নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সেটাই, যেটা আগে লিখলাম....

নিঃসঙ্গী নিশাচর

একটা ছন্নছাড়া জীবন খুব ভালো লাগে....

নিঃসঙ্গী নিশাচর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্পঃ একটি গোলাপ

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮

দুপুরের রােদের পরে বিকেলটায় একটা সবুজ গাছের নিচে বসলাম! আমি আর মিমি পাশাপাশি বসে হালকা হাওয়ায় শেষ বিকেলের গল্প করছি। একটা পিচ্চি কােনদিক থেকে এসে একটা ফুল ছুঁড়ে মারলো লক্ষ্য করিনি! ফুলটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম শুকোতে শুকোতে প্রায় বিধবা হয়ে গেছে ফুলটা! এখন উপযুক্ত কােন পাত্র পেলে বাঁচে! কিন্তু নিজেকে তেমন সুযোগ্য পাত্র বিবেচনা করতেও ইচ্ছে হলোনা। তাই ফেরত দিতে উদ্যত হলাম; মেয়েটি আচমকা আমায় ধমক দিতে শুরু করলো, “ফেলবেন না বলছি, ফেলবেন না! ফেরত নিবোনা! ফেরত দিলেও টাকা দিতে হবে!!” আমি আর মিমি শুধু অনর্গল কথাগুলো গিলছিলাম। মিমি হল থেকে খেয়ে এসেছে তাই হজম করতে পারেনি! কিন্তু আমি খুব চেটেপুটেই গিলছিলাম! ইচ্ছে হলো আমিও ফুলটা ছুঁড়ে দিয়ে দৌড়ে পালাই! কিন্তু মিমি পাশে থাকাতে ব্যাপারটা বেশ ভদ্রতাসুলভ মনে হলোনা!

-তাইলে দশ টাকা দেন!
-টাকা নাই!
-তাইলে পাঁচ টাকা দেন!!
-পাঁচ টাকাও নাই!
-তাইলে দুই টাকা দেন!!!
-দুই টাকাও নাই!

এবার যেন মেয়েটিই অবাক হলো! দুই টাকা নেই এমন লোক ঘুরতে আসে কি করে তার যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভোঁ করে কােথায় পালিয়ে গেল বুঝতে পারিনি। আমার একটু হাঁটতে ইচ্ছে হলো। এমনিতেই ঘুরতে গেলে আমি এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকা পছন্দ করিনা। কিন্তু মিমিটা কি বস্তু দেখো! যেখানে বসেছে তাে বসেছেই! উঠবার নাম গন্ধটি পর্যন্ত নেই! একটা বালিশ পেলে দিব্যি রাত কাটিয়ে দিতে পারতো! আমি একরকম জাের কারেই উঠিয়ে দিলাম। রাগে গর গর করে ভয়ানক ভাবে আমার দিকে তাকালো মিমি! এরপর কিছু বুঝে উঠার আগেই দুই তিনটা থাপ্পড় আর চিমটি কেটে আমার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে একটা শুকনা হাসি দিলো আর বললো, তুমি পচা! খুব অদ্ভুত মেয়েটির আচরণ কিন্তু বিরক্তিকর নয়!

দুজনে হাঁটতে লাগলাম ইটের রাস্তা ধরে। আমি খানিকটা বেসুরো গলায় একটা গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম, মিমি লুকিয়ে লুকিয়ে এমন ভাবে হাসলো যে মনে হলো গানটার যেন জাত মেরে দিলাম। আসলে বাংলা ভাষার শব্দ গুলোর সাথে আমার অনেকদিনের শত্রুতা! ইচ্ছে করেই এমন বিকৃত ভাবে উচ্চারণ করি যে শুনলে নিজেরই হাসি পায়!

মিমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আরও একগাল হেসে নিল, প্রত্যুত্তরে আমিও মিমির মুখের দিকে তাকিয়ে হাসবো এমন সময় আবার সেই ফুলওয়ালী! এবার ঠিক বিধবা ফুল নিয়ে আসেনি! একটা আটখুড়া গােলাপ নিয়ে এয়েচে! সন্তান না হওয়া মহিলারা যেমন চুপসে কিসমিসের মতো হয়ে যায়! ফুটতে না পেরে ফুলটিরও ঠিক সেরকম দশাই হয়েছে!! হাতের মােচড়ে মােচড়ে ফুল যেন আর ফুল রইলো না! ফুটন্ত শুটকির ভর্তা হয়ে গেছে! আবার দৌড়ে পালাবার রাস্তা খুঁজতে লাগলাম! মেয়েটি মিমির দিকে ফুলটিকে ছুঁড়ে মেরেই আবার ধমক! “ফেলবেন না বলছি! ফেলবেন না! ফেললে টাকা দিতে হবে!” তাই মিমি খুব যত্ন করেই ফুলটি মেয়ের হাতে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করতে লাগলো!

-উফ্ফ! কি অবস্থা!! একটার পরে একটা..!
-গান শুনবে?
-গাও না!
-আগে তুমি গাও!
-আমার গলা বসে গেছে! এখন গাইলে চিঁ চিঁ করবে; খুব পচা শুনাবে!
-তবুও গাও...
-পচা হলে কিছু বলতে পারবে না কিন্তু!
-আচ্ছা বলবো না!
-(মিমি গাইলো...) চোখের আলোয় দেখেছিলাম.....
-খুব সুন্দর হয়েছে!
-অ্যাঁ! পচা হয়েছে!
-আচ্ছা পচা হয়েছে...
-অ্যাঁ! ভালো হয়েছে..
-আচ্ছা ভালো হয়েছে!
-তোমায় মারি?
-মারো..
-পারবো না।
-ঠিক আছে মেরো না;
-ওঁ! মারবো।
-আচ্ছা মারো...
-(এবার সত্যি সত্যি মেরে দিলো আর বললো তুমি পচা!)
-ভালোবাসি তাে...!
-তো....??
-আমায়ও ভালোবাসো।
-তোমায়ও ভালোবাসলাম।
-এভাবে না!
-কিভাবে?
-মিষ্টি করে ভালোবাসো...
-মিষ্টি করে ভালোবাসলাম! তােমায় আমি মিষ্টি করে! চিনি করে করে!! রসগোল্লা করে ভালোবাসি!!! দেখো যেনো পিঁপড়ায় না ধরে!!

এমন সময় আরেক আদমি এসে হাজির। আফা, পানি খাইবেন?
-না।
-টাইগার?
-না!
-তাইলে ভাইরে একটা দেন।
-ও টাইগার খায়না!
-ভাই টাইগার খান...
-টাইগার তাে দূরে থাক্! গরু-ছাগলও খাইনা!
(মহিলাটি একটা বােতলের ছিপি খুলে আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো; আমি আসলেই ওসব খাইনা)
-সত্যি বলছি আমি এগুলো খাইনা।
-মুখ খুলছি ভাই! একটা খান।
-আপনাকে মুখ খুলতে কে বলছে? আমি খাবোনা!
-তাইলে পাঁচ টাকা দেন...
-টাকা নাই, অন্যদিকে যান।
(মহিলাটি বেড়ালের মতো আমার দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেলো...

-মিমিঃ ওই গানটা শােনাও না...
-কোনটা?
-তুমি কােন কাননের ফুল? কােন গগণের তারা?
-এখন পারবো না!
-কেনো? গাও বলছি...
-না হয়?
-না হয় তােমায় ফেলে দেবো...!
-আমি গাইলাম, তুমি কােন কাননের ফুল? কােন গগণের তারা? তােমায় কােথায় দেখেছি যেনো কােন স্বপনের পাড়া.... কেমন হয়েছে?
-পচা!
-থাক্! আর গাইবো না!
-ওমা! তােমায় গাইতে বললো কে?
-আর কােনদিন গাইবো না!
-সুন্দর হয়েছে! খুব ভালো লেগেছে!
-মিথ্যে কথা!
-ঠিক আছে! খুব পচা হয়েছে!! হি! হি!! হি!!! ওইদিন মােবাইলে শুনিয়েছিলে যে ওটা খুব ভালো হয়েছিলো! আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
-চেলো ওইদিকটায় একটু হাঁটি...
-উঠতে পারবো না!
-তুমি কি মহিষ নাকি?
-মহিষ বলেছো! উঠবোনা যাও.. শুধু টানাটানি করে ! বসতে দেয়না! এ্য্য্য্য্য্যাা! আাাও! ওই গাছটার একটা ছবি তােলনা! কি সুন্দর গাছ!
-সুন্দরট্ বি!
-কি?
-সুন্দর অটবি! মানে বৃক্ষ!
-হি! হি! হি!! কি বলো এসব?
-আমার মাথা!
-তোমার মুন্ডু...! আচ্ছা জা..ন, তােমার কয়টা মুন্ডু?
-৮৩২ টা!
-এগুলো দিয়ে কি করো?
-তোমায় ভালোবাসি!
-মিথ্যে বলেছো...
-তাহলে?
-আমায় ভালোবাসো...!
-গাছগুলো আসলেই খুব সুন্দর! কি গাছ যেনো....????

নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি...
-ভাই....
-কি?
-দশ টাকা....
-নাই! যাও...
-পাঁচ টাকা...
-নাই..
-আপুর কাছে আছে!
-ওর কাছে কােন টাকা নেই...
-তাইলে আপনের কাছে আছে!
-আমার কাছেও নেই!
-তাইলে দুই টাকা...
-যাও বলছি! টাকা নাই..
-টাকা না দিলে যাবোনা!
-যেয়োনা....
(অবাক ব্যাপার ছেলেটি সত্যি সত্যিই আমাদের সাথে আসতে শুরু করলো! একেবারে পায়ে পায়ে পা লাগিয়ে! কি বিরক্তিকর! কি যন্ত্রণা!)

-আরেকদিন দেবো, এখন যাও..
-এখন দিতে হবে!
-এমন করলে আর কােনদিন দেবো না!
-এখন দেন...
-যাবেনা?
-না!
-তবে ঘােরো! দেখি কতোক্ষণ ঘুরতে পারো...

(আচমকা! ছেলেটি সত্যি সত্যিই অনেকটা রাস্তা চলে এলো দুই টাকার জন্যে! মিমি বিরক্ত হয়ে দুটি টাকা দিতে গেলো; কিন্তু আমি নিষেধ করলাম! কারণ বিরক্তি ছাড়িয়ে ততোক্ষণে ব্যাপারটি আমার কাছে খুব মজাদার একটি কাহিনী হয়ে দাঁড়িয়েছে! ছেলেটি এবার মিমির পায়ে জড়িয়ে ধরলো...)
-টাকা দেন!
-যেতে বলেছি যাও নি কেনো? গেলে ঠিকই আরেকদিন দিতাম! এখন মােটেও দেবো না!
(একটু যেতেই গোঁয়ারের মতো এক লােক এই দৃশ্যটি দেখে বললো, আপনারা যান; এটাকে আমি সাইজ করতেছি! ওই হারামজাদা, যাহ...! আমরা যেনো স্বস্তি ফিরে পেলাম! যেনো কােন এক ঝঞ্ঝাট থেকে রেহাই পেয়ে বেঁচেছি!)

মিমিঃ দেখেছো ছেলেটির কি ধৈর্য্য?
আমিঃ ওরা একটু বেয়ারাই হয়! তুমি না থাকলে তাকে আজ আমি পুরো মা? ঘােরাতাম! দেখতাম তার ধৈর্য্যরে মাত্রা কতটুকু!!
-নামাজ পড়বে না?
-হ্যাঁ! একটু পর যাবো।
-না, এখন চলো...
......ভাই দুই টাকা দেন! আমি চইলা আসছি!
এবার মনে হলো যেন আমি ছেলেটির সাথে মজা করছিনা! বরং ছেলেটিই আমার সাতে মজা করছে! খুবই অবাক হলাম। একটু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হলো তার দিকে!

-তুমি যাবেনা?
-না..। আগে দুই টাকা দেন..
-তোমায় সত্যিই আজ কােন টাকা দেবোনা। অনেক জ্বালিয়েছো তুমি খােকা! বলছি না আরেকদিন এসো। আমরা এখন চলে যাবো।
এবার ছেলেটি যেনো তার পারিশ্রমিক আদায় করার জন্যে উঠে পড়ে লেগে গেলো....। যাচ্ছেতাই জােড়াজুড়ি করে খুব অধিকারের স্বরে টাকা চাইতে লাগলো। বলা বাহুল্য, এই দৃশ্যটি অন্য কােন পাবলিক প্লেসে হলে বরং আমদেরকেই অপদস্ত হতে হতো! কিন্তু স্মৃতিসৌধে ছােকড়াদের কর্মকান্ড সবারই অবগত তাই অবাক হবার মতো কােন সদুপায়কে খুঁজে পেলাম না। আমি না শােনার ভান করে মসজিদের দিকে চলে গেলাম। মিমি বসে রইলো মসজিদের বাইরে...

নামাজ শেষ করে কােন একজনকে কল করার খুব প্রয়োজন হলো। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মােবাইল উধাও! এদিক ওদিক খুঁজলাম, ওজুখানা খুঁজলাম; মসজিদের ভেতরে, ব্যাগের ভেতরে সব জায়গা তল্লাসি করা শেষ! কিন্তু মােবাইল লা-পাত্তা!
মিমিঃ কােথায় রেখেছো মনে করে দেখো।
আমিঃ মনে হয়েছে; ওজুখানায়...
তখন আরেকবার গিয়ে দেখে আসলাম ভালোকরে। কিন্তু মােবাইল থাকা দূরের কথা, কভারটি পর্যন্ত উধাও...!

-পেলাম না তাে...
এবার আম একটু মুসকি মুসকি হাসতে লাগলাম; কারণ আমি এমন মনভোলা যে আমার সাথে এরকম কাহিনী ঘটা অবাক হওয়ার মতো বা রাগ করার মতো নায়। আমার এমনিতেই কােন কিছু মনে থাকেনা। কিন্তু মিমি সেই যে রাগ করে বসে আছে; হাসবার নাম গন্ধটি পর্যন্ত নেই! আমি তাকে হাসাবার চেষ্টা করাতে আরো রেগে গেলো...

আমিঃ মােবাইল হারালাম আমি; তুমি রাগ করলে কেনো? তােমার রাগ করাটাতো অযৌক্তিক!
মিমিঃ তােমার হাসাটাও তাে অযৌক্তিক!
-আমি যুক্তি তর্কের জন্যে হাসছি না! হাসছি চােরের কু-বুদ্ধি দেখে! ওজুখানা থেকে কেউ মােবাইল চুরি করে?
-চোরের কাছে দিয়ে আসলে চুরি করবেনা কেন? তােমার হুঁস নেই?
-আশ্চর্য! ওজু করার সময় পাশে মােবাইল রেখে ওজু করলাম। তারপর মনের ভুলে রেখে আসলাম; এতে হুঁস-বেহুঁসের কি দেখলে?
-ওই মােবাইলটাতে আমার সেন্ড করা অনেকগুলো এস.এম.এস আছে। এখন নাম্বারটা ফাঁস হয়ে যাবে না?
-ভালোই তাে! এস.এম.এস গুলো পড়ে চােরও বুঝবে কতোটা বদমাইশ তুমি...!


-এখন চ্যাটিং করবো কি দিয়ে?
-কিছুদিন যােগাযোগ অফ থাকা ভালো! এতে ভালোবাসা বাড়বে...! (এটাই প্রথম সময় যখন আমরা দুজন দুজনের সাথে কােন প্রকার যােগাযোগ করতে পারিনি...)
-তোমার মুন্ডু বাড়বে যাও...! (মিমি সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছিলো! কিন্তু আমি যেনো তখনো বুঝলাম না, এতো কষ্ট পাওয়ার কি আছে? আমার বারে বারে কেবল চােরের কু-বুদ্ধির কথাই মাথায় আসতে লাগলো...! কী দুষ্টু চাের! কী আজব চাের!! কী অ-ধার্মিক চাের!!! এমন চাের শালা বাপের জন্মে দেখিনি....! আমি আশ্চর্যজনক ভাবে হাসতে হাসতেই কাহিনীটি পরিবারকে অবগত করি...! আপুও খুব অবাক হয় চােরের এই কান্ডজ্ঞানহীন অ-কাজ কু-কাজ দেখে...!!)

বেরহয়ে দুজনে আবার হাঁটতে লাগলাম। মিমির মেজাজটা খানিকটা আমসির মতো গােমরা হয়ে আছে! হাসবেও না! কথাও বলবে না! আমি জােরে জােরে হাসতে লাগলাম। মিমি খুব বিরক্ত হলো এতে! আমি আঙুল দিয়ে দেখালাম একটা পিচ্চি ছেলে এক ভদ্রলোককে পাঁচ টাকার জন্যে তাড়া করছে...এই দৃশ্যটি! বেচারা ভদ্রলোকও পাঁচ টাকা হারানোর ভয়ে এপার থেকে ওপার লুকোচুরি খেলছে..! এতো কষ্টেও খুব হাসি পেলো! পাঁচ টাকার এতো মূল্য জীবনে কােনদিন দেখিনি..! অন্তত এই আশ্চর্যজনক লুকোচুরি খেলা দেখিয়েই তাে পঞ্চাশটাকা উপহার পাওয়ার যােগ্যতা রাখে!!

আমাদের দেশে একটা প্রচলিত রীতি আছে এই রকম, ভিক্ষা দিতে না পারলে আমরা ভিক্ষুকের কাছে ক্ষমা চাই। এতে আমরা অবাক না হলেও ভিক্ষুকেরা যে অবাক হয়না, তা কিন্তু না! তারা কেবল ভাবে, আল্লাহ তাকে ধন না দিলেও ধনীদের ক্ষমা করবার অধিকার দিয়েছে; এ যুগে যাদের সম্পদ নেই! তারা নিজেদেরকে সবচাইতে বেশি সম্মানিত ভাবে! কারণ সম্পদই মানুষের সবচাইতে বড়ো পাপ, মহাপাপ! তাই ভিক্ষুকেরা কষ্ট পায়না; বরং ধনীদের কষ্ট বুঝতে চেষ্টা করে! কিন্তু কষ্ট বুঝলে তাে আর পেট চলেনা! তাই এরা সহজে ক্ষমা করতে চায়না।

ছােকড়াদের কর্মকান্ড দেখে আমারও ঠিক সেরকমই মনে হলো; মনে হলো, ভদ্রসমাজই সবচেয়ে বড়ো চাের! এরা দাম্ভিকতার আড়ালে সবসময়ই নিজেকে লুকিয়ে রাখে! এরা আট-দশজন থেকে ভিন্ন থাকতে গিয়েই একটি অভিন্ন প্রথা চালু করে; লােকচক্ষুর আড়ালে যে জীবন, মনুষ্যত্বের বাইরে যে বেঁচে থাকা, মানবতার পশ্চাতে যার আখড়া, জীবনের ওপারে যার পদচারণা, বিবেকের বাইরে যার চেতনা, বুদ্ধির বাইরে যার বসতি, বাস্তবতার অলক্ষ্যে যার স্থিতি; তাদের জন্যেই তাে আজ এই পথশিশু! দােষি কারা? দােষি আমি; দােষি আমরা! আমার কাছে দুটি টাকার যতো মূল্য! যে দুদিন খেতে পায়না, তার কাছে এই মূল্যটা অনেক বেশি! কােথায় যাবে এরা? তাদের বাদাম কেউ খেতে চায়না; তাদের আচার কেউ কিনতে চায়না; তাদের ফুলে কারো ভালোবাসা জাগেনা; তাদের পানিতে কারো তৃষ্ণা মিটেনা! তাহলে তাদের তৃষ্ণা মেটাবে কে? তাদের ক্ষুধার আহার যােগাবে কে? তাদের ভালোবাসার মূল্য দেবে কে?

সংসারে যখন চাল ফুরিয়ে যায়, মন থেকে তখন ভদ্রতা ঘুচে যায়। ভদ্রতা-অভদ্রতা তাে চারিত্রিক ব্যাপার, শারিরীক নয়। যখন শরীর বাঁচেনা! তখন চরিত্রের মূল্য দেওয়া দুর্মূল্য!! তাই এরা কাউকেই ছেড়ে দিতে চায়না। যেন সবার কাছেই তাদের প্রাপ্য টাকা আদায় করে নিতে হবে! সুন্দর আচরণে সবার পেট চলেনা! তাই এরা অসুন্দর পথটাই বেছে নেয়।

আমি এক নাগারে তাকিয়ে রইলাম একটি ছোট্ট মেয়ের দিকে যে প্রথমে আমায় ফুল দিয়ে ধমকিয়েছিলো! এখনো তার হাতে সেই বাসি ফুলটি, হয়তো আরো দুটি পাঁপড়ি ঝড়ে গেছে, পাতাগুলো হয়তো এতোক্ষণে পড়ে গেছে, হয়তো লাল গােলাপটি কালো হয়ে গেছে, হয়তো কােমনীয় সুগন্ধ এখন দুর্গন্ধে পরিণত হয়েছে; কিন্তু যে গােলাপটি ফুটবার জন্যে সকাল থেকে ঘুরে ঘুরে এ-জন ও-জনের পিছু ধাওয়া করছে... তার সুগন্ধিটা কেড়ে নিলো কে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.