নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

a born dreamer

মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক ,সত্যেরে লও সহজে।

নূর আলম সিদ্দিকী রাসেল

নয়ন আমার রূপের পুরে, সাধ মিটায়ে বেড়ায় ঘুরে, শ্রবণ আমার গভীর সুরে হয়েছে মগন। জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ..

নূর আলম সিদ্দিকী রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কুরআনের হাফেজ ও আমার বাবা।

২৮ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৫:১০

আমার বাবা মরহুম হাফেজ ডাঃ আহসান উল্লাহ্‌ সিদ্দিকী ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি। উনি একাধারে একজন কুরআনের হাফেজ,চিকিৎসক,ব্যবসায়ী,লেখক,কলামিস্ট,রাজনীতিবিদ,শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন।রাজনীতিবিদ সিদ্দিকী সাহেব হিসেবে উনাকে বেশী মানুষ চিনেন।উনার এতসব পরিচয়ের মাঝে যে পরিচয়টি আমাকে গর্বিত করে তা হলো আমি একজন কুরআনের হাফেজের সন্তান।
জন্মের পর থেকে প্রতিদিন সকালবেলা বাবার কুরআন তিলওয়াত শুনেছি।ছোটবেলায় আমি বাবার কাছেই কুরআন পড়া শিখেছি।বাবা আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে শুদ্ধ উচ্চারণে দরদ দিয়ে আদবের সহিত কুরআন পড়তে হয়।প্রতি বছর রমজান মাস আসলে বাবা আমাকে কুরআন খতম করতে বলতেন।হয়তো আমি বিশ পারা পড়েছি আর বাকি দশ পারা বাবা আমার হয়ে পড়ে দিতেন।
বাবা সারাজীবন রাজনীতি করেছেন কিন্ত অনেকেই হয়তো জানেন না যে আমার বাবা রমজান মাসে তারাবীর নামাজ পড়াতেন এবং যে মসজিদে উনি তারাবীহ পড়াতেন ওখানে উনার সাথে পড়ানোর জন্য অন্য কোন হাফেজ থাকতেন না অর্থাৎ উনি একাই তারাবীহ পড়াতেন। বাবা তারাবীহ পড়ানোর পরে মসজিদ থেকে যে সম্মানী পেতেন তা ওই মসজিদে দান করে দিতেন।উনি ২০১৩ সালে শেষবারের মতো তারাবীহ পড়িয়েছেন।
বাবার কাছেই জেনেছি কুরআন শব্দের আভিধানিক অর্থ পাঠ করা বা পড়া।বাবা বলতেন কুরআন এমন একটা গ্রন্থ যা সব সময় পৃথিবীর কোথায়ও না কোথায়ও পাঠ করা হয়। বাবা সবসময় বলতেন পবিত্র কুরআনে জীবনের পূর্ণাঙ্গ বিধান বলা আছে। উনি আমাকে কুরআনের অনুবাদ পড়তে উৎসাহিত করতেন। উনি বলতেন এতো সাহিত্য,বিজ্ঞান যে পড় এইসব কিন্ত মানুষেরই লেখা,কিন্ত পবিত্র কুরআন শরীফ স্বয়ং আল্লাহ্‌র বাণী।বাবা বেশীরভাগ সূরার শানে নুজুলসহ অর্থ জানতেন।
এনটিভির একটা ইসলামিক অনুষ্ঠানে এক হুজুরের মুখে শুনেছি,কোন কুরআনের হাফেজ যখন মারা যান মৃত্যুর পর মুনকার নাকির ফেরেশতা দুজন যখন হাফেজ সাহেবের কবরে সওয়াল জওয়াবের জন্য যায় তখন কুরআন শরীফ সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,ওহে ফেরেশতারা তোমরা আমার হিফাজতকারীকে শান্তিতে ঘুমাতে দাও,উনাকে যা জিজ্ঞেস করার তা আমাকে করো।কথাটি শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
আমি একদিন বাবাকে বললাম,বাবা আমি শুনেছি একজন হাফেজ নিজে বেহেশতবাসী হন এবং সাথে আরও দশজনকে বেহেশতে নিতে পারেন,বাবা আমিও বেহেশতবাসী হতে চাই,আপনি কি আমাকে বেহেশতে নিবেন ? বাবা আমার কথা শুনে বললেন,বাবারে তুমি আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় একমাত্র পুত্র সন্তান ,আমি জানিনা আল্লাহ্‌পাক আমার ভাগ্যে কি নির্ধারণ করবেন তবে আমি কথা দিচ্ছি আমি যদি বেহেশতবাসী হই তবে তোমাকে ছাড়া আমি বেহেশতে যাবোনা।
আমি যেদিন প্রথমবারের মতো দেশ ছেড়ে ইংল্যান্ড আসি সেদিন আমাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাতে আমার মা বাবা দুজনেই এসেছিলেন।আমি যখন শেষবারের মতো বাবাকে জড়িয়ে ধরে অশ্রুসজল চোখে বিদায় নিচ্ছি তখন বাবা আমার হাতে ছোট একটা খাম ধরিয়ে দিলেন এবং বললেন খামটা যেন আমি বিমান আকাশে উঠার আগে না খুলি।জীবনে প্রথমবারের মতো মা বাবাকে ছেড়ে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিবো ভাবতেই খুব খারাপ লাগছিল।আমি বিমানে উঠার কিছুক্ষন পরেই বিমান আকাশে উঠা শুরু করলো।আমি বাবার কথামতো খামটা খুললাম।খুলে দেখি সেখানে খুব ছোট একখানা কুরআন শরীফ আর সাথে বাবার দেয়া একটা চিঠি।
চিঠিতে বাবা লিখেছেন-বাবা রাসেল,রাজপুত্র আমার,এই প্রথম বাবাকে ছেড়ে অনেকদূরে চলে যাচ্ছ,মন খারাপ করবেনা একদম।বাবারে,নন মুসলিমদের দেশে যাচ্ছ মুসলমানের ছেলে হিসেবে কখনো আল্লাহ্‌ রাসুলকে ভুলে যেওনা,নামাজ ছেড়ে দিওনা।আমি খাস দিলে তোমার জন্য দোয়া করি পরম করুণাময় তোমার মনের সকল নেক আশা পুরন করুন।বাবার স্মৃতি হিসেবে তোমাকে এই কুরআনখানি দিলাম।পড়ালেখা এবং কাজের চাপে মনটা যখন খারাপ থাকবে তখন কুরআন তিলওয়াত করবে,দেখবে তোমার ভালো লাগবে।
-তোমার বাবা।
চিঠিটা পড়ার পর কুরআন শরীফকে বুকে জড়িয়ে আমি -বাবা ,ও বাবা ,বাবাগো বলে ব্যাকুল হয়ে কাঁদছি,আমার পাশের সিটে বসা মায়ের বয়সী এক মহিলা আমার পিঠে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।
বাবার দেয়া উপদেশ আমি ভুলিনি।ব্রিটেন আসার পর এক সাপ্তাহের মধ্যে আমি চাকুরী পেয়ে যাই,শুধুমাত্র সময়মতো নামাজ পড়তে না পারার কারনে আমি সেই চাকুরী ছেড়ে দিয়েছিলাম।ব্রিটেনের প্রবাস জীবনে একদিনের জন্যও নামাজ ছেড়ে দিইনি,বাবার দেয়া কুরআন পড়েছি।বাবার সেই খাস দিলে করা দোয়া আল্লাহপাক শুনেছেন।জীবন তার মঙ্গলময় হাতে আমাকে স্পর্শ করেছে।মাত্র তিন বছরের মধ্যে ব্রিটেনের মতো দেশে আমার বাড়ি,গাড়ি,স্ত্রী,পুত্র,কন্যা সবই আল্লাহ্‌পাক আমাকে দিয়েছেন।আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।
চলতি রমজান মাসে মসজিদে যখন তারাবীহ পড়তে যাই তখন আমি খুব মনোযোগ সহকারে কুরআনের প্রতিটি আয়াত শুনার চেষ্টা করি।হাফেজ সাহেব খুব দরদ দিয়ে পড়েন-فَبِأَيِّ آلَاء رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ - অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে? আমি মনে মনে বলি হে আল্লাহ্‌ আমি তোমার কোন অনুগ্রহকে অস্বীকার করিনা।হাফেজ সাহেব একের পর এক আয়াত পড়তে থাকেন,আহারে কি সুন্দর সব আয়াত।আমি মনে মনে ভাবি এইসব আয়াতের প্রতিটি আয়াত আমার বাবা জানতেন।একজন হাফেজের ছেলে হিসেবে আমি আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া জানাই।একজন হাফেজ হওয়া এবং সেটা ধরে রাখা কতখানি কষ্টের তা কেবল একজন হাফেজই বুঝতে পারেন।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছোটবেলায় আমার ছেলেকে আমার বাবার মতো একজন কুরআনের হাফেজ বানাবো,পরে বড় হলে আমার ছেলেকে ডাক্তার বানাবো।পরম করুণাময় যেন আমার মনের আশাকে কবুল করেন তার জন্য সবাই দোয়া করবেন।
মেঘের ওপারে থাকা আমার মরহুম হাফেজ বাবার জন্য আমি প্রতিদিন পরম করুণাময়ের কাছে দুহাত তুলে বলি হে আল্লাহ্‌ তুমি আমার বাবাকে তোমার কুরআনের হাফেজ হিসেবে জান্নাতবাসী করো।
আর মাত্র দুদিন পরেই লাইলাতুল কদর পবিত্র কুরআন নাজিলের রাত।পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্‌পাকের ত্রিশপারা কুরআন যেসব সম্মানিত হাফেজ সাহেবরা তাঁদের মগজে ধারণ করে আছেন তাঁদের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৫:৫৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটি পাঠে ভাল লাগল । আপনার মরহুম বাবার জন্য দোয়া রইল ।

২| ২৮ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:০০

নূর আলম সিদ্দিকী রাসেল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.