভালো ভালো জিনিস নিয়ে আসতে । অন্যদের উপর উনার প্রভাব দেখে আন্দাজ করলাম উনি বোধহয় হেড ওয়েটার । :)

খাওয়ার পর সামনের পার্কে আমরা কয়েকজন বাচ্চা খেলছি । খেলতে খেলতে পানির পিপাসা পেল । সামনে উনাকে পেয়ে বললাম, “ওয়েটার আঙ্কেল পানি খাব ।” তখন শুধু দেখলাম উনি মুখটা কালো করে পানি এনে দিলেন । ভাবলাম, আমারই দোষ, উনি হেড ওয়েটার, উনার কাছে এমন ছোট জিনিস চাওয়ায় উনি বোধহয় অপমানিত হয়েছেন । :|

সন্ধ্যায় বাড়ি আসলাম । রাতে ভাত খাওয়ার সময় আব্বুকে বললাম,

- আব্বু, আজ ওয়েটারটা অনেক ভালো ছিলো তাইনা???

: কোন ওয়েটার?

- ওই যে, আমরা যাওয়ার পর তোমার সাথে কোলাকুলি করলো?

: ওইটা ওয়েটার মানে??? ওইটাই তো বর!!!



ইয়া খোদা !!!B-) উনার সাদা শার্ট আর কালো টাই প্যান্ট দেখে কে বুঝবো কন ওইডাই বিয়ার বর??? আমি তো দুধের শিশু, উনার বেশ দেইখা আমি সিওর ওইদিন আমার মত আরো অনেকেই কনফিউসড হইসিলো!!



আমার তো তবু ভুল ভাঙসে, অনেকের ভুল হয়তো আজো ভাঙেনাই!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:০০

ঘুমাইলে চোখে দেখি না! বলেছেন: হুমমম.. এটা বোঝা যায় যে আপনি ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিমতী

২| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮

নাজিয়া রিফকা বলেছেন: :)

৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৫:১২

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহাহা! বেশ মজা করে লিখেছেন। স্বাগতম ব্লগে।

৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:২৭

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
হাহাহ, মজা পাইসি পড়ে :)
এরকম মজার গল্প লিখতে থাকেন, শুভকামনা ||

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.