নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গমের নতুন জাত জিএইউ গম ১ নিয়ে কিছু কথা

০৩ রা জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:২৮


গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগ উচ্চ লবণ সহিষ্ণু গমের নতুন জাত ‘জিএইউ গম ১’ বা (GAU wheat 1) উদ্ভাবন করেছে। এটা নিয়ে তারা খুবই আশাবাদি। কিন্তু আমি নই।

ওনারা কেন আশাবাদি:
১. উচ্চ লবণাক্ততা সহনশীলতার দিক থেকে দেশে এটিই গমের প্রথম জাত।
২. লবণাক্ততা সহিষ্ণু ও উচ্চ ফলনশীল হিসাবে প্রমাণিত।
৩. জাতীয় বীজ বোর্ড ১৭ জুন গমের এই নতুন জাতের ছাড়পত্র দেয় যা গাকৃবি একটি সফলতার গল্প। ভবিষ্যতে আরও বেশি সরকারী অনুদান আসবে।
৪. প্রটিনের আধিক্য বেশি, কার্বহাইড্রেটের পরিমান কম। প্রোটিন শরীর গঠন ও মেরামত, শক্তি সরবরাহ, ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধে অধিক সহায়তা করে থাকে।
৫.এ গম গাছের আকার বড়, কাণ্ড মোটা ও গুটির সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি থেকে অধিক পরিমাণ খড় পাওয়া যায়। ফলে গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
৬. জিএইউ গম ১-এর দানা তামাটে, চকচকে এবং তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে পরিপক্ব হয়। আমন মৌসুমে ধান কাটার পর বীজ বপন করলে ৯৫ থেকে ১০০ দিনে উৎপাদন পাওয়া যায়।
৭. সাধারণ জাতের তুলনায় এটি গড়ে ১০-১৫% বেশি ফলন দিতে সক্ষম। এ জাতের ফলন হেক্টর প্রতি স্বাভাবিক মাটিতে ৪.৫ টন এবং লবণাক্ত মাটিতে ৩.৭৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।




আমি কেন আশাবাদি নই:
১. University of Gothenburg একটি সুপার গমের জাত প্রস্তুত করেছেন যা কিনা বাংলাদেশের জিএইউ গম ১ এর চেয়ে ৩গুন বেশি ফলন দেয় এবং জার্মিনেটের পরিমান প্রায় দ্বিগুন। এটা হল প্রথম ধাক্কা।

২. জিএইউ গম ১ প্রোটিনের আধিক্য বেশি, মানে এই গমের স্বাদ হবে বর্তমান দুনিয়ার যে কমন গম বা Triticum aestivum গম, তার চেয়ে কিছুটা তেতো এবং বেশ ধূসর বর্ণের। এমনিতেই বর্তমান প্রজাতির গমে কোন স্বাদ নেই, তার উপর যদি আটা ধূসর রঙের হয়, তবে ক্রেতারা কিনতেই চাইেবে না। এটা ২য় ধাক্কা।

৩. বলা হচ্ছে জিএইউ গম ১ হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ৪.৫টন ফলন দেবে। পরিসংখ্যান বলছে, সারা দুনিয়ার কমন-গম জাতটিতে হেক্টর প্রতি ফলন ৩-৮টন। অন্যদিকে সুপার গম হেক্টর প্রতি ৭-১২টন ফলন দিতে পারবে। মানুষ কোনটা আবাদ করবে?

৪. দক্ষীনের চিংড়ি বা লবন চাষীরা কাঁচা টাকার ব্যবসা ছেড়ে ৪.৫ টন গমের আশায় থাকবে কি না পরের ধাক্কা। ৪.৫টন গমের বাজার মূল্য প্রায় ১লাখ ১৫হাজার টাকা একবার হার্ভেস্ট করে। অন্যদিকে গড়ে ৪০০কেজি বাগদা চিংড়ি হেক্টর প্রতি উৎপাদন হলে এবং পাইকারী রেট ৪৫০/কেজি হলে, ১ লাখ ৮০হাজার টাকা কৃষক পায় একবার হার্ভেস্ট করে।

ধরলাম, চিংড়ি চাষে খরচ বেশি। এখন দুটি ফসল গম ও চিংড়ি তে যদি সমান লাভ থাকে, তবে কৃষক মোটিভেটেড হবেন না। অন্যদিকে লবন চাষীরা ১২০টন লবন হেক্টর প্রতি উৎপাদন করেন। তাহলে ১৫০টাকা মন ধরলে সাড়ে ৪লাখ টাকা ইনকাম করেন, যেখানে আবার উৎপাদন খরচ কম। কৃষক কি লবন চাষ ছেড়ে গম চাষে আসবে? আপনি বলুন !





জেনেটিক্যালি মডিফাইড গম (GMO wheat) বা বর্তমান দুনিয়ার আমদানিকৃত গম কেন খাওয়া উচিত নয়:

২০০০ সালের আগে আমরা যে মিষ্টি স্বাদের গমের আটা খেতাম সেটা এখন আর নেই, সে জাত বর্তমানে খতম। অস্ট্রেলিয়ান বা রাশিয়ান গম বলেন আর ইউক্রেনের গম বলেন, সবই জেনেটিক্যালি মডিফাইড গম, ওরা বলে ক্রস ব্রিডিং গম। ক্রস ব্রিডিং আর মডিফাইড়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য।

ইন্টারনেটে অনেক জায়গায় দেখবেন, গমের উৎপাদন বাড়াতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মানুষের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদে রোগ সৃষ্টিতে পাশ্চাত্য দেশ গুলো GMO wheat চাষাবাদ শুরু করে গত শতাব্দির মধ্যভাগ থেকে। আপনি হয়ত জেনে থাকবেন, অস্ত্র ব্যবসা আর ওষুধ বিক্রি উন্নত দেশ গুলো একটা বড় উপার্জনের ক্ষেত্র।

১. আধুনিক গমের জাতগুলিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে তামা, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং দস্তা।

২. আধুনিক গমে গ্লুটিন এর পরিমান মানুষের সহ্য ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। গ্লুটিন বেশি থাকা মনে পুরো পাচন তন্ত্রের সমস্যা। কমন অসুখ হল সেলিয়াক ডিজিজ: পেট ফাপা, ডাইরিয়া, বমি ভাব বা ত্বকে চুলকানি হওয়া। এখন যদি পাচন তন্ত্রে দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা থাকে তবে ক্যান্সার , আলসার সহ নানা অসুখ হবে। আপনার পেট হবে গ্যাসের খনি, আপনি হবেন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বিশেষজ্ঞ।

৩. আমাদের পূর্ব পুরুষরা যে আদিম বা প্রকৃতি সৃষ্ট গম খেয়ে এসেছে, তা আমাদের শরীরের সাথে হিতকর। বর্তমানের গমে, অনেক পুষ্টি উপদান রদবদল করা হয়েছে, সেই গম ও গমজাত খাদ্য - অখাদ্য খেয়ে আমাদের ইমুউনি সিস্টেম ডাউন হয়ে গেছে, কাজ করার ক্ষমতা কমে গেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার অলসতা আমাদের সঙ্গী। অল্প বয়সে ডায়াবেটিকস হচ্ছে যেটা হল সমস্ত কঠিন রোগের জননী।

যারা ভাবেন গমের রুটি ভাতের থেকে বেশি নিরাপদ, তারা অত খুশি হবেন না। আধুনিক হাইব্রিড ধান চালও মিউটেটেড , গমও মিউটেটেড। যাবেন কই?



যেখানেই যান, আমাদের গাকৃবির বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভবিত গমে প্রোটিন বাড়িয়েছে, গ্লুকটিন কমিয়েছেন, সেটা মন্দের ভাল। বিদেশী গমের চেয়ে দেশীয় এই প্রজাতির গম খেলে স্বাস্থ্যঝুকি কম হবে আশাকরি। সাধুবাদ জানাই ঐ বাঙ্গালী ভাইদের যারা নতুন জাত আবিষ্কার করেছে। তারা আরও সক্ষমতা অর্জন করুক এবং মানুষের ভালর জন্যে এগিয়ে যাক, এই প্রত্যাশা রইল। ধন্যবাদ।


গাকৃবিতে লবন সহিষ্ণু গমের নতুন জাত উদ্ভাবন

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০২৫ রাত ১০:৪৩

ওমর খাইয়াম বলেছেন:




আপনি কিভাবে গম চাষের সাথে জড়িত?

লবনাক্ত জমিতে সাধারণ গমের চারা কি টিকতে পারে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.