নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তরালের পথিক

অন্তরালের পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাতিঘরের কথা

১৯ শে জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩

আমার বাবাকে আমার সবসময়ই গ্যান্জামপ্রিয় মানুষ মনে হয়। দেরীতে ঘুম থেকে উঠলে ঝাড়ি, টিভি অন করলে ঝাড়ি, গল্পের বই অথবা পত্রিকা হাতে নিলে ঝাড়ি আর খেলা দেখছি কিংবা খেলছি এমন হলে তো কথাই নাই। স্কুলের পরীক্ষায় কম নাম্বার পেলে যে অনুভূতি হত আমার মনে হয় কোরবানির গরুর কোরবানির মুহূর্তে ঐ অনুভূতি হয়। এসব দেখে আমার মনে হয় সৃষ্টিকর্তা তাকে পৃথিবীতে পাঠাইছেই আমার সঙ্গে গ্যান্জাম করার জন্য। তবে মাঝে মাঝে একটু কনফিউজড হয়ে যেতাম যখন দেখতাম কোন কিছুর আব্দার করার সঙ্গে সঙ্গে আবেদন মন্জুর হয়ে যেত। আমার অবশ্য মনে হয় টাকার গায়ে যেমন লেখা থাকে "চাহিবামাত্র ইহার বাহককে অমুক টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে তমুক" তেমন হয়ত আমার গায়েও লেখা আছে "চাহিবামাত্র এই বেচারার মনবাসনা পূরণে বাধ্য থাকিবে তার পিতা"। তা নাহলে সারাদিনই যে আমাকে দৌড়ের উপর রাখে তার কাছে চাইলাম আর পাইলাম এইটা কিভাবে সম্ভব। যখন দেখি বেশি রাত করে বাসায় ফেরার পরও ঝাড়ি না দিয়ে উল্টা তার মুখ থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ মুছে যেতে তখন আরও কনফিউজড হয়ে ভাবি ঘটনা কি। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাওয়ার সময় যখন দেখি আমার শার্ট, প্যান্ট বিছানার পাশে সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখা এবং যখন বুঝতে পারি যে এই কর্মটা আমার বাবাই করেছে তখন মনে হয় মানুষটা খুব একটা খারাপ না। সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় আসার পর আমার ছোট বোন যখন তার স্কুলের বিভিন্ন গল্প বলা শুরু করে তখন ক্লান্ত শ্রান্ত মনে ইচ্ছা করে (যদিও তা করি না) কানের নিচে একটা চটকনা দিয়ে বলি, বিরক্ত করো না, টায়ার্ড লাগছে। মনে পড়ে আমার বাবা অফিস থেকে আসার পর আমি কত আজিব কিসিমের আব্দার করতাম। এখন ভাবতে অবাক লাগে আমার বাবা কিভাবে বিরক্ত না হয়ে শান্ত থাকত। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমার বাবাও বুড়ো হয় যাচ্ছে আর আমিও বুঝতে পারছি আমার জীবনে তার অবদান কত ব্যাপক, কত বিস্তৃত। পৃথিবীর সব বাবাই মনে হয় এক একটা বাতিঘর যে জীবনভর সন্তানকে পথ নির্দেশনা দেয় আদরে, শাসনে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.