নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকাশ কুশুম

ননদালীনাজ

মানবতা, ন্যায়বিচার, সু-শাসন- কোন আন্গীকেই ব্যাতিক্রম হতে পারে না,যেখানে হ্য়, সেখানে এর কানটাই নেই।উদাহরণ- বর্তমান বাংলাদেশ !

ননদালীনাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

A POTRAIT OF A PSYCHOATH

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪২

পোট্রেট অব এ সাইকোপ্যাথ
==============

"... ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যখন মর্মান্তিক ঘটনাগুলো ঘটে শেখ হাসিনা তখন সপরিবারে জার্মানীতে ছিলেন। স্বভাবত:ই তখন বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া তার জন্যে সহজ ছিলোনা। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের উদ্যোগ ও আনুকূল্যে দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি বিদেশে, মূলত: ভারতে ছিলেন। একটি রক্তঝরা সামরিক অভ্যুত্থানে পিতামাতা, তিন ভাই এবং পরিবারের আরো কয়েকজন নির্মমভাবে নিহত হবার ঘটনায় স্বভাবত:ই তিনি শোকে মর্মাহত হয়ে পড়েছিলেন। নির্বাসিত জীবনে করার কিছুই ছিলোনা। স্পষ্টত:ই ভারতীয়রা তাকে মন:স্তাত্ত্বিক পরামর্শ কিংবা চিকিৎসা দেবার কোন ব্যবস্থা করেনি। কর্মহীন জীবনে শেখ হাসিনা অবিরাম তার শোক বুকে লালন করেছেন। শোক এবং প্রতিহিংসার বাসনা ক্রমে ক্র্মে তার হৃদযন্ত্রের পুরোটা জুড়ে বসেছে। বলতে গেলে হৃদয়টা একাধারে শোকের সমাধি এবং ঘৃণা ও প্রতিহিংসার দাবানলে পরিণত হযেছে।

ইতিমধ্যে দেশ ও ইতিহাস বসে থাকেনি। রাষ্ট্র তরণী কান্ডারী-বিহীন থাকা উচিত নয় এবং থাকেওনি। আরো বহু ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। আরো একাধিক সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, হয়েছে নির্বাচনও, একাধিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ক্ষমতায় এসেছেন এবং গেছেন। নির্বাসনে বসে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীনদের নাম শুনেছেন এবং গাত্রদাহে ভুগেছেন, হৃদয়-জোড়া ঘৃণা ও ক্রোধের কালিতে কলঙ্কিত করে তিনি এদের সকলকেই তার পিতা ও পরিবারের ঘাতক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছেন। এই মন:স্তাত্ত্বিক ব্যাপারগুলো হয়তো তার অজান্তেই একদিন পাষাণ বেদীর মতো তার সমগ্র চেতনাকে ঢেকে ফেলেছে, তার হৃদয়ের সদিচ্ছা ও শুভকামনার অঙ্কুরগুলোকে বিনষ্ট করেছে।

মন:স্তত্ত্ববিদরা বলেন - এবং ইতিহাসের ভুরি ভুরি নজীর আছে - যে ঘৃণাকে দীর্ঘদিন মনে লালন করা হলে সে ঘৃণা তুষের আগুনের মতোই অবশেষে ঘৃণাকারীকে দগ্ধ করতে থাকে। শেখ হাসিনার বেলাতেও এই ব্যাপারটাই ঘটেছে বলে মনে হয়। তার অতীতের কোন কোন উক্তি এবং বিভিন্ন কার্যকলাপ দৃষ্টে এখন আর সন্দেহের অবকাশ নেই যে মাত্রাহীন ঘৃনা দ্বারা তাড়িত হয়ে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যেই ক্ষমতা লাভের উদগ্র বাসনা শেখ হাসিনাকে গ্রাস করে ফেলেছিলো।

আওয়ামী লীগ নেত্রীর এই মন:স্তাত্ত্বিক অসুস্থতার কথা আমার প্রথম মনে হযেছিল ১৯৮৩ সালের ১৫ই নভেম্বর। সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের অনুরোধে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডে তার প্রয়াত পিতার বাসভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম্। সারা বাড়ীর সবগুলো দেয়াল জুড়ে ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির বিরাট বিরাট এনলার্জমেন্ট। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত অবস্থায় সিঁড়িতে লুটিয়ে থাকা ছবিখানাও ছিলো এবং তার প্রিয় পাইপটি - যেটি ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমি মুজিব ভাইকে উপহার দিয়েছিলাম। কয়েক মূহুর্তের জন্যে আবেগে মথিত হয়ে পড়েছিলাম। আর তখুনি আমার মনে হলো, শেখ হাসিনা নিজেকে এই শোকের দূর্ভেদ্য কারাগারে বন্দী করে রেখেছেন, পিতৃ-মাতৃ হত্যার ট্র্মা বা আঘাত থেকে তিনি মুক্তি পাননি, মুক্তির পথও তিনি স্বেচ্ছায় বন্ধ করে দিয়েছেন। শেখ হাসিনা সেদিন আরো বহু বিষয়ের মধ্যে আমাকে বলেছিলেন যে তার পিতার হত্যার জন্যে, তার শোকে অশ্রুর বন্যা বইয়ে না দেয়ার অকৃতজ্ঞতার জন্যে তিনি বাংলাদেশী জাতিকে ক্ষমা করতে পারেননা, তিনি বলেছিলেন, পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতেই তিনি রাজনীতিতে নেমেছেন। মনে আছে, আমি সেদিন শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম যে, এ কথাগুলো বলা অন্তত: রাজনৈতিক কারণে তার অনুচিত হবে, কেননা তার প্রতিশোধ-লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্যে দেশের মানুষ তাকে ভোট দেবেনা।

নেতৃত্ব লাভের পর লন্ডনে প্রথম সফরেও শেখ হাসিনা আবার সে কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। বিবিসিতে আমার সহকর্মী জন রেনারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, রাজনীতিকে তিনি ঘৃণা করেন, কিন্তু পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে রাজনীতিতে নামতে বাধ্য হয়েছেন। মি: রেনারের অনুমতি নিয়ে আমি রেকর্ডিং থামিয়ে দিয়েছিলাম এবং শেখ হাসিনাকে আবারো মনে করিয়ে দিয়েছিলাম যে রাজনীতি করতে হলে দেশের মানুষের জন্যে তিনি কি করতে চান সে কথাটাই তাকে বলতে হবে, তার প্রতিশোধের অনলে ঘৃতাহুতি দেওয়ার কোন নৈতিক দায়িত্ব বাংলাদেশের মানুষের নেই, সেজন্যে তারা তাকে ভোট দেবেনা।

আমার সতর্ক পরামর্শের যথার্থতার প্রমাণ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মানুষ অবশ্যই দিয়েছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের অভিযানে প্রতিশোধের কথা শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে বলেননি, তবে কটূ-কাটব্য এবং গালি-গালাজ প্রচুর করেছেন। সে নির্বাচনে তিনি পরাজিত হবেন বলে আমি পূর্বাভাষ দিয়েছিলাম এবং তিনি পরাজিত হযেছিলেন। ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে তিনি অতীতের ভুলভ্রান্তির জন্যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং সে নির্বাচনে তিন জয়ী হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ নিশ্চয়ই আশা করেছিলো যে শেখ হাসিনা অবশেষে কটু-কাটব্য এবং হিংসা-প্রতিশোধের অসারতা বুঝতে পেরেছেন এবং শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্রের রাজনীতি করতে মনস্থ করেছেন।

কিন্তু শেখ হাসিনা দেশবাসীকে দেওয়া সে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। প্রধানমন্ত্রীত্বের সাড়ে চার বছরে তার উক্তি এবং কার্যকলাপ থেকে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে দেশের মানুষের অর্থনীতির ভবিষ্যত, তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা তার চিন্তায় স্থান পায়। প্রতি মূহুর্তে যেন দুটো চিন্তাই তার কর্মধারাকে পরিচালিত করছে - প্রথমত: '৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের সহ সে তারিখ থেকে তার নিজের গদিতে বসার তারিখ (২৩শে জুন ১৯৯৬) পর্যন্ত যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাদের সকলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া। শেখ হাসিনা এই শেষোক্তদের তস্কর বলেই মনে করেন, তার বিবেচনায় তারা তার পৈতৃক সম্পত্তি জবরদখল করেছিলেন। সে সঙ্গে তার পিতার হত্যায় শোকের বন্যা বইয়ে দেয়নি এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়নি বলে বাংলাদেশের মানুষকেও তিনি শাস্তি দিতে চান, সেটা তার পরোক্ষ প্রতিশোধ-বাসনা।

বাহাত্তর থেকে '৭৫ সাল পর্যন্ত যারা সুকৌশলে নিজেদের মুজিবের চতুষ্পার্শের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থাপন করে তাকে ঘিরে রেখেছিলো, তারা দেশের বাস্তবতা সম্বন্ধে অজ্ঞ এবং জনসাধারণ থেকে দূরত্ব রাখার জন্যে স্তব-স্তুতির আফিম খাইয়ে তাকে আত্মবিস্মৃত করে রেখেছিলো। স্তব-স্তুতির প্রতিযোগীতায় তারা যেন মুজিবকে দেবতার আসন দিয়ে দেবালয়ের দেয়ালের মধ্যে বন্দী করে রেখেছিলো। শেখ হাসিনা সম্ভবত: সে স্বার্থ-সর্বস্ব চাটুকারদের কাছ থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন, তিনি যেন প্রকৃতই বিশ্বাস করেন যে মধ্যযুগীয় রাজা- রাজড়াদের মতো দেব-তুল্য আরাধনা তার পিতার যোগ্য প্রাপ্য। শেখ হাসিনা এবং এ ব্যাপারে স্বার্থ-প্রণোদিত তার অতি-উৎসাহী সহচররা স্ট্যালিন ও মাও সে তুংয়ের আমলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে চলেছেন। স্ট্যালিন ও মাওয়ের স্বৈরতন্ত্রকে নিষ্ককন্টক করার জন্যে তাদের বিরাট বিরাট মূর্তি তৈরী করা হয়েছে, অন্য সকল বরেণ্য পুরুষের ভাবমূর্তি সপরিকল্পিতভাবে ধুলিস্মাৎ করা হযেছে। স্ট্যালিনের তথাকথিত থিয়রীগুলো সোভিয়েট ইউনিয়নের বুদ্ধিজীবিদের অবশ্যপাঠ্য ছিলো আর মাওযের রেড বুক মুখস্ত করা এবং সকল উপলক্ষে সে বই থেকে আবৃত্তি করা চীনের মানুষের জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিলো। শুদ্ধি-অভিযান, অমুকবাদ তমুকবাদের নামে দুই দেশেই কোটি কোটি মানুষকে নিগৃহীত এবং লাখো লাখো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, উভয় দেশেই আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ করা মাত্র এখনই ক্র্মান্বয়ে সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশে মুজিবের মূর্তি তৈরী পর্যন্ত বিলম্ব করার ধৈর্য্যও শেখ হাসিনার ছিলোনা। ক্ষমতা হাতে পেয়েই তিনি প্রাপ্তব্য সকল ইমারত ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে তার পিতার নামে দিয়েছেন। আইয়ুব খানের আমলে তৈরী ঢাকার ষ্টেডিয়াম, আইয়ুবের আমলে তৈরী শাহবাগ হোটেল - পরবর্তীকালে ইয়াহিয়া খানের আমলে যেটা ইনস্টিটিউট অব পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন হযেছে, জেনারেল এরশাদের আমলে পরিকল্পিত এবং খালেদা জিয়ার আমলে নির্মিত যমুনা সেতু - সম্ভাব্য সব কিছুরই নাম পরিবর্তিত করে শেখ হাসিনার পিতার নামে করা হচ্ছে। '৯৭ সালে চাটগাঁয় একটা কথা শুনে এসেছিলাম। নতুন একটা খালের উদ্বোধন হচ্ছে শুনে প্রধানমন্ত্রী নাকি জানতে চেয়েছিলেন, সে খালের নাম কেন বঙ্গবন্ধু খাল রাখা হবে না। যখন তাকে বুঝিয়ে বলা হলো যে আসলে খালটা তৈরী হয়েছে আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্যে, মাত্র তখনই নাকি তিনি নিবৃত্ত হযেছিলেন। বাংলাদেশে বহু লোক আক্ষেপ করে আমাকে বলেছেন, তার চাইতে সকল বাংলাদেশীর কপালে বঙ্গবন্ধু কথাটি উল্কি দিয়ে এঁকে দিলে অথবা বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু দেশ নাম দিলেই ল্যাঠা চুকে যায়॥"

- সিরাজুর রহমান (প্রখ্যাত সাংবাদিক, বিবিসি বাংলা বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক) / ইতিহাস কথা কয় ও নির্বাচিত রাজনৈতিক প্রবন্ধ ॥ [ শিকড় - ফেব্রুয়ারী, ২০০২ । পৃ: ১৪১-১৪৪ ]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০৬

কেএসরথি বলেছেন: "শেখ হাসিনা সেদিন আরো বহু বিষয়ের মধ্যে আমাকে বলেছিলেন যে তার পিতার হত্যার জন্যে, তার শোকে অশ্রুর বন্যা বইয়ে না দেয়ার অকৃতজ্ঞতার জন্যে তিনি বাংলাদেশী জাতিকে ক্ষমা করতে পারেননা"

একথা আমিও আগে অনেকবার বলেছি। তখন আমার জন্ম হয়নি, কিন্তু শুনেছি ও পত্রিকার কাটিং-এ দেখেছি, দেশের অনেক জায়গায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। কিন্তু কেন?

ভেবে দেখুন তো - আপনার পিতা দেশ স্বাধীন করল - তারপর তার মৃত্যুর পর তার হত্যাকারীদের বিচার হলো না। দেশবাসীও টু শব্দ করল না। তাহলে আপনি সেই দেশবাসীকে কি চোখে দেখবেন?

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সিরাজুর রহমান নিজেই সাইকোপ্যাথ ছিলেন বোধহয়| একজন বলেছেন আর আপনি সেটা কপি করে মেরে দিলেন| আপনারও মানসিক চিকিৎসা দরকার

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৯

বিজন শররমা বলেছেন: অনেক কারনেই লেখাটি যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.