নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

a born dreamer

মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক ,সত্যেরে লও সহজে।

নূর আলম সিদ্দিকী রাসেল

নয়ন আমার রূপের পুরে, সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে, শ্রবণ আমার গভীর সুরে হয়েছে মগন। জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ..

নূর আলম সিদ্দিকী রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আঁখিজল।

১৫ ই জুন, ২০১৫ রাত ৩:৫২

আমার দাদীশাশুড়ির জন্ম সিলেটের বালাগঞ্জে। জন্মের পর দাদীজানকে দেখিনি,বিয়ের পর দাদীশাশুড়িকে দেখা পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার।
একুশ বছর বয়স থেকে উনি ব্রিটেনে আছেন।আমার শুশুরবাড়িতে মুরুব্বী হিসেবে উনাকে সবাই মেনে চলে।
আমার বিয়ের আংটি বদলের সময় উনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়।
মুখভরতি পান নিয়ে আমার সামনে এসে বললেন,ওবা নাতিন দামান (জামাই) বড় পছন করে তোমার লগে আমার ডাক্তার নাতনীর বিয়া দিরাম,আমার একখান কথা কিন্তুক তোমার রাখন লাগবো।আমি অতি বিনয়ের সুরে বললাম,অবশ্যই রাখবো,বলেন কি কথা ? উনি বললেন,আমি ইংলিশ মাততাম পারিনা,তোমার কিন্তু সিলেটি মাত হিকা লাগবো।আমি বললাম,দাদীজান,আমি মোটামুটি সিলেটি ভাষায় কথা বলতে পারি আর যা পারিনা তা আপনার কাছ থেকে শিখে নিবো।উনি আমার কথায় খুব খুশী হলেন।
বিয়ের দিন রাতে উনার সাথে আমার দ্বিতীয়বার দেখা।বাসরঘরে ঢুকে দেখি দাদীজান আমার নববধূর পাশে বসে আছেন।আমাকে দেখে উনি উঠে এসে আমার হাত ধরে উনার নাতনীর পাশে আমাকে বসালেন,বসার পর উনার নাতনীর হাত আমার হাতে দিয়ে বললেন,দামান,আমার তিন নাতনীর মইধ্যে তাই (সে) আমার হুরু (ছোট) নাতনী,আমার বড় আদরের,তুমি আমারে কথা দেও আমার নাতনীর মনে কোন কষ্ট দিবানা,এই কথা বলেই উনি কাঁদতে শুরু করলেন।আমি বললাম,দাদীজান আপনার নাতনী আমাকে কতখানি সুখে রাখবে আমি জানিনা,তবে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার নাতনীর মনে কষ্ট যায় এইরকম কিছু আমি কখনো করবোনা।সেদিন দাদীজান আমাদের সাথে একসাথে নামাজ পড়ে আমাদের দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে পরম করুণাময়ের কাছে দুহাত তুলে আমাদের সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য অনেক দোয়া করেছেন।
বিয়ের পর আমরা প্রথম হানিমুনে যাই আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের টাইটানিক কোয়াটারে। সেখানে অনেক ছবি তুলি দুজনের।ফিরে আসার দুইদিন পর বউ তার দাদীজানকে আগ্রহভরে ছবিগুলো দেখাচ্ছে,আমিও পাশে বসা।দাদীজান ছবি দেখে খুব মুগ্ধ হলেন। হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,দামান,আমার নাতনী কিন্তুক পরীর মতন সোন্দর,তয় তুমি আমার একখান কথা রাখা লাগবো।আমি বললাম,কি কথা বলেন? উনি বললেন, আইজকাইল পোয়া ফুরিনতে (ছেলে মেয়েরা) কিতা ফেইছবুক টুইটার চালায়,আর ইতার মাঝে খালি তারার ছবি দিয়া রাখে,তুমি কিন্তু আমার নাতনীর ছবি ইতার মাঝে দিবানা।আমি বললাম,দাদীজান আমি অতি অবশ্যই আপনার নাতনীর ছবি ফেসবুক টুইটারে দিবোনা,তাছাড়া আপনার নাতনীও তার নিজের ফেসবুক বা অন্য কোথায়ও নিজের ছবি দেয়নি,ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, হিজাব পরে সেক্ষেত্রে আমি আপনার নাতনীর ছবি দিয়ে গুনাহর ভাগী হবো কেন ?
দরকার হলে আমার নিজের ছবি দেয়াই বন্ধ করে দিবো।দাদীজান বললেন,দামান তুমি খুব ভালা মানুষ ।
বিয়ের বছরখানেক পর আমার একমাত্র পুত্রের জন্ম।মায়ের কোলজুড়ে ছেলে জগতের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। বউ এবং ছেলেকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়ার আগ পর্যন্ত আমি প্রতিদিন সকালবেলা হাসপাতালে যাই আর সন্ধ্যাবেলা বাসায় আসি।হাসপাতালে যতক্ষণ থাকি আমার নবজাতক ছেলের হাসিকান্না সব মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করে রাখার চেষ্টা করি।বাসায় এসে একা একা ছবিগুলোকে বারবার দেখি।একদিন রাতে দাদীজান এসে আমার বাসায় হাজির।আমি একা থাকি দেখে আমার শাশুড়ি প্রতিদিন বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে আসেন,আজ দাদীজান খাবার নিয়ে এসেছেন।দাদীকে পেয়ে আমি ছেলের ছবিগুলো দেখাতে লাগলাম।দাদীজান বললেন,দামান তোমার পোয়া কিন্তু চান্দের লাহান তয় একখান কথা তুমি কিন্তু বেশী মানুষরে তোমার পোয়ার ছবি দেখাইবানা আর খবরদার ভুলেও ফেইচবুক টুকে পোয়ার ছবি দিবানা,মাইনষের নজর লাগবো। আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনে আমি সারাজীবন বিজ্ঞান পড়ুয়া মানুষ,কুসংস্কারে একদম বিশ্বাস করিনা তারপরেও দাদীর এহেন ভবিষ্যৎবানীতে একমাত্র পুত্রের নজর লাগার ভয়ে আমি দাদীকে কথা দিলাম ছেলের ছবি আমি কোথায়ও দিবোনা।দাদীজান আমার ছেলের দীর্ঘজীবনের জন্য প্রাণভরে দোয়া করলেন।
দাদীজান গত দুদিন যাবত বার্ধক্যজনিত কারনে খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন।
গতকাল দাদীজানকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম।পরম মমতায় উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।আমি উনার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলেছি,দাদীজান আপনাকে দেয়া সব কথা আমি রেখেছি,আমার একটা কথা কিন্তু আপনাকে রাখতেই হবে।উনি চোখের ইশারায় আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি কথা ? উত্তরে আমি বললাম,আর কটা দিন বেঁচে থাকুন দাদীজান,আপনি চলে গেলে আমরা খুব একা হয়ে যাবো।আমার কথা শুনে উনি মুখ ঘুরিয়ে ফেললেন,উনার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখের পানিতে উনার মুখ ভিজে যাচ্ছে।আমি মনে মনে বললাম,আমার জলেই টলমল করে আঁখি,তোমার চোখের অশ্রু কোথায় রাখি ?

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়েছি

২| ১৫ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭

মুরব্বী বলেছেন: আপনার শশুরবাড়ির মুরব্বী হিসাবে আপনি কি আমাকে চিনেন না ?............. হাঁ হাঁ হাঁ ।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ৩:৩৮

নূর আলম সিদ্দিকী রাসেল বলেছেন: চিনে রাখলাম জনাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.