![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সর্বপ্রথমে একজন মা, তারপর একজন প্রেমিকা আর একজন লেখক
#পিয়াসী_মন (প্রথম পর্ব)
------ তানিয়া নিগার
কলেজ থেকে বের হতেই বৃষ্টি শুরু হলো। যেমন তেমন বৃষ্টি নয় একেবারে ঝুম বৃষ্টি। মেজাজটাই বিগড়ে গেল পিয়াসীর। একে তো সঙ্গে ছাতা নেই , এসাইনমেন্টের কিছু কাজে ল্যাপটপ নিয়ে এসেছিল আজ ।এই বৃষ্টির কারণে ওটারও বারোটা বেজে যাবে। ওর নিজের হলে কথা ছিল।তিন্নি থেকে কয়েকদিনের জন্য ধার করে এনেছে। ল্যাপটপের কিছু হলে তিন্নিকে কি জবাব দেবে?মহিলা কলেজের আশেপাশে কোন দোকান নেই যেখানে অপেক্ষা করে দেখে বৃষ্টি থামে কিনা। চিন্তাগুলো মাথায় নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই আনমনে হাঁটছিল পিয়াসী। হঠাত্ ঘ্যাঁচ করে প্রাইভেট কারের ব্র্যাকের শব্দে সম্ভিত ফিরে পেল ও। ধাতস্থ হয়ে দেখলো, ওরই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে কারটি।পিছনের সিটে বসা ঝলমলে চেহারার এক মহিলা কাঁচ নামাচ্ছে। ওর দিকে তাকিয়েই হাসিমুখে বলল, তুমি কোথায় যাবে ,চলো নামিয়ে দেই। পিয়াসী মনে মনে ভীষণ ভয় পেল।কোন এক অজানা অচেনা মহিলা ওকে লিফটের অফার করবে আর ও লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসবে,এই মহিলা ওকে এত বোকা ভাবলো কি করে। পিয়াসী বললো, কাছেই আমার বাসা।হেঁটেই চলে যেতে পারবো, ধন্যবাদ আপনাকে। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি ভয় পাচ্ছো।চারিদিকে এত অরাজকতা তোমার ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এভাবে ভিজলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।আমি মিসেস সাজিয়া রহমান।রহমান গ্রুপ অব কোম্পানিজ এর এমডি। অফিসিয়াল কিছু কাজে খাগড়াছড়ি এসেছি।আমাকে বিশ্বাস করতে পারো, আমি তোমার মায়ের বয়সী।এসব বলার পর মহিলা এক রকম জোর করেই ওকে গাড়িতে তুলে বসালো। পিয়াসী কিছুটা সন্দেহ , কিছুটা দ্বিধা নিয়ে আড়ষ্ট হয়ে সাজিয়া রহমানের পাশের সীটে উঠে বসলো। সাজিয়া জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় নামাতে হবে তোমাকে? এইতো সোজা গিয়ে পানখাইয়্যা পাড়ায় আমাদের বাড়ী, পিয়াসী কাঁপা কাঁপা স্বরে উত্তর দিল। সাজিয়া ড্রাইভারকে পিয়াসীর নির্দেশনা অনুযায়ী যেতে বললেন। এতক্ষণে মেয়েটিকে ভাল করে খেয়াল করলেন তিনি। বেশ ফর্সা অদ্ভূত মায়াময় চেহারার একটা মেয়ে। প্রথম দেখাতেই যে কেউ এই মেয়ের মায়ায় আটকে যাবে।উপজাতীয় নাকি বাঙ্গালী চেহারা দেখে বোঝার উপায় নেই।ভাষায়ও কোন উপজাতীয় টান আছে বলে মনে হলো না। নাম জিজ্ঞাসা করতে যখন মুখ খুলবেন ঠিক তখনই পিয়াসী বলল, এটাই আমাদের বাড়ি নামিয়ে দিন। ড্রাইভার মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ওকে নামিয়ে দিলো।পিয়াসী সাজিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে গিয়ে পুরনো মরিচা ধরা এক লোহার গেটের ভিতরে ঢুকে গেল। কেন যেন খুব মন খারাপ হলো সাজিয়ার।দেখার পরই এক অদ্ভূত অাকর্ষনবোধ করছিল মেয়েটির প্রতি।কে এই মেয়ে?ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি এসে এ কোন মায়ায় বাঁধা পড়লেন তিনি?জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পিয়াসীর গমন পথের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে রইলেন সাজিয়া।
কাকভেজা হয়ে পিয়াসী যখন বাসায় আসলো তখন ওর মা সপ্তপূর্ণা ত্রিপুরা বারান্দায় বসে পাটি বানাচ্ছিলেন।বললেন, তাড়াতাড়ি কাপড় পাল্টে নাও জ্বর হবে। পিয়াসী সায় দিয়ে ভিতরে চলে গেল।বাবা হারাধন ত্রিপুরা এসময় দোকানে থাকেন। মোটামুটি বড় এক মুদি মালের দোকান ওদের।ভালোই ইনকাম হয়।পিয়াসী আর ওর ছোট বোন মহিয়সীকে নিয়ে ভালোই চলে যায়। এলাকায় সচ্ছল পরিবার হিসেবে অনেক সুনাম ওদের। মেয়েদুটি ভীষণ ভাল বলে সবার খুব প্রিয়।পিয়াসী খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে আর মহিয়সী এবারের এস এস সি পরীক্ষার্থী।পড়াশোনায়ও ভীষণ ভাল ওরা।(চলবে)
©somewhere in net ltd.