![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়ালেখা আমার কাজ। পড়বো আর লিখবো এভাবে আমার বসুন্ধরাকে সাজাবো।
বুক রিভিউ
নামঃ প্রিয়সী
লেখকঃ নিমাই ভট্রাচার্য
প্রকাশনায়ঃ দে'জ পাবলিশিং কলকাতা।
শুরুতে বইটির কাঠামো সম্পর্কে একটু বলি। ৯৬ পৃষ্ঠার ছোট্ট একটি বই। দুটি পরিচ্ছেদ আর ছয়টি ফর্মায় বেশ আকর্ষণীয় মলাটে সাজানো একটি বই। নিমাই ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে প্রিয়সী একটি। প্রথমে বইটি হাতে নিলে একটু ভয় ভয় লাগে। লেখাগুলো এতোটাই ছোট অক্ষরে লেখা যে, স্বাভাবিকভাবে লেখলে অনায়াসে ১৫০ পৃষ্ঠার প্রয়োজন হতো। এবার বইটি সম্পর্কে কিছু বলি........
.
প্রধান প্রধান চরিত্রগুলোকে দখল করে রেখেছে বাবাই,তাতাই, সুভ্রতবাবু, দুর্বা,ভারতী ও শিবানী। এদের প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা গুণে গুণান্বিত। কেউ অধিক মেধাবী কেউ শিল্পী আবার কেউ অন্যান্য গুনে গুণান্বিত। প্রথম পরিচ্ছদটি জুড়ে পারিবারিক বন্ধনের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে লেখক। পরিবারের সদস্য না হয়েও পরস্পর পরস্পরের জন্য নিবেদিত প্রাণ ভারতী ও শিবানী। বাবাইসোনা ও তাতাইসোনা একে উদরে না জন্মিলেও আচার-আচরণে চলাফেরায় কোন অংশে নিজের ভাইয়ের চেয়ে কম নয়। বরং অনেক সময় তার চেয়েও বেশী। দুজনে ভিষণ মেধাবী। বাবাই খুব ভালো একটা চাকরি করলেও তাতাই দু-দুবার প্রেসিডেন্সিয়াল গোল্ড মিডেলিস্ট পায়।
.
পারিবারিক উদ্যোগে বাবাই ও দুর্বার বিয়ে হয়। বিয়ের দিন তারিখ পূর্বনির্ধারিত থাকলেও দুর্বার বাবার হটাৎ এক জেলা থেলে অন্য খেলায় ট্রান্সফারের কারণে সব এলোমেলো হয়ে যায়। তাতাই সোনার ফাইনাল এক্সাম আর দুর্বার বাবার ট্রান্সফার একেসাথ হওয়াতে বেশ সমস্যায় পরতে হয় সবাইকে। ভাইকে রেখে বিয়েতে একেবারে নারাজ বাবাই। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কাছে হেরে গিয়ে বিয়ের পিরিতে বসতে হয় বাবাই সোনাকে। এদিকে কিছুই জানতে পারেনা তাতাই সোনা। পরীক্ষা শেষে বাসায় ফিরে শুনতে পায় বাবাইয়ের বিয়ের খবর। সাথে সাথে কান্নায় ভেঙে পড়ে তাতাই। বাবাইয়ের বিয়ে কিছুতেই মানতে পারছিলো না তাতাই। অবশেষে দুর্বা সুন্দরীর বাকপটুতা, ডাগর ডাগর চোখ আর মনভুলানো হাসিতে সব অভিমান ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে যায় তাতাইয়ের।
.
বাবাইয়ের সাথে দুর্বার বিয়ে হলেও দুর্বার মনপ্রান পরে থাকে তাতাইয়ের কাছে। দুর্বার মন সারাক্ষণ উৎসুক হয়ে থাকে তাতাইয়ের জন্য। কিন্তু দায়িত্বশীল তাতাই কখনোই দুর্বাকে প্রশ্রয় দেয়না ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে। ভাইয়ের সাথে এতো বড় অন্যায় করতে পারবেনা তাতাই। খুবেই সতর্কতার সাথে দুর্বাকে এড়িয়ে যায় তাতাই। কিন্তু সমাপ্তি লগ্নে সতর্কতার চুড়ান্ত পর্যায় থেকেও দুর্বার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনা তাতাই।
.
বইটি পড়ে মনের অজান্তেই কয়েক ফোটা অশ্রু ঝরে যায়। লেখার ধরণ খুবেই সাদাসিধা কিন্তু এই সাদাসিধার মাঝেও যে লেখকের কি কারিশমা লুকিয়ে আছে তা বোঝা বড়ই মুশকিল। সন্তানের সাথে পরিবারের নিবিড় সম্পর্কের কথা যত্ন সহকারে উল্লেখিত হয়েছে বইটিতে। তাতাই সোনার গোল্ড মেডেন পাওয়ার খবরটি লেখক এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যাতে তাতাই সোনার পরিবার, বাষ্ট্রসহ প্রতিটি পাঠক চোখের পানি ফেলতে বাধ্য হয়। কিন্তু বইটি পড়ে লেখকের লেখার দক্ষতা সম্পর্কে যেমন চমৎকার ধারণা পাওয়া যায় ঠিক তেমনি লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও একট সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। লেখকের লেখার জন্য যেমন তিনি সম্মান প্রাপ্তির অধিকারী তেমনি কুরুচিরর জন্য একটু তিরস্কারের যোগ্য। বইটি হিন্দুয়ানী কালচারে লেখা কিন্তু বৈধতা আর অবৈধতাকে এমনভাবে মিলিয়ে ফেলেছেন যাতে মনে হয় বৈধতা আর অবৈধতার মাঝে কোন পার্থক্য নাই।
©somewhere in net ltd.