নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূসরাত জাহান শবনম

নূসরাত জাহান শবনম › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাক্তন

০৫ ই জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১০


আজ ওর বিয়ে| জানালার কাছে বসে ভাবছি আজ ওকে কতটা সুন্দর লাগবে| হয়তো গতকাল রাতের চেয়ে আরো একটু বেশি সুন্দর| কমলা পাড়ের হলুদ শাড়ি, গায়ে ফুলের গহনা ও মুখে হালকা সাজ; এসবে খুব সুন্দর লাগছিলো ওকে গতকাল রাতে| ওর গায়ে হলুদে আমি যাইনি, ইনস্টাগ্রামে ছবি দেখেছি| আজকের দিনটা একটু ভিন্নরকম মনে হচ্ছে| এই আষাঢ় মাসে সূর্য কে অতটা ঔজ্জ্বল্য দিতে দেখিনি যতটা আজ দেখছি| হয়তো আমি আমার কাপুরুষতার যোগ্য শাস্তি পেয়েছি বলেই আজ সূর্যমামা এত্টা খুশি| তবে আমার বুকের ভেতর চলছে আষাড়ের ঝড়| ঝড়টা কয়েক বছর ধরেই আমার বুকে স্থান করে নিয়েছে| তবে আজ এক বিরাট রূপ ধারণ করেছে| এই ঝড় কারো চোখে পরবে না, কেউ টের পাবে না, আমার মনের ভেতর শুধু আমাকেই কষ্ট দিয়ে যাবে সারাজীবন| এই ঝড়ের সাথে সব স্মৃতি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো| সেই ৫ বছর আগের কথা| ভার্সিটির অডিটোরিয়ামে আমাদের প্রথম দেখা| আন্তঃ-বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার রিহার্সাল চলছে| প্রথম বর্ষের কিছু শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে| তখন আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র| রিহার্সালে সবাইকে একটা বিষয় নিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করতে বলা হয়| সবাই যেখানে আমাদের ভয়ে তটস্থ সেখানে একটা মেয়ে নির্দ্ধিধায়, ভয়হীন ভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলো| মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হয়েছিলাম, তবে মুগ্ধও হয়েছিলাম| সেখান থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব, ভালোলাগা, অতঃপর ভালোবাসা| আমাদের ভালোবাসার মূলমন্ত্রই ছিল বন্ধুত্ব| আমাদের প্রেমিক-প্রেমিকা কম আর বন্ধু বেশি মনে হতো| এদিক দিয়ে আমাদের কাহিনীটা ছিল একটু ভিন্নরকম| যদি ঐসময় আমাদের প্রেমকাহিনীর উপর কোনো সিনেমা বানানো হতো তাহলে অধিকাংশ দর্শক অর্ধেকেই উঠে চলে যেতেন| কারণ আমাদের কাহিনী করণ জোহরের কোনো চলচ্চিত্রের ধারে কাছেও ছিল না| আমাদের কাহিনীতে প্রত্যাশা অনেক কম ছিল, ভালোবাসার উপর আশা অনেক বেশি ছিল| রাত জেগে কথা বলাটা আমাদের অভ্যেসে ছিল না| রোজ একবার কথা বলেই আমরা ছিলাম ভালো| আমাদের কাহিনীটা অত্যন্ত সাধারণ ছিল| তবে এই সাধারণ কাহিনীর একটা সাধারণ ইতি টানতে পারলাম না, বরং শেষটা হয়ে উঠলো অসাধারণ| এই অসাধারণ চলচ্চিত্রের চলচ্চিত্র প্রযোজক আমার ভাগ্য আর এর পরিচালক হচ্ছেন আমার মামা| ছোটবেলা থেকেই আমি মামার হাতে মানুষ হয়েছি| মা-বাবা থাকতেন বাড়িতে| বাড়ির পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করতেন| আমাকে মানুষের মতো মানুষ করতে আমাকে শহরের এক নামিদামি স্কুলে ভর্তি করানো হয়| থাকতাম মামার বাসায়| মামার ছোট মেয়ে রিনি ছিল আমার খেলার সাথী| সে আমার দুই বছরের ছোট| ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগপর্যন্ত মামার বাসায়ই থেকেছি-খেয়েছি| মামা-মামীর আদরে কোনোসময়ই কোনো ঘাটতি খোঁজে পাইনি| আমার পড়াশোনার সব খরচ আমার মা-বাবাই দিয়েছেন| ২ বছর আগে আমাদের কাহিনীটা অন্য এক মোড় নিলো| তখন আমার সবেমাত্র অনার্সের ফলাফল বেরিয়েছে| খুব ভালো রেজাল্ট করেছি| এই খুশিতে ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেড়িয়েছি এক রেস্টুরেন্টে| হঠাৎ আমার আপুর ফোন| আপু আর দুলাভাই দুদিন আগেই বিদেশ থেকে ফিরেছেন| গতকালকে আপু বাড়িতে গিয়েছে মা-বাবার সাথে দেখা করতে| আপু বাড়িতে ছিল বলেই খবরটা আমার কানে এসে পৌছালো যে মামা তার মেয়ে রিনির হাত আমার হাথে তুলে দিতে চায়| আপু যখন ফোন করে তখন মামা আমাদের বাড়িতেই রয়েছে| আপুর কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম আমি| বন্ধুরা আমার হাসি দেখে বিস্মিত ও আপু ভীত| ওদিক থেকে আপু বললো,''পাগল হয়েছিস? নাকি খুশি হয়েছিস? যাই হোস না কেন আমার এখন তোর ঢং দেখার সময় নেই| গেলাম|'' ফোন রাখতেই বন্ধুরা আমার অট্টহাসির কারণ জানতে চাইলো, তবে তখন আমি তাদের কোনো উত্তর দেইনি| ঐদিনের দুদিন পর আমার ওর সাথে দেখা| তখন আমাদের সম্পর্কের দেড় বছর হবে| এই দেড় বছরে ওকে কোনো উপহার দেয়া হয়নি| কারণ ও সবসমই বলতো যে আমার ভালোবাসা ও সময় পেয়েই ও খুশি, এগুলো নাকি পৃথিবীর সব উপহার কে হার মানায়| কিন্তু ঐদিন আমি ওর জন্য একটা সুন্দর শাড়ি উপহার নিয়ে গিয়েছিলাম| এই উপহার সে না করবে না তা আমি জানতাম কারণ সেটা আমি আমার নিজের টাকা দিয়ে কিনেছিলাম| একটা আকাশি রঙের ড্রেস পরনে ছিল ওর, কপালে ছোট একটা টিপ্, চুল পেছন দিয়ে খোঁপা বাঁধা| সাধারণের মাঝে অসাধারন ছিল আমার ভালোবাসার মানুষটা| আমার উপহার নিতে একটু ইতস্তত বোধ করছিলো তবে না নিয়ে পারেনি| ও বলে যে ও হঠাৎ একদিন শাড়িটি পরে আমাকে চমকে দেবে| সেদিন ভার্সিটির পুকুরপাড়ে বসে কতই না স্বপ্ন বুনেছিলাম দুজনে| আমাদের পরিচালকের মাথায় যে অন্য কিছু ছিল তা আমাদের ভাবনায়ই আসেনি| সেদিন রাতে মা আমাকে সে কথাই বলে যেটা আপু বলেছিলো| মা'র্ এ ৰিষয়ে কোনো আপত্তি না দেখে আমি অবাক হলাম| তবে তখনও আমি এ বিষয় নিয়ে অতটা মাথা ঘামাচ্ছিলাম না| এর কয়েক দিন পর মামাকে হঠাৎ ভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়ায় দেখতে পাই| মামাকে দেখে এর আগে কোনোদিন ভয় লাগেনি তবে ঐদিন| মা ও আপুর মুখ থেকে শোনা কথা শেষমেশ মামার মুখ থেকে শুনলাম| শুধু তাই নয় মামার মুখ থেকে হুমকি-ধামকি শুনে অবাক হলাম| অন্তত আধঘন্টা কথা বলার পর মামা তার শেষ বাণী জানিয়ে দিলেন,''তোমাদের বাড়ি যে আমার কাছে বন্ধক রাখা তা নিশ্চই তুমি জানো না, তোমার বাবা তা আমার নামে বন্ধক রেখেছিলো তোমার আপুর বিয়ের সময়| সে টাকা তুমি কোনোদিন চুকাতে পারবে না| তাছাড়া আমার বাসায় যে এতদিন থেকেছো-খেয়েছো সে টাকা না হয় বাদই দিলাম| তবে আমার মেয়েকে বিয়ে করলে হয়তো বাড়িটা নিয়ে যেতে পারো|'' বুঝতে পারলাম মামা আমাকে কিনে নিয়েছেন| এত্ বছরের আদরের কারণ এখন জানতে পারলাম| আমার অনার্সের রেজাল্ট যেন মামাকে আরো আকর্ষিত করেছে| বাড়ির প্রতি আমার কোনো বিশেষ টান ছিল না, তবে সেটা আমার বাবার পরদাদার আমলের বাড়ি যা আমি কিছুতেই যেতে দিতে পারতাম না| এই কথাটি শোনার পর আমি আর মামাকে না করতে পারলাম না, বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম| নিজেকে খুব কাপুরুষ মনে হচ্ছিলো সেদিন| রিনির সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল বটে তবে তাকে বিয়ে করতে হবে একথা কোনোদিনও আমার মাথায় আসে নি| সেদিন মামার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে আমি আমার বন্ধু-বান্ধব সবাইকেই একটু এড়িয়ে চলছিলাম| বিশেষ করে ওকে| ঘটনার এক সপ্তাহ পর আমি তাকে ভার্সিটিইতে দেখতে পাই| আমার উপহার দেয়া সেই শাড়িটা পরে সে আমার দিকেই হেটে আসছে| আমি আর আমার তিনটা বন্ধু কথা বলছিলাম| সে আমার পাশে এসে দাঁড়ায়| আমার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করে| তবে আমি ওকে উপেক্ষা করি| সে আমার কাছ থেকে জানতে যায় যে ওকে কিরকম লাগছে| আমি বলি, ''ঠিক লাগছে|'' ওর দিকে তাকানোর ইচ্ছা হচ্ছিলো খুব তবে তাকাইনি| সে হয়তো কষ্ট পায়, অনেকসময় কোনো কথা বলে না, পরে হঠাৎ চলে যায়| এর পর থেকে আমি ওকে দূরে সরানোর চেষ্টায় লেগে যাই| নিজেকে ওর চোখে খারাপ, বিশ্বাষঘাতক প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে ওকে অসম্মান করেছি| জানতাম সে সবকিছু সহ্য করবে তবে অস্মমান নয়| তাই হলো| সে আমার সাথে আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি আর কোনোদিনও| এভাবে আরো ২ টা বছর পেরিয়ে গেলো, ওর অবহেলা দেখে কষ্ট পেয়েছি| তবে আমার এ কষ্টের যে কোনো বিপরীত ছিল না| ও আমার অপেক্ষা করেছে বহুদিন, তবে আমি কোনো সাড়া দেইনি| ও যদি জানতো যে আমি বুকে কত বড় পাথর রেখে ওকে যেতে দিয়েছি, ও হয়তো আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসতো না| তবে ওকে আসল কারণটা জানিয়ে আটকে রেখে কষ্ট দেয়ার সাহসটা আমার ছিল না| ওর বিয়ের কার্ডটা আমি পেয়েছি| ও যে আমাকে ছাড়া কতটা সুখী তা প্রমান করার জন্যই হয়তো কার্ডটা পাঠিয়েছে| যদি যাই তাহলে ভেবে নিবে যে আমি ওকে কোনোদিনও ভালোবাসিনি| আর না গেলে ভাববে আমি ওকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবনা বলে যাইনি| তাই হয়তো যেতেই হবে| তবে আমার কাহিনীর এই ইতির জন্য কাকে দায়ী করবো বুঝতে পারলাম না| নিজেকে, মামাকে, নিজের ভাগ্যকে না টাকাকে? হয়তো টাকাকে| যদি আমার টাকা থাকতো তাহলে মামার শর্তের সামনে অবশ্যই আমার ভালোবাসা হেরে যেত না| শুধু ভালোবাসা শেষ হয়ে যায় বলেই কি কেউ কারো প্রাক্তন হয়ে যায়? না| মাঝে মাঝে কাছের মানুষের ভালোর জন্যই তাকে যেতে দিতে হয়| ভালোবাসা থাকে তবে সম্পর্কটা শেষ হয়ে যায়|

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.