নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Studying at Department of Finance, University of Dhaka.Enthusiastic for knowledge and nature.Want to be Cosmopolitan.Imagine there\'s no hatred no war in the world..

নূর মোহাম্মদ প্রধান

জন্মঃ চাঁদপুর জেলায়, শৈশব কেটেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের আদমজী জুট মিল এলাকায়;মিল বন্ধ হয়ে গেছে কবে তবে সাইরেনের ধ্বনি এখনো অনুরণিত হয়।পাটের আঁশের রঙ,মাটির সোঁদা গন্ধ যুবতীর পায়ের নূপুর আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে উঠি।বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

নূর মোহাম্মদ প্রধান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গর্ভধারিণী, সমরেশ মজুমদার(রিভিউ)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০০

গর্ভধারিণী পড়ে শেষ করলাম।রচনার সময়কাল ১৯৮৬।জননন্দিত এই সাহিত্যিকের লেখায় ডুব দিলে অন্য কাজে হাত দেওয়া মুশকিল।চারটা ছেলে-মেয়ে ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়েছে, প্রেসিডেন্সীতে পড়ার সময় পরস্পরে বন্ধু হয়ে উঠে।মানবিক মূল্যবোধ থেকে সমাজ সচেতনতা উঁকি দেয় সদ্য যৌবনে পা রাখা এদের ভিতর স্বতন্ত্রভাবে,অসম অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে দিতে চায়।সব দায়-দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর উপর চাপিয়ে হাত-পা গুটিয়ে পুরনো মানুষের মতো বাঁচতে বিবেকে বাঁধে।অন্তত কিছুটা হলেও নাড়া দিতে চায় ওরা যাতে এই চুপসে পরা সংস্কারাগ্রস্ত বাঙালী অবিচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলে;তবে ওরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নয় এমনকি কোন বাম দলও নয়।
চারজনের ভিতর সুদীপ রগচটা খানিকটা খেয়ালী;আনন্দ ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের ছেলে,ওর কথা সহজে অন্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।জয়িতা বিপদে বুদ্ধি খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে,জয়ীকে ওরা কেউ মেয়ে বলে মনে করেনা সে যে কেবল বন্ধু অবশ্য প্রমাণ মিলেছিল পরে।কল্যাণ সবচেয়ে ভালো ছাত্র,সে মনে করে এখনো তার মধ্যে বহু মধ্যবিত্ত সংস্কার রয়ে গেছে।আনন্দটা ছাড়া বাকি সবারই চিন্তা ভাবনা পরিবারের সাথে অসমতল।জয়িতার বিত্তশালী মা বাবা ভোগবিলাসে মত্ত,সুদীপের বাপ অসৎ উকিল আর বিত্তহীন কল্যাণের ঘরে তেল-নুন-কাপড় নিয়ে ঝগড়া খিস্তি চলছে সারাদিন।একসময় ওরা অ্যাটাকে নামে।প্রথম আক্রমণ করে প্যারাডাইসে,এখানে সাধারনের প্রবেশ নিষেধ আর অসাধারণেরা যাবতীয় অশ্লীল অনৈতিক কাজকামের আখড়া খুলেছিল শহরতলীতে।প্যারাডাইসের মালিকসহ চারজন নিহত এবং বাংলোটি বোমায় বিধ্বস্ত,পুলিশের সন্দেহে আসেনা ওরা।প্রথমবার বেশ সফল বলা চলে।
দ্বিতীয় মিশনে ওরা একটি জাল ওষুধের কারখানায় গ্রেনেড ফাটায়,বুদ্ধি করে আগেই সব নিরীহ শ্রমিককে সরিয়ে দেয়ায় কোন আদমের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি তবে জয়িতার উপস্থিত বুদ্ধির কল্যাণে কল্যাণ বেঁচে গেলেও হাত ভেঙ্গে যায় ওর।
ঠাকুরপুকুরের এক পুরনো বাড়িতে আশ্রয় নেয় আর লক্ষ্য করতে থাকে মানুষের প্রতিক্রিয়া।সরকারি নেতা কর্মী বিদ্রোহী ডাকাত বললেও সাধারণ মানুষদের অনেকেই বাহবা দিতে থাকে তবে অবশ্যই জনসম্মুখে নয়।একসময় পুলিশের নজরে চলে আসে এরা,ছবিসহ পত্রিকায় ছাপা হয়। পালানোর আগে এক মন্ত্রীকে শেষ করে যায় ওরা যে কিনা মুখে সাম্যবাদীর বুলি আওড়ায় আর ভিতরে ভিতরে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো,সন্ত্রাসী শেল্টার,ঘুষ আদান প্রদান মূলমন্ত্র।

এবার শুরু হয় নতুন সংগ্রাম,ফেরারি জীবন।চারজনের টীম দুভাগ হয়ে শিলিগুরি চলে যায়,কলকাতা ছাড়ার আগে বেশকিছু টাকা,জামা কাপড়,প্রচুর ওষুধসহ মাস দেড়েকের রসদ নিয়ে নেয় সুদীপ।শিলিগুরি থেকে জীপে করে দার্জিলিং;সর্বত্র পুলিশের ভয়। যেখানে সেখানে পুলিশ হানা দেয় তাই ওরা প্লান করে ভারতীয় পুলিশের আওতার বাইরে এমন এক জায়গা খুঁজে বের করতে হবে।ম্যাপ দেখে নেপাল বর্ডারের চ্যাঙথাপু গ্রামকে টার্গেট করে। ভোর না হতেই দার্জিলিং হতে আসে সান্দাকফু,ট্রেকিং করে সান্দাকফুতে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ক্লান্ত;কুয়াশা সরে গিয়ে যখন তাদের সামনে বুক চিতিয়ে দাড়ায় নয়নাভিরাম কাঞ্ছনজঙ্গা,চোখ শীতল হয়ে আসে সব অবসাদ মিলিয়ে যায় মনে হয় এক হাজার বছর কাটিয়ে দেয়া যাবে এই নৈসর্গের সামনে দাড়িয়ে।একদিকে পুলিশে ধরার ভয় একটাকে ধরতে পারলে নেড়ি কুত্তার মত চিবিয়ে খাবে ঢের ভালো করেই জানে আরেকদিকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমরেশ বাবুর বর্ণনা,এখানে এসে এই থ্রিল উপভোগ করতে কোন পাঠকই কৃপণতা করবে না।
সান্দাকফু থেকে বরফের চরাই উৎরাই পেরিয়ে ফালুট।এখানেই পুলিশের সর্বশেষ ফাঁড়ি।ফালুট অতিক্রম করলে আর ভারতীয় পুলিশের ভয় নেই।ফালুট থেকে ওরা হাঁটছে হাঁটছে,প্রচণ্ড কুয়াশা একহাত সামনে কিছু দেখা যায় না।হাঁটছে তো হাঁটছে সারাদিন একসময় আনন্দ উপলব্ধি করে ওরা পথ ভুল করেছে,ফালুট থেকে চ্যাঙথাপু তিন কিলোমিটারের পথ আর ওরা কমপক্ষে ত্রিশ কিলো চলে আসার পরও কোন গ্রামের আনাগোনা নেই।কিন্তু ফালুট ফিরে যাবার শক্তি নেই আর গায়ে তাছাড়া ওয়াংদে ছেলেটা গিয়ে বলে দিতে পারে ওদের কথা।


একসময় পাহাড়ি কিছু লোকের সাথে পরিচয় হয়ে ওরা চলে আসে তাপল্যাঙ।পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একখানা গ্রাম।সভ্য জগতের আলো এখনো এখানে এসে পৌঁছায়নি।শীত বলতে এতদিন যা বুঝাতো সেগুলো ছিল নস্যি,এবার শুরু হয় প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই।মনে হয় আজকের দিনটা বাঁচতে পারলে আর মরবো না।গ্রামবাসীর সাথে একদিন থাকার চুক্তি হলেও পর্যায়ক্রমে ওরা চারজন এদের আপন হতে থাকে।ঘটনাটা এরকম... তাপল্যাঙের মানুষের সাথে ভাষা আদান প্রদানের পালদেমই একমাত্র মাধ্যম।গলগণ্ড,মুখে গাঁ,জ্বর-জারিতে এখানে প্রচুর প্রাণহানি ঘটে আর এরা ভাবে দানোর অভিশাপ।একদিন পালদেমের ছেলেকে জ্বর থেকে সারিয়ে তোলে আনন্দ ওদের সাথে করে নিয়ে আসা মেডিসিন দিয়ে।গ্রামবাসীরা ভাবে ওদের অলৌকিক ক্ষমতা আছে এমনকি কাহুনও তাদের ভক্তি করে।যার যার রোগ শোক আছে দলে দলে আসতে থাকে,এমন এক সময়ে সবার ওষুধের ব্যবস্থা করতে গ্রামের একটি ছেলেকে নিয়ে দার্জিলিং যায় কল্যাণ।সাতদিন পর ফিরে আসার কথা থাকলেও আটদিন পর ছেলেটি কল্যাণের মৃত্যুসংবাদ নিয়ে ফিরে।পুলিশের গুলিতে মারা পরে কল্যাণ,তবে সে ঔসধের বস্তাটা ঠিকই ছেলেটির হাতে দিতে পেরেছিল।যাওয়ার আগে রাগ করে সুদীপকে বলেছিল,জীবন নিতে না পারি জীবন বাঁচাতে তো পারবো।
আনন্দ জয়িতা একসময় খেয়াল করলো ওরা যে সমাজব্যবস্থার কথা এদ্দিন ভাবছিল এখানে সেইরকম অনেকটাই আছে শুধু একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে।এখানে তেমন কোন শাসকশ্রেণি নেই,কাহুন থাকলেও সে শুধু ধর্মপালনে সীমাবদ্ধ।নামমাত্র একজন পালা(দলপতি) আছে।এরা পিছিয়ে আছে মূলত জ্ঞানের অভাবে,অর্থনৈতিক অস্বছলতায় আর রোগের প্রকোপে।নতুন করে স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করে জয়ী আনন্দ,কিছুদিনের ভিতর এখানের মৃত্যুহার বহুলাংশে কমে আসে।সুদীপের টাকাগুলো কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করে তুলতে থাকে,এই প্রথম ওরা টাকার মুখ দেখল।মাঝখানে অবশ্য পুলিশের একটা ইউনিট খুঁজতে এসেছিল তবে পালদেম,লা ছিরিংরা ওদের পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে রাখে;পাশের গ্রামের লোকেরাও বাধ্য করে পুলিশকে হতাশ ফিরতে।শীতের প্রকোপে বরফের ঝড় থেকে রক্ষা করতে আনন্দ গড়ে তোলে যৌথঘর,যৌথখামার এবং যৌথ চাষবাসের ব্যবস্থা।এদিকে জয়িতা সকল নারীদের স্বাস্থ্যসচেতনতায় সজাগ করতে থাকে।একসময় গ্রামের মানুষের চোখে ওরা দেবতুল্য হয়ে উঠে।বছরখানেকের মধ্যে পুরো তাপল্যাঙের চেহারা পাল্টে যায়,কৃষির ফলন তরতর বেড়ে যায়।পাশের গ্রামে রোলেনদের সাথে প্রায় প্রায়ই যে ঝগড়া-খুনোখুনি-লুটপাট হতো সেটাও জয়িতা সুন্দরভাবে মীমাংসা করে অবস্থা এমন যে দুইগ্রামে এখন যথেষ্ট শান্তি।জয়িতাকে আদর করে নাম দিয়েছে দ্রিমিত,সে এখন ওদের পোশাকই পরে।রাতে তক্তার উপর শুয়ে ওদের মনে হয় ভারতবর্ষের বৃহৎ পরিসরে ওরা যে স্বপ্ন দেখেছে সেটা এখানে স্বার্থক করতে পেরেছে।অপরদিকে তাপল্যাঙবাসীরা ভয়ে থাকে,হায়!ওরা চলে গেলে আমাদের কী হবে!আমরা পুনরায় নিঃস্ব রিক্ত হয়ে যাবো।গ্রামের মানুষ যাতে নিজেরাই নিজেদের উন্নতি ত্বরান্বিত করতে পারে সেই লক্ষ্যে গ্রামবাসীর সমর্থনে দশজনের দল নির্বাচিত হয়।গ্রামবাসীরা দ্রিমিতকেও দশজনের ভিতর টেনে নেয়।এভাবেই চলতে থাকে গল্প।

অধমের ছাইপাশ পড়ে বমি ভাব হলেও বইটা হাতে নিন,শেষ না করে অন্য কাজে মন দিতে পারবেন না কথা দিলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.