নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তরালের পথিক

অন্তরালের পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা সবাই পন্ডিত

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

ডাটাবেজ ক্লাসে বিলম্বে প্রবেশ করিয়া প্রজেক্টরে কিম্ভূতকিমাকার একখানা ছবি লটকানো দেখিয়া কিঞ্চিত আউলায়া গেলাম। উহার পাঠোদ্ধার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নিজের মাথাটা প্রথমে সোজা এবং পরে যথাক্রমে ডানে ও বামে যথাসম্ভব কাত করিয়া বুঝিতে চাইলাম উহা আসলে কি বস্তু। পাঠোদ্ধার প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হইয়া স্যারের কথায় মনোনিবেশ করিলাম। হয়ত কোন ক্লু থাকিলেও থাকিতে পারে। কবি বলেছেন, যেখানে দেখিবে ছাই…….যাউগ্গা, স্যার বাংলা ভাষায় পাঠদান করা সত্যেও গোটা ব্যাপারটা দুর্বোধ্য ঠেকিল। যা দুয়েকটা শব্দ কর্ণকুহরে পৌছিল নিজের এ যাবতকালের অর্জিত ডাটাবেজ সম্পর্কিত সমুদয় জ্ঞান একত্রিত করিয়াও ঐ ধরনের কিছু কোনকালে শুনিয়াছিলাম বলিয়া ইয়াদ হইল না। ইতিমধ্যে পার্শ্ববর্তী দুই জ্ঞানী সহপাঠী নিজেদের মধ্যে ঐ ছবি (পরে শুনিয়াছি উহা নাকি একরকম ডাটাবেজ অ্যালগরিদম) লইয়া জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুরু করায় উহারাই পারিবে এই অধমকে এই অমানিশার অন্ধকার হইতে উদ্ধার করিতে এরূপ সাব্যস্ত করিয়া উহাদিগের আলোচনায় কর্ণপাত করিলাম এবং বুঝিলাম বাংলায় বলিলেও সবসময় সব বোঝা যায় না



ক্লাসের সকলে গভীর মনোযোগ দিয়া স্যারের কথা শুনিতেছে, মাঝে মাঝে কেউ কেউ দুর্বোধ্য শব্দ সহযোগে প্রশ্ন করিতেছে এরূপ বৈরী পরিবেশে বড় অসহায় বোধ হইল। ক্লাসের মধ্যে নিজেকে একমাত্র বকরীরূপে আবিষ্কার সুখকর কিছু নয়। অগত্যা হাল ছাড়িয়া স্যারের প্রতি গভীর মনোযোগপূর্ন দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়া আসন্ন বন্ধের দিনটা কিভাবে উদযাপন করা যায় তাহার পরিকল্পনায় ব্রতী হইলাম।



ক্লাস সমাপ্ত হইবার পর পেছনে বসা জনৈক বান্দা শুধাইল, ভাই কিছু বুঝছেন ? আয় ভাই বুকে আয় এরূপ ভাব লইয়া উহাকে বলিলাম, না। সেই বেচারা কহিল, যেমনে স্যারের দিকে তাকায়া ছিলেন আমি ভাবছি সব বুঝছেন। উহাকে বুঝাইলাম দেখ ভ্রাতঃ, ক্লাসে এত পন্ডিতের মধ্যে একা শুধু আমিই বুঝি নাই ইহা একটি ম্যাটার অব শর্মিন্দা, অতএব আমিও মনোযোগী ভাব ধারণ করিয়াছি।



অতঃপর উক্ত বেচারা ও আমি দ্বিপাক্ষিক ঐক্যমতে উপনীত হইয়া যাহারা বুঝিয়াছেন তাহাদের স্মরণাপন্ন হইলাম জ্ঞান আহরণ করার নিমিত্তে। কিন্ত অবাক হইয়া দেখিলাম উহারাও আসলে ব্যাপারটা বুঝেন নাই, বেহুদা ফাঁপড় নিয়াছেন। এরমধ্যে কেউ কেউ অবশ্য আমাদিগকে অবুঝ পাইয়া আগডুম বাগডুম বুঝানোরও অপচেষ্টা করিলেন। এমনকি যারা দুর্বোধ্য শব্দ সহযোগে প্রশ্ন ছুঁড়িয়াছিলেন তাহারাও উক্ত শব্দমালার মর্মার্থ বলিতে ব্যর্থ হইলেন। অবশেষে বলিলাম, ভাইজানরা, যদি নাই বুঝেন তাইলে বুঝছেন এমন ভাব নেন কেন? যদি ভাব না নিতেন তাইলে অন্তত স্যাররে আরেকবার সহজ কইরা বুঝায়া বলতে অনুরোধ করতাম, আমি তো ভাবছি ক্লাসে দেরীতে আসছি তাই বুঝতেছি না, তাই আওয়াজ করি নাই। এখন কে কারে বুঝাইবে, কেঊই তো কিছু বুঝে নাই। মনে মনে কহিলাম, এই জাতির বড় সমস্যা হইল, সবাই সবকিছু বেশি বোঝে, এমনকি না বুঝলেও বুইঝা উল্টায়া ফেলছি এমন ভাব করে। যাহা বুঝি নাই তাহা অকপটে স্বীকার করায় আমাদিগের বড়ই অনীহা।কবিগুরু বাঁচিয়া থাকিলে এই জাতিরে নিয়া নিশ্চিত আরেকটা কবিতা লিখতেন, আমরা সবাই পন্ডিত আমাদের এই পন্ডিতের রাজত্বে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.