![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হু - সম্পূর্ন রাজনীতি মুক্ত একটি ব্লগ। এখানে বাংলা সহ বিশ্ব সাহিত্যের মজার কিছু ছোট গল্প প্রকাশ করা হবে। এই গল্প গুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার নিজস্ব কোন সৃজনশীলতা নেই যেটি আছে সেটি হলো পরিশ্রম। এছাড়া মাঝে মাঝে নিজের লেখা দু একটি ছোট গল্প পেতে পারেন, তবে সেই গল্পের মান নিয়ে আমি নিজেই সন্দিহান। এই ব্লগটির বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব, সমাজ, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা প্রকাশ করতে আগ্রহী।
মোল্লা নাসীরুদ্দীনের নামে অনেক গল্প প্রায় হাজার বছর ধরে পৃথিবীর নানান দেশে লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের মতে এইসব গল্পের জন্ম তুরষ্কদেশে, কারণ সেখানে এখনো প্রতি বছর নাসীরুদ্দীনের জন্মোৎসব পালন করা হয়।
মোল্লা নাসীরুদ্দীন যে ঠিক কেমন লোক ছিলেন সেটা তার গল্প পড়ে বোঝা মুশকিল। এক এক সময় তাকে মনে হয় বোকা, আবার এক এক সময় মনে ভারী বিজ্ঞ।
১
রাস্তার কয়েকটি ছোকরা ফন্দি করেছে তারা মোল্লাসাহেবের জুতোজোড়া হাত করবে। একটা লম্বা গাছের দিকে দেখিয়ে তারা মোল্লাসাহেবকে বললে, ‘ওই যে গাছ দেখেছেন ওটা চড়ার সাধ্যি কারুর নেই’।
‘আসার আছে, বরে মোল্লা সাহেব জুতোজোড়া পা থেকে না খুলেই গাছটায় চড়তে শুরু করলেন।
বেগতিক দেখে ছেলেরা চেচিয়ে বলল, ও মোল্লা সাহেব, গাছে আপনার জুতো কোন কাজে লাগবে কি?
মোল্লা সাহেব গাছের উপর থেকে জবাব দিলেন ‘গাছের মাথায় যে রাস্তা নেই তা কে বলতে পারে?’
২
নাসীরুদ্দীনের বন্ধুরা একদিন তাকে বলল, ‘চল আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়ি খাব’।
‘বেশ, এসো আমার সঙ্গে,’ বলল নাসীরুদ্দীন।
বাড়ির কাছাকছি এসে সে বলল, ‘তোমরা একটু সবুর কর, আমি আগে গিন্নীকে বলে আসি ব্যবস্থা করতে’।
গিন্নী ত ব্যাপার শুনে এই মারে ত সেই মারে। বললেন, ‘চালাকি পেয়েছ? এত লোকের রান্না কি চট্টি খানি কথা? যাও, বলে এস ওসব হবেটবে না’।
নাসীরুদ্দীন মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘দোহাই গিন্নী, ও আমি বলতে পারব না। ওতে আমার ইজ্জত থাকবে না’। তবে তুমি ওপরে গিয়ে ঘরে বসে থাক। ওরা এল যা বলার আমি বলব।
এদিকে নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা এক ঘন্টা অপেক্ষা করে শেষটায় তারা বাড়ির সামনে এসে হাঁক দিল, ‘ওহে নাসীরুদ্দীন, আমরা এসেছি, দরজা খোল’।
দরজা ফাক হলো ভিতর থেকে শুনাগেল গিন্নীর কথা-ও বেরিয়ে গেছে।
বন্ধুরা অবাক। কিন্তু আমরা ত ওকে ভিতরে ঢুকতে দেখলাম। আর সেই থেকে ত আমরা দরজার দিকেই চেয়ে আছি। ওকে ত বেরোতে দিখিনি।
গিন্নী চুপ। বন্ধুরা উত্তরের অপেক্ষা করছে। নাসীরুদ্দিন দোতলার ঘর থেকে সব শুনে আর আর থাকতে না পেরে বলল-‘তোমরা ত সদর দরজায় চোখ রেখেছ, সে বুঝি খিড়কি দিয়ে বেরোতে পারে না?’
৩
নাসিরুদ্দিনের পোষা পাঁঠার উপর পড়শীদের ভারী লোভ, কিন্তু নানান ফিকির করেও তারা সেটাকে হাত করতে পারে না। শেষটায় একদিন তারা নাসীরুদ্দিনকে বলল, ‘ ও মোল্লা সাহেবে বড় দুঃসংবাদ। কাল নাকি প্রলয় হবে। এই দুনিয়ার সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে’।
‘তাহলে পাঁঠাটাকেও ধ্বংস করা হোক’, বলল নাসীরুদ্দীন।
সন্ধ্যাবেলা পড়শীরা দলেবলে এসে দিব্যি ফুর্তিতে পাঁঠার ঝোল খেয়ে গায়ের জামা খোলে নাসীরুদ্দীনের বৈঠকখানায় নাক ডাকিয়ে ঘুমাতে লাগল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তাদের জামা উধাও।
‘প্রলয়ই যদি হবে, তাহলে জামা গুলো আর কোন কাজে লাগবে ভাই? তাই আমি সে গুলোকে আগুনে ধ্বংস করে ফেলেছি। বলল নাসীরুদ্দীন।
৪
নাসীরুদ্দীন তার বাড়ির বাইরে বাগানে কি যেন খুজছে। তাই দেখে এক পড়শী জিজ্ঞাসা করল ‘ও মোল্লা সাহেব কি হারালো?’
‘আমার চাবিটা’, বলল মোল্লা সাহেব।
তাই শুনে লোকটিও বাগানে এসে চাবি খুজতে লাগল। কিছুক্ষণ খোজার পর সে জিজ্ঞাসা করল, ‘ঠিক কোনখানটায় ফেলেছিলে চাবিটা মনে পড়ে?’
‘আমার ঘরে’
‘সে কি ! তাহলে এখানে খোজছ কেন?’
‘ঘরটা অন্ধকার’, বলল নাসীরুদ্দীন। যেখানে খোজার সুবিধে সেখানেই ত খুজব।
৫
নাসীরুদ্দীনের যখন বয়স খুব কম তখন একদিন তার বাপ তাকে বলল ‘ ওরে নসু এবার থেকে ভোরে উঠিস’।
‘কেন বাবা?’
‘অভ্যাসটা ভালো’, বলল নাসীরুদ্দীনের বাবা। ‘আমি সেদিন ভোরে উঠে বেড়াতে গিয়ে রাস্তার মধ্যিখানে পড়ে থাকা এক থলে মোহর পেয়েছি’।
‘সে থলে ত আগের দিন রাত্রেও পড়ে থাকতে পারে, বাবা’।
‘সেটা কথা নয়। আর তাছাড়া আগের দিন রাত্রেও ওই পথ দিয়ে হাঁটছিলাম আমি, তখন কোন মোহরের থলে ছিল না’।
‘তাহলে ভোরে উঠে লাভ কি বাবা?’ বলল নাসীরুদ্দীন।‘ যে লোক মোহরের থলি হারিয়েছিল সে নিশ্চয় তোমার চেয়েও বেশি ভোরে উঠেছিল’।
৬
নাসীরুদ্দীন বাজার থেকে মাংস কিনে এনে তার গিন্নীকে দিয়ে বলল ‘আজ কাবাব খাব, বেশ ভালো করে বান্না কর’।
গিন্নী রান্নাটান্না করে লোভে পড়ে নিজেই সব মাংস খেয়ে ফেলেছে। কর্তাকে ত আর সে কথা বলা যায় না, সে বলল, ‘বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে’।
এক সের মাংস সবটা খেয়ে ফেলেছ?’
‘সবটা’
বেড়ালটা কাছেই ছিল, নাসিরুদ্দীন সেটাকে দাড়িঁ পাল্লায় চড়িয়ে দেখলে ওজন ঠিক এক সের।
‘এটাই যদি সেই বিড়াল হয়, বললে নাসীরুদ্দীন, তাহলে মাংস কোথায়? আর এটাই যদি সেই মাংস হয় তবে বিড়াল কোথায়?
৭
শিকারে বেরিয়ে পথে প্রথমেই নাসীরুদ্দীনের সামনে পড়ে রাজামশাই ক্ষেপে উঠলেন। ‘লোকটা অপয়া ।আজ আমার শিকার পন্ড। ওকে চাবকে হটিয়ে দাও’।
রাজার হুকুম তামিল হল।
কিন্তু শিকার হল জবরদস্ত।
রাজা নাসীরুদ্দীনকে ডেকে পাঠালেন।
‘কসুর হয়ে গেছে নাসীরুদ্দীন। আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নয়’।
নাসীরুদ্দীন তিন হাত লাফিয়ে উঠল।
‘আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া? আমায় দেখে আপনি ছাব্বিশটা হরিণ মারলেন, আর আপনাকে দেখে আমি বিশ ঘা চাবুক খেলাম। অপয়া যে কে সেটা বুঝতে পালেন না?’
৮
গাঁয়ের লোকে একদিন ঠিক করল নাসীরুদ্দীনকে নিয়ে একটু মশকরা করবে। তারা তার কাছে গিয়ে সেলাম ঠুকে বলল-‘ মোল্লা সাহেব, আপনার এত জ্ঞান, একদিন মসজিদে এসে আমাদের তত্ত্ব কথা শোনান না’। নাসীরুদ্দীন এক কথায় রাজি।
দিন ঠিক করে ঘড়ি ধরে মসজিদে হাজির হয়ে নাসীরুদ্দীন উপস্থিত সবাইকে সেলাম জানিয়ে বলল,-‘ ভাই সকল, বল ত দেখি আমি এখন তোমাদের কি বিষয় বলেতে যাচ্ছি?’
সবাই বলে উঠল. ‘আজ্ঞে সে ত আমরা জানি না’।
মোল্লা বলল, ‘এটাও যদি না জান তাহলে আর আমি কী বলব। যাদের বলব তারা এত অজ্ঞ হলে চলে কি করে?’
এই বলে নাসীরুদ্দীন রাগে গজগজ করতে করতে মসজিদ ছেড়ে সোজা বাড়ি চলে এল।
গাঁয়ের লোক নাছোড়বান্দা। তারা আবার তার বাড়িতে গিয়ে হাজির।
আজ্ঞে আসছে শুক্রবার আপনাকে আর একটি বার আসতেই হবে মসজিদে।
নাসীরুদ্দীন গেলেন, আব আবার সেই প্রথম দিনের প্রশ্ন দিয়ে শুরু করলেন। এবার সব লোকে একসঙ্গে বলে উঠল, আজ্ঞে হ্যা, জানি।
‘সবাই জেনে ফেলেছে? তাহলে ত আর আমার কিছু বলার নেই’- এই বলে নাসীরুদ্দীন আবার বাড়ি ফিরে গেলেন। গাঁয়ের লোক তবুও ছাড়ে না। পরের শুক্রবার নাসীরুদ্দীন আবার মসজিদে হাজির হয়ে তার সেই বাধা প্রশ্ন করলেন। এবার আর মোল্লাকে রেহাই দেব না গাঁয়ের লোক, তাই অর্ধেক বলল জানি, অর্ধেক বলল জানি না।
বেশতো, তাহলে যারা জান তার বলো, আর যারা জান না তারা শোন- এই বলে নাসীরুদ্দীন আবার ঘরমুখো হলেন।
৯
তর্কবাগীশ মশাই নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে তর্ক করবেন বলে দিনক্ষণ ঠিক করে তার বাড়িতে এসে দেখেন মোল্লাসাহেব বেরিয়ে গেছেন। মহা বিরক্ত হয়ে তিনি মোল্লার সদর দরজায় খড়ি দিয়ে লিখে গেলেন ‘মূর্খ’।
নাসীরুদ্দীন বাড়ি ফিরে এসে কান্ড দেখে এক হাত জিভ কেটে এক দৌড়ে তর্কবাগীশ মশাইয়ের বাড়ি গিয়ে তাকে বলল ‘ঘাট হয়েছে পন্ডিত মশাই. আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম আপনি আসবেন। শেষটায় বাড়ি ফিরে দরজায় আপনার নামটা লিখে গেছেন দেখে মনে পড়ল।
১০
নাসীরুদ্দীন বাড়ির ছাদে কাজ করছে, এমন সময় এক ভিখারী রাস্তা থেকে হাঁক দিল, মোল্লা সাহেব, এক বার নিচে আসবেন?
নসীরুদ্দীন ছাদ থেকে রাস্তায় নেমে এল। ভিখারী বলল, ‘দুটি ভিক্ষা দিবেন মোল্লাসাহেব?’
‘তুমি এই কথা বলার জন্য আমাকে ছাদ থেকে নামালে?’
ভিখারী কাচুমাচু হয়ে বলল. মাপ করবেন মোল্লা সাহের- গলা ছেড়ে ভিক্ষা চাইতে শরম লাগে।
‘হু…… তা তুমি ছাদে এসো আমা সাথে’।
খিখারী তিনতলা সিঁড়ি ভেঙে ছাদে ওঠার পর নসীরুদ্দীন বলল, ‘ তুমি এসো হে ভিক্ষাটিক্ষা হবে না’।
১১
নাসীরুদ্দীন একজন লোককে মুখ ব্যাজার করে রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করল-তার কি হয়েছে?
লোকটা বলল, ‘আমার জীবন বিষময় হয়েগেছে মোল্লা সাহেব। হাতে কিছু পয়সা ছিল, তাই নিয়ে দেশ ঘুরতে বেরিয়েছি, যদি কোন সুখের সন্ধান পাই’।
লোকটির পাশে তার বোচকায় কতগুলো জিনিসপত্র রাখা ছিল। তার কথা শেষ হওয়া মাত্রই নাসীরুদ্দীন সেই বোচকা নিয়ে বেধম বেগে দিল চম্পট। লোকটাও হাঁ হাঁ করে তার পিছু নিল, কিন্তু নাসীরুদ্দীনকে ধরে কার সাধ্য। দেখতে দেখতে সে রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া। এই ভাবে লোকটিকে মিনিটখানেক ধোকা দিয়ে সে আবার সদর রাস্তায় ফিরে বোচকাটাকে রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইল। এই দিকে সেই লোকটিও কিছুক্ষণ পরে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও দশগুণ বেশি বেজার দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার বোচকাটা পড়ে আছে দেখেই সে মহাফুর্তিতে একটা চিৎকার দিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল।
গাছের আড়াল থেকে নাসীরুদ্দীন বলল ‘ দুঃখীকে সুখের সন্ধান বেবার এও একটা উপায়।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১১
হু বলেছেন: হু.... বুঝলাম
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৭
উড়োজাহাজ বলেছেন: ভালো লাগল । ধন্যবাদ।
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১২
হু বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১২
সপন সআথই বলেছেন: moja pailam
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৬
হু বলেছেন: আমার এই ব্লগটিতে লেখার এটি মাত্র উদ্দেশ্য, বাংলা সহ বিশ্ব সাহিত্যের মাজার মাজার কিছু গল্প পাঠকে পড়তে সাহায্য করা।
আপনাকে ধন্যবাদ।
৪| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১২
মৌলিক প্রেমিক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। প্রচেষ্টা সফল হোক ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৯
হেডস্যার বলেছেন:
হু ম..