![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলার ‘কান্তকবি’ নামে পরিচিত রজনীকান্ত সেন ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জুলাই বাংলা ১২৭২ সালের ১২ই শ্রাবনে বুধবার ভোররাতে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন (এখন অবশ্য ভাঙ্গাবাড়ির নাম সেন ভাঙ্গাবাড়ি বলে ডাকা হয়)। শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাজশাহীতে, ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে বি.এল. পাস করে রাজশাহী আদালতে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। পঞ্চকবির মধ্যে রজনীকান্তের গানই সবচেয়ে বেশি ভাবগম্ভীর এবং দার্শনিকতাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর লেখা গানগুলো ‘কান্তগীতি’ নামে পরিচিত। তাঁর গানগুলোকে দেশাত্মবোধক, ভক্তিমূলক ও প্রীতিমূলক এই কয়েকভাগে ভাগ করা যায়। তবে এর বাইরে তিনি কিছু রম্য গানও লিখেছিলেন। আবগারি বিভাগের পরিচালক দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একবার রাজশাহী এলে তাঁর রম্যগীতি শুনে কান্তকবিও হাস্যরসাত্মক গান লিখতে উৎসাহবোধ করেন। ‘বাণী’ ও ‘কল্যাণী’ গ্রন্থ দুটি কবির গানের সংকলন। তাঁর গানগুলোর সুর মূলত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ঘরানার, তবে এর সাথে কীর্তন, বাউল ও টপ্পার সুরমিশ্রণ দেখা যায়। আইন ব্যবসায়ে মোটেই মন বসে নি, আগ্রহী ছিলেন সঙ্গীত, সাহিত্য ও নাটকে। খুব স্বল্প সময়ে তিনি গান লিখতে পারতেন। রাজশাহীর যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে রজনীকান্তের গান ছিল অবধারিত। নীতিকবিতা লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভা স্মরণীয়, যেমন স্বাধীনতার সুখ,উপযুক্ত কাল প্রভৃতি এর নিদর্শন। রবীন্দ্রনাথকে রজনীকান্ত প্রথম সাক্ষাতের দিন দুটি গান গেয়ে শোনান, কবিগুরু তাতেই বেশ মুগ্ধ হন এবং কান্তকবিকে তাঁর বাসায় আসতে বলেন। কান্তকবির শেষজীবনে অসুস্থতার সময় রবীনদ্রনাথ তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলনের সময় রজনীকান্ত তাঁর সুবিখ্যাত গান ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’ রচনা করেন এবং এই এক গান দিয়েই রাজশাহীর কবি অখ- বাংলার কান্তকবি হয়ে উঠলেন। তাঁর এই গান তৎকালীন স্বদেশী আন্দোলনে ব্যাপক অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছিল। শেষজীবনে রজনীকান্ত কণ্ঠনালীর প্রদাহ জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করেন। তাঁর দুটি গ্রন্থের স্বত্ব বিক্রি করে অস্ত্রোপচার করে কিছুটা সুস্থ হলেও চিরতরে বাকশক্তি হারান। শেষদিনগুলো কাটে হাসপাতালের কটেজ ওয়ার্ডে। অবশেষে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে কবি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন
ব্যক্তিগত জীবন:
তিনি হিরন্ময়ী দেবী নাম্নী এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে (৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) বিবাহ করেন। হিরন্ময়ী দেবী রজনী'র লেখা কবিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। কখনো কখনো তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত ও সমালোচনা ব্যক্ত করতেন। তাঁদের সংসারে চার পুত্র - শচীন্দ্র, জ্ঞানেন্দ্র, ভুপেন্দ্র ও ক্ষীতেন্দ্র এবং দুই কন্যা - শতদলবাসিনী ও শান্তিবালা।
মহা নায়িকা সুচিত্রা সেন যার জন্মগত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত তিনি রজনীকান্তের নাত্নি ছিলেন।
সঙ্গীতজীবন:
রজনীকান্ত শৈশবকাল থেকে সঙ্গীতপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। কোথাও কোন সুমধুর সঙ্গী শুনলেই তিনি সুর, তাল-সহ তৎক্ষণাৎ তা কণ্ঠস্থ করতে পারতেন। তাঁর পিতা গুরুপ্রসাদ সেন একজন দক্ষ সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ফলে পিতার সাহচর্য্যেই শৈশবে সঙ্গীত অনুশীলন করার সুযোগ ঘটে তাঁর। বস্তুতঃ কাব্যের চেয়ে গানের ক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্ব অধিক। যৌবনে সঙ্গীত রচনায় বিশেষ পারদর্শীতার পরিচয় প্রদান করেন রজনীকান্ত।
অক্ষয়কুমারের বাসভবনে আয়োজিত গানের আসরে তিনি স্বরচিত গানের সুকণ্ঠ গায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন । রাজশাহীতে অবস্থানকালে রজনীকান্ত সেন তৎকালীন সময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি দ্বিজেন্দ্রলালের কণ্ঠে হাসির গান শুনে হাসির গান রচনা শুরু করেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে গান রচনায় তার জুড়ি মেলা ভার ছিল। তিনি কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখনীর দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন। ফলে তিনিও তাঁর মতো করে সমগোত্রীয় লেখা লিখতে শুরু করেন।
তাঁর রচিত গানগুলোকে বিষয়বস্তু অনুযায়ী চারটি ভাগে বিভাজিত করা হয়েছে -
1. দেশাত্মবোধক গান
2. ভক্তিমূলক গান
3. প্রীতিমূলক গান
4. হাস্যরসের গান।
তন্মধ্যে - রজনীকান্তের দেশাত্মবোধক গানের আবেদনই বিশাল ও ব্যাপক। স্বদেশী আন্দোলন (১৯০৫-১৯১১) চলাকালে 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই' গানটি রচনা করে অভূতপূর্ব গণআলোড়নের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল।
বাংলাদেশ এবং ভারতের অনেক সঙ্গীত শিল্পী কান্তগীতি গানগুলো গেয়েছেন। তন্মধ্যে - কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, নীলা মজুমদার, পান্নালাল ভট্টাচার্য্য, অনুপ ঘোষাল, নিশীথ সাধু, হেমন্ত কুমার মুখোপাধ্যায়, শ্রীকান্ত আচার্য্য, অর্ঘ্য সেন, জুঁথিকা রায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আরতী মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ছবি বন্দ্যোপাধ্যায়, ইফফাত আরা দেওয়ান, উৎপলা সেন প্রমুখ অন্যতম।
কবির ভিটায় কিভাবে যাবেন:
যদি আপনি সিরাজগঞ্জের বাইরে থেকে আসেন তবে।
সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে অথবা সি এন জি যোগে বেলকুচির চালা বাস স্ট্যান্ড এ নেমে রিকশা অথবা ভ্যানযোগে সেনভাঙ্গাবাড়ী বাজার এ নামতে হবে। এরপর সেনভাঙ্গাবাড়ী বাজার হতে মাত্র ২ মিনিটের হাটা পথে রজনীকান্ত সেনের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এর কাছে যাওয়া যায়।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৩
আমার আকাশে তুমি বলেছেন: তথ্যগুলো যেনে ভাল লাগ্লো