![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুচরো পয়সার জীবন। আমার প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে খরচ হয়ে যাবার ভয়ে, হারিয়ে যাবার ভয়ে...।
বিকেলের লেট ঘুমের পর যখন টয়লেটে যাবো তখন দরজার ফাঁক থেকে খসে পড়লো সেই মরা টিকটিকিটা। কি ভয়ংকর অসহায় ভাবে টিকটিকি-টা উলটে পড়ে আছে। চার হাত পা আর প্রসারিত অক্ষম আঙ্গুলগুলো এক অদৃশ্য বাধা দেয়ার ভঙ্গীতে দৃশ্যমান। ঘাড়ের কাছ দিয়ে আড়াআড়ি চ্যাপ্টা হওয়া দাগে বুঝতে পারি হয়তো সময়টা তার সাথে ছিলোনা মৃত্যুর পূর্বমুহুর্তে। লেজ খানিকটা বাঁকানো, গায়ে কালো দাগ।
বুঝতে পারি অকালমৃত্যু সকাল সকাল চলে আসায় শেষ রাতের স্মৃতি সে মনে করতে পারেনি। কি করেছিলো সে সেই রাতে?
--- হয়তো খুব সন্ধ্যা করে অলস ভঙ্গিতে বেরিয়েছিলো দেয়ালে। ভাবটা ছিলো এমন যে আজ কিছু না খেলেও চলে। খানিকটা ঘুরে বেড়াবার জন্যই হয়তো তার বেড়িয়ে পরা আর না ফেরা।
--- হয়তো সদ্য চোখ ফোঁটা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে সে বের হয়েছিলো খাঁড়া দেয়ালের মানচিত্র বোঝাতে। চুন টানা দেয়ালের অমসৃণ পলেস্তারায় সে হয়তো তার বাচ্চাকে নিয়ে আনন্দে বলেছিলো-' হাঁটি হাঁটি, পা পা'। খুব নিবিস্ট মনে সে শিখিয়ে দিয়েছিলো লেজের ব্যবহার, পায়ের চলন, জিহ্বার কারিকুরি, চোখের ঘূর্ণন।
--- হয়তো সান্ধ্য পরিভ্রমনে সে বের হয়েছিল তার সঙ্গীর সাথে আর মেতে উঠেছিলো বিলাসিতার ছোটাছুটিতে।
--- একটা ছোট্ট পোকাকে সে সপরিবারে ভয় দেখিয়েছিলো। ছোট বাচ্চা গুলোকে আগলে রেখে পোকা দম্পতির কৌশলী আত্মরক্ষা উপভোগ করে তারপর নেহাৎ তাচ্ছিল্য করে ছেড়ে দিয়েছে প্রাণভিক্ষা দিয়ে।
--- এক মানুষের ভীষন সত্যি কথা কানে আসার সাথে সাথে 'ঠিক, ঠিক, ঠিক' আওয়াজ করে হয়তো একাত্মতা প্রকাশ করেছিলো।
--- হয়তো আনুভূমিক বা উল্লম্ব দেয়ালের গায়ে জুড়ে একদিনেই দেখে ফেলেছে একাধিক পুরুষ লিঙ্গ। আর লিঙ্গ মালিকের চোখে চোখ পড়ার পরেও তার চোখে দেখেছে এক তাচ্ছিল্যের হাঁসি। প্রসাবের শব্দে হয়তো সে হয়তো বৈচিত্রও খুঁজেছে কোন কোন সময়।
--- হয়তো দেয়ালের গায়ে নতুন গজিয়ে ওঠা মাকড়সার জাল-টার ক্রমবর্ধমানতাকে দেখেছে আবশ্যিক বিরক্তি নিয়ে। তারপর পাশ কাটিয়ে গিয়ে সেই তন্তুজ জালের সংখ্যালঘু মালিককে চোখ রাঙ্গিয়ে এসেছে কঠোরতায়।
--- হঠাৎ জ্বলে ওঠা এনার্জি সেভিং বাল্বের ঝলসানো আলোতে ধাঁধানো চোখ নিয়ে আড়াল খুঁজেছিলো ভেন্টিলেটরের ছিদ্রে। আর নিজের লেজ টাকে রেখে দিয়েছিলো আল-আঁধারির বিরোধপূর্ণ এল-ও-সি তে।
হতে পারে অনেক কিছুই। তবে এখন আমার সামনে যে প'ড়ে আছে তার এই করুণ বর্তমান আমাকে কিছুতেই আমার আন্দাজে স্থির থাকতে দিচ্ছেনা। একটা ছোট্ট টিকটিকি কত কিছু করে ফেলে তার অনিশ্চয়তাময় ক্ষুদ্র জীবনে! তার পরিবার, সহচর, শত্রু, মিত্র, ভালোলাগা-খারাপলাগা, দেয়াল, কার্ণিশ, ছিদ্র, লেজ সব কিছু নিয়ে এক মুহূর্তের মধ্যেই সে অতীত হয়ে যেতে পারে। তার কথা বলার মত কেউ নেই। তার চলে যাবার পরেও কি অবিনাশী ধ্রুবতায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে দেয়াল। রঙ বদলায়, পলেস্তারা খসায়, জল চুইয়ে পড়ে শ্রাবনের বৃষ্টিতে। হয়তো একটু পরেই আমার দেয়া জলের বেগে সে হারিয়ে যাবে এক্কেবারে। মিলিয়ে যাবে আর ফিরবেনা কোনদিন। তার ফেলে আসা শিশু শিক্ষার পাঠটা সে ঠিক ঠাক মত শেষ করতে পেরেছিলো কিনা কেউ জানতে পারবেনা। বৈরিতার দেয়ালে, অনভ্যস্ত চলাচলে তার সন্তান যদি আঁটকে পড়ে মাকড়সার জালে আর প্রতিহিংসার চরিতার্থ হয় তবে কি হবে?' -এই দুশ্চিন্তা নিয়ে সে একাই চলে গেলো।
একা মানুষ এই টিকটিকি-টার চেয়ে কতটুকু আলাদা???
জল দিতে ভয় হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমিও তলিয়ে যাবো ওর সাথে সাথে। আমার মৃতদেহ দেখে সব আন্দাজ করা যাবে কিন্তু সত্যিটা বের হবেনা কোনদিন; পলেস্তরা পলি হয়ে যাবার পরেও।
(গল্পের সব চরিত্র বর্তমান, কাল্পনিক নয়। দিনে রাতে তারা আমাকে চেনাচ্ছে নতুন করে। তাদের বাস আমার দেয়ালে, মেঝেয়, কার্ণিশে। আমিও তাদেরই একজন।)
---------------------------------------------------------------- ১৭/০৩/২০১৩; জগন্নাথ হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।।
©somewhere in net ltd.