![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সলিমুল্লাহ মেডিকেলে পড়ুয়া আমার একবন্ধু অনেক দিন থেকে বলছিল যে ছুটিতে বাড়ি আসলে ওকে নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে । পুরা কলেজ লাইফ আর কোচিং জীবনের অনেক গুলো দিন সে আর আমি একসাথে একই রুমে থেকেছি । তার একথায় বেশি পাত্তা দিতাম না বলতাম তুই আয় তাহলে যাব । ভাবতাম আসলে কোথাও যাব এটা নিয়ে ভাবার কি ! দেখি সিরিয়াসলি ছুটিতে বাড়িতে এল । সকালবেলা কল দিল সে বাসায় আসছে । তো আর কি করা সবাইকে কল দেয়া শুরু করলাম । মোট সাতজন ( ডা. জাকির,ডা. তোফায়েল , রাহুল , সুফিয়ান ,সবজান্তা একাউন্টেট কৃষানো , ফেসবুকার এহসান এবং আমি তারা যা বলে তাই সই- মাজহার ) হয়েও গেলাম । কোথায় যাব জানিনা । কথায় কথায় আমাদের সুদর্শন মেয়ে পটানো চেহারার বন্ধু এহসান বলল চল লালাখাল ত যাই নাই ঐখানে যাই আর সবজায়গাত গেলামই । তবে চিন্তা ছিল গোয়াইন ঘাটের ২য় সুন্দরবন যাওয়ার । কিন্তু সেখানে নাকিপানি নাই আর তাই যাওয়াটা বৃথা । বাসা থেকে বাইরে এসে হল মশকিল । সাতজন না সিএনজি না টমটম কোন কিছুতেই স্থান সঙ্খুলান হয়না । তাই বলে কি হল । গেলাম সোবহানীঘাট বাসস্ট্যান্ড । বাসে করে সারিঘাট । তাও দূরে দূরে জোড়া সিটে । ফেবু আর ব্লগ নিয়ে আলোচনার ফাঁকে চোখে পড়ল আমাদের প্রাক্তন কলেজের ইউনিফর্ম পরিহিত একছোট ভাইকে । তখন সেই নস্টালজিক কাহিনী । এক চাচা পাওয়া গেল যিনি সারিঘাটে যাবেন । উনার সাথে আলোচনা আমার প্রিয় রাজনীতি নিয়ে । দিলাম কিছু মোটিভেশন যা কিনা আমি সব সময়ই করি । একবারের জন্য হলেও ।
সারিঘাটে নেমে পেলাম একছোট ভাইকে । এদিনই বানানো ছোটভাই । সে বলল "ভাই আউক্কা লালাখাল যাওয়ার আগে সারি রাজারবাড়ি দেকিলাউক্কা ।" বললাম চল । সবেমিলে অনেক উচুঁ ঠিলাতে উঠতেছি ছোটভাইয়ের পিছু পিছু । পিছন থেকে সুফিয়ান বলে যাওয়া ঠিক হবেনা এর আচরণ নাকি সন্দেহ জনক । পাত্তা না দিয়ে বললাম বড়লোক বাপের ছেলে নিয়ে আসার এই জামেলা । তার নিয়ে আমি আবার মশকরা করলাম তুই কি রকম বডিবিল্ডার বেটা। সবাই তাতে শরিক হল । তারপর আমরা যখন চূড়ায় উঠি সে আর কৃষানো একটু নিচে । রাজার বাড়ির কয়েকটি ঘরের ধ্বংসাবশেষের পাশে দাড়িয়ে সে কি ছবির তোলার হিড়িক । আমার দুর্ভাগ্য যে ছবি তোলার যন্ত্রভাল ও ছবি ভাল হয় বলে আমাকেই ছবি তোলতে হয় ।আর আমি ছবি থেকে বাদ পড়ি । প্রতিবার বলি যে আর কোথাও বেরুলে আমি ছবি তুলবনা । কিন্তু কোন এক আজিব কারণে তা আর হয়ে উঠেনা । এই বাসা থেকে গেলাম আরেক টিলায় যেখান থেকে সবকিছু ভিজুয়াল এফেক্টের মত মনে হতে থাকে । এখানেও ছবি তোলা সাঙ্গ করা শেষে নিচে নামলাম । এখন টংটাইপের কিছু দোকানে শুরু হল ভোজন পর্ব।
খাওয়া পরে আবার জামেলা গাড়িতে এত জনের একসাথে সিট হবে না। দোকানিরা কল করে একটা টমটমের ব্যবস্থা করে দিলেন । শেষমেশ উই আর অন আওয়ার ডেসটিনেশন মিনস লালখাল । শুরু হল রির্সোটের রেস্টুরেন্টে ছবিতোলা । পরে নামলাম ক্রিস্টালের মত স্বচ্ছ পানিতে। খেয়া নৌকায় গেলাম অপর পাড়ে । আহ সে কি সুন্দর বালুময় প্রান্তরের শেষ দিকে সবুজ পাশ দিয়ে সুন্দরী যৌবনা লালাখাল । তারপর চা বাগান হয়ে গেলাম জিরো পয়েন্টে ।
রাস্তায় আমাদের মত বেড়াত আসা যৌবনে টাসা টাইট জিন্স আর টপস পড়া ললনাদের দেখে কি সব আজব আজব কল্পনা । চা বাগানেরপাশে বট গাছের শিকড়ের সাথে কায়দা করে ললনাদের নিয়ে ক্যামেরা বন্দি হওয়া। আরকে বাদ পড়ল তা নিয়ে হইচই । একজনের শার্টঅন্যজন পড়ে আবার জিরো পয়েন্টের চোখ ধাধাঁনো সৌন্দর্যকে পকেট বন্দি করলাম কত রকমের ভঙ্গিমায় । স্থানীয় বাজারে খাদ্যের সমারোহ দেখে পেটে যেন নার্গিসবয়ে গেল সকলের । সন্ধ্যার আধার ঘনিয়ে আসছে দেখে সবাই আসলাম আবার এপারে ।
তখন জাকির বলল রির্সোটা দেখে যাই । তখন সবাই একবাক্যে বলে উঠল "না " । বুঝতেইপারছেন ওরা কতটা ক্লান্ত । কি আর করা আমি জাকির ওদের বসিয়ে রেখে উচুঁ রির্সোটের সিড়ি ভেঙ্গে উঠলাম উপরে । আহহ ফাটাফাটি ছিনারি । লালাখালে সব এখান থেকে দেখা যায় । যখন নিভে যাওয়া আলোয় ফ্লাসের সাহায্যে ছবি তুলছি তখন দেখি এহসান আর সুফিয়ান পরে সব চলে এসেছে । নেমে টমটমে চড়ে টাউনের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দিলাম । পেয়ে গেলাম একজন রাজনৈতিক বোদ্ধাকে । জমিয়ে দিলামআমি আড্ডা মনে মনে বললাম এটাইত চাই । বন্ধু আমার চিন্তার বিরোধি আর কেউ কেউ পক্ষে । সারিঘাটে নেমে উঠলাম বাসে । কেউ দাড়িয়ে কেউ বসে ।
আমার পাশে তোফায়েল । অনেকক্ষণ সে কোন কথা বলেনা । ভাবলাম বিষয় কি ? দেখি সে অপলক দৃষ্টিতে একটু দূরে কর্নারে বসা এক সুন্দরিকে নিরীক্ষণ করছে । আর কি করা আমিও লাগলাম । সে একদমই এরকম ছেলে না । ওর কানে কানে বলি এই তুই ! বলে কিনা যে এরে দেখে তার কলিজা ঘন্টার মত কে যেন বাড়ি দিচ্চে আর কানে সেতারার শব্দ পাচ্ছে । বললাম এরকম হলে লাইনে আন । ও বলে বন্ধু হেল্প মি । ওরে বললাম যে আগে বাস থেকে নামতে হবে । সিট থেকে এস এম এসে সবাইকে জানিয়ে দিলাম যে লুক এট দ্যা কর্নার । সবাই গিলার মত একজনকে পেয়ে গিলছে। আর তখনি মেয়েটি একটা স্টোপেজে নেমে গেল । বন্ধুর মুখে কোন রা নেই ।
টাউনে নামলাম ফোটো আদান প্রদান করলাম শেষে বিদায় নিয়ে একা একা বাসায় ফিরলাম ।
বি: দ্র: সবোর্চ্চ দু'শ টাকা হলে ঘুরে আসতে পারবেন সোবহানিঘাট সিলেট থেকে বাবন্দর বাস স্টেন্ড থেকে । সারিঘাটে লোকাল বাসে জনপ্রতি ৩০ টাকা । পরে টমটমে আরো ৪০ টাকা করে লালখালা। খেয়া ভাড়া ২ টাকা । আর বেশি টাকা খরচ করতে চাইলে ত কথাই নেই । সারিঘাট থেকে নৌকা চাইবে ১২০০ টাকা আর জিরো পয়েন্টে যেতে খেয়া চাইবে ৫ থেকে ৭ শ টাকা ।
হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছবি এখন আমার কাছে নাই । কালেক্ট করে একদিন আপলোড করব ।
©somewhere in net ltd.