![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“সময় লাগবে,
এই বৃষ্টি থামতে,
বহুদিনের বহুজনের
প্রার্থনার এই বৃষ্টি।“
বিখ্যাত কোন কবির কবিতা নয়।জানালার পাশে বসে শৌভিক নিজের মনেই লাইন গুলো সাজিয়েছে।জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সে বৃষ্টি দেখছে।পুরো ভার্সিটি ক্যাম্পাস বৃষ্টিতে ভিজে একা হয়ে গেছে ......পুরোপুরি একা নয় ,দু একজন ছেলেমেয়েকে দেখা যাচ্ছে বৃষ্টিতে ভিজতে।
ক্লাসরুমের জানালা সাধারণত এসি’র কারনে খোলা থাকে না। আজ ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় এই অবস্থা ।ভালই হলো,খোলা জানালার পাশে সিমিতা এসে দাড়িয়েছে ।হাল্কা বাতাসে তার চুলগুলো উড়ছে,অবাধ্য চুলগুলোকে সামালাতে ব্যস্ত সিমিতা। এই সাধারন দৃশ্যটিই শৌভিকের কাছে স্বর্গীয় মনে হলো। সিমিতা অনেক যে সুন্দরী তা কিন্তু নয় । ক্লাসে ওর চেয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। সিমিতা ওদের মত ফর্সা নয়,শ্যামলা ; ওদের মত টানাটানা চোখ নেই ,চশমা পড়া ক্লান্ত চোখ ওর ; ছিপছিপে একহারা গড়ন ওর। সিমিতার সৌন্দর্য্য ওর মনে,ওর মত ভালো মনের মেয়ে ক্লাসে আর একটিও নেই। সেই সৌন্দর্য্যই যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে।
এরকম একটা ভেজা দিনে এই দৃশ্যটা শৌভিকের মনটা ভাল করে দিল।আজকাল ওর মন খুব সহজেই খারাপ হয়ে যায়,মেজাজ চড়ে যায়। আজ বাবা-মায়ের সাথে কাল বন্ধুদের সাথে লেগেই আছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় সব ছেড়েছুড়ে চলে যাবে সে।
যাই হোক,শৌভিকের ভালো মন আর বেশিক্ষন ভাল থাকল না;জামি এসে দাড়িয়েছে সিমিতার পাশে। খুব হাসিমুখে কথা বলছে দুজনে।জামি কি একটা বলতেই সিমিতা খিলখিল করে হেসে উঠল।অন্যকোনো সময় হলে এই দৃশ্যটা শৌভিকের কাছে স্বর্গীয় মনে হত,জামি পাশে থাকায় তা যেন কেমন ঘোলাটে হয়ে গেল। ওরা দুজন পাশাপাশি চেয়ারে বসতেই শৌভিক এর কপালে বিরক্তির রেখা ফুটে উথলো,যদিও এটা অনেক স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ।দুজন ক্লাসমেট পাশাপাশি বসতেই পারে।তবুও শৌভিকের মনে ঈর্ষা জেগে উঠল। ভার্সিটি জীবনের তিনটা বছরেও জামি ছেলেটাকে সে পছন্দ করে উঠতে পারে নি। এর কারন কি? জামি ওর চাইতে স্বছল পরিবারের বলে নাকি ওর চেয়ে ভাল ছাত্র বলে নাকি শুধুমাত্র সিমিতার পাশে বসে বলে?
এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাত ও যা করে বসলো তা পরে ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না।পেছন থেকে উঠে এসে জামি’র কাধে হাত রেখে বলল,’কিরে প্রতিদিন এক জায়গায় বসলে চলবে? উঠ, আজ অন্য কোথাও বস গিয়ে!অন্যদেরও বসতে দে একটু এখানে।‘
“ অন্যদের কথা বলছিস কেন? বল তোর সিমিতার সাথে বসতে ইচ্ছা করছে। বললেই তো সরে যাই। তবে তোর পাশে সিমিতা বসবে নাকি তাও প্রশ্ন।“ বলে বিদ্রুপের হাসি ছুড়ে দিলো জামি।
এই দেখে শৌভিকের মেজাজ আর চড়ে গেল।“তোর মত মেয়েদের পেছনে ঘুরি নাকি আমি ,হ্যা?”
জামি রেগেমেগে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল, তখন সিমিতা বলে উঠল,’এই,শৌভিক কি বলছিস তুই এগুলো । কি হয়েছে তোর? জামি আমার পাশে বসলে তোর কি আসে যায়......এই যে তিনটা বছর গেল কোনদিন তো আমার সাথে ভালো করে কথাও বলিস নাই। আজ কি হল?”
একগাদা কথা শুনে চুপ হয়ে গেল শৌভিক। “ভাল করে কথা বলতে পারলে আমার সামনে আসবি ,নাহলে আমার সাথে কথা বলার দরকার নাই।”
সিমিতার কথা গুলো সূচের মত ফুটল গায়ে।আসলেও এতদিন গোপনেই সিমিতাকে দেখে গেছে শৌভিক। আজ নির্মম সত্য টা ধরে দিল সিমিতা।ক্লাসের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে.........অসম্ভব মেধাবি কিন্তু খেয়ালি ছেলেটাকে হঠাত এমন খেপে উঠতে দেখে সবাই চেয়ে আছে। সিমিতার বাক্যবাণ আর সবার “judgmental” চাহনি সহ্য করতে না পেরে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসল শৌভিক।
টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। এর মাঝে হাটছে শৌভিক । হাল্কা বৃষ্টি ওর মুখটা ভিজিয়ে দিচ্ছে । বছরের এই সময়টা যখন তখন বৃষ্টি নামে। এই আসে এই চলে যায়। ঠিক শৌভিকের রাগের মত। আস্তে আস্তে ওর রাগ নেমে আসছে ।সংকোচ ঘিরে ধরল ওকে; সিমিতার কথা গূলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল ;সত্যি ওর সাথে কথা বলতে না করলো?
“আর নয় সময় ,উদ্দ্যেশহীন মিছিলে
তুমি সেই পূর্নতা আমার অনূভবে......”
ওয়ারফেজ এর গান শুনতে শুনতে ভার্সিটির রাস্তায় ঢুকল শৌভিক। সেই ঘটনার পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। হাল্কা শীত পরতে শুরু করেছে।বৃষ্টির বদলে এখন ভোরবেলা কুয়াশা পড়ে।আজ যেন একটু বেশিই পড়েছে। সেই কুয়াশার দেয়াল ভেঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে শৌভিক। কিন্তু তার মনের কুয়াশা দূর করবে কে? এই বিষন্নতার উত্তর সে খুজেছে ,কিন্তু কোন উত্তরই যেন ঠিক নয়।
ক্লাস বিল্ডিং এর সামনে আসতেই সিমিতার সাথে দেখা হয়ে গেল।শৌভিক ভাবল আজও হয়ত সিমিতা পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। কিন্তু সিমিতা দাঁড়ালো। “ এই শৌভিক শুনে যা। সারাক্ষন মুখটা এমন করে রাখিস কেন? তুই অনেক বুদ্ধিমান একটা ছেলে,এর সাথে একটা সুন্দর হাসি যোগ হলে ভালই লাগবে তোকে।“
এই শুনে শৌভিক একটু মনে হেসেই ফেলল অনেকদিন পর। “ইশ দ্যাখো ছেলেটা কি সুন্দর করে হাসে আবার!! মেয়েরা তো প্রেমে পরে যাবে তোর!” বলে মুচকি হাসলো সিমিতা।“এই চল চল ক্লাসে,দেরি হয়ে যাবে।“ সিমিতা তাড়া দিল। আজ মনে হয় শৌভিক অনেক দিন পর খুব খুশিমনে ক্লাসে গেল। তার কুয়াশাময় দিনটা যেন রৌদ্র্যজ্জল হয়ে উঠল। কিন্তু কে জানত তা বেশিক্ষন এমন উজ্জল থাকবে না।
“দুঃস্বপ্নের শেষ সীমানায়
চমকে ঘুম ভেঙ্গে যায়
জেগে দেখি তুমি পাশে নাই......”
স্বপ্নের মত শুরু হওয়া দিনটা এক অনন্ত দুঃস্বপ্ন দিয়ে শেষ হল।শেষ ক্লাসটা বাদ দিয়ে আজ শৌভিক ক্রিকেট খেলতে বেরিয়ে গিয়েছিল।কে জানে মনের আনন্দেই হয়ত! খেলা শেষে ব্যাটটা কাধে ফেলে মাঠ থেকে বের হয়ে সিমিতাকে বিল্ডিঙ্গের লম্বা সিড়িটার ওপর দাড়িয়ে থাকতে দেখল ।শেষ বিকেলে মন ভাল করার জন্যে যথেষ্ট ভাল একটা দৃশ্য এটা। কিন্তু প্রায় সাথে সাথেই পুরো ব্যাপারটাতে জল ঢেলে দিয়ে হাজির হল জামি।তবুও হালকা বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে গেল শৌভিক। ও কাছে যেতেই সিমিতা জিজ্ঞেস করল, “ কি কোডার দেখি আজকাল ক্রিকেটও খেলে?”
“হুম, জামি’র মত ভাল তো খেলতে পারি না তবে এতটা খারাপও খেলি না।”
“এই তুই আমাকে খোচা না দিয়ে কথা বলতে পারিস না তাইনা?”,জামির গলায় বিরক্তি ঝরে পড়ল।
“খোচা কই দিলাম সত্যি কথাই তো বললাম!!”
“এই তোরা থামবি !! ভালো লাগে না তোদের এই ফালতু কথাবার্তা!”,সিমিতা বলল।
“না না, আজকে আমাকে বলতে দে।”,জামি বলে উঠল, “এই শালার স্বভাব অনেক খারাপ,ক্লাসে তোর দিকে কেমন নোংরা চোখে তাকায় তুই দেখেছিস সিমিতা?”
“ কি সব বলছিস এগুলো জামি তুই।”,সিমিতার গলায় আসন্ন ঝগড়ার ভয় ঝরে পড়ল।ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে , শৌভিকের রাগ উপচে পড়ল। “এই তুই আমাকে নিয়ে সব বলিস, হ্যা? একদম চুপ , তুমি সারাদিন কোন ধান্ধায় থাক আমি বুঝি না ,তাই না?ক্লাসে কি সব নোংরা কথাবার্তা বলে বেড়াও তা আমি শুনি নাই বুঝি । তুই তো শালা বড় লম্পট।”
“ খবরদার শৌভিক নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাস না কিন্তু। তুই ছোটলোক এত বড় বড় কথা বলবি না। তোর বাপ-মা চৌদ্দগুষ্টি ছোটলোক।তোর বাপ মা তোকে এগুলা শিখায়।”
এবার শৌভিক তার রাগ ধরে রাখতে পারল না। চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটল। হাতের ব্যাট টা উচিয়ে এগিয়ে গেল জামির দিকে। সিমিতা বাধা দিতে আসতেই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল শৌভিক। উন্মাদের মত জামির উপর ঝাপিয়ে পড়ল।জামি কিছু বোঝার আগে ব্যাট্ টা ঘুরিয়ে ওর মাথায় মেরে বস্ল।জামি মাথা চেপে মাটিতে পরে গেল। তবুও থামল না শৌভিক পাগলের মত আর কয়েকবার জামির মাথায় মেরে বসল। সিমিতা প্রচন্ড আতংকে চিলের মত চিৎকার করে উঠল।হঠাত সম্বিৎ ফিরে পেতেই শৌভিক তার সামনে মাটিতে নিশ্চল পরে থাক জামিকে দেখে বুঝতে পারল কত বড় বিপদ ঘটে গেছে। মাথটা ঘুরিয়ে গেল তার ।
সিমিতার ভয়ার্ত,বিস্মিত চাহনি......চিতকারের শব্দে ছুটে আসা মানুষের হইচই......সমস্ত ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল ওর সামনে । হঠাত কে যেন বলে উঠল, “পালা শৌভিক পালা, কি করছিস এখানে!!! দৌড়া!!!” কে বলল কথাটা? কে? সিমিতাই বলবে হয়ত!!! ভার্সিটির রাস্তা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল সে। চারিদিকের কোলাহল মিলিয়ে যেতে লাগল ভয়ের বেড়াজালে। যেমন মিলিয়ে গেল একটা খেয়ালি মেধাবী ছেলের ভব্যিষত। মিলিয়ে গেল একটা পরিবারের আশা ,হয়ত মিলিয়ে গেল অনেকগুলো স্বপ্ন। যে ছেলেটার আগামি মাসে ভার্সিটি জীবনের শেষ পরীক্ষাটা দেওয়ার কথা ছিল সে আজ খুনের আসামী হল।
শৌভিক কোনদিন জানতে পারল না তার জন্যে এক জোড়া চোখ সাড়ে তিন বছর ধরে ক্লান্ত হয়েছে, এখন সে চোখ জোড়া আর বেশি ক্লান্ত। শুধুমাত্র এক মূহুরতের ক্রোধের কারনে শেষ টা রুপকথা না হয়ে ,দুস্বপ্ন হয়ে গেল।শৌভিক জেনে গেল তার জন্যে জমে আছে একরাশ ঘৃণা।
“In the dark
And I’m right in the middle mark
I’m just in the tier of everything that rides below the surface
We all are living in a dream,
But life ain’t what it seems
Oh everything’s a mess
But I wanna dream
I wanna dream
Leave me to dream.”
----“DREAM” by Imagine Dragons
…………শৌভিক পরের দিন ভোরে ভার্সিটির সিড়িতে বসে ছিল......ঠিক প্রথম দিনের মত।
২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:০৪
নিভার্ড_পেরেরা বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:০৭
আমি চির-দুরন্ত বলেছেন: ভালো ।