নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে একটুকরো কাগজ দিবে? আর সাথে কয়েক ফোঁটা কালি? তাহলে আর কিছু চাইনা। এতেই আমি পুরো পৃথীবিকে আকঁবো।

ওবাইদুল্লাহ আহমাদ হুসাইন

পড়ালেখা আমার কাজ। পড়বো আর লিখবো এভাবে আমার বসুন্ধরাকে সাজাবো।

ওবাইদুল্লাহ আহমাদ হুসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসাফির

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:৪০


মুসাফির হয়ে পৃথিবীতে এসেছি। কোথাও স্থায়ী হওয়ার সুযোগ হয়তো আসবেনা তার আগেই চলে যেতে হবে পরপারে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। মায়ের কোল থেকে নেমে খুব বেশী সময় অবস্থান করার সুযোগ পাওয়া যায়না তাতেই শুরু হয় স্থানান্তরিত হওয়ার পালা। পড়ালেখা, চাকরিবাকরি, জীবিকা উপার্জন ইত্যাদির জন্য ঘুরতে হয় দেশ হতে দেশ দেশান্তরে।  আমার বেলাও এমনটাই হয়েছে।

খুব ছোট্ট ছিলাম। মা'কে ছাড়া নাকের ময়লাও ফেলতে  পারতামনা । কাপড় কাচা, বিছানা করা,ঘর ঝাড়ু দেওয়া তো অনেক দুরের কথা। তাতেই আব্বু নিয়ে রেখে আসলো মায়ের কাছ থেকে অনেক দুরে। মা এক জায়গায় কাদে আমাকে ছেড়ে আর আমি আরেক জায়গায় কাদি মাকে ছেড়ে। শুধু আমার বেলায় এমন হয়েছে তা না।আমাদের তিন ভাইবোনের বেলায় এমন হয়েছে। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। বাবার ইচ্ছা ছিলো আমরা তিনজনে কোরআনের হাফেজ হাফেজা হই। তাই হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

বেশ কিছুদিন একা-একা এভাবেই কেটে গেলো। একটা সময় আমার মতো অনেক বন্ধু পেয়ে যাই। সাড়া দিন একসাথে পড়ালেখা, খেলাধুলা, মারামারি দুষ্টামী, গল্পগুজবে ধীরেধীরে মায়ের কথা ভুলে যাই। মাকে ছেড়ে দুরে থাকতে শিখি। বন্ধু মহল অনেক বড় আকার ধারণ করে। বাহিরে থাকতে শিখে গেলাম। বন্ধুত্ব অনেক গাঢ় হয়ে গেলো। এখন বন্ধুরাই আমার পৃথিবী। দুঃখ পেলে তাদের দ্বারা পাই আবার সুখ পেলে সেটাও তাদের দ্বারা পাই। মন চাচ্ছিল তাদের সাথেই থেকে যাবো। আর স্থান বদল করবো না। কিন্তু হলো না। সবাইকে ছেড়ে পাড়ি জমাতে হলো সুদূর ঢাকার উদ্যেশ্যে। মুসাফির হয়ে।

আবার একা হয়ে গেলাম। আশপাশ আবার নতুন মানুষ দিয়ে ভরে গেলো। আগের চেয়ে এবার এক ভিন্ন পরিবেশ। আগে তো আম্মুর সাথে অনেক দিন দেখা না হলেও আব্বুর সাথে সবসময় দেখা হতো। কিন্তু এবার এতো দুরে আসলাম যেখানে আব্বুও নেই আম্মুও নেই। এগুলো মনে হতে কলিজাটা খানখান হয়ে যেতো । একা-একা লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করতাম। অনেক সময় খেতে বসে খাবার দেখে মায়ের কথা মনে পড়ে যেতো। খাবারের প্লেটে বোর্ডিং এর ডালের মধ্যে চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরতো। কিন্তু কোন উপায় নেই এখানে থাকতে হবে আর এ খাবারেই খেতে হবে। একদিন দুইদিন করতে করতে এ পরিবেশকে মানিয়ে নিলাম। এখানেও অনেক আপন মানুষ গড়ে উঠল। নিঃসঙ্গতা দুরে ঠেলে অনেককে আপন করে নিলাম। আবার সুন্দর দিন কাটতে লাগলো। কিন্তু এখানেও স্থায়ী হওয়া গেলো না। আবার মুসাফির বেসে স্থানান্তর হতে হলো অন্য জায়গায়।

এভাবেই একের পর জায়গা পরিবর্তন করতে হলো। জীবনের টানে অনেক পরিচিত মানুষকে পিছনে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলো। পুরনো মধুর স্মৃতি গুলোতে মাকড়শা জাল বুনতে লাগলো। এভাবে হারিয়ে গেলো জীবন থেকে অনেক অধ্যায়। যে মানুষ গুলোর সাথে খাবার সেয়ার করা হতো, যাদের গল্প না শুনে দিন কাটতো না, যাদের সঙ্গ ছাড়া পথ চলা যেতো না। তারা আজ কোথায় কেমন আছে কেউ জানেনা। মাঝেমাঝে হয়ত কোনভাবে কেউ কারো নাম্বার ম্যানেজ করে ফোন দেই কিন্তু পরিচিত হতেই এক দের মিনিট চলে যায়। অথচ এরাই ছিলো একটা সময়ের প্রিয়জন। আজ কতো অপরিচিত তারা!!

আজ দেখলাম ক্যাম্পাস থেকে এক বড়ভাই চলে যাচ্ছে। মাস্টার্স শেষ। বললে বলা যায় জীবনের মধুর অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো তার। এখন হয়তো ভিন্ন অধ্যায় শুরু হবে। চাকরিবাকরি বিয়েসাদী ছেলে সন্তান ইত্যাদি। যাওয়ার সময় প্রায় চল্লিশ জন সহপাঠী, ছোট ভাই ওনাকে বিদায় দিতে আসছে। ভাই হুহু করে কান্না করছে। সাথেসাথে সবাই কান্না করছে। মনে হলো বাস কাউন্টার কিছু সময়ের জন্য মৃত্যুপুরীরে পরিনত হয়েছিল। আমার সাথে ভাইয়ের তেমন পরিচয় ছিলো না। চলার পথে দেখা হলে হয়ত সালাম এই পর্যন্তই শেষ। কিন্তু ওনার কান্না দেখে চোখের পানি সামলে রাখতে পারলাম না। অজান্তেই দুফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো।

দু'দিন পর হয়ত আমাকেও এভাবে বিদায় জানাবে অনেকে। সেদিনটা নিশ্চয় খুব ভালো হবেনা। প্রিয় মানুষগুলো, প্রিয় ক্যাম্পাসকে ছেড়ে যাওয়া নিদারুণ যন্ত্রণার কারণ হবে। কিন্তু কিছুই করার থাকবে না। কারণ আমরা মুসাফির। পথ বদলানোই আমাদের কাজ। এভাবে যেতে একদিন একেবারেই চলে যেতে হবে না ফেরার দেশে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪১

সাইফ নাদির বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১১

ওবাইদুল্লাহ আহমাদ হুসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.