নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বাগতম আপনাকে এক প্রব্রজ্যার প্রবচন রাজ্যে !
দোহাই
আমি এই লিখার মধ্য দিয়ে কিছূ একটা বলতে চেয়েছি । বলাটাই আমার উদ্দেশ্য , যদি এই লিখা আপনার কাছে ফেলনা ও অপাচ্য বলে মনে হয় তবে আমাকে আপনি বিষোদগার করতে পারেন । আমার কোন আপত্তি থাকবে না ।
প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগের ঘটনা ,
ক্যাম্পাসের কাঠ বাদাম গাছের নিচে আমি আমার প্রিয় ম্যান্ডোলিনটা নিয়ে বসে আছি । যেটার ব্রিজ বেশ কিছুদিন আগেই ভেঙে গেছে । ভাঙা ব্রিজ নিয়ে ম্যান্ডোলিন তো আর সুর তুলতে পারবে না , তাই সুর তুলবার বৃথা চেষ্টা না করে পঙ্গু ম্যান্ডোলিনটাকে কোলে নিয়ে বসে আছি । ম্যান্ডোলিনকে কোলে নিয়ে যে বসে আছি এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন হাস্যকর দিক আছে । আর তাই কাঠ বাদাম গাছের আঙিনায় যতজন কপোত-কপোতি কিংবা সংঘবদ্ধ কিংবা বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসীর মত যারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । এমনিতেই আমার একমাত্র সম্বল পঙ্গু ম্যান্ডোলিনের পঙ্গুত্ব নিয়ে দুঃখের শেষ নেই তার ওপর এতগুলো মানুষের বিদ্রুপাত্মক হাসিতে এক বালতি পানিতে জীবন বিসর্জন দিতে ইচ্ছে হয় । তবুও কী আর করা দুঃখের দিনে কী আর হাতড়ে বেরালেও সুখ পাওয়া যায় ? অগত্যা ম্যান্ডোলিনটাকে কোলে রেখেই কাঠ বাদাম গাছের পাতার দিকে নজর দিয়ে মন দিয়ে বসুরো গলায় ব্লগার সোনাবীজের গান গাইতে থাকলাম ,
“মন তার আকাশের বলাকা
দিগন্তে নিঝ্ঝুম বনানী
বিকেল কী সন্ধ্যায়
রোজকার আড্ডায়
লিখে যায় কতশত কাহীনি ।
লিখে যায় কতশত কাহীনি ।
হাতে তার এক গোছা বনফুল
চপলাচপল পায়ে হেঁটে যাআআআআআআআয়......... ”
গানের প্রথম অন্তরাতে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে না দিতেই এক নারী কণ্ঠের প্রশ্ন শুনতে পেলাম “ এই এক গান আর কতবার ? ”
আমার সংগীত সাধনায় কোন মূর্খ রমনী চিরতার রস ঢেলে দিল তা দেখার জন্য পাতার থেকে চোখ সরিয়ে আমার পাশে দৃকপাত করলাম । দেখলাম আমার পাশে চিত্রা দাঁড়িয়ে আছে । বুকের কাছে দুইহাত ভাঁজ করে আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে । প্রশ্নটা আবার করল সে তবে আরও কিছু শব্দ যোগ করে , “ বলছি যে এই এক বদখত গান আর কতবার গাইবে তুমি ? ”
এই মেয়ের এক সমস্যা । ভদ্রতা বলে কিছুই এর জানা নেই আবার শিল্পের মানেটা কী তাও সে জানে না । এই গানকি হিরো আলমের “ও বেবি কাম কাম কামটু মি ” যে বদখত হতে যাবে ? একটা গান লিখা আর সুর করা কী যা তা ব্যাপার ? এটা কী কোন তুচ্ছ কাজ ? এখানে হয়তো কায়িক শ্রম নেই কিন্তু মার্কসের বিমূর্ত শ্রম তো এখানে জড়িত নাকি ! বিমূর্ত শ্রমে গড়া এমন মূর্তমান সৃষ্টিকে সে বদখত বলে দিল ? উচ্চবিত্ত ঘরের মেয়ে , তার ওপর লাস্যময়ী । বংশও নাকি কোন চিপা চাপা দিয়ে মোগল বংশের সাথে সংযুক্ত । সর্বদাই তার চৌদ্দখুন মাফ করি আমার মনে হয় সোনাবীজ সাহেবও আমার জায়গায় থাকলে তার আটাশখুন মাফ করে দিতেন । শত হলেও মোগলরক্ত ধারণ করা এক লাস্যময়ী নারীর ওপর কী আর পাপাভিযোগ করা যায় ? তো এবারও ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি তার ওপর নিক্ষেপ করে বললাম , “ তোমার ধারণা ভুল । তুমি ভুলের রাজ্যে বাস করছ বলে এই গানটাকে এভাবে অপমান করলে । এটা কোন বদখত গান না । বেশ ভালো মানের একটি গান । গানের কথা আর সুর বেশ রুচিশীল , যিনি লিখেছন এবং সুর করেছেন তিনি বেশ কাজের একটা শিল্প সৃষ্টি করেছেন । এমন একটা শিল্পকে তুমি বদখত বলে অপরাধ করেছো যাইহোক তোমার এই অপরাধ আমি মাফ করে দিলাম । ”
আমার কথার বিপরীতে চিত্রা বলল, “ ঠিক আছে মানলাম আমার বদখত বলাটা অপরাধ হয়েছে , হ্যাঁ কথা আর সুর বেশ ভালো কিন্তু গানটার বাজনাতে যে লয় নেই তার বেলায় ? ”
কথাটা শুনেই আমি বললাম , “ সে তুমি বাজনা ছাড়া শুনে দেখ , বাজনা ছাড়া শুনে দেখলেই তো দেখতে পাবে যে গানটা কত সুন্দর । এই যেমন ধরো আমি গাইছি আমি তো কোন বাজনা বাজাচ্ছি না তো তারপরও গানটা সুন্দর বলে মনে হচ্ছে না ? তুমি নিজেই খালি গলায় গাও দেখ তুমিও গানটার প্রেমে পড় কিনা। বাজনার জন্য কী একটা সুন্দর জিনিসকে একেবারে অস্বীকার করে বসব ? শুধু বাজনা দিয়ে গান হয় ? কথা আর সুরের মূল্য কী এতই নগন্য ? ”
আমার কথা শুনে চিত্রা এমনভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি বোকার মত কিছু একটা বলে ফেলেছি । এই মেয়ে যখন আর কথা খুঁজে পায় না অথবা কথায় হেরে যায় তখন এমন আচরণ করে । বুঝতে পারছি সে আর তর্ক করতে চাইছে না । সে আর যেহেতু কিছু বলবে না তাই আবার আমি আমার গান শুরু করলাম ,
“ হাতে তার এক গোছা বনফুল
চপলাচপল পায়ে হেঁটে যাাআআআআয় .......”
অন্তরাটা আবার পুরোপুরি শেষ করতে না দিয়ে চিত্রা বলে উঠল , “ ক্লাসে যাবে না ? আজকে অ্যালবার্ট স্যার ক্লাস নেবেন । ”
আমি আমার গান থামিয়ে বললাম , “ সামষ্টিক অর্থনীতির ক্লাস নেবেন তো ? সেই নিয়ে তো ব্লগে সোনাগাজী হরদম লিখে যাচ্ছে । প্রতিদিন এইসব গিলে তো উদরপূর্তি করছি আবার ক্লাস করতে হবে কেন ? ”
চিত্রা কিছুটা রেগে গিয়ে বলল , “ মানে কী ব্লগে পড়লেই কী সব তাত্ত্বিকতা জেনে যাওয়া যাবে ? ”
এবারও তার কথা শুনে অবাক হলাম । বলে কী এই মেয়ে ! আগের মতই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি দিয়ে তাকে বললাম , “ শোন চিত্রা । ব্লগ কোন হেলাফেলার জিনিস না । এর সুবিধার পরিধি ব্যাপক , এতটাই ব্যাপক যে অল্প সময়ে বলে বোঝানো যাবে না । আরে ব্লগ হলো এই যুগের “ লাইসিয়াম ” এখান থেকেই তো আগামির থিওফ্রাস্টাসরা বেরিয়ে আসবে !! ব্লগের মহিমা অনুধাবন করতে পেরেছি বলেই তো আজকাল হরদম ব্লগেই পড়ে থাকি । ”
কথাগুলো শুনে চিত্রা ফুজিয়ামার আঁচ নিয়ে বলতে লাগল , “ বাহ্ তো তুমি মাস্টার্সটা ব্লগেই তো করতে পারো । পারলে সেখানে একটা চাকরি জুটিয়ে নাও তবে তোমার এই ভাঙা ম্যান্ডোলিন নিয়ে বসে থাকতে হয় না । ”
এই মেয়ের সাথে ক্লাসে না গেলে এই মেয়ে আমার মান ধরে টান যে দেবে তা বেশ বুঝতে পারছি । তাই অগত্যা সোনাবীজের এই গান ছেড়ে নিজের মান বাঁচাতে ক্লাসে চললাম !!
ক্লাসে গিয়ে দেখলাম আমার সবচেয়ে প্রিয় বেঞ্চটা এক শ্যালকের ছানা দখল করে আছে । ঐ বেঞ্চে না বসতে পারলে আমার ক্লাসে যেমন মন বসে না তেমনি অস্বস্তির কারণে ঠিক মত ধাতস্থ হয়েও বসতে পারি না । একবার ইচ্ছে করছিল ক্লাস থেকে বেরিয়েই যাই । কিন্তু স্যার ক্লাসে চলে আসাতে আমার আর বের হওয়া হল না । একদম পেছনের সারির একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম । আমার পাশে এসে বসল চিত্রা । চিত্রা যেহেতু পাশে বসেছে তাতে মনে হয় না এই বেঞ্চে বসতে আমার কোন অস্বস্তি লাগবে । স্যার তার বক্তব্য শুরু করে দিলেন আর আমিও নতুন অচেনা বেঞ্চে বসে সর্বশক্তি দিয়ে স্যারের কথাতে মন দেয়ার চেষ্টার করলাম ।
স্যার সামষ্টিক অর্থনীতির “ তিনখাত বিশিষ্ট ভারসাম্য জাতীয় আয় ” নিয়ে আলোচনা করছিলেন । বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ কেইন্সের তত্ত্ব বোঝাতে শুরু করলেন প্রথমে । বেশ কিছুক্ষণ কেইনস্ সম্পর্কে আলোকপাত করে তিনি এবার ভারসাম্য জাতীয় আয় নিয়ে বলতে শুরু করলেন । আর এই বিষয় বলতে গিয়ে তিনি বললেন , “ ভোগ ব্যয় দুই প্রকার একটি হলো প্ররোচিত ভোগ ব্যয় অন্যটি হলো স্বয়ম্ভূত ভোগ ব্যয় । প্ররোচিত ভোগ ব্যয় হলো যে ব্যয় আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানে আয় হলে ব্যয় হবে কিংবা আয়ের হ্রাস বৃদ্ধি অনুযায়ী ব্যয়ের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটবে । আর স্বয়ম্ভূত ভোগ ব্যয় হলো যেটা আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয় । মানে আয় না হলেও এই ব্যয় সংঘটিত হবে । ”
স্যারের এই কথা শুনেই মাথায় একটা প্রশ্ন আসল , আয় ছাড়া ব্যয়টা হবে কী করে ? ব্যয় করতে হলে তো আয় আবশ্যক না হলে খরচের টাকাটা আসবে কোত্থেকে ? কেইন্স দাদু কী ভুল করলেন ? নাকি পুরোটাই গুল মারলেন ? এমন একটা ত্যাঁড়াব্যাঁড়া কথা কী কেউ জীবনেও শুনেছে ? নাহ্ শুনেনি । আমার মনে হয় এটা একটা ভুল । আর এই ভুলকে অবশ্যই ধরিয়ে দিতে হবে । এভাবে ব্যয় হয় নাকি ?
জগতকে আর এই ভুল অনুসরণ করবার সুযোগ দেয়া চলবে না । দরকার হলে এর বিপরীতে একটা বিপ্লব গড়ে তুলতে হবে । কেউ যদি আমার সঙ্গে না থাকে তবে আমাকে একাই এই বিপ্লব চালিয়ে দিতে হবে । কারণ রবী ভাইয়া বলে গেছেন , যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে , তবে একলা চলো রে । ”
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললাম , “ স্যর । এখানে একটা ভুল আছে । ”
স্যার সবে মাত্র গণিতের ভাষা দিয়ে ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করছিলেন । ঠিক সেই সময় আমার এই কথা স্যারের কানে গিয়ে লাগল । স্যার হোয়াইট বোর্ড থেকে মুখ সরিয়ে নিলেন , আমার দিকে তাকিয়ে বললেন , “ কী বললে তুমি ? ”
বেশ সাহসের সাথে বললাম , “ স্যার এই যে আপনি ভোগ ব্যয় নিয়ে বললেন না , এখানে একটা ভুল আছে । ” স্যারকে কথাটা বলে পাশে বসা চিত্রার দিকে তাকিয়ে একটা বীরত্বের হাসি হাসলাম কিন্তু চিত্রার চোখে মুখে বজ্রাহত বগার ভাব দেখতে পারলাম । মনে মনে ভাবলাম , আজ যা দেখাব তা দেখে এরা সবাই বুঝে যাবে আমি কী জিনিস ! এখন থেকে সবাই সমীহ করে চলবে আমাকে , বিদ্রুপের হাসি আর কেউ আমায় দেখে হাসবে না ।
মুখ ফিরিয়ে স্যারের দিকে তাকালাম আবার । দেখি স্যার রাগে কটমট করতে করতে বললেন , “ কোথায় তুমি ভুল দেখতে পেলে ? ”
আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম , “ স্যার আপনি বললেন না , স্বয়ম্ভূত ভোগ ব্যয় আয় না হলেও সংঘটিত হয়ে থাকে । স্যার এটা তো হতেই পারে না । আয় না হলে ব্যয় হবে কী করে ? এটা তো হাস্যকর কথা । ”
আমার কথা শেষ হতেই সবাই একযোগে হেসে উঠল শুধু স্যার বাদে । প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে সমর্থন করে ওরা হাসছে । কিন্তু পরে বুঝলাম এরা আমাকে বিদ্রুপ করছে । মনটা খারাপ হয়ে গেল আমার প্রশ্নের মধ্যে কী এমন হাসির বিষয় আছে যে এভাবে দাঁত ক্যালাচ্ছে । আবার ওদিকে স্যার হুংকার দিয়ে উঠলেন , “ তুমি কী আমার সাথে ফাজলামি করছ ? ”
স্যারের কথাটা আমার গায়ে লাগল । এখানে উনি ফাজলামির কী দেখলেন ? একটা বিষয়কে আমার ভুল বলে মনে হয়েছে তাই বললাম এর সাথে ফাজলামির কী লেনাদেনা ?
ভেতরে চেপে রাখতে না পেরে বলে ফেললাম , “ ফাজলামি কেন করব স্যার আমি সত্যিই বলছি । এটা তো অসম্ভব একটা ব্যাপার আর অসম্ভব একটা ব্যাপারকে ভুল বলাটা ফাজলামি হবে কেন ? ”
স্যার আর আমার সাথে তর্কে গেলেন না সোজা স্বৈরাচারী আদেশ দিলেন , “ যাও বেরিয়ে যাও ! তোমার মত শাখামৃগকে আমি আমার ক্লাসে দেখতে চাই না । ”
মনটা তেতো হয়ে গেল । ভুল ধরিয়ে দেয়াটাও অপরাধ ? ভুল যদি না হয় তো স্যার আমাকে বুঝিয়ে বললেই হত । নাহ্ এই দুনিয়াই আজব কাণ্ডের অভাব নেই । সবার কাছে হাসির পাত্র হয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলাম । জানি চিত্রাও খুব লজ্জা পাচ্ছে । হয়তো রেগেও আছে । তাই তার দিকে না তাকিয়ে বের হয়ে গেলাম । ক্লাস ছেড়ে আমি আবার ক্যাম্পাসের কাঠ বাদামের গাছের নিচে এসে বসলাম । মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে তাই আবার সোনাবীজের গান গাইতে শুরু করলাম । অন্তত এতে করো যদি সব কিছু ভুলে মনটা শান্ত হয় ।
এমনিতেও আজকে গানটার একটা অন্তরাও পুরোপরি গাইতে পারিনি তাই শুরু করলাম প্রথম অন্তরা থেকে ।
“
হাতে তার একগোছা বনফুল
চপলাচপল পায়ে হেঁটে যায়
সহসা সে মেলে দিয়ে পাখনা
মিশে যায় পাখিদের মিছিলে
এইভাবে প্রতিদিন ভোর হয়
তারপর কী হয়
আমি তার সন্ধান রাখি নি । ”
গানটা আমি যখন গাই তখন আমি নির্জন কোথাও থাকলেও আমার নিজেকে কখনও একা মনে হয় না । কারণ , গানটা গাইলে আমার চোখের সামনে ভাসতে থাকে একটি মুখ । যার প্রশস্ত কপালের লাল টিপকে মনে হয় বিস্তীর্ণ নীলিমায় অস্তগামী সূর্য । তার কাঁধ পর্যন্ত নেমে আসা ঢেউ খেলানো চুলকে মনে হয় কালো কোন সমুদ্রের কালো ঢেউ । যার চোখের জমিনে অন্তত পুরো একটা জীবনে চষে বেরিয়ে কাটিয়ে দেয়া যাবে । এই মুখটা যখন আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে তখন মনে হয় সে আমার সাথে আছে । আর তখন তাই নিজেকে একা লাগে না ।
আমি জানি আমি চিত্রাকে ভালোবাসি । তবে চিত্রা আমাকে ভালোবাসে কিনা তা আমি জানি না । আমাদের মধ্যে সম্পর্কটা এখনও ভালো বন্ধুর সম্পর্ক । অনেকবার চেয়েছি আমি আমার ভালোবাসার কথাটা তাকে বলব । কিন্তু বলিনি । এমনিতেই সে বিত্তবানের মেয়ে । তার ওপর মোগল বংশের রক্ত ধারণ করা মেয়ে । তার বাবা যে ঢাল তলোয়ারবিহীন আকবর তা অনেক আগে থেকেই জানি । আমার মত একটা ভেগাবন্ডকে সে যে মেনে নিবে না তা তো আর স্বয়ম্ভূত ব্যয়ের মত অদ্ভূত নয় যে অনুমান করা যাবে না । তাছাড়া আমার তো একটা ভাঙা ম্যান্ডোলিন বাদে সম্বল বলতে আর কিছু নেই । এখন আমার অবস্থা এমন যে সকালের নাস্তা না করে ঘর থেকে বের হই দুপুরেও বাসায় যাই না খেতে । একদম রাতে গিয়ে বাসায় ঢুকি তখন ছোট বোন লুকিয়ে এসে থালভরা ভাত খেতে দেয় । আমার সেটা গিলতেও বাধে । বাবাকে আমার মত একজন অকর্মন্যকে বয়ে বেরাতে হয় , এই ব্যাপারটা আমাকেও খুব কষ্ট দেয় । কিন্তু আমার যে অবস্থা তাতে তো ভালো কোন চাকরি আমার জুটবে না । দায়িত্ব নেবার কোন ক্ষমতা যখন আমার নেই তখন আর এসব ভালোবাসার কথা অন্যকে বলে কী লাভ ? তাই চুপ করে থাকি সবসময় । আর কল্পনায় চিত্রাকে ধরে রাখি । এই পাথুরে জীবনে একটু হলেও তো নির্মলতা প্রয়োজন তাই না ?
আচমকা মনে হলো আমার এখন এই ক্যাম্পাস থেকে সটকে পড়া উচিত কারণ এখনও ক্লাস চলছে ক্লাস যদি শেষ হয় তবে চিত্রার জেরা থেকে আমার বাঁচা অসম্ভব । আর এমনিতেও চিত্রা আমার আজকের এই কাজের জন্য বেশ অপমানিত হযেছে । সবাই জানে সে আমার ভালো বন্ধু । নিশ্চয়ই তাকে ক্লাসের অন্যরা সবাই কিছু না কিছু বলবে । এতে মেয়েটার অপমানিত হবার আর কোন বাকী থাকবে না । তাই উঠে পড়লাম । বেরিয়ে গেলাম ক্যাম্পাস থেকে ।
রাজপথে এসে গন্তব্যহীনের মত হাঁটতে থাকলাম । পকেটে টাকা নেই , কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই । সাথি কেবল আমার এক অকেজো ম্যান্ডোলিন আর মাথার ওপর গনগনে সূর্য । হাঁটছি আমি ঢিম তালে । খাদ্যজনিত কারণেই হোক কিংবা নিজের বেহাল অবস্থার জন্যই হোক আমার হাঁটার গতি ইদানিং বেশ কম । তবুও আমাকে হাঁটতেই হবে হাঁটলে আমার ভেতরটা শান্ত হয় অনেক কিছু ভুলতে পারি আমি । কিন্তু আজ অনেকটা পথ হেঁটেও আমার মনটা ভালো হচ্ছে না । মনের ভেতরে মনে হয় কোথাও একটা ভূমিকম্প বয়ে যাচ্ছে অবিরত , আমার প্রতিটা পদক্ষেপে বাড়ছে তার কম্পন । ধীরে ধীরে কম্পন বাড়তে বাড়তে হয়তো আমিই ধ্বসে যাব । ধ্বসে গেলে হয়তো এর চাইতে স্বর্গীয় আর কিছুই হত না । কিন্তু মনে হয় না সেই সময় এসেছে , অন্তত আজকে নিজেকে ধ্বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে না ।
তাই হাঁটতে হাঁটতে আবার গান ধরলাম , সোনাবীজের গানটাই ! কারণ গানটা গাইতে শুরু করলে আমার চোখের সামনে চিত্রা এসে হাজির হবে । কিছুক্ষণ সব ভুলে থাকতে পারব । আর হাঁটতে পারব অনেকটা পথ । হঠাৎ মনে হলো আমার ম্যান্ডোলিনটাকে একবার জিজ্ঞেস করা উচিত সে গান শুনতে চায় কিনা । ম্যান্ডোলিনটা মুখের সামনে এনে বললাম , “ কীরে গান শুনবি ? সোনাবীজের গান ? আমার মতই গানটা , লয়হীন । কিন্তু বিশ্বাস কর এর মধ্যেও আমার মত বিশাল মায়া বাস করে । শুনে দেখ ভালো লাগবে । ”
আমার ম্যান্ডোলিন আমার নিয়তির মতই চুপ থেকে রইল । আমি গান ধরলাম ,
“ চোখ তার পুকুরের কালো জল
নিটোল ঢেউয়ের মতো স্বপ্নীল
রাতের আঁধারে বোনা সুখ তার
তারাদের সাথে হয় মিতালি
এইভাবে রাতগুলো কেটে যায়
তারপর কী হয়
কী হয়
কী হয়
ঘুমহীন কেটে যায় যামিনী । ”
গাইতে গাইতে অনুভব করলাম বেয়াড়া চোখ দুটো জলে টলমল করছে আর সেই মূল্যহীন জলের মধ্য দিয়েও আমি চিত্রাকে দেখতে পাচ্ছি । আর সব কিছুর মত আমার বেহাত হতে যাওয়া চিত্রাকে !!!
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০৩
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আমার ব্লগাস্তানায় আপনাকে স্বাগতম ! ধন্যবাদ এমন সুমন্তব্যের জন্য !!!
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা রম্য হিসেবেই ধরে নিলাম।
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩১
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আপনার মর্জিমত এই লিখাকে শৈলীভুক্ত করুন !!
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:১৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: পড়ে ভালোই লাগলো। ইস চিত্রা
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৪
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: জেনে আমারও ভালো লাগল । আর হ্যাঁ চিত্রারা এমনই হয় অধরা থেকে যায় অথবা বেহাত হয়ে যায় !!
৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার!
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:২৪
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ অগ্রজ !!
৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫৬
শেরজা তপন বলেছেন: পুরোটা পড়তে পারলাম না- পড়তে পারলে ফের মন্তব্য করব।
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১০:৫৮
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ঠিক আছে অপেক্ষায় থাকলাম !!
৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৫
নিমো বলেছেন: উপরে যারা মন্তব্য করেছেন তারা আদৌ লেখাটা পড়েছেন বলেতো মনে হয় না, হলে লেখাটা যে দুবার এসেছে সেটা কেউ দেখেন নি । আপনার বলতে চাওয়া বেশ ভালো হয়েছে। পোস্ট করার সময় প্রিভিউ দেখে নিলে বোধহয় এই সমস্যা হবে না।
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৮
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে আমার ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য । আর যারা কমেন্ট করেছেন আমার মনে হয় তারা সদয় করে আমার এই ভুল এড়িয়ে গেছেন !
৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:০৭
রেজাউল৮৮ বলেছেন: বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফৃ।
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১৩
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ঠিক বুঝলাম না মিয়া ভাই !!
৮| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৩২
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: রেজাউল৮৮ বলেছেন: বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফৃ।
উনি আসলে মজার লোক।।তিনি মিন করেছেন লেখাটা দুইবার এসেছে।
সুন্দর পোস্ট +।
২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৩৬
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: রেজাউল ভাইয়ের কথাটা পরে বুঝতে পেরেছি । আমাকে সাহায্য করবার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন ! আর প্লাসের জন্য ধন্যবাদ !!
৯| ২২ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: এত উৎকৃষ্ট মানের লেখা ব্লগে শেষ কবে পড়েছি, আমার মনে পড়ে না। প্রফেসর শঙ্কু, পুলহ, গল্পকার আহমেদ জি এস, মাহমুদ০০০৭, ডি মুন, জুলিয়ান সিদ্দিকী, গল্পকার জাদিদ (কা_ভা), প্রমুখ ব্লগারের নাম উঠে এলো এ লেখাটা পড়ে।
পুওর ব্লগার সোনাবীজের পুওরার গানটা একটা উপজীব্য বিষয় মাত্র। এ গানকে উপলক্ষ করে একটা 'অকর্মণ্য', ভার্সিটি-পড়ুয়া, বাবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে পড়ে থাকা, চিত্রা নাম্নী তিক্ষ্ণ-ভাষিণী এক সহপাঠিনীর পাণিপ্রার্থী এক তরুণের জীবনগাথা চিত্রায়িত করা হয়েছে। লেখকের রচনাশৈলীতে আমি মুগ্ধ, আপ্লুত এবং ঈর্ষান্বিতও বটে। আমি আসলে বাকরুদ্ধও।
তীক্ষ্ণ ও সূক্ষ্ম হাস্যরস দিয়ে শুরু হলেও গভীর জীবনবোধের করুণ রস সঞ্চারণের মধ্য দিয়ে লেখাটা শেষ হয়েছে।
সোনাবীজের গানটা ২০১৩ বা ২০১১ সালের দিকে লেখা হয়। কোনো এক অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের নাচের অনুষ্ঠানে ব্যবহার করার কথা চিন্তা করে। কিন্তু এটার সুর তখনো চূড়ান্ত হয় নি। দীর্ঘ ৮-১০ বছরে সুর অনেক বিবর্তিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। আমি জানতাম, এ গানটা ব্লগে হয়ত কারো নজরে আসবে না। এমনিতেও, এত ঘন ঘন এত বেশি গান আমি ছাড়ি যে, কারো পক্ষেই এতখানি সৌজন্য দেখানো সম্ভব না সবগুলো গান একবার টাচ করে দেখা। তারপরও আমি অবাক ও আপ্লুত বোধ করছি, আপনি অনেকগুলো গানের নীচে থেকে এ গানটাকে আইডেন্টিফাই করেছিলেন।
আপনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না। একটা বিষয় নিশ্চিত, আপনার মগজ ভর্তি সোনা; আপনি যা লিখবেন তাই সোনা হবে এবং তাই হবে এ ব্লগের সম্পদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা, ধ্বংসের আওয়াজ।
২২ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৩৯
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আপনি যেভাবে মূল্যায়ন করলেন আমি তেমন না । নিতান্তই ধ্বস নামা একটি জীবনের বালুচর আমি । প্রতিদিন নিয়তির ঢেউ আমার ওপর আছড়ে পড়ে হরদম । আমি তাতে ভিজে যাই আবার শুকাই । আমি তেমনই !
চিত্রার কথার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী । বললাম না মোগল বংশের মেয়ে ........................।
আমি আসলে আপনার গান নিয়েই লিখতে চেয়েছি । কিন্তু গত ২৪ ঘন্টায় কী বোর্ডে ডতবার হাত চালিয়েছি ততবার আপনার গান নিয়ে লিখতে গিয়ে আরেকটি গল্প দাঁড়িয়ে গেছে । আমি ভাবতেই পারিনি আপনার এত ভালো লাগবে । আমি সত্যিই আশ্চর্য বোধ করছি ।
আপনার কাছে অনুরোধ থাকবে সুরটা যেন থেমে না যায় । লয় থাকুক বা না থাকুক মায়া থাকলেই হলো । মায়া ছাড়া কী শিল্প হয় ?
আমার নামের অর্থ মনে রাখবার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন । আল্লাহ আপনার সুর ও কথাতে সমৃদ্ধি দান করুক ! ভালো থাকবেন সোনাবীজ অথবা ধুলোবালি ছাই কিংবা এক জন সুর পরিব্রাজক !!!
১০| ২২ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: সোনাবীজ আসলে কে? তার নাম কি? সে কি শুধু গান পছন্দ করেন? তিনি আর কি কি নিকে সামুতে লিখছেন?
২২ শে নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৩৮
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আমার মতে সোনাবীজ একজন সুর পাগলা মানুষ তার নাম আমি খুঁজতে যাইনি । খুঁজে কী লাভ ? তার নাম তো তাঁর পুরো পরিচয় বহন করে না । তাই নামে নিয়ে আমার আগ্রহ নেই । আর সামুতে তাঁর অবদান নিয়ে আমি আসলে তালাশ করিনি । আমার নিজেরই অবদান নেই তার অবদানের হিসাব রাখি কী করে ? মানুষের অবদান আসলে বর্তমানে বোঝা যায় না । এই যেমন থরুন জীবনানন্দ, ওনার অবদান কী সেই সময়ে সবাই বুঝেছে ? সময়ের আবর্তনে জানা যাবে অবদান কার কেমন !!
১১| ২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ৮:৪৪
এইযেদুনিয়া বলেছেন: আয় না হলে আসলে ব্যয় হবে কিভাবে? স্যার বললেই পারতেন তিনি এ প্রশ্নের জবাব জানেন না, তা নয়, ক্লাস থেকে বের করে দিলেন! হইলো কিছু?
২৬ শে জুন, ২০২৩ রাত ৯:১০
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: হাহাহাহাহা ,
অর্খনীতির শিক্ষক তো বেশি বেয়াড়া । কী আর করা , আমার কাছে আজও রহস্য হলো এই তত্ত্বটা । বুঝতেই পারছি না আয় ব্যতীত ব্যয় হবে কী করে ।
সে যাক ধন্যবাদ পড়বার ও মন্তব্য করবার জন্য !!
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:০১
শায়মা বলেছেন: হুম!
ভালোই হয়েছে দুঃখময় লেখাটা।