![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জন্মঃ চাঁদপুর জেলায়, শৈশব কেটেছে নারায়ণগঞ্জ শহরের আদমজী জুট মিল এলাকায়;মিল বন্ধ হয়ে গেছে কবে তবে সাইরেনের ধ্বনি এখনো অনুরণিত হয়।পাটের আঁশের রঙ,মাটির সোঁদা গন্ধ যুবতীর পায়ের নূপুর আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে উঠি।বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
এবারের বইমেলায় বের হয়েছে মৌলি আজাদের ‘রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি’।মানুষের গর্ভেই জন্ম হয় রক্তজবাদের;খাওয়া-চলা, উঠা-বসা, সিরাতে-ছুরুতে,বুদ্ধি-দোষে,আবেগ মায়ায় সবকিছুই মানুষের মতন তবু এরা কখনো মানুষের মর্যাদা পায়না।মানুষ নামক দুপেয়ে নারী পুরুষরা ওদেরকে দিয়েছে অমানুষের জীবনযাপন করে রেখেছে অসামাজিক যেন তারা মানুষ তো দূরের কথা প্রাণী নামের কলঙ্ক।সামান্য লৈঙ্গিক ত্রুটির কারণে তৃতীয় সারির এই মানুষদের বয়ে বেড়াতে হয় এক অসহনীয় জীবন, এরা না পারে আত্মহুতি দিয়ে নিজেকে উদ্ধার করতে না পারে বেঁচে থাকতে।
এইসব হিজড়াদের দুঃখ-দুর্দশা আর হতাশা নিয়ে বিচিত্র এক গল্প লিখেছেন মৌলি আজাদ।বেশ কয়েকটি হিজড়াদের মুখে আঞ্চলিক ভাষায় টেনে টেনে বের করেছেন তাদের নিংড়ানো জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত,শৈশবের মায়াভরা অতীত গল্প,বর্তমানে প্রত্যাহ নির্যাতনের বর্ণনা আর ভবিষ্যৎ বলতে শুধু হতাশা।শোভন নামক একটি সন্তান যে জন্মেছিল বংশের নাম উজ্জ্বল করবে বলে,পরপর কতগুলো কন্যার পর যে ছিল বাবা মায়ের কত আহ্লাদের অথচ তাকে আস্তাকুরে ফেলে দিতে সেইসব বাবা-মা একটুও টলেনি।
হিজড়ারা কেন হিজড়া হয়ে জন্মায়?এখানে তাদের দোষ কোথায়?যদি তারা বাপ মার শারীরিক ত্রুটি বা পাপের ফলে জন্মায় সেই দায়ভার একা তাদের কেন বইতে হবে?এইসব নানা প্রশ্ন সুনিপুনভাবে লেখক রেখেছেন আমাদের কাছে,পাঠককে নতুন করে ভাবাবে বলে বিশ্বাস করি।নিজের মনেও নানা প্রশ্ন জেগেছে যেমনঃ হিজড়াদের ধর্ম কী?কোন ধর্মের অনুসারী হয়ে এরা জন্মে,সৎকার হয় কোন রীতিতে?মসজিদে বা মন্দিরে ঢুকতে দেয় ওদের?ভবিষ্যতে দিবে কখনো?তাহলে রোজ হাশরে কীভাবে হবে বিচার বা পুনর্জন্ম?রাষ্ট্রীয় আইনে ওরা কী পিতা মাতার সম্পত্তিতে অংশীদার হতে পারে বা ফারায়েজে আছে কোন অবস্থান?
মা নাকি সন্তানের জন্য সব করতে পারে,সন্তানের জীবনের চেয়ে মা’র কাছে বড় কি হতে পারে?অথচ এক্ষেত্রে সামাজিকতাই মুখ্য হয়ে উঠে,মায়ের এই ব্যতিক্রম আচরণে চমৎকৃত না হয়ে পারা যায়না।অপূর্ণাঙ্গ মানুষ বলে তাদের মন আজ উপেক্ষিত,কেউ তাদের সাথে দু’গণ্ডা কথা বলতেই নারাজ।এই বকুলির এই ছন্দার এই সালেহার প্রায় মনে পড়ে ভাই বোনের কথা,মা জানি কেমন আছে মারে একটু দেখতে কলিজাটা খুব পুড়ে অথচ ওরা ফোন করতেও সাহস পায় না আজ!কোন সরকারের কোন দপ্তরে নেই কোন চাকুরী তাদের জন্য বরাদ্ধ; নেহায়েত পেটের দায়ে মানুষের দ্বারে ভিক্ষা মাগতে হয় নাহয় শখ করে কেউ তো হিজড়া হয়নি! তবু মানুষের কত গঞ্জনা লাত্থি-উশটা খেয়ে তাদের বেঁচে থাকা।
এই গল্পে সবচেয়ে যেটা ভালো লাগছে হিজড়া পট্টির সংলাপ বর্ণনায় লেখকের আড়ষ্টতা লক্ষ্য করা যায়নি।একজন লেখক যখন লেখনিতে রকে বসা ছোকরাদের খিস্তি খেউরি তুলে আনেন বা অভিজাত হোটেলে বিজ্ঞ অধ্যাপকের লেকচারের বিবরণ দেন তখন লেখকের লিঙ্গ পরিচয় গৌণ;তবু কিছু নারীর লেখায় বুঝা যায় এটা নারীর লেখা কারণ জড়তা স্পষ্ট।নিষিদ্ধ পল্লিতে,হিজড়ারা,রিকশাওয়ালারা রাস্তাঘাটে বাস্তবিক যে ভাষায় কথা বলে সেটা তুলে আনায় সঙ্গত।এখানে লজ্জার আবরণ থাকা যুক্তিযুক্ত নয়।রক্তজবাদের কেউ ভালোবাসেনি তে সেরকম জড়তা দৃষ্টিগোচর হয়নি,লেখক অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য ভালোই শ্রম দিয়েছেন বুঝা যায়।তবে ভাষা আরো রূঢ় আরো তীব্র হতে পারতো,একেবারে মর্মমূলে বিঁধতে কল্পনার আশ্রয় ছাড়াই চাক্ষুষ হতো।
গল্পটি শেষ করে একটা খটকা রয়ে যায়।হিজড়া শোভা বারে এক ছেলের পিঠে চাপড় মেরে ‘রিমেম্বার গাইজ অল থ্যাট গ্লিটারজ আর নট গোল্ড’র মত সুন্দর ইংরেজি বলে,এটা মানা যায় যেহেতু সে আইএ পাশ কিন্তু কোথা থেকে কিভাবে কলেজ পর্যন্ত পড়ালেখা করলো ছল্লা করতে না দিয়ে কে কলেজের খরচা যোগাল ব্যাপারটি পরিষ্কার করলে পাঠকের সুবিধে হত।
তৃতীয় লিঙ্গের প্রতি নারী পুরুষের যে অসীম ঘৃণা ভয় পাঠকের সেটা বহুলাংশে কমে আসবে বলে বোধ করছি এবং হিজড়া সমস্যার সমাধান নতুন করে ভাবাবে।ওদেরকে ঘর থেকে বের না করে যদি পরিবারের স্নেহ মমতায় মানুষ হয়ে চাকরী বাকরিতে যোগ দিতে পারতো তাহলে ওরাও পেতে পারতো একটি কাঙ্ক্ষিত সুন্দর জীবন।মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে আসে না ওরা আসে এইতো গেলো বছর ওয়াশিকুর বাবুর ঘটনায় সেটা প্রমাণ হলো।গল্পটি শেষ হয়েছে এরকম একটি গল্প দিয়ে।
সাবলীল ভাষায় লেখা মৌলি আজাদের বই প্রথম পড়েছিলাম শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদ স্যার কে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ “হুমায়ুন আজাদ আমার বাবা”।নিজস্ব পরিচয়ে বিকশিত হবে, লেখকের পরিপক্ক আরো লেখা পড়বো সামনে এই কামনা।
©somewhere in net ltd.