নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাজিয়া রিফকা

আমি সাধারণ ।

নাজিয়া রিফকা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে আদিবাসী

২৫ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৫৫

ছোট থাকতে আমি একবার রাঙামাটি গিয়েছিলাম। যারা আগে গিয়েছেন তারা জানেন রাঙামাটি খুব অসাধারণ একটা শহর। রাস্তার পাশে সবুজ পাহাড়। একটু হাঁটলেই সৈকতের মত একটা জায়গা, সেখানে পাহাড় আর পাথরের ছড়াছড়ি। ওইখানে একজন উপজাতি (খুব সম্ভবত চাকমা) মেয়ের সাথে আমার প্রাণের বন্ধুত্ব হয়েছিলো। আমরা একসাথে ঘুরতাম, পানিতে দাপাদাপি করতাম। আমাদের ফিরে আসার দিন মেয়েটা আমাকে বিশাল এক প্যাকেটে বড়ইয়ের আচার আর তার একমাত্র গহনা, একটা পুঁতি-পাথরের মালা আমাকে দিয়ে দিয়েছিলো। সেদিন থেকেই আমি জানি, ওদের মনটা কত সরল।



উপমহাদেশে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্রভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো ত্রিপুরা উপজাতির মানুষ, চল্লিশের দশকে ব্রিটিশ বিরোধী তেভাগার আন্দোলন আর টংক বিদ্রোহের পুরোভাগে ছিলো হাজং নারীরা। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও আদিবাসীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আছে। এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো গারো আর সাঁওতাল মিলিয়ে ২,২০০ জন, শহীদ হয়েছে কয়েকশ। আদিবাসীরা এই দেশে শোষনের আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে সব লড়াইয়েই এগিয়ে এসেছেন। কল্পনা চাকমা, গিদিতা রেমা, পীরেন স্নাল, চলেশ রিছিলরা অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত হলেন বীরবিক্রম ইউ কে চিং মারমা। বান্দরবানের এক হতদরিদ্র পল্লী লাঙ্গিপাড়ায় বসবাসরত ইউ কে চিং মারমা আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারেন না। তার মায়ের মৃত্যুর পর তিনি বাড়ির পাশের একটা লাইটপোস্ট থেকে লাইন টেনে বাতি জ্বালিয়েছিলেন, এই জন্যে তাকে ১৫,৬১২.২৭ টাকার বিল অনাদায়ের মামলায় পড়ে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। এছাড়াও সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেনীর দ্বারা সংখ্যালঘু আদিবাসী নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন, ধর্ষনের সংখ্যাটাও শিউরে দেওয়ার মতো।



কোন এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন জনবসতি ও তাদের সংস্কৃতিকে বোঝাতে আদিবাসী পদটি ব্যবহৃত হয়। আধুনিক জনগোষ্ঠীর জৈব ও সামাজিক প্রভাবজাত নয় এমন জনগোষ্ঠীকে বলে আদিবাসী। বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছিল মান্দি, কোচ, বর্মণ আদিবাসী এলাকা মধুপুর শালবনের দোখলাতে। কিন্তু এদেরই সংবিধানে জায়গা নাই। সংবিধানে এখনও বাঙালী বাদে আর কোন জনগোষ্ঠীকে স্থান দেওয়া হয় নাই। কারণ, আদিবাসী হিসেবে তাদেরকে পরিচয় দিলে ILO Convention- 107, (The Indigenous and Tribal Populations Convention, 1957, এখানে ট্রাইবাল মানে উপজাতি নয়) তাদের ভূমির অধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্র তা দিতে ইচ্ছুক নয়। তাই বাংলাদেশের সংবিধানে এদের পরিচয় ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের’ এই কয়টি লাইনে



অতি সম্প্রতি ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার পুনর্মূল্যায়িত ফলে বাদ পড়েছেন ২৮০ জন আদিবাসী। যদিও পিএসসি কর্তৃপক্ষ বলেছিলেন প্রথম দফার উত্তীর্ণ সবাইকে রেখেই নতুন পুনর্মূল্যায়িত ফল প্রকাশিত হয়েছে তবুও প্রথমবার তারা উত্তীর্ণ হলেও পুনর্মূল্যায়িত ফলে এদের নাম নেই।



বাংলাদেশের যত পর্যটন স্পটের ছবি আর ভিডিও দেখা যায় তার পুরোটুকু জুড়ে থাকে আদিবাসীদের জীবনধারা, তাদের পোশাক, সংস্কৃতি। তাদের দেখিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে, পর্যটন খাতের আয় বাড়ানো হচ্ছে, অথচ তাদের প্রাপ্য অধিকারটুকু তাদের দেওয়ার জন্যে কেউ নাই।

নিজের দেশে থেকেও তারা পরবাসী হয়ে বেঁচে আছে...





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.