নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেটা নই যেটা আপনি ভাবছেন..!! আমি সেটাই যেটা আপনি ভাবছেন না.!! আমাকে ভাবা যায় না..!! বুঝতে হয়.!!

আর. এন. রাজু

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না। এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

আর. এন. রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুর্ঘটনা

০৬ ই মে, ২০১৯ সকাল ৮:১১

_ "বাবা, সাইড নিয়ে হাঁটো । এই জায়গাটায় এসে তিনদিক দেখেশুনে রোড পার হবে । বলা যায় না কখন কোনদিক থেকে আজরাইল এসে পড়ে । "
-
এই একটি বাক্য আমি প্রতিদিনই শুনি । আমার মায়ের মুখে থেকে নয় তবে একজন ছেলেহারা মা'র মুখ থেকে শুনছিলাম ।
-
প্রতিদিনকার মতো আমি আজও হাঁটার জন্যে বের হলাম মেস থেকে । মন যখন খারাপ থাকে তখন আমি প্রায় সময়ই এই দিকে হাঁটতে বের হই একা একা । আমি প্রতিদিন দেখি একজন মহিলা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন, বসে নেই কিন্তু । তিনি পায়চারি করেন । একজায়গায় বসে থাকেন না । এই রাস্তা দিয়ে কেউ গেলে বা আসলে তাঁকেই নিজের ছেলে মনে করে উক্ত কথাটি বলেন যা আমাকে প্রতিদিনই বলতেন । আমি খুবই আশ্চর্য হতাম উনার এমন উপদেশ দেখে । কেনোনা রাস্তাঘাটে কতধরণের লোক নানাকাজে এই রাস্তা দিয়ে যায় । সবাইকেই কেন তিনি উক্ত কথাটি বলে হুশিয়ার করে দেন । এর পিছনে আসলে কী কারণ থাকতে পারে? আমার মনে এই কৌতূহল নিয়ে আজ জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, -
_ "আচ্ছা আপনি প্রতিদিন আমাকে কেন হুশিয়ার করে দেন এই মোড়ে আসলেই?"
উনার উত্তর ছিলো, তখনি উনার চোখে পানির টলমল দেখা গেলো-
_ "আমার ছেলের বয়স ২৪ বছর । সবে মাত্র পা দিয়েছে ২৪ বছরে । ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো । একদিন সে বড় হবে এবং ইঞ্জিনিয়ার হবে । আমার ছেলেকে আমি অন্যের বাড়ি রান্নাবান্নার কাজ করে পড়াশোনা করিয়েছি । ছেলেটি আমাদের পরিবারের অবস্থা বুঝতো । সেও পড়াশোনার পাশাপাশি রিক্সা চালাতো এই সিলেট শহরে । রিক্সা চালিয়ে যে দুপয়সা পেত সেগুলো দিয়ে সে তার পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নিতে পারতো আর আমি মানুষের বাড়ি কাজ করে যা পেতাম তা দিয়ে কোনোরকমে খেয়েপড়ে থাকতাম আমার গ্রামে । ছেলেকে সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি করিয়েছি টাকা ধার করে এনে । সেগুলোর সুদও আমার ছেলে রিক্সা চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলো । ছেলের চোখেও খুব বড় স্বপ্ন ছিলো, সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে এবং তার মায়ের স্বপ্ন ও ইচ্ছা পূরণ করবে ।
কিন্তু আমার ছেলে স্বপ্ন পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়নি । এর আগেই উপরওয়ালা তাকে নিয়ে গেছেন ।
প্রতিদিনকার মতো সেদিন সকালেও আমার ছেলে রিক্সা চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে বের হয়েছিলো কিন্তু এই জায়গায় এসে সে আর যেতে পারেনি । তিন রাস্তার মোড় থাকায় ডান দিকের রোড থেকে একটা গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা মেরে চলে যায় । আমার ছেলেটা রিক্সা থেকে পড়ে যায় । রক্তমাখা দেহ নিয়ে সে ছটফট করছিলো আমার ছেলেটা । কতই না কষ্ট পেয়ে ওর জান চলে গেছে । গরমের দিন ছিলো । হয়তোবা আমার ছেলেটা একটু পানি খেতে চেয়েছিলো । ধীরে ধীরে আমার ছেলের চোখ বন্ধ হয়ে যায় । আশেপাশের লোকেরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন । মারা যাওয়ার সাথে সাথেই আমার ছেলের স্বপ্ন এবং আমার স্বপ্ন থেমে যায় ।
আমার একটা মাত্রই ছেলে । আমি ওকে ছাড়া কীভাবে বাঁচবো ভেবে কোলকিনারা পাচ্ছি না ।
-
তিনি যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন কাঁদছিলেন আর শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছিলেন । আমার মন ভারী হলো ছেলে হারানো এই মায়ের কান্নার শব্দে । আমি অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম । এরপর আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেন, "রাস্তাঘাট দেখে চলবে বাবা । আমার ছেলে মারা গিয়েছে কিন্তু আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয় ।"
-
Friday, 03 May 2019

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কষ্টে বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো। আর যেনো এমন সন্তান হারা মায়ের করুণ কাহিনী শুনতে না হয় :(

০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪

আর. এন. রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য ।

২| ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৬

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হে কেডা আবার সব পোস্টে লেদাইতাছে

০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৫০

আর. এন. রাজু বলেছেন: হাহা! আপুনি @lilian nikky এর কমেন্ট পড়ে যা বুঝলাম তা হলো গিয়ে কোনো একটা লিখাকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে ।

৩| ০৬ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০৯

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সিস্টেমটা আমাদেরই তৈরি তাই ভুক্তভোগিও আমরা নিজেরাই।

০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৫২

আর. এন. রাজু বলেছেন: দাদা, কিসের সিস্টেমের কথা বললেন?

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য । আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ।

৪| ০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ আমাদের সবাইকে রক্ষা করুক।

০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৫২

আর. এন. রাজু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য । আপনার জন্য শুভকামনা রইলো ।

৫| ০৬ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:৩২

সুমন কর বলেছেন: হুম, মন খারাপ করে দেবার মতো লেখা।। সাবধানে চলাফেরা করবেন।

০৭ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৭

আর. এন. রাজু বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.