নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেটা নই যেটা আপনি ভাবছেন..!! আমি সেটাই যেটা আপনি ভাবছেন না.!! আমাকে ভাবা যায় না..!! বুঝতে হয়.!!

আর. এন. রাজু

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না। এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

আর. এন. রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"নিয়তী"

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:১০

ভাইয়া আমাকে বাঁচান!
কথাটি শুনে পিছনে ঘুরে তাকালাম।
আমি একা রাস্তা দিয়ে হাটতেছি।
হঠাৎ একটি মেয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে এসে
বললো "ভাইয়া ঐ লোকটার হাত থেকে আমাকে
বাঁচান।"
মেয়েটি দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। পড়নে
বিয়ের পোশাক, হাতে মেহেদী দেয়া। হঠাৎ একটা
লোক এসে আমাকে বললো ভাইয়া আমার বউকে
ছেড়ে দিন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না যে কি
করবো। মেয়েটির দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখি
অসহায় হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কী
নিষ্পাপ চেহারা।
আমি লোকটিকে বললাম এখান থেকে চলে
যেতে না হলে পুলিশ ডাকবো। লোকটি আমার
দিকে তেড়ে আসছিলো। আমি সর্বস্ব শক্তি দিয়ে
লোকটির কান বরাবর একটি ঘুষি মারলাম। লোকটি কানে
হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো। আমি
মেয়েটিকে নিয়ে দ্রুত বাসায় চলে আসলাম। কলিং
বেল চাপতেই মা দরজা খুলে দিলো। আমার সাথে
মেয়েটিকে দেখে মা আশ্চর্য হয়ে আমার
দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি মেয়েটিকে নিয়ে
ভিতরে ঢুকে ড্রয়িং রুমে বসালাম। তৎক্ষনাৎ বাবাও
আসলো। মা বললো,
> মেয়েটি কে?
:- মেয়েটি রাস্তায় বিপদে পরেছিলো তাই নিয়ে
আসলাম।
>স ত্যি বলছিস নাকি অন্য কিছু।
:- সত্যি বলছি।
মা আর কিছু বললো না। বাবা-মা দুজনকেই আজ রাতে
মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে রাজি করালাম। মা বললো
মেয়েটি যেনো সকালেই চলে যায়। মেয়েটি
স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।
.
মেয়েটিকে ফ্রেশ হতে বলে কিছু খাবার নিয়ে
আসলাম। দেখেই মনে হচ্ছে আজ সারা দিনে কিছু
খায় নি। মেয়েটিকে এবার কিছু টা শান্ত মনে হচ্ছে।
মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম আসলে কি
হয়েছিলো?
মেয়েটির মধ্যে কিছুটা জড়তা লক্ষ্য করলাম।
মেয়েটিকে নির্ভয় দিয়ে বললাম, "বিশ্বাস করে যখন
আমার সাথে এসেছেন পুরো ঘটনা খুলে বলুন।
যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
এবার সে বলতে লাগলো,
"আমার নাম অহনা। আমার বয়স যখন ১০ বছর তখন আমার
মা-বাবার ডিভোর্স হয়। আমি প্রথমে কিছু দিন বাবার
কাছে থাকি। প্রায় ১ বছর পরে বাবা আবার বিয়ে
করলেন। সৎ মা আমাকে সহ্য করতে পারতেন না। বাবার
সামনে ভালো ব্যবহার করলেও বাবার অগোচরে
আমার গায়ে হাত তুলতেন। আমাকে বাসা থেকে
চলে যাওয়ার জন্য বলতেন। আমি বিষয় টা বাবাকে জানাই।
বাবা সৎ মাকে খুব বকাবকি করে। সৎ মা তখন বাবাকে
বলে মেয়ে না হয় বউ দুজনের একজনকে
বেছে নিতে হবে। বাবা তখন আমাকে আমার আপন
মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমি আমার মায়ের
কাছে এসে দেখলাম মা ও আরেক টা বিয়ে
করেছেন। মায়ের কোলে তখন ৭ মাসের একটা
ছেলে। মা আমাকে ভালো খাবার ভালো পোশাক
পড়তে দিতেন কিন্তু ছোট বাবুটাকে ধরতে দিতেন
না কারন আমি ওর সৎ বোন। এভাবে ৩ বছর কেটে
গেলো। মায়ের বর্তমান স্বামী প্রবাস থেকে
ফিরে আসার পরেই মা আমাকে একটি হোস্টেলে
রেখে আসলেন। মা এবং বাবা দুজনেই মাঝে মাঝে
দেখতে আসতেন। এভাবে হোস্টেলে
থেকে আমি এইচ,এস,সি পাশ করি। তারপর বাবা আমাকে
ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেন এবং নিজের বাসায়
নিয়ে আসেন। কিন্তু সৎ মা আমাকে কখনো
মেনে নিতে পারে নি।অনেক কষ্টে আমার দিন
কাটছিলো। একদিন রোড এক্সিডেন্টে বাবা মারা যান।
তারপর সৎ মা আমাকে আমার মায়ের কাছে চলে
যেতে বলেন। সেই সময় আমি সৎ মায়ের কাছে
অনুরোধ করি ঐ বাসাতে থেকে যাওয়ার জন্য। সৎ মা
বললেন পড়াশোনা করা যাবে না বাসায় কাজ করার
বিনিময়ে দুবেলা খেতে দিবেন। উপায়ন্তর না
দেখে আমি রাজি হই। এভাবে অনেক দিন কেটে
যায়। কিছু দিন পর সৎ মায়ের বন্ধু প্রায়ই আসতে শুরু
করেন। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় ও থাকতেন। মা
তার ঐ বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক
করলেন। আমি পালিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু দুদিন
অনাহারে রাস্তায় ঘুরা ঘুরি করে কাটিয়েছি। উপায়ন্তর না
দেখে শেষে সৎ মায়ের কাছে ফিরে যেতে
বাধ্য হয়েছি। দুবেলা খেতে পারবো ও অত্যাচার
সহ্য করতে হবে না এই ভেবে বিয়েতে রাজি হই।
যার সাথে আমার বিয়ে হবার কথা তিনি প্রায়ই আমাদের
বাসায় আসতেন এবং আমার সাথে জোর করে কথা
বলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু আমার মোটেই ভালো
লাগতো না। আস্তে আস্তে বিয়ের দিন ঘনিয়ে
এলো। বিয়ে শেষ করে শ্বশুড় বাড়িতে গেলাম।
বড়লোক বাড়ি। কোনো কিছুর অভাব নেই কিন্তু
মনুষ্যত্বের বড় অভাব। আমি বাসর ঘড়ে ঢুকলাম।আমার
শ্বাশুড়ি খুব ভালো মানুষ। হঠাৎ দরজায় কড়াঘাতের
আওয়াজ শুনে দরজা খুলতেই শ্বাশুড়ি আমাকে
বললেন যদি বাঁচতে চাই তবে যেনো এখুনি পালাই।
আমি বুঝতে পারিনি কি হতে চলেছে আমার সাথে।
হঠাৎ করে আমার স্বামী আমার শ্বাশুড়ির হাত ধরে
টেনে নিয়ে গেলেন। আমার স্বামীকে এ
কাজে তার কয়জন বন্ধু সাহায্য করছিলো। তার কিছু সময়
পর রুমে চারজন লোক ঢুকলো সাথে আমার
স্বামীও ছিলো।
পরে যা ঘটলো তা ইতিহাস হার মানায় ঐ চারজন লোক
বিছানায় এসে বসলো।আমার স্বামী সোফায় বসে
মদ খাচ্ছে আর হাসছে। লোকগুলো খুব বিশ্রি
ভাবে গায়ে হাত দিতে লাগলো।
কি করবো ভেবে না পেয়ে বিছানা থেকে পালাবার
চেষ্টা করি।কিন্তু তারা আমাকে ধরে ফেলেন। তারপর
আমি টেবিলে রাখা ফুলদানি দিয়ে একটা লোকের
মাথায় জোড়ে আঘাত করি আর সেখান থেকে
পালিয়ে আসি। রাস্তায় আপনার সাথে দেখা হয়"।
.
মেয়েটির কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। পরের দিন
সকালে সব কথা মাকে বললাম। মা কিছুই বললেন না। আমি
বললাম মা ওকে আমাদের বাসায় রাখা যায় না। মেয়েটির
তো কোনো দোষ নেই। মা বললো এরকম
মেয়েরা বড়লোকদের ফাদে ফেলে পরে
সবকিছু নিয়ে চলে যায়। এদের বিশ্বাস করা ঠিক না। আমি
হঠাৎ গেস্ট রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি
আমাদের সব কথা শুনে নীরবে চোখের জল
ফেলছে। আমি নিজে স্বাবলম্বী ছিলাম না বলে
মেয়েটিকে আটকে রাখতে পারি নি। একটু পরে
মেয়েটি আমাকে বললো, "আমি চলে যাচ্ছি।
গতরাতে আমাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য আপনার কাছে
কৃতজ্ঞ।"
আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায়
যাবেন? মেয়েটি বললো জানি না। তারপর চোখের
পানি মুছতে মুছতে মেয়েটি চলে গেলো।
.
আমি কখনো মানুষ হিসেবে দাঁড়াতে পারি নি। অমানুষ
হিসেবেই আছি।।
ভালো তো দুরে থাক খারাপের খাতায় সবার শেষে
আমার নাম।।
হয়তো একদিন আমি ও মানুষের কাতারে দাঁড়াবো।।
তবে তার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
.
এর পরে মেয়েটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।
প্রায় তিন বছর পর একটি পার্কে বসে আছি। হঠাৎ মুখে
ঘোমটা দেয়া একটি মেয়ে এসে জিজ্ঞেস
করলো ভাইয়া কেমন আছেন?
আমি বললাম ভালো আছি।
মেয়েটি কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলো। আমি ডাক
দিয়ে বললাম, তুমি কে?
মেয়েটি বললো আমি অহনা তিন বছর যাকে পাষন্ড
স্বামীর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আমার মনে
পরে গেলো সেই দিনের কথা।
আমি বললাম, মুখ ঢেকে রেখেছো কেনো?
সে বললো আমার মুখ দেখলে আপনিও হয়তো
ঘৃণা করবেন চিনতে পারবেন না। যেমন টা আমার আপন
মা ও চিনতে পারে নি।
আর কিছু না বলে মেয়েটি চলে গেলো। আমি
নির্বাক হয়ে মেয়েটির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে
মেয়েটির নিয়তির কথা ভাবতে লাগলাম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: সিনেমাটিক গল্প!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৫

আর. এন. রাজু বলেছেন: :)

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.