নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেটা নই যেটা আপনি ভাবছেন..!! আমি সেটাই যেটা আপনি ভাবছেন না.!! আমাকে ভাবা যায় না..!! বুঝতে হয়.!!

আর. এন. রাজু

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে। কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না। এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

আর. এন. রাজু › বিস্তারিত পোস্টঃ

"পরিকল্পিত ধর্ষণ"

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫০

_ "এ্যাই শুনছো, আজকে অনুপমার স্কুলে অনুষ্ঠান আছে আর প্রধান শিক্ষক বলেছেন আমরা দুজনেই যেন সেই অনুষ্ঠানে আমাদের সন্তানের সাথে উপস্থিত থাকি । চলনা তুমি আর আমি দুজন মিলে অনুপমার সাথে যাই । ও অনেক খুশি হবে ।" (অদ্রিকা)
_ "আমি যেতে পারবো না । জানোই তো আজকে একটা মিটিং আছে যে কারণে আজ আমার জন্মদিন থাকা সত্বেও আমি তা উপেক্ষা করছি ।" (অনুপম), ঠিক তখনি অনুপম-,
_ "এই যে মামণি আমার,
আসোতো এদিকে । বলোতো আজ কয় তারিখ?"
_ "বাবা,
আজ তো ২৭ শে ফেব্রুয়ারি । আজ তোমার জন্মদিন বাবা আর আমার সেটা মনে আছে কিন্তু বাবা আমি চেয়েছিলাম তুমি আজ বাড়িতে থাকো আমরা একসাথে বিকেলে ঘুরতে বেরুবো । চলনা বাবা আজকে আমরা ঘুরে আসি?" (অনুপমা)
_ "না মামণি,
আজকে যে বাবা একদম বেরুতে পারবে না । নয়তো বস আংকেল যে তোমার বাবাকে খুব বকবে । তুমি কি চাও তোমার বাবা বকা শুনোক? চাও না তো, তাহলে আমরা অন্য আরেকদিন ঘুরতে যাবো ঠিক আছে সোনামণি আমার? "

অনুপমা কোনো উত্তর না দিয়ে মুখে রাগ ভাব নিয়ে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো । এইসব লক্ষ্য করছিলো অদ্রিকা । অদ্রিকা অনুপমকে বললো-,
_ "কেমন বাবা হয়েছে তুমি যে একটামাত্র মেয়ের খুশি পূরণ করতে পারো না? এই ছোট্ট মেয়েটির প্রতি এই তোমার ভালোবাসা
? তুমি কী একবারো ভেবেছো, এই খুশির দিনে তুমি মেয়েটিকে কতটা কষ্ট দিয়েছো?
ভাববেই বা কেনো, তোমার কী আমাদেরকে নিয়ে ভাবার কোনো সময় আছে? নেই, কারণ তুমি তোমার অফিসের কাজ আর তোমার বসকে নিয়েই আছো । আমাদের জন্য একটু সময় পর্যন্ত নেই তোমার কাছে ।"
_ "দেখো, শুধু তোমাদের খুশি দেখলে আমার চলবে না । আমাকে আরো বড় হতে হবে । তুমি খুব ভালো করেই জানো যে, আমি একটা ব্যবসা করতে চাচ্ছি আগামী বছরে তাই আমার অনেক অর্থের প্রয়োজন তাই আপাতত এই চাকরীটা করছি । অর্থ উপার্জন করে নিজে একটা ব্যবসা খুলবো এবং সেটাকে পড়ে দাড় করাবো । শহরের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নামের তালিকায় আমার নাম উঠাবো । আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে । আমাকে আরো উপরে উঠতে হবে ।"

এই বলে অনুপম টি টেবিলে থাকা ল্যাপটপ ব্যাগটা হাতে নিয়ে কাঁধে রেখে বেড়িয়ে পড়লো । যখনি অনুপম দরজা থেকে বাহিরে বের হলো তখন অদ্রিকা দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে একটিবার অনুপম পিছনে তাকাবে এই ভেবে । কিন্তু অদ্রিকার এই ভাবনা আজও সত্যি হয়নি । অনুপম বাসা থেকে বেড়িয়ে গাড়িতে করে সোজা অফিসের দিকে চলে যায় । পিছন ফিরে একবারো তাকানোর প্রয়োজনটুকু মনে করেনা ।
-
অনুপম আর অদ্রিকার বিয়ের হয়েছে আজ ১০ বছর । তাদের ৯ বছরের একটা মেয়ে আছে । অদ্রিকা মেয়ের নাম অনেক আদর করেই রেখেছিলো অনুপমের নামের সাথে মিল রেখে । নাম রেখেছিলো অনুপমা । অনুপমা ক্লাস ৪ এ পড়ে । অনুপম একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করে । ভালোই বেতন পায় । সে চায় বড় হতে । তার এই বড় হবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার পরিবারের উপর অন্ধকারের ছায়া নামাতে শুরু করে । পরিবারের প্রতি অনুপমের কোনো আগ্রহই নেই ।
-
অফিসের কাজের জন্যে প্রায়শই অনুপমকে ট্যুরে থাকতে হয় । মাসের ৩০ দিনের মধ্যে ১৫ দিন কি ১৬ দিন অনুপম ট্যুরেই থাকে । বাড়িতে একটা ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে অদ্রিকা একাই থাকে । তার ভয় হলেও কিছু করার নেই । তার এই কষ্ট কাউকে বলতে পারেনা । কীভাবেই বা বলবে, এগুলো কি পাঁচকান করার ব্যাপার?
-
অদ্রিকা সবসময় চাইতো "তার স্বামী একটা বার তার দিকে তাকাক । একটি বার তাকে জড়িয়ে ধরুক । একটি বার তার হাতটি ধরে বলুক "চলোনা আজ হাঁটতে বের হই?" কিন্তু অদ্রিকার চাওয়া পূরণ হতো না । কতদিন সে নিজে থেকেই চেষ্টা করেছে অনুপমের কাছে ঘেষার কিন্তু অনুপম "আমার কাছ আছে । আজ কিছু ক্লায়েন্টের ডেটা সংস্করণ করতে হবে । তুমি ঘুমিয়ে পড়ো । আমি আরো ঘন্টাখানেক পড়ে ঘুমাবো কাজ সম্পন্ন হলেই ।"
অদ্রিকার চোখে সাথে সাথেই চোখের কোণে পানি চলে আসতো । সে কি চাইতো সেটা একবারো বুঝার চেষ্টা করেনা অনুপম । একটা মেয়ে তার স্বামীর থেকে একটু আদর-সোহাগ আর ভালোবাসাই চায় । এরচেয়ে বেশি কিছু চায়নি অদ্রিকা । সর্বক্ষণ এড়িয়ে চলতো অদ্রিকাকে । অদ্রিকা দেখতে খুব সুন্দর এবং অনুপমের মতেই বিয়েটা হয়েছে আর সে খুব পছন্দও করে । কিন্তু অনুপমের এভাবে অদ্রিকাকে অবহেলার মূল কারণ হলো গিয়ে তার কাজ । কাজের জন্যেই সে তার পরিবারকে অন্ধকাররূপ আকার ধারণ করাচ্ছে ।

যে সন্তানের বাবা-মা উভয়ের স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসা পাওয়ার কথা সেখানে সে তার বাবা থাকা সত্বেও বাবার ভালোবাসা পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন । পরিবারের খুশি অর্থাৎ তার স্ত্রী অদ্রিকা ও মেয়ের খুশি অনুপমের কাছে তুচ্ছ বলেও মনে হয় ।

একটা সংসারে পুরুষলোক থাকা সত্বেও অদ্রিকাকে প্রতিদিন বাজারে যেতে হয় বাজার করতে । পথযাত্রিরা কত লোক কত ধান্ধায় চলাফেরা করে । মহিলা/মেয়ে দেখলেই তারা লোভাতুর দৃষ্টিতে হা করে তাকিয়ে থাকে । দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে একজন মেয়েকে । অদ্রিকার এসব ভয় করা সত্বেও বাধ্য হয়ে তাকে বাজার করতে যেতে হয় ।
সেদিন তো মুদিদোকানের এক লোক ওর কেনা সামগ্রী ব্যাগে ডুকিয়ে হাতে বাজারের ব্যাগ দেওয়ার সময় খারাপ উদ্দেশ্যে অদ্রিকার হাত ধরে থাকে । ছাড়ছে না, অদ্রিকা চিৎকার দিতে চাইলে লোকটি কথা ঘুরিয়ে ফেলে ভুলে হাত লেগে যাওয়া বলে আর ক্ষমা চেয়ে নেয় । অনুপমা নিরুপায় । যে মেয়ের কখনো বাসা থেকে বের হতে হতো না তাকেই আজ বাজার করতে এমন লোভাতুর দৃষ্টির লোকদের পাশ হেঁটে বাজার করতে আসতে হয় ।
অনুপম আর অদ্রিকার বৈবাহিক সম্পর্কটা দিন দিন অনুপম নিজেই সংসার ভাঙ্গার দিকে নিয়ে যাচ্ছে । দিনদিন সে খিটখিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছে । ভালো প্রশ্ন করলেও সে রেগে উত্তর দেয় । হাঁপিয়ে উঠেছে অদ্রিকা অনুপমের এমন ব্যবহারের প্রতি ।

অদ্রিকা যা চায় তা সে পাচ্ছে না তার স্বামীর থেকে । সে জ্বালা তার ভিতরটা খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে । না কাউকে কিছু বলতে পারছে আর না সহ্য করতে পারছে । তার এ সংসারটির উপর বিতৃষ্ণা এসে গেছে । একঘেয়েমি এসে গেছে একা একা সবকিছু চালাতে ।

অদ্রিকা বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে কিন্তু মৃত্যুর দুয়ার থেকে প্রতিবার ফিরে আসছে তার ছোট্ট মেয়েটির জন্যে । সে যদি চলে যায় তাহলে তো অনুপমা একা হয়ে যাবে । "যে বাবার কাছে আমাদের কারোর ভালোবাসার কাছে কোনো দাম নেই সেই বাবা মেয়েকে দেখবে না আমি মারা গেলে ।" এটা ভেবেই সে আত্মহত্যা করা থেকে ফিরে আসে ।

অদ্রিকা প্রতিদিনের ন্যায় আজও মেয়েকে স্কুলে ছেড়ে আসলো । গাড়ি পাচ্ছিলো না বলে হেঁটে হেঁটে আসতে হয়েছিলো তাকে কিন্তু খুব ভয় করছিলো তার ভিতরে কেনোনা লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছু লোকেরা । অদ্রিকার মনের মধ্যে একটা ভয় থাকে যে, "কখন যে কেউ পিছন থেকে এসে তার হাত ধরে ।" শুধু এই ভয়টাই পায় সে ।

আজ অফিসের কাজে অনুপমকে দেশের বাহিরে যেতে হবে । ভিসাও রেডি করা হয়েছে । আজ বিকেলেই রওনা দিতে হবে । তাই সে আজ অফিস থেকে আজ একটু তাড়াতাড়িই আসলো বাসায় । বাসায় ডুকেই প্রথমে ভালোবাসার সুরে ডাকলো অদ্রিকাকে-,
_ "এ্যাই অদ্রিকা শুনছো,
এদিকে এসো ।"
› অদ্রিকা অনুপমাকে পড়াচ্ছিলো । যখনি অনুপমের এমন ভালোবাসা ভরা মধুর সুরের ডাক শুনলো তখন সাথে সাথে সে নিচে আসলো । পিছে পিছে অনুপমাও আসলো । অদ্রিকা কেনো জানি একটুতেই হাঁপিয়ে গেলো আজ, আর বললো-,
_ "কী ব্যাপার?
আজ এত তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলে যে? শরীর খারাপ করলো নাকি । সোফায় বসো আমি জল দিচ্ছি ।"
› এটা বলেই যেই না সে সিড়ি দিয়ে নামতে লাগলো তখন অনুপম বললো-,
_ "না না, শরীর ভালো আছে । আসলে আজকে অফিস ট্যুরে যেতে হচ্ছে দেশের বাহিরে তাই আজ বস ছুটি দিলেন যাতে সবকিছু ঘুছিয়ে নিতে পারি সময়ের মধ্যেই ।"
_ "ও আচ্ছা এই ব্যাপার ।"
› অদ্রিকার মন ভার হলো অনুপমের দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা শুনে ।
_ "আরে আরে,
মন ভার করো না ৪ দিনেরই তো ব্যাপার । এরপর তো চলেই আসবো । চলোতো আজ আমরা ৩ জন একসাথে ভাত খাবো । ভাত বাড়ো ।

খাওয়া শেষ করে অনুপম তখনি এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে, যাওয়ার আগে অদ্রিকা কে জড়িয়ে ধরে বুকে এবং মেয়ের কপালে চুমু আকেঁ । আজ অনুপম চলে যাওয়ার পূর্বে প্রতিবার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছিলো । অদ্রিকা অনেক খুশি হয়েছিলো অনুপমের এমন ব্যবহারে । কিছুক্ষণের জন্য তার মনে হচ্ছিলো "তার আগের অনুপমকে সে ফিরে পেতে চলেছে ।"
-
অনুপম চলে যাবার পর দরজা আটকে দেয় অদ্রিকা এবং সাথে সাথে অনুপমের কল আসে আর বলে "তুমি একদম চিন্তা করো না । আর নিজের খেয়াল রেখো এবং মেয়েরও ।" ফোন রেখে দেয় । এরপর অদ্রিকা মেয়েকে পড়ানোর বদলে মেয়ের সাথে আজ খেলবে ঠিক করে । যেই ভাবা, সেই কাজ । তারা দুজনে খেলতে থাকে । ঠিক তখনি একটা কল আসে অদ্রিকার ফোনে । নাম্বারটি অচেনা ছিলো তাই ধরতে চায়নি কারণ অনুপম জানলে বকা দিবে । বেশ কয়েকবার নাম্বারটি থেকে ফোন আসতে থাকে । একপর্যায়ে সে ফোন তুলতে বাধ্য হয় এবং কল রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে যায় । তখন তাদের হাসিমাখা মুহুর্তটা অন্ধকারময় হয়ে যায় । কেউ একজন ওপাশ থেকে বলছে -,
-
_ "আপনার স্বামী অবৈধ জিনিস সাথে করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের হাতে ধরা পড়েছেন ।"
_ "না স্যার,
আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে । উনি এমন কাজ করতে পারেন না । উনি তো অফিসের কাজে দেশের বাহিরে যাচ্ছেন । উনাকে ছেড়ে দিন স্যার ।"
-
› অদ্রিকার কথাকে উপেক্ষা করে-,
-
_ "আপনি যদি আপনার স্বামীকে ছাড়াতে চান তাহলে এখুন চলে আসুন যে ঠিকানা পাঠাচ্ছি ম্যাসেজে সেই ঠিকানায় । আর হ্যাঁ সাথে করে ১ লক্ষ টাকা নিয়ে আসেন । আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিচ্ছি, যদি সুস্থ ও সবল অবস্থায় আপনার স্বামীকে আপনি চান তাহলে আপনি আর এ ব্যাপারে কাউকে জানাবেন না । একা আসবেন আপনি । কাকপক্ষীটিও যেন এ ব্যাপারে না জানতে পারে ।"
_ "আচ্ছা স্যার আমি আসছি ।" বলে অদ্রিকা ফোন রেখে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে আলমিরা থেকে নগদ ১ লক্ষ টাকা নেয় এবং অনুপমাকে প্রতিবেশির কাছে রেখে যায় । পরে সে নিম্নোলিখিত ঠিকানায় যায় । কাউকে জানায় নি । যেমন যেমন ফোনে বলা হয়েছিলো ঠিক তেমন তেমনভাবে সে সব কথা শুনেছে ।
ঠিকানায় পৌঁছানোর পর সে সেই নাম্বারে কল দিলো, আর বললো-,
_ "স্যার,
আমি চলে আসছি । কোথায় আসতে হবে এখন? আপনারা যা যা বলেছেন আমি সব করেছি । সাথে নগদ ১ লক্ষ টাকা এবং আমি একা এসেছি । কাউকেই জানাইনি । দয়া করে আমার স্বামীর সাথে খারাপ কিছু করবেন না প্লিজ ।"
_ "আচ্ছা আপনি যেখানে আছেন সেখানের সামনের গলি দিয়ে ডুকে বামের রাস্তা ধরে সোজা আসুন ।"

অদ্রিকার মনে খটকা লাগলো যে, এরা যদি পুলিশ হয়ে থাকে তাহলে পুলিশ স্টেশনে ডাকার কথা । এখানে এই নির্জন বসতিতে কেন ডাকছে । ওরা কী আসলেই পুলিশ নাকি ডাকাত?
অদ্রিকা এসব ভাবনা মন থেকে সরিয়ে শুধু ভাবছে যে "ওর স্বামী বিপদে আছে তাই ওদের কথাই শুনতে হবে ।"

ওদের দেওয়া দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে একটা নির্জন গলিতে এসে যায় আর কিছুক্ষণ পরেই সে বুঝতে পারে যে, সে কোথায় আসছে নিজেও জানেনা । কিন্তু যেহেতু ওর স্বামী আছে ওদের কাছে তাই স্বামীকে ছাড়িয়ে ঠিক সুস্থিরমতো বাড়িতে পৌঁছে যাবে ।

এসব ভাবার পরক্ষণেই অদ্রিকা ঠের পেল কেউ একজন পিছ থেকে তার পেটে এবং মুখে আরেক হাত দিয়ে চেপে ধরে নিয়ে যাচ্ছে । তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে সে, নিজেই বিপদে পা দিতে আসছে ।

একটা অন্ধকার এক কোণে রুমে ঘুটিসুটি মেরে বসে আছে অদ্রিকা । কখন সে জ্ঞান হারিয়েছিলো মনে করতে পারছে না শুধু এটাই মনে আছে যে, কেউ একজন তার পেট আর মুখ চেপে ধরে নিয়ে এসেছে । এরপরের কিছুই তার মনে নেই । যেই না অদ্রিকা বসা থেকে উঠবে ঠিক তখনি বুঝতে পারলো যে তার তলপেটে অস্বাভাবিক একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে । হাঁটতে পারছে না । খুঁড়াচ্ছে শুধু । তখনি রুমে লাইট জ্বলে উঠলো আর ৭ জন মানুষ ছিলো অদ্রিকার সামনে । অদ্রিকা নিজের শরীরের দিকে তাকাতেই দেখলো ওর গায়ের কাপড় ছেঁড়া এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে নকের আছড়ের দাগ । অদ্রিকার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এখানে তার সাথে আসলে কি পাষবিক জোরজবরদস্তি নির্যাতন হয়েছিলো । সে যে ধর্ষিত হয়েছে বুঝতে আর একটুও ভুল হলো না ।
অদ্রিকার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৭ জনের লোকের মধ্যে থেকে একজন লোক বলে উঠলো-,

_ "পুরো ১ মাস ধরে তোকে আমরা অনুসরণ করে আসছি । কখন তোর স্বামী অফিসে যায়, তুই কখন তোর মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাস, কখন ফিরিস, কখন বাজার করতে যাস সব আমরা লক্ষ্য করতাম । তোর ভরা যৌবন আমাদের পাগল করতো । কতদিন তোর সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়েছি তোর চুলের ও তোর শরীরের গন্ধ শুকার জন্য তুই তা বুঝতেও পারিস নি । তোকে কাছে পাওয়ার জন্য, তোকে গভীরভাবে কাছে পাওয়ার জন্য মনটা বেকুল থাকতো সবসময় । তাই সব কাজকর্ম ফেলে রেখে তোকে ভোগ করার সুযোগে থাকতাম কিন্তু কখনো সুযোগ হয়ে উঠতো না । আজ ঠিক করেছিলাম যে তোর বাসায় গিয়ে তোকে ভোগ করবো । তাই তোর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হই আমরা সবাই কিন্তু হঠাৎ তোর স্বামী চলে আসে । ও এসেই সব সমস্যা বাঁধালো । আমরা থেমে গেলাম তখনি আর তোদের সব কথা শুনলাম । যখন শুনলাম তোর স্বামী আজ অফিসের কাজে দেশের বাহিরে যাচ্ছে তখনি একটা বুদ্ধি আঁটলাম । যখন তুই দরজা আঁটকালি তখন তোর স্বামীর পিছন পিছন আমরা যাই এবং আমাদের সিএনজিতে ওকে তুলি । তোর সাথে যখন ও ফোনে কথা বলছিলো আমরা শুনছিলাম কারণ আমরা মোট তিনজন ছিলাম তখন সিএনজিতে । ও মোবাইল পকেটে রাখতে গিয়ে মোবাইলটা পড়ে যায় সিএনজির সিটে । সেটা তোর স্বামী বুঝতে পারেনি । আমিও সুযোগ করে মোবাইলটা হাতিয়ে নিই এবং সাথে সাথেই স্যুইচট অফ করে দিই । এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিই এবং অপেক্ষা করতে থাকি তার বিমানে উঠার । আমরা আগে থেকেই জানতাম যে, বিমানে যাত্রীগণ উঠে গেলে তাদের সবার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেওয়া হয় কিন্তু তোর স্বামী ভুলে মোবাইল ফোন ফেলে যায় আর তাই তোকে ফোনে জানাতেও পারেনি যে, সে এখনই বিমানে উঠবে ।
এরপর তোর জানা আছে কি কি হয়েছে ।

এরপর ধর্ষণকারীরা অদ্রিকার ওর বাসার সামনে ছেড়ে দিয়ে যায় প্রায় রাত ৮ টার দিকে । অদ্রিকা একদম চুপচাপ ঘরে ডুকে । এরপর ধর্ষণকারীরা একটা তালা মেরে দিয়ে যায় অদ্রিকার বাসায় । অদ্রিকার তখন মেয়ের কথা মাথায় নেই । শুধু ভাবছে যে ও কতবড় ভুল করেছে আর তার সাথে এসব কি হয়েছে । কাঁদতেও পারছে না । তার কাছে মনে হচ্ছে যে, কাঁদা সে ভুলে গেছে ।
_
অনুপমের কাজ শীগ্রই শেষ হয়ে যায় বিধায় সে পরের দিন বিকেলের ফ্লাইটেই চলে আসে এবং পরশুদিন সকালে এসে দেশে পৌঁছে । দেশে পৌঁছেই ফোন কিনে নেয় এবং নতুন সিম কার্ড কিনে নেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে কারণ বিদেশ থাকাকালীন সময়েও ফোন রিসিভ করেনি । খুব চিন্তায় ছিলো সে তাই কাজও ঠিকমতো করতে পারেনি । কারণ সে জানে যে, তার একটা ফোন কলের আশায় বসে থাকতো অদ্রিকা আর সে জায়গায় সে অনেকবার কল দেওয়ার পরেও তুললো না । যাই হোক, নতুন সিম দিয়েও কল দিচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না । ভাবলো, হয়তো নতুন নাম্বার দেখে তুলছে না । তাই আর কিছু না ভেবে সোজা বাসায় চলে এলো । এসে দেখে দরজা বন্ধ ।
ও ভেবাচেকা খেয়ে গেলো । এ সময়ে অদ্রিকা কোথায় যেতে পারে । আজ তো অনুপমার স্কুলও নেই । প্রতিবেশীর বাসায় যাওয়ার জন্য যেই না ঘুরলো তখনই তার চোখ গেলো তালাটার দিকে আর অবাক হলো যে এই তালা তো ওদের না । তখনি ওর সন্দেহ হলো । প্রতিবেশীর বাসায় গেলো খোঁজ নিতে । গিয়ে দেখলো তারই মেয়ে ওদের বাসায় । অনুপমাকে "মা কোথায় সোনা?" জিজ্ঞেস করলে অনুপমা বলে "বাবা, বাবা কাল তুমি যাওয়ার পর একটা ফোন আসে আর মা তখন তাড়াহুড়ো করে এত্তগুলো টাকা নিয়ে কোথায় জানি গেলো কিন্তু জানো বাবা কাল মা আর ফিরে আসেনি । তাই আমি মার উপর রাগ করে আছি । সেজন্য দেখোনা এখনো রাগ করে বাসায় যাইনি । আর দেখেছো, মাও এখনো আমাকে নিতে আসেনি ।"

মেয়ের এমন কথায় এখন অনুপম ভয় পেতে শুরু করলো । এখন আর ধৈর্য্য ধরতে পারলো না । সোজা বাসার সামনে গিয়ে ইট দিয়ে ঘরের তালা ভেঙ্গে বেডরুমে যায় এবং গিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকে, কারণ সামনেই ঝুলে আছে অদ্রিকার লাশ আর কাপড় ছেড়া এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আছড়ের দাগ কালছে রুপ ধারণ করেছে । ইতিমধ্যে প্রতিবেশী কাকা অমল বাবুর দুই হাতের উপর অনুপমের শরীর অবশ হয়ে পড়ে গেলো । অমল বাবু অনুপমের চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরলে তার চোখ পড়ে ঠিকঠাকভাবে ঘুছানো বেডের উপর । একটা সাদা চিঠি রাখা । সে সেটা হাতে নিলো, তাতে লেখা ছিলো-,

"কাল তুমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসে যেভাবে আমাকে ভালোবাসার সহিত ডেকেছিলো তখন আমার মনপ্রাণ একেবারে জুড়িয়ে গেছিলো । প্রায় কিছুক্ষণের জন্য শীতল হয়ে গিয়েছিলো আমার শরীর । এরপর যখন বললে "চলো আজ ৩ জনে একসাথে খাবো ।" তখন আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমি ক্ষণিকের জন্যে স্বর্গে বাস করছি ।" যখন তুমি খাওয়া-দাওয়া শেষে দেশের বাহিরের যাওয়ার জন্য বেরুবে তখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে, তখন আমার মনে হয়েছিলো এভাবেই তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকি । আর যখন বেড়িয়ে পড়েছিলে তখন বার বার পিছনে তাকাচ্ছিলে আর আমার মনের ভিতরটা প্রতিবারই আনছান আনছান করছিলো ।
আমি শুধু তোমার থেকে এই ভালোবাসাটাই পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার কাছে এটার জন্য সময় ছিলোনা ।
তুমি যেই সিএনজিতে উঠে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলে সেই সিএনজিতে ড্রাইভারসহ ৩ জনই ছিলো ধর্ষক, যারা আমাকে ধর্ষণ করেছে । তোমার ফোন তারাই চুরি করেছে । আর তাদের সিম থেকে আমাকে কল দিয়ে বলেছে "তুমি নাকি অবৈধ জিনিস সাথে করে নিয়ে যাওয়ায় তোমাকে আটক করা হয়েছে ।"
একথা শুনে আমার ভিতরে পানি ছিলো না । তোমাকে ছাড়ানোর জন্য ওরা ১ লক্ষ টাকা নিয়ে যেতে বলে আমি নিয়ে যাই, এবং আরো বলে আমি যদি আর কাউকে বলি বা সাথে করে নিয়ে যাই তাহলে তোমার ক্ষতি করবে । বার বার তোমার ফোনে কল দিচ্ছিলাম কিন্তু ডুকছিলো না কারণ ওরা চুরি করার পরে তোমার মোবাইল বন্ধ করে দেয় । আমার কাছে তখন তুমিই ছিলে বড় । আমি দিশেহারা হয়ে যাই ।
আমি ওদের দেওয়া ঠিকানায় যাই । যখন বুঝতে পারি যে আমি বিপদে পা দিয়েছি ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো । আমাকে অবিশ্বাস করো না প্লিইজ ।
আর শুনো, আমাদের মেয়ের খেয়াল রেখো । আর ও এখনো বাচ্চা । তুমি নতুন আরেকটা বিয়ে করো আর এই শহর ছেড়ে অন্য শহরে চলে যাও । এই শহর একটুও ভালো না, একটুও না ।
মেয়ের খেয়াল রেখো, আর হ্যাঁ তোমারও খেয়াল রেখো । তোমাকে খুব ভালোবাসি অনুপম, অনেক ভালোবাসি ।
ইতি
তোমারই প্রিয়তমা
অদ্রিকা.."

অদ্রিতা চিঠি লিখছিলো আর চোখের পানি গাল বেয়ে চিঠির কাগজে পড়ছিলো,
কেনোনা ভেসে আছে চোখের নোনাজল ।

অনুপম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, আজ আমার কাছে তোমাকে মনপ্রাণ ভরে ভালোবাসার জন্য প্রচুর সময় আছে, কিন্তু তুমি নেই, শুধু আমার তুমি নেই ।

Sunday, 01 September, 2019

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আর একটু গুছিয়ে লিখুন।
বড্ড অগোছালো মনে হলো।

২| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪

নীল আকাশ বলেছেন: গল্পের থীম ভাল তবে অযথাই টেনে টেনে গল্প বড় করেছেন।
লেখার ফরম্যাটও নষ্ট হয়ে গেছে। পোস্ট দেবার আগে প্রিভিউ ভাল করে
দেখে নেবেন।
গল্প লেখার সময় মুল জায়গাটা নিয়ে বেশি কাজ করবেন। অদ্রিকার ধর্ষনের পরে অনুভূতিগুলি
আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন।
আরও বেশি বেশি করে লিখুন।
শুভ কামনা রইল।

৩| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০১

নতুন বলেছেন: ধষনের কাহিনি পাল্টাতে হবে....

নারীদের নতুন ম্যাসেজ দিতে হবে সমাজে...

ধষনের পরে নারী হার মানবেনা, প্রতিশোধ নেবে, ঘুরে দাড়াবে এবং সমাজ ধষকদের বিরুদ্ধে দাড়াবে...

খুবই ছোট একটা গল্প মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে....

ধষনের কাহিনি লিখতে হবে নতুন করে.... এমন করে ধষিতার আত্নহত্যার কাহিনি পড়তে চাইনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.