![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুরে বেড়ানো আমার একটা ভয়ংকর মাত্রার নেশা। আর আমার এই নেশার যোগানদাতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সব দুঃসাহসিক অভিযাত্রিকেরা। ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের বিয়ার গ্রাইলস তাদের লিডার। এই মানুষটার জন্যই আমার মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। ঘোরার নেশা আমাকে গ্রাস করে বসেছে। একা পথচলা আমার খুব পছন্দ। একা চলায় কষ্ট আছে সত্য, কিন্তু তা আনন্দের কাছে চাপা পড়ে যায়।The one who follows the crowd will usually get no further than the crowd. The one who walks alone is likely to find himself in places no one has ever been.
২ নভেম্বরের তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে আম্মা মারা যান। শীতের গভীর রাত... ৩ঃ৫০ মিনিটে আম্মা আমার চোখের সামনে চিরকালের মতো চলে যান। যেই আমি গত একটা সপ্তাহ ধরে ডাক্তারকে বলে আসছি, আম্মাকে যেন ওনারা মেরে ফেলেন (!) সেই আমিই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আম্মা আর নেই। পাশের দেশ ভারতে আছে কিন্তু আমাদের দেশে Euthanasia সিস্টেমটা নেই কেন??? তাই দীর্ঘ চার মাস পেইন মিটারের টেন অন টেনের অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে আম্মাকে বিদায় নিতে হয়েছিল। পৃথিবীর একটা দুর্লভ টাইপের ক্যান্সারের কারণে আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকে হারিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে একটা চার ক্রেডিটের ফিজিওলজি কোর্স থাকাতে আম্মার সব লাইফ সাইন কিভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল পরিস্কার বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু সব বুঝতে পেরেও বিশ্বাস করতে পারি নাই যে, আম্মা আর নাই। কারণ সেই ছোটবেলা থেকেই আমি নিজে নিজে একটা বদ্ধমূল ধারণা করে নিয়েছিলাম যে, আম্মা আমার আগে কখনোই মারা যাবে না। ভুল করেও যদি কখনো সিমুলেট করার চেষ্টা করতাম যে, আম্মা নাই... এখন আমি কি করবো... তাইলেই হইত। কেঁদে কেটে একাকার করে ফেলতাম। কখনো একাই বাথরুমে গিয়ে কাঁদতাম, আবার কখনো আম্মাকে জড়ায় ধরে তাকে অবাক করে চোখের পানি ফেলতাম। সেই আমিই তখন অবিশ্বাসে বোবা হয়ে গেছিলাম।
আম্মা মারা গিয়ে ভালোই আছেন ঐ দুনিয়ায়। আমি জানি। কিভাবে? আমি জানি... আমার আম্মা ভালো আছে... অনেক ভালো। কিন্তু আম্মাকে ছেড়ে আমি একেবারেই ভালো নেই। মানুষের সাথে হাঁসি আনন্দ করি... কিন্তু সেটা আম্মাকে ভুলে থাকার জন্যে। সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ানোর অদম্য ইচ্ছা আমার... কিন্তু আম্মার স্মৃতিমাখা জায়গাগুলো বাদে। ঐসব জায়গা আমি একেবারেই না পারলে মাড়াই না। এই কারণেই আমি কোন ঈদে বাড়ি যাই না। একা একা হলেই থাকি। আগে আম্মার কবর জিয়ারত করে আসতাম। কিন্তু ওখানে গেলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে; বুকের ব্যথাটা ভয়ঙ্কর মাত্রায় বেড়ে যায়। তাই আর কবরের কাছেও যাই না... মাঝে মাঝে এই ভেবে এখনও অবাক হই যে, যার মাথার একটা চুলও সাদা হয়েছিল না সেই জন নেই; আর আমার মাথাভর্তি পাকা চুল, আমি বেঁচে আছি!!! ভালো মানুষ দুনিয়াতে বেশিদিন থাকে না; খারাপেরা বেঁচে থাকে- তা প্রমাণ করতেই কিনা আম্মা আমাকে একা রেখে চলে গেলেন। আর আমি আজও বেঁচে রইলাম...
মুম্বাইয়ের ডাক্তাররা যখন আম্মার টাইম লাইন বেঁধে দিয়েছিল আমি সেটা বিশ্বাস করি নাই। করি তো নাই, আম্মাকেও জানাই নাই। আম্মা তাই মাঝে মাঝেই আমাকে বলতেন, তিনি সুস্থ হয়ে কি কি করবেন? আমাকে নিয়ে হজে যাবেন... বাসার পাশের খালি জায়গাটুকুতে কি কি গাছ লাগাবেন... ফাইজা আর জুনায়েদের (আমি যাদের প্রিয় মামা) সাথে আমেরিকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াবেন... আগের মতো বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে সেই বৃদ্ধা মানুষগুলোর সেবা করবেন, এইবার আমাকেও নেবে কথা দিয়েছিল... আরো কত কিছু... ভাবলে অবাক হয়ে যাই, কিভাবে ঐ কথাগুলো শুনে আমি হাসিমুখে আম্মার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারতাম!!!
আম্মা আজ নেই তিন বছর হয়। এই তিন বছরে আম্মার সাথে থাকা স্মৃতিগুলোকে বিস্মৃতির অতল গহ্বরে ফেলে দিয়েছি। দিতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই স্মৃতিগুলো ফিরে ফিরে আসে। যেমন গত কয়েক দিন ধরে আসছে। সেই ছোটবেলার থেকে শুরু করে আম্মাকে কবরে নামানোর পর আমার চোখের ফোঁটা তাঁর নীরব নিথর নরম গালে পড়া ও তাঁকে কবরে একা রেখে উঠে আসার সব স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।
আম্মা সব সময় চেয়েছিলেন, আমি যেন একজন ভালো মানুষ হই, সৎ ও সুন্দর মনের মানুষ হই। কিন্তু আমি সেটা আজও হতে পারিনি। সবার কাছে আম্মার জন্যে দোয়া চাইবো না; চাইবো আমার জন্যে... আমি যেন আমার আম্মার চাওয়া সেই ভালো মানুষটা হতে পারি। আর আমি ভালো মানুষ হলেই সেটা আমার আম্মার জন্যে হবে সবচেয়ে বড় দোয়া...
আর যাদের এই প্রিয় মানুষটি এখনো বেঁচে আছে তাদের বলবো... বলবো না বরং করজোড়ে অনুরোধ করবো যেন নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও এই মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখুন, ভালবাসুন, খুশি রাখুন, আনন্দে রাখুন। মায়েরা চাপা স্বভাবের হয়, অসহ্য কষ্টও হাসিমুখে দিব্যি সহ্য করে যেতে পারেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, আজীবন। এই কষ্টগুলো একটা একটা করে খুঁজে বের করুন। যার পায়ের নীচেই বেহেস্তের মতো চির আরাধ্য বস্তুর সন্ধান মেলে সেই মানুষটা নিজে কি একবার চিন্তা করে দেখুন।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মা......................................
মাগো মা.....................
কেন ছেড়ে চলে যাও
কেন সারা জীবন কাঁদাও
বুঝেও বুঝিনা।
মা......................................ওমা... ওগো মা............................
শয়নে স্বপনে দেখা দিয়ে দিও সান্তনা............................................
++++++++++++++++++++++
আর যাদের এই প্রিয় মানুষটি এখনো বেঁচে আছে তাদের বলবো... বলবো না বরং করজোড়ে অনুরোধ করবো যেন নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও এই মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখুন, ভালবাসুন, খুশি রাখুন, আনন্দে রাখুন। মায়েরা চাপা স্বভাবের হয়, অসহ্য কষ্টও হাসিমুখে দিব্যি সহ্য করে যেতে পারেন দিনের পর দিন, বছরের পর বছর, আজীবন। এই কষ্টগুলো একটা একটা করে খুঁজে বের করুন। যার পায়ের নীচেই বেহেস্তের মতো চির আরাধ্য বস্তুর সন্ধান মেলে সেই মানুষটা নিজে কি একবার চিন্তা করে দেখুন।
শতভাগ সহমত।
৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৪
গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানির সাগিরা"
৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫১
স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
মানুষের সাথে হাঁসি আনন্দ করি... কিন্তু সেটা আম্মাকে ভুলে থাকার জন্যে। সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ানোর অদম্য ইচ্ছা আমার... কিন্তু আম্মার স্মৃতিমাখা জায়গাগুলো বাদে।
অন্তরের গভীর থেকে দোয়া আর ভালোবাসা
রইল আপনার আম্মা ও আপনার জন্য !
ভালো থাকুন প্রিয় ভ্রাতা ।
৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯
কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার বলেছেন । অনেক ভাল লাগলো ।
৬| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৪
সুমন কর বলেছেন: লেখাটি পড়ে মন ভারী হয়ে গেল। কারণ অামি অামার মা'কে প্রায় রাত ৪টার দিকে এক বছর অাগেই হারিয়েছি। অামি বুঝি.................
অার কিছু বলতে পারছি না..................
ভাল থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩০
সুজাহায়দার বলেছেন: ভাই, মাকে'ত শুধু মনে মনে ভালবাসলে হবে না, কিছু করতে হবে, সেটি হল মায়ের জন্য দোয়া করা, আর সেটি করতে মায়ের কবরে যাবেন যিয়ারত করতে, 'রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানির সাগিরা"
ভালবেসে দুরে থকবেন না।
আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন,