নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।
যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।
নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬ ভাগ, ২০১০ এ দাঁড়াল ৯ ভাগে আর এখন ৫ ভাগও আছে কিনা সন্দেহ। যদিও বনবিভাগ বলছে, ২০১০ এ ছিল ১৬ভাগ আর ২০২১ এ নাকি ১৪.৫ ভাগ মোট ভূ-ভাগের। অবিশ্বাস্য !!!
কারন লাউয়াছড়া বনে আগে যত গাছ ছিল, এখন শুধু সামনে কিছু আছে, ভেতরে সব ফাকা। সাতছড়িরও একই অবস্থা। মধুপুর ভাওয়াল গড়ে, ভেতরে ভেতরে ধানের জমি, কলা বাগান বা লেবু বাগান। পার্বত্য এলাকায় এখন বন ফাকা, ফলজ বাগানে ভরা। খুলনার ঘন জঙ্গল এখন তেমনটা আর নাই। অনেকটা ফাকা, বনের এরিয়া আগের চেয়ে কমে গেছে। সব মহাসড়ক মোটামুটি ন্যাড়া হয়ে গেছে। সেটা উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ বলেন বা সিলেট বিভাগ বলেন। গ্রামের ভেতরে গেলেও আর সব বাসায় গাছ গাছালি দেখা যায় না। কিভাবে মানবো যে দেশে ১৪.৫ ভাগ বনভূমি বা বৃক্ষ সমৃদ্ধ ভূমি আছে?
আমি ছাত্র জীবন থেকে সারা বাংলাদেশ চষে বেরিয়েছি। আন্তসড়ক মহাসড়ক বা গ্রামে গঞ্জে কোথায় কতটা গহীন গাছ গাছালি তার একটা ছায়া চিত্র এখনও আমি মনে করতে পারি। আফসোস ! আমি দেখেছি ১ ফুট রাস্তা চওড়া করতে ৯০০টা গাছ কাটা হয়েছে, বর্তমানে আসলে কাঠের লোভেই রাস্তা বড় করা। এমনও দেখেছি ছেলের খাতনা বা মেয়ের বিয়ে, তাই বাসার চারপা্শের গাছ কেটেছে। আবার ভাইয়ে ভাইয়ে কোন্দল, জোড় করে বাবার গাছ ছেলেরা কেটেছে। সেই ছেলেরা বাবা হয়েছে, কিন্তু গাছ লাগায়নি।
নগরে বা গ্রামে এখন বুক ভরে শ্বাস নিলে নাক মুখ ধুলায় ভরে যায় নয়ত কোন তৃপ্তি পাইনা। একসময় ছিল, যখন ঠান্ডা আদ্র সতেজ একটা অনুভূতি পেতাম। দেশে বর্তমানে ২% মানুষ লাঙ ক্যান্সার বা ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত। ২৭% মানুষ ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। যদিও এখন মানুষ অনেক সচেতন: মাস্ক পড়ে, ধুমপান এড়িয়ে চলে, ঘরে এয়ার ক্লিনার লাগায়, পুষ্টিকর খাবার খায়, চিকিৎসা সেবা নেয় ইত্যাদি। তবুও সংখ্যাটা অনেক বড়।
অনেকেই জানেনা, একটা ঘন পাতার বৃক্ষ জাতীয় গাছ, শহরে শব্দ দূষণ কমাতে পারে, আদ্রতা রক্ষা করতে পারে, ছায়া দিতে পারে, ধুলাবালি উড়তে বাধা দিতে পারে, মাটির ক্ষয় রোধ করে, তাপমাত্রা কমায়, কার্বন ও অ্ন্যান্য উপাদান বাতাস থেকে টেনে নেয়, অক্সিজেন প্রদানের কথা বাদ-ই দিলাম। আপনার বাসার সো পিস বা ফার্নিচারের কাঠের যোগান দেয়। ঝড়ের সময় টিনের চালা উড়িয়ে নিতে বাধা দেয়। বর্জপাত আটকায়। এমন কি পাখির খাবার বা আশ্রয়ের সুবিধা দেয়। এই যে কাক শালিক আপনার ফেলে দেয়া খাবার ডাস্টবিন থেকে খেয়ে এতটুকু হলেও ফুডচেইন এ ব্যালেন্স করছে, সেটাও তো কম না। সবজির ক্ষেতে মথ -পোকা খেয়ে পাখি গুলো আপনার জমির কিটনাশক ব্যবহারের পরিমান কমিয়ে দিচ্ছে, সেটা কি ভালো না? গাছ না থাকলে সেটা সম্ভব না।
নিজে তো অনেক সবুজ দেখেছেন, সবুজের মাঝে বেড়ে উঠেছেন, আপনার বাচ্চাদের সে সুযোগ দিবেন না? বৃষ্টির পর মাটির যে সোদা গন্ধ, তা পেতে দিবেন না? নির্মল বাতাস বুকে টেনে নেবার সে শান্তি, সেটার ব্যবস্থা করবেন না?
আগে বাসায় কোন বাচ্চা জন্মালে বাপ দাদারা ১টা হোক ১০টা হোক গাছ লাগিয়ে স্মৃতি করে রাখতেন। সেই চল টা কি আবার শুরু করা যায় না?
বর্তমানে অনেক বাঙ্গালি ভাই বোনেরা বৃক্ষ রোপনের উদ্দ্যোগ নিয়েছে। তাদের উদ্দ্যেশে আমার কয়েকটা কথা:
১. দেশে ভূমি খোরের মত, বন খোর গাছ খোরও আছে। কাজেই আপনারা এমন জাতের চারা লাগানোর চিন্তা করবেন যা, ঐসব 'খোর' দের জিভে জল এনে দিতে না পারে।
- যেমন হতে পারে, জারুল, কদম, তাল, বট, বকফুল, তমাল, বকুলফুল, ছাতিম, নাগেস্বর, গোরা নিম, খেজুর, তেঁতুল, দেবদারু ইত্যাদি। কখনই আকাশমনি , ইউক্যালিটাস, বেলজিয়াম, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি, সিষ্টি কড়ই, এন্টি কড়ই, রোড কড়ই বা আরও যেসব বিদেশি জাত আছে যারা এলার্জেটিক রেনু ছাড়ে বা মাটির এসিডিটি বাড়িয়ে দেয় বা গভীর প্রধান মূল হয় না, সেগুলো বাদ দিবেন।
২. নার্সারি থেকে চারা নেবার সময়, খেয়াল করবেন প্রধান মূল যেন কাটা না পড়ে। যদি দেখেন কাটা পড়েছে, তবে সে গাছটি না লাগানোই ভাল। গুচ্ছমূলের গাছে মূল কাটা কোন সমস্যা হয় না।
৩. গাছ লাগানোর পর, বেড়া দিন। অথবা গবাদি পশু যেন না খায়, সে ব্যবস্থা করুন। আমার এমনও হয়েছে, গাছ লাগিয়েছি, পরের দিন গিয়ে দেখি গাছ নাই, তুলে নিয়ে গেছে কেউ হয়ত। নিজের পছন্দের জায়গায় লাগানোর জন্যে। সেটাতে মন খারাপ হয়নি, একবার দেখি কয়েকটা গাছের অর্ধেকটা করে নেই, পরে শুনলাম রাখাল বালকরা গরু তাড়ানোর জন্যে আমার লাগানো গাছ ভেঙ্গেছে। কারন গরু ধানের জমিতে ধানগাছ খাওয়া শুরু করেছিল। গাছের চারার চেয়ে ধানের চারার তাদের কাছে গুরত্ব বেশি।
৪. অতিথি বেশে কোথাও গাছ লাগালে সেই গাছ টিকে থাকার সম্ভাবনা কম। আমরা বাঙ্গালিরা জাত হিসেবে অনেক ভালো তো ! আমরা কারও ভাল দেখতে পারি না। ভাল কাজে হাত লাগাতে চাই না, অন্যরা শুরু করলেও লেজ টেনে ধরি। তাই পরামর্শ হলো, স্থানীয়দের সাহায্য নিবেন, তাদেরকে খুশি রাখবেন, মটিভেটেড করবেন, জনপ্রতিনিধির সাহায্য নেবেন। আর তা না হলে গাছলাগানোর সেলফি / ফটোসেশানটাই শুধু থেকে যাবে।
৫. সড়ক বিভাগ বা নগর পরিকল্পনাবিদ দের কিছু বলবনা। বেশির ভাগ ছাত্র রাজনীতি করা, বর্তমানে শরিষা তেলের ডিব্বা নিয়ে গবেট গুলা অফিসার পদে বসে আছে। বিশেষ সুবিধা পাওয়া এবং দেয়ার ভেতরেই তারা উৎপাদনমুখী হয়। না হলে অনুরোধ করতাম, পত্যেকটা সড়কে এবং শহরে যেন ছায়া বৃক্ষ লাগানোর সুযোগ থাকে, সেভাবে পরিকল্পনা করুন। আফসোস !
৬. যারা ট্যুর দেন দেশের আনাচে কানাছে, সঙ্গে ফলের বিচি নিয়ে যান। আমি ব্যক্তিগত ভাবে, কাঁঠালের বিচি, আমের বিচি, বড়ই এর বিচি নিয়ে যাই। পছন্দমত জায়গায় ছিটিয়ে দেই। জানিনা কোন গাছ আদৌ হয়েছে কিনা । আল্লাহ ভাল জানেন।
সবাইকে শুভাশীষ
২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।
২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯
অপলক বলেছেন: জ্বি ! ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৪
অধীতি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। গাছ নেই বল্লেই চলে যা আছে সব কঙ্কাল।