নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধৈর্য্য একটি মহৎ গুন ।

লাবনী আক্তার

সত্য কাঁদে নিভৃতে, সাথে তার থাকে শুধু মহাকাল। সত্যের দীপশিখা চিরদিন জ্বলে । সত্য কখনো মিথ্যাকে করে নাকো ক্ষমা।

লাবনী আক্তার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসমাপ্ত গল্প

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:০৬

ছবি-গুগুল

অফিসে কার্ড পাঞ্চ করে দরজা খুলে ফ্লোরে প্রবেশ করা মাত্রই আমার অতীব প্রিয় ,অতীব শুভাকাঙ্ক্ষী দুই সহকর্মী এক সঙ্গেই বলে উঠলেন

- কিরে কি খবর ? রাশেদ নক করেছে? তোকে ম্যাসেজ দিয়েছে?

- ব্যাগটা ডেস্কের উপর রেখে, শুকনো একটা হাসি দিলাম। মুখে হাসি রেখেই বললাম বলছি আপা। উনারা দুজনই আমার মুখের দিকে অতি উৎসাহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তারা আমার কাছ থেকে কি শুনতে চাইছে আমি জানি।

আমি তাদেরকে আরেকটু অপেক্ষা করিয়ে ল্যাপটপ ড্রয়ার থেকে বের করতে করতে বললাম।

- তন্নি আপা আপনার ফ্রেন্ড আমাকে কোন ম্যাসেজ দেয়নি। সে আমার স্ট্যাটাসে লাইক দেয় শুধু।

- এখনো দেয়নি? কি বলিস? যাক স্ট্যাটাসেত লাইক দিচ্ছে যখন তখন নকও দিবে তোকে। তুইত ম্যাসেজ দিতে পারিস।

- আপা দেখেন আমি কিন্তু নক টক দিতে পারবনা। বেটা ফাউল তার কি উচিত না নক করা? আমার ছবি বায়োডাটা সব দেখেছে। অথচ তার টা দেয়নি। তারত উচিত ছিল নক করা।

- মায়া শোন কিছু মনে করিস না আমি তোকে আগেই বলেছি ও খুব সহজ সরল ছেলে।কিন্তু ভাল মনের মানুষ। ওরে দেখলে তোর ভাল লাগবেনা কিন্তু সে ভাল এবং ট্যালেন্ট। ও নক দিতে ভয় পাচ্ছে। আমি কথা বলেছিলাম।

- আপা শোনেন, আমি একজন ভাল মনের মানুষই খুঁজছি। সে দেখতে কেমন সেটা আমার কাছে বড় নয়।


আমার বিয়ে নিয়ে আমার সহকর্মীদের অনেক আগ্রহ। আমি জানি তারা আমাকে খুব ভালোবাসে, আমার ভাল কিছু হোক তারা মনে প্রাণে চান। প্রতিদিন অফিসে যাওয়া মাত্রই আমার কলিগরা একই প্রশ্ন করে। আর প্রশ্ন শুনতে শুনতে আমি সত্যি বড্ড ক্লান্ত।


একমাস পর............


ঠিক রাত বারোটা বাজার ১০ মিনিট আগে রাশেদ সাহেব কল দিলেন

- হ্যালো মায়া, কেমন আছেন?

-জ্বী ভালো , আপনি?

- আমি আছি ভালই । যাক, ঘুমাই গেছিলেন নাকি?

- ঘুমাইনি তবে শুয়ে পড়েছিলাম।

- ওও, আপনার রুমমেট কই?

- রুমে

- আর আপনি কই?

- বারান্দায়

- ওহ , আপনাকেত মশা কামড়াবে, আর বাইরেত ঠান্ডাও পড়েছে। রুমে যান, আমি একটু কথা বলব।

- সমস্যা নেই , আপনি বলুন। আর রুমে কথা বলতে চাইছিনা। আমার কলিগ ঘুমিয়েছেন। সো উনাকে ডিস্টার্ব করতে চাইছিনা।

- আপনিত দেখি সেই ভাল মেয়ে। আসলে কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম আপনাকে কল দিব । কিন্তু কি করব বলুন এত ব্যস্ত থাকি আর হয়ে উঠেনা কল দেয়া।

- আচ্ছা

- দেখুন মায়া, আপনার কলিগ মানে আমার বান্ধবী আপনার সম্পর্কে সব বলেছে, আর আপনার বায়োডাটাও দেখলাম। আপনি অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। ভদ্র, নামাজি, বেশ উদ্যমী, পরিশ্রমী। আমি জানি আমার বান্ধবী যা বলছে সব সত্য। আপনাকে আমার ভালোে লেগেছে। আপনি কি বলছিলেন যে আপনি কালো? তাতেও আমার প্রব্লেম নেই। আর আমি একটু সময় নিতে চাই আসলে আমি খুব ভীতু। সো একটু সময় দেন আমারে। দেখেন আমি খুব সহজ সরল ছেলে, বাজে নেশা নাই, মেয়েদের সাথে আড্ডাবাজি নাই। আমি আমার মতন থাকতে পছন্দ করি। কাজ পাগল ছেলে আমি। কি চুপ করে আছেন যে?

- না এমনি, শুনছিত, সময় নিন প্রব্লেম নেইত। দুজন দুজনকে চিনি জানি আগে।

- আমি আপনার স্ট্যাটাসগুলো পড়ি, ভালো লাগে। আপনি ভালো লিখেন।

- ধন্যবাদ।

- শুনেন আমি অনেক কথা বলি, সাংবাদিক মানুষত, বুঝেছেন? কথা কম বলতে পারিনা। আমার কথা শুনতে শুনতে আপনি বোরিং হইয়া যাইতে পারেন।

- জ্বী বুঝেছি।

- এত কম কথা বললে হবে? ম্যাসেঞ্জারেত আমাকে সেই নেন।আর এখন লজ্জায় কথাই বের হয়না দেখি। হেহেহহে।

- সেই নেই মানে? দেখেন আপনি ওয়েভ দিয়ে এক মাস হাওয়া। মানুষত সালামের উত্তর দেয়। আপনি সেটাও দেননি। আমি সালাম দিলাম আর আপনি সিন করলেন। আবার একমাস পর ম্যাসেজ দিলেন। কার না রাগ লাগবে, বলুন? আমিত ভাবছিলাম আপনি সিন করতেই জানেন , লিখতে জানেন না। হাহাহা

- আমারে সহজ সরল ছেলে পাইয়া মজা নেন না?

- আপনি আস্ত একটা হাদারাম।

- কি, কি বলেলন? আপনি ম্যাসেজে আমাকে গাধা বলছেন এখন আবার হাদা বলছেন। ভবিষ্যতে আরো কি কি বলবেন আল্লাহই জানেন।

- হাহাহা! আর কি কি বলব সেটা নাহয় ভবিষ্যতের জন্যই তোলা থাক।

- এনিওয়ে, মায়া আপনার আমার সম্পর্কে যা জানার জেনে নেন। আচ্ছা ভালো কথা আপনিত আমাকে এখনো জিজ্ঞেস করলেন না আমি সিগারেট খাই কিনা? অদ্ভুত তো?

- আরে সময় কি চলে গেছে?

- না আমি খুবই অবাক হইছি। মাইয়া মাইন্সের একটা কমন প্রব্লেম আছে, কিছু মনে কইরেন না। পুরুষের ঐটা ছোট হইলে প্রব্লেম নাই, কিন্তু সিগারেট খাইলেই প্রব্লেম। হাহাহা, হাহাহা।
হ্যালো শুনছেন? কথা বলছেন না কেন? মায়া . .. . আছেন?

- বলেন শুনছি।

- শোনেন কি বলছি বুঝছেনত? আবার বইলেন না বুঝি নাই। আমি কিন্তু জানি আপনি বুঝছেন।

- হাহাহা!

- শুনেন মায়া আপনি কিন্তু মিসকা শয়তান আছেন।

- এটা কি ধরনের কথা?

- না মানে একটু দুষ্টু আছেন আর কি। সরি, আসলে সাংবাদিক মানুষত এত ভাল কইরা কথা কইতে পারিনা। আমি আবার একটু ফাজিল আছি। যা মুখে আসে বলে দেই। মাইন্ড কইরেন না। ছেলে কিন্তু ১০০% ভাল।

- আচ্ছা অন্য কথা বলি আমরা?

- আচ্ছা এড়িয়ে যেতে চাইছেন? শোনেন আমরা এখন থেকে ফোনে কথা বলব। বিজি থাকলে কল ধরব না পরে ব্যাক করব। কোন রাগ করা যাবেনা বলে দিলাম।

- আচ্ছা।

-এইবার কন রাতে খাইছেন? জানেন হাতের আঙ্গুলগুলা ব্যথা করছে।

-্ হুম খেয়েছিত, কেন ব্যথা করছে?

- আর বইলেন না, টাইপ করতে করতে শেষ। একটা ফিচার লিখতেছিত, আমার পেইজ টা দেখেন নাই?

- হুম দেখেছি।

- বাসায় আসার পর হাতের আংগুল-গুলা ব্যথা করে যখন তখন মনে হয় একটা বউ থাকলে ভাল হইত। আঙ্গুল গুলা টিপা দিত।

- হাহাহা, আচ্ছা। তো বিয়ে করে বউ আনেন।

- হাসেন কেন? বিয়া করতে ভয় লাগে।

- ভয়? কিসের ভয়?

- চারপাশ দেখিত।

- তাহলে একাই থাকেন।

- আরে না। একা থাকা কষ্ট।

- হুম! আচ্ছা অনেক রাত হইছে ঘুমানো দরকার।

- আর একটু থাকেন না?

- আচ্ছা ঠিকাছে বলুন।

- একটা ইন্টারভিউ নিব রাইসুল ইসলাম আসাদের। জানেন উনারে খুঁজে বের করতে কত কষ্ট হইছে?

- আচ্ছা

- মেলা কষ্ট কইরা বাইর করছি।
ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা
আপনারে একদিন রাইসুল ইসলামের বাসায় নিয়া যাবনে।

ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা |-) |-) |-) |-) ( রাশেদের অতিরিক্ত প্যান প্যান এ বোরিং আমি)


আচ্ছা আপনার নেভি ব্লু গল্পটা পড়লাম। ওইখানে এই লাইনটার মাঝে কোন অর্থ খুঁজে পাই নাই বুঝছেন?

মনে মনে বললাম হারামজাদা আমি কি তোর মতন সারাদিন বই লইয়া বইসা থাকি?

মুখে হাসি হাসি ভাব রেখে বললাম
- আপনার মতন তো আর আমি সারাক্ষণ বই নিয়ে পড়ে থাকিনা যে লেখাটা পার্ফেক্ট হবে।

- না শোনেন, এই যে এইখানে যে লিখছেন .....

- সাংবাদিক সাহেব দয়া কইরা থামেন এইবার। এত্ত কথায় কথায় জ্ঞান দিতে আইসেন না প্লিজ। ভালো লাগেনা।

- হেহেহেহে

- উফ! এভাবে হাসবেন না। মনে হয় একটা অদৃশ্য ভূত হাসতেছে। হিহিহিহি!

- আমারে সরল সোজা পাইয়া আপনি আমারে কত কিযে বানাইলেন......


৬ মাস পর...............


সন্ধ্যা ৭ টায় ক্লাস শেষ হল । মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। বুড়ি বয়সে (এমবিএ) পড়াশুনা করতে আসলে যা হয় আর কি। এদিকে ফোনটা বেজেই চলেছে।

বাসে উঠেই মোবাইলে হাতে নিয়ে দেখি রাশেদ কল করেছে। কল দেখেই সেইরকম মেজাজ টা খারাপ হল। মনে হল আগুনে আরো ঘি ঢালা হল । X((

- হ্যালো মায়া

- জ্বী বলেন

-কোথায় আপনি?

- ক্লাস শেষ হল বাসে, বাসায় যাই।

-আচ্ছা বাসায় যান, পড়ে কল দিব। ঘুমায়া যায়েন না প্লিজ।

রাত ১২:৩০ এ রাশেদ কল দিল


- কেমন আছেন মায়া?

- কেমন আছি সেটা আপনার না জানলেও চলবে, বলেন কেন কল দিয়েছেন এই গভীর রাতে?

- আমি জানি আপনি রেগে আছেন। আর এটাও জানি আমার কলের জন্য আপনি ঘুমান নাই।

- কেন রেগে থাকব? আর আপনার কলের জন্য অপেক্ষা করছি মানে কি?

- না, আমি জানিত, আপনি রাগ করছেন। সরি আমি।

- কিসের সরি? আপনার প্রব্লেমটা কি বলবেন? এত রাতে কেন কল দেন বলেন? সারাদিনত আপনার সময় হয়না কথা বলার? রাত গভীর হলেই কেন আপনার কল দিতে ইচ্ছে হয় হু? বলেন শুনি, চুপ কেন? বলেন?

- আমি জানি আপনি প্রস্তুতি নিয়েই আছেন। হেহেহে। রাগ কমান। এত রাগ করেন কেন?

- রাশেদ আপনি ফালতু কথা কম বলেন। আর প্লিজ এইভাবে স্টুপিডের মতন হাসবেন না। আমার খুবই বিরক্ত লাগে আপনার এইরকম হাসি শুনে। আপনি আমার সাথে যা করছেন অন্যায় করছেন।

- আরে-এ কি বলেন? আমি খুব সাদাসিধা পোলা । আপনি শুধু শুধু ব্লেইম দিচ্ছেন

- আচ্ছা আপনার কি অনুভুতি বলে কিছু আছে?

- কেন থাকবেনা? কি বলেন এইসব?

- আপনার গাঁয়ে চিমটি দিলে ব্যথা পান?

- অবশ্যই পাই। এইসব কি বলছেন মায়া?

- আপনি যে একজন মেন্টাল আপনার আশেপাশের মানুষ বলেনা? আপনার কলিগরা বলেনা?

- মায়া কি বলছেন আপনি? আপনি আমাকে অপমান করছেন?

- আপনার কি বোধ আছে ? আপনারত গন্ডারের চামড়া। গাঁয়ে লাগেনা কিছু যদি লাগত আমার কথাগুলো আপনার চামড়া ভেদ করে হাড্ডিতে লাগত।

- এবার কিন্তু মাইন্ড করলাম মায়া। বোধ কেন থাকবেনা? ভাগ্যিস আপনাকে এই গভীর রাতে কল দিয়েছিলাম তানাহলেত আপনি বলেই ফেলতেন যে এই ফিলিংস টাও নাই। হেহেহেহে । শেষমেষ আমার বন্ধু এইরকম মেয়েই ঠিক করল আমার জন্য। আল্লাহ এই ছিল আমার কপালে।

- হাহাহা! উফ! কই আমি আপনার সাথে আরো রাগ করব তা না আমি হাসছি। আপনি আস্ত একটা মেন্টাল বুঝছেন?

- আর আপনি একটা রাক্ষুসী।

- কি আমি রাক্ষুসী। ছিঃ! শুধু আমি বলে এখনো আপনার সাথে কথা বলছি । অন্য মেয়ে হলে.

- জানি আমি অন্য মেয়ে হইলে জুতা মারত। সরি মায়া, সরি! আপনি সত্যিই অনেক ভাল মেয়ে আমি জানি। মাথা ঠান্ডা রাখেন ।

- আপনাকে ভাল বলতে বলিনি। আমি কেমন সেটা আমি জানি। ভাল বলেলেই আমি ভাল হয়ে যাবনা, আবার খারাপ বললেই আমি খারাপ হয়ে যাব না। শোনেন সাংবাদিক সাহেব আপনার প্রব্লেম কিন্তু অনেক। আপনার সাথে বিয়ের পারপাসে কথা হইছে। আর সেটা আমার কলিগ দিয়েছিল মানে আপনার বান্ধবী। আপনি আমাকে পৃথিবীর সব বিশেষণ দিচ্ছেন কিন্তু আজ অব্দি দেখাই করলেন না। বলেন আপনার কাছে কি মনে হয়না এটা অস্বাভাবিক বিষয়? আপনি কি করছেন গভীর রাতে কল দিচ্ছেন আর আমি ভদ্রতার খাতিরে আপনার কল রিসিভ করেই যাচ্ছি। আপনি কোন ডিসশনই নিতে পারছেন না। আপনার সাথে আমার প্রেম না ভালোবাসা যে অয়েট করব? আপনার ভালো লাগলে হ্যাঁ বলবেন না লাগলে না বলবেন। আপনি আমাকে পজিটিভ কথা বলছেন কিন্তু দেখা করছেন না। এটা আমি কিভাবে নিব বলুন?

- আমি ডিসিশন নিবতো।

- কবে নিবেন? ১ বছর পর/ ২ বছর পর?

- কি বলেন এত লেট হবেনা।

- অলরেডি ৮ মাস চলে গেছে।

- মায়া কি বলছেন?

- জ্বী ঠিকই বলছি। আপনার কোন বোধই নেই। আপনি ৩৭ এ কোন ডিসিশন নিতে পারছেন না ৫০ বছর হলেও পারবেন না। জীবনে আপনি বিবাহ করতে পারবেন না। আর বিয়ে করলেও বউ থাকবেনা নিশ্চিত থাকুন। আপনার মতন ছাগল দিয়ে কি করবে বউ? আপনার বউ অন্য বেটার সাথে পালিয়ে যাবে, বুঝছেন? হাহাহা


- এইভাবে অপমান করলেন মায়া? প্লিজ থামেন। অনেক হইছে।

কিছুক্ষণ নিরবতা .....

-সাংবাদিক সাহেব সরি আমি। এভাবে আপনার সাথে কথা বলব ভাবিনি। আপনি বাধ্য করছেন আমাকে। আপনি আমার সাথে যা করছেন অন্যায় করছেন।

- দেখুন সরি আমি, আমি আসলে ডিসিশন নিতে ভয় পাই।

- তাহলে একা থাকুন। বিয়ের কথা বাদ দেন। আমাকে ঝুলাই রাখার তো মানে হয়না।

- আমি ডিসিশন দ্রুতই নিব।

- রাশেদ আপনি আমার সাথে দেখা করুণ । এভাবে আর সময় নিয়েন না।

- আচ্ছা এই সোম বারে দেখা করি চলুন।

- ওকে আমাকে জানিয়েন।

রবিবার সারাদিন গেল রাশেদ সাহেবের কোন খবর নেই। তাকে টেক্সট দিলাম । আপনি কোথায় কখন আসবেন জানিয়েন। ম্যাসেজ সিন হল কিন্তু কোন রিপ্লাই দিলনা।

সোমবার সারাদিন গেল অফিস করলাম। কলিগরা মন খারাপ করে বসে রইল। আমার থেকে তাদের এক্সাইটমেন্ট অনেক বেশি ছিল।। বলল মায়া তুই এই বদমাইশটার সাথে আর কোন কথা বলিস না। ফালতু একটা ছেলে। ইভেন তন্নি আপা নিজেও বলল। তার বন্ধু বলে লজ্জিত হল অনেক।

এর কিছুদিন পর সে আমাকে কল দিত , ম্যাসেজ দিত আমি ধরতাম না। আমি জানতাম সে কল দিবে। আমি তাকে ব্লক করলাম ম্যাসেঞ্জারে, তার কল ধরিনা , কল-ম্যাসেজ কিছুই দিতে পারেনা দেখে সে রাগে দুঃখে আমাকে ব্লক মারল। খুব মজা লাগল আমার।


২ মাস পর একদিন সাংবাদিকের সাথে কথা হল। সে বলল

- আপনি আমাকে কেন ম্যাসেঞ্জারে ব্লক দিলেন? কলও ধরতেন না।

- আর তাই আমাকে ব্লক মারলেন ফেসবুকে? আমার কিন্তু খুব মজা লেগেছিল। আপনি হেরে গেছেন সাংবাদিক সাহেব। আপনি দেখা করবেন বলে দেখা করেন নি। ইভেন আপনি একটা ম্যাসেজও দেন নি যে আসতে পারছেন না।

- ঠিকাছে আজকেই দেখা হবে .. বলেই রাশেদ কাশতে লাগল


- এভাবে কাশছেন একটু পানি খান।

- পানির বোতল নেই।

- কি বলেন , পানির বোতল রাখেন না ডেস্কে?

- এক কাজ কইরেন মায়া আপনে আসার সময় একটা পানির বোতল কিনে আইনেন।

- আচ্ছা আনব। আপনি বের হয়ে কল দিয়েন।

রাত ৮ টা ..

- মায়া আপনিত কল দিতে দিতে পাগল বানিয়ে ফেললেন।

- কি আর করব আপনাকে দিয়েত বিশ্বাস নেই। আসবেন বলছেন আবার হাওয়া হয়ে যাবেন।

- আমি পাঠাও এ আসতেছি। রাস্তায় অনেক জ্যাম।


আজকের রাতটা কেমন যেন অদ্ভুতরকম সুন্দর লাগছে। আকাশে মেঘ নেই, তারা দেখা যাচ্ছে। আর সেই সাথে শীতল একটা হাওয়া বইছে। এই গরমের দিনে আজকের দিনটা সত্যিই সুন্দর।


রাশেদ আমাকে দেখেই চিনে ফেলল এবং ডাক দিল।

মায়া!

একটা ক্যাফেতে বসলাম। অনেক কথা হল। কফি খেয়ে বের হয়ে আসলাম। বলল চলেন বটতলা থেকে চা খাই। আমরা রাস্তার এক মাথা থেকে আরেক মাথায় হাঁটলাম আর কথা বললাম এবং বেশ ক'বার চা খেলাম। রাশেদের কাছে সেদিন না আসা টা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু আমার কাছে অস্বাভাবিক। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন আসেননি এটাত অন্যায় হইছে হেন তেন। সে হেসেই উড়িয়ে দিল। নরমাল মানুষের মতন তার মাঝে আমি কোন খারাপ লাগা দেখতে পাইনি। সময় ফুরিয়ে এল কিন্তু কোন ডিসিশনই রাশেদ আমাকে জানাল না। আমিও জানতে চাইলাম না।

যাবার আগে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বললাম

- এটা আপনার জন্য।

- আরেএ কি করছেন এটা?

- আপনি না বললেন পানির বোতল নেই, তাই নিয়ে আসলাম।

রাশেদ দুষ্টুমি করে বলল

- মায়া আপনি কি পানির বোতল দিয়ে আমাকে পটাইতে চান। হেহেহে

- পানির বোতল দিয়ে কেউ কাউকে পটায় আমার জানা ছিলনা।


আবার দেখা হবে সাংবাদিক বলছিল , আমি বললাম জীবনেও আর হয়ত দেখা হবেনা। কেন দেখা হবেনা জিজ্ঞেস করছিল। যা শুনে আমার খুব হাসি পেয়েছিল। ভালো থাকবেন বলে বিদায় নিলাম দুজনেই।

দুদিকের দু'পথে দুজন চলে আসলাম।


চশমার ভেতরে থাকা চোখ দুটি কেমন যেন ঝাপ্সা হয়ে আসল । অন্ধকার পথটা আরো অন্ধকার মনে হতে লাগল। আর রাশেদের শেষ মূহুর্তের কথাটা কানের কাছে বাজতে লাগল

" মায়া আপনি কি পানির বোতল দিয়ে আমাকে পটাইতে চান"?

" মায়া আপনি কি পানির বোতল দিয়ে আমাকে পটাইতে চান"?

----------------------------------------------------------------------------------------

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৮

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: বিশাল বড় গল্প :(

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৮

লাবনী আক্তার বলেছেন: ধৈর্য্য নিয়ে পড়ুন একটু :(

আসলেই বড় হয়ে গেছে লেখাটা।

২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:০২

লাবনী আক্তার বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৪৬

সুমন কর বলেছেন: আগে বলুন, কেমন আছেন? সহজ-সরল-মিষ্টি কিন্তু শেষটায় আরো একটু আশা করেছিলাম.............
+।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৫৪

লাবনী আক্তার বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ! ভালো আছি।

শেষটা কেমন হলে ভাল হত নিজেই বুঝতে পারছিলাম না ,এভাবেই রেখেছি। যাক, বড় গল্প কেউ পড়তে চায়না, পছন্দও করেনা অনেকেই। গল্প পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

ভালো থাকবেন।

৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৩

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: বাহ! ঝরঝরে লেখা, একটানা পড়ে গেলাম। এরকম আইটেম সাংবাদিক'কে জীবনে না জড়িয়ে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভালই করেছেন। গল্প ভাল লেগেছে। +++

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩৪

লাবনী আক্তার বলেছেন:
এরকম মানুষ জীবনে জড়ানোটাই বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

গল্প পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.