নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাধীনতায় ব্যাপক বিশ্বাসী। তবে অন্যকে অনৈতিক ভাবে হেয় করে কখনও স্বাধীনতা প্রয়োগে বিশ্বাসী নই।

ফারুক আহাম্মেদ

আমি ভাল থাকতে ভালবাসি।

ফারুক আহাম্মেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দৃশ্যমান!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫২

যশোর যাব বলে নিজেকে স্থির করতে বেশ সময় লাগল। অবশেষে ঠিক করলাম যাব।কাদের ভাই নোয়াখাইল্লা বংশদূত ঢাকার নাগরিক। তাকে নিয়েই যাত্রা করব বলে ঠিক করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম রাতে হবে আমাদের যাত্রা। কাদের ভাই আমাকে আসাদগেট আসতে বললেন। আমি একটু দেরি করে আসলাম। দেখলাম তিনি দাড়িয়ে আছেন। আমি জিগাসা করলাম কখন আসলেন। বললেন এই তো দাড়ালাম আর আপনি আসলেন। তাৎক্ষনিক মনের ভেতরে আসতে থাকা সরিটা ফিরিয়ে নিলাম। বললাম তাড়াতাড়ি গাবতলী চলেন। ইচ্ছা আছে রাত ১১টার বাসে যাব। আজকের আবহাওয়াটা বেশ গরম।গাবতলী আসার আগেই কাদের ভাই বললেন বাস থেকে নেমে হেটে গেলেই তো হয়। তার কথা শুনে না বুঝে নেমে প্রায় ২০ মিনিট হাটলাম! হোটেলে খাবার রাতের খাবার খেয়ে গাবতলী গেলাম বাসের উদ্দেশ্যে। ঘড়িতে সময় ১১.১০ মিঃ। বাসের কাউন্টার গুলো মানুষে পরিপূর্ন! শবে-বরাতের জন্যই এই অবস্থা। আগেই আশংকা করেছিলাম ভীড় হতে পারে। সেটা ধারনার বাহিরে রুপ নিয়েছে! বেশ কিছুক্ষন টিকিটের জন্য ঘুরে চরম ব্যর্থ হলাম। কোন বাসে সিট খালি নাই! থাকলেও ভাড়া চরম আকার ধারন করেছে। একটু ভাবার সময় নিতেই খালি পাওয়া সিটটাও হারালাম! হঠাৎ দেখি ডেকে ডেকে টিকিট দিচ্ছে প্রায় মেরুদন্ডহীন লোক। তাদের সাথে পাহাড়সম উচুঁ কিছু পেট আলাও আছে! নাম শুনে মনে হচ্ছে এরা সবাই হিন্দু। ওরা সাধ্যমত বজ্র কন্ঠে আওয়াজ তুললে যশোর যশোর করে। ছুটলাম সেদিক। জিঞ্জাসা করলাম কি পরিবহন? জানাল রুমা পরিবহন। কখন ছাড়বে? রাত ১২.৩০ মিঃ। বুঝতে বাকি রইল না লোকাল বাস। এক রকম বাধ্য হয়ে সেটার দুইটা টিকিট কাটলাম। বাস কোথায় জিঞ্জাসা করতেই বিরক্তি নিয়ে বলছে আরেকটু পরে আসবে। প্রচন্ড ধৈর্য্য নিয়ে গরমের তাপ সহ্য করছি।কাদের ভাইয়ের জন্যই একদিন আগে আসা। তাই নিজের বিরক্তিগুলো তার উপরই প্রকাশ করছি।আরো ১ ঘন্টা পর দেখা মিলল বাসের। বাসটি বেশ পুরাতন।রংটা ঝলসে যাওয়া রুটির মত। বাসটি পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছে কাদের ভাই! নোয়াখালীর কাদের ভাই এম.বি.এ পড়েন তবু সামান্য শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারেন না। আঞ্চলিকটান তার প্রতি কথায় থাকেই।ভাই গাড়ি আইচে…আল্লাতেন শুকরিয়া আদায় করেন। গাড়ির দিকে এগোলাম। গাড়ির সামনে লেখা আছে সৌখিন পরিবহন। সেটাকে চুনের একটা প্রলেপ দিয়ে মোছার চেষ্টা করছে সর্বোচ্চ পেট আলা লোকটি! পেটের কারণে অসুন্দর লেখাটি রুমা পরিবহনে রুপ নিল! আমরাসহ বেশ কিছু যাত্রী নিরুপায় হয়ে সবাই বাসে উঠলাম।বাসে উঠার পর দেখি সিটে ধুলাবালির একটা স্তর এবং ময়লাযুক্ত সিট! সম্ভবত এরা কোন গাড়ির গ্যারেজ থেকে পুরাতন গাড়ি ভাড়া করে এসব দালালি করছে।বাসের ভেতরে ভয়াবহ গরম! বাসের ভেতরে ব্যাগ রেখে কাদের ভাই আমাকে পাহারা দিতে বলে বাহিরে গেলেন।ফ্যান চালু করার জন্য আমিসহ যাত্রীরা প্রায় ১৫ মিনিট চিৎকার করলাম। কাউকে না দেখে নিজেরাই শান্ত হতে বাধ্য হলাম।এক পিচ্চি এসে গাড়ির সামনের গ্লাস পরিস্কার করছে। তাকে ফ্যান চালু করতে বলার পর জানাল তাহলে পরে গাড়ি স্ট্যার্ট নিবে না, ব্যাটারি ডাউন মারবে! আল্লাহ জানেন কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি।ধীরে ধীরে যাত্রী হচ্ছে।সময় ১২.৩৪ মিনিট গাড়ি ছাড়ার কোন লক্ষন নেই! বাস ছাড়েনা কেন? বলে বাসের ভেতরে দুই একজনের চেচামেচি শুনতে পাচ্ছি। এর মধ্যে শুনিতে পাচ্ছি মেয়েলি চিকন কন্ঠে সাধ্যের বাইরে আ্ওয়াজ তোলার চেষ্টা হচ্ছে। নিজেও বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নামলাম।এবার দেখলাম চিকন আওয়াজ তোলা মেয়েটিকে। হাসপাতাল থেকে সরাসরি মনে হয় বাসে আনা হয়েছে তাকে। দেখলেই বোঝা যায় সব সময় রুগ্ন থাকতে হয়।অবশ্য তার ভাব দেখলে সুন্দরী মনে হতে পারে। থাক তার রুপের বর্ননা না দেই। মেয়েটির ঠিক পেচনে ৩০ বছরের এক তাগড়া যুবক খালি গায়ে নিজের টি-শার্ট হাতে নিয়ে বাতাস দিচ্ছেন নিজের বডিকে।বাস ছাড়ার জন্য মেয়েটি তাকে বার বার উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। লোকটিও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে! উনি কি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করবে নাকি কাউকে মারবেন বোঝা কঠিন! কথিত এই সুন্দরীর কথায় অতিষ্ট হয়ে ঠাস করে উঠে দাড়ালেন তিনি। জানালা দিয়ে মুখ বের করে দুপাশে কি যেন দেখলেন। এবার নিজেই জোরে বলে উঠলেন মাগির ছেলেদের কপালে আজ বিপদ আছে। এরকম একটা সাড়া পেয়ে মেয়েটি বলল যান তো। যেয়ে বলেন বাস ছাড়তে। লোকটার নি:শ্বাসটা তখনও জোরে জোরে উঠা নামা করছে। আমি যত্নকরে খেয়াল করছি। হুম…….. এবার নামলেন। বাস থেকে নামার সাথে সাথে বাঘের গর্জন অর্জন করলেন। খুব জোরে ভদ্র ভাষায় দাড়িয়ে থাকা মানুষের সামনে আওয়াজ তুলছে বাস ছাড়ে না কেন?বলেই জানালার দিকে তাকিয়ে দেখছে মেয়েটিকে! এখানে তার বডির বর্ননাটা জরুরী। বেশ মোটাসোটা শরীর বলার মত পেট।গায়ে থাকা টি-সার্টটি হাতে শোভা পাচ্ছে। প্যান্টের পেচনে মেরুদন্ডের গোড়া দেখতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তার সামনের অবস্থা বর্ননা না করাই উত্তম। খালি গায়ে নিঃলজ্জের মত সবার সামনে এভাবে নিজেকে উপস্থান করার মত দুঃসাহস তার আছে। মেয়েটি জানালা দিয়ে আরো উত্তেজিত করে দিল। বলল দেখা যাবে কি করেন। লোকটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কাউন্টারের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একদিকে কাদের ভাইও এগুলো খেয়াল করছিল। লোকটির উত্তেজনায় উত্তেজিত হয়ে কাদের ভাই বলল আল্লায় যা করে আইজ্জা আমি এ্যাতাগোরে ধরি মাইর দিয়াম (আল্লাহ যা করেন আজ এদের ধরে মার দিব)।যদিও নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করে বলেন জীবনেও তিনি মারামারি করেননি! আমি তাকে বোঝালাম কাউন্টারে বাসের ওদের লোকই বেশি থাকবে…..। কাদের ভাই দ্রুতই ঠান্ডা হতে বাধ্য হলেন। এবার লোকটির দিকে দুজনই তাকাচ্ছি। জানালা দিয়ে পেট পর্যন্ত বের করে মেয়েটিও লোকটিকে দেখার ভীষন চেষ্টা করছে। আমি আর কাদের ভাইসহ বেশ কিছু যাত্রী লোকটির পেচনে ছুটলাম মারামারি দেখার আশায়। খালি বডি নিয়ে যাওয়ার পথে প্রায় শ-খানেক আগোছালো গালি তিনি ব্যবহার করেন। এগুলোই মূলত পেচনে যাওয়া যাত্রীদের দারুন সাহস যোগান দিচ্ছে। আমরাও সাহসের বাহিরে না।আমি আর কাদের ভাই তার পাশেই দাড়ালাম।লোকটির বাঘের গর্জন মুহুর্তেই বিড়ালের গর্জনে রুপান্তরিত হল। লোকটি সেখানে কাউন্টারে থাকা লোকের সামনে অত্যান্ত ধীরে এবং উৎকৃষ্ট ভাষায় জিগাসা করলেন ভাই বাস কখন ছাড়বেন? কর্কশ কন্ঠে জবাব উড়ে এলো ছাড়তে লেট হবে। হতাশ হয়ে লোকটি বলল আপনারা তো সাড়ে বারোটায় ছাড়বেন বলছেন।এখন তো দেড়টা বাজে! লোকটির কথায় কেউ পাত্তা না দিয়ে সবাই যশোর যশোর বলে চিৎকার করছে। কাদের ভাই দাড়িয়ে লোকজনের সেই চিৎকার শুনছে।লোকটির খালি বডিরও গুরুত্ব পায়নি সেখানে! এরকম দু-চারটা অকেজো বডি ওদেরও আছে। লোকটি পাত্তা না পেয়ে সবাইকে হতাশ করে বাসের দিকে রওনা হলেন! তার সাথে আমরাও বাসের দিকে রওনা করলাম। জানালার কাছে আসতেই লোকটির হাটার গতি চুড়ান্ত বৃদ্ধি পেল! দেখে মনে হবে যুদ্ধ জয় করে ফিরেছে। হাত উচুঁ করে বাসের সবাই শান্ত করার চেষ্টা করছেন। সবাই দ্রুতই বাসে উঠে বসল। আমার হাসির মাত্রা ব্যাপক আকার ধারণ করল। পেচনে বসা মেয়েটির আওয়াজ আরো বাড়তে লাগলো কিন্তু তাগড়া যুবকটি তখন অনেকটাই নিশ্চুপ! একটু পরে এক বৃদ্ধা ৬ জন যাত্রী নিয়ে উঠলেন আমার ঠিক সামনের সিটে। যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় বাস ছাড়ার অনুরোধ। অনুরোধ কাজ হচ্ছে না দেখে অস্ত্র হিসাবে গালি ব্যবহার করে যাচ্ছেন নিরবে। তার নিরব আওয়াজ আমি শুনতে পাচ্ছি। গাড়ির কোন লোক নাই। অবশেষে রাত আড়াইটায় বাসের লোক দেখতে পেয়ে বৃদ্ধা চোখ তুলে নেওয়ার চুড়ান্ত হুমকি দেন। একটা পর্যায়ে বাস ছাড়ে। কেউ কেউ হয়তো মনে করেছে বৃদ্ধার হুমকিতে বাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। মুলত রাত গভীর হওয়াই বাস ছাড়ার কারন। বাসের ভেতর মশার কামড় খেতে খেতে ৫ ঘন্টার যাত্রা ৯ ঘন্টায় শেষ করলাম! এ যাত্রা কষ্টের যাত্রা। বাসে উঠার আগে সব কিছু ভেবে টিকিট না কাটা বোকামি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৮

বিজন রয় বলেছেন: বাস মালিকদের কাছে যাত্রীরা জিম্মি।

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২০

ফারুক আহাম্মেদ বলেছেন: হুম....... সেটাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.