নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইলিশের স্বাদ-প্রাপ্যতা কমেছে, কমবে, দায়ী বাংলাদেশ ও ভারত

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২২



লেখার শুরুতেই স্মৃতিচারণ করে নেই। যখন স্কুলে পড়তাম, কোন বাড়িতে ইলিশ রাঁধলে আশপাশের সব বাড়িতে সেই সুবাস পৌঁছে যেত। হাত সাবান দিয়ে ধুলেও সারাদিন গন্ধ লেগে থাকত। আব্বা মৌসুমের শুরুতেই ডিম আলা ইলিশ নিয়ে আসত। ইলিশের ডিম আর পেটি আমার খুব প্রিয়। একটা গোটা ইলিশ ভাজা একবারেই আমি খেয়ে ফেলতাম। এত তৈলাক্ত যে, কখনও কখনও আমার পেট খারাপ করত। মাখনের মত নরম সেই ইলিশ আর আজকের দিনের ইলিশের আকাশ পাতাল পার্থক্য।

নানী দাদীর কাছে শুনতাম, জামাই আদর করতে নাকি রুই কাতলা আনতে হত। ইলিশ নিয়ে গেলে অসম্মান হত। কারন সে সময় ইলিশ এতটাই সহজ লভ্য ছিল। এখন আমরা যেমন পাঙ্গাশ আত্মীয়ের বাসায় নিতে পারি না। সে সময় ইলিশ ছিল আজকের পাঙ্গাশের স্থানে। পশ্চিম বঙ্গের গল্প অবশ্য শুরু থেকেই ভিন্ন।



আমার ছোট বেলায়, ফ্রিজ ছিল না। আব্বা ২টা বা ৪টা ইলিশ একবারেই কিনত। ইলিশের সিজনে ৫০টার কাছাকাছি ইলিশ খাওয়া পড়ত। এখন তো বছরে দুচারটার বেশি কেনাই হয় না। ইলিশের লবন মরিচ দিয়ে মুচমুচে ভাজা, কসানি/ভুনা ইলিশ, ট্যালটেলে ইলিশ ঝোল, সরষে ইলিশ, কচুমুখি দিয়ে ইলিশ, বেগুন আলুর ঝোলের ইলিশ, ভাপা ইলিশ, লাউ শাক দিয়ে ইলিশের পাতুরি, কচু শাকের ইলিশ ঘাটি, নারকেল ইলিশ আরও কত কি... ভুলেই গেছি।


যাইহােক, ব্লগের টাইটেলের প্রসঙ্গে কথা শুরু করি। ইলিশের স্বাদ আর প্রাপ্যতা যে কমে গেছে সেটা যে কোন জরীপ / পরিসংখ্যান ছাড়াই ৫০ ঊর্দ্ধো যে কেউ আমার সাথে একমত হবেন যদি তারা সত্যি সত্যি স্মৃতিচারণ করেন।

কিন্তু কেন ইলিশের স্বাদ, প্রতুল্যতা কমে যাচ্ছে?

- আমার মতে দূষণ আর বিচরন ক্ষেত্রের অস্বস্তি প্রধান কারন। কেন সেটাই তুলে ধরব এখন।

দেশের ২৩৮টা নদ নদীর মধ্যে ৪০টার মত নদ নদীতে ইলিশ কম বেশি পাওয়া যায়। ইলিশ তার জীবনের বেশির ভাগ অংশ নোনা জলে বা সমূদ্রে কাটায়। মিঠা পানিতে ডিম পেড়ে আবার সমূদ্রে ফিরে যায়। এটা মোটা দাগের কথা। এর বেতিক্রমও আছে। মিঠা পানিতে রেনু বা পোনা মাছের পুষ্টি / জৈব উপাদান সাগরের পরিষ্কার পানির তুলনায় বেশি। বর্ষা শেষে নদীর পানি কমতে থাকে, আর ছোট চারা মাছগুলো সাগরে গিয়ে পৌছায়।

কিন্তু ইলিশের এই আসা যাওয়ার চ্যানেলের কোন কোন নদী ব্যবহৃত হয়? বস্তুত: মেঘনা নদী। সুন্দরবনের ঐ অংশের কথা উহ্য রাখছি। এই মেঘনা দিয়ে ঢুকে নব যুবতী ইলিশ ছড়িয়ে পড়ে উজানের কম পক্ষে ৩০টা নদীতে। নদীর ঘোলা পানির উপাদেয় খাবার খেয়ে খেয়ে সে হয়ে ওঠে রুপালি তৈলাক্ত আর লম্বাটে। এই গল্পটা ৮০র দশকের আগের। এরপর কমতে থাকল ইলিশের সুস্বাদু ঘোলা পানির খাবার আর বিচরন ক্ষেত্র।

একটু ব্যাখ্যা করি। ১৯৮০ সালের পর দেশে বস্ত্র ও চামড়া শিল্প ঢাকা কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠল। সারাদেশ থেকে মানুষ টেনে আনা হল ঢাকায়। পরবর্তী সময়ে ব্যাপকভাবে চট্রগ্রামেও। বর্তমানে হবিগজ্ঞ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম সহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের বস্ত্রশিল্প। বস্ত্রশিল্প যতই মাথা চাড়া দিয়ে উঠল, দূষণ ততই বহুগুনে বাড়তে লাগল। যথাযথ ট্রিটমেন্ট ছাড়াই দূষিত পানি ও অন্যান্য বর্জ্য আশপাশের পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হল। যার শেষ গন্তব্য নদী। ঢাকার কথা চিন্তা করলে, তালিকাভুক্ত সবচেয়ে দূষিত নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ,বালু নদী। কমবেশি অন্যান্য খাল বিলও দূষিত। শুধু নদী নয়, মাটি ও বাতাসও দূষিত। মানব বর্জ্য, সুয়ারেজ ও কেমিক্যাল বর্জ্য তো আছেই।



কুশিয়ারা, কর্নফূলি, পদ্মার দূষনও বর্তমানে ভয়ানক। বিবিসির রিপোর্ট মোতাবেগ, ভারতে গঙ্গার দূষণ স্মরনকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি । তারা মরাপোড়া ফেলে, পূজোর ফুল, মাটি, ধুপ, মানব বর্জ্য, নগর বর্জ্য সহ নানা কিছু গঙ্গার পুরো ভারতীয় অংশ জুুড়ে ফেলে। যখন গঙ্গার সুইস গেট গুলো খুলে দেয়, তখন প্রথম ৬-৮ ঘন্টা এত পঁচা পানি বাংলাদেশে ঢোকে যে, গন্ধে টেকা দায়। কাদা, বালি আর প্লাস্টিক বর্জ্য সব ভাসতে ভাসতে চলে আসে পদ্মায়। এদিকে কৃষক ভাইরা লাগামছাড়া রাসায়নিক সার দিয়ে ফসল ফলায়, বর্ষায় তা গিয়ে মেশে পদ্মায়, যমুনায়, সুরমায়। আজ কিন্তু পদ্মায় আগের মত মাছ নেই। দূষণ তো আর খালি চোখে দেখা যায় না। যারা পানির বাসিন্দা শুধু তারাই অনুভব করে। যার প্রমাণ হল প্রজনন হ্রাস, আকারে ছোট, সংখ্যায় কম, যারা টিকতে পারে না, সে সব প্রজাতি বিলুপ্ত।

ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, নারায়নগঞ্জ সহ আশ পাশের সব কিছু যা পানিতে মিশতে পারে, ভাসতে পারে বা তলানীতে জমতে পারে, তা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালুনদী, শীতলক্ষা হয়ে মেশে মেঘনায়। ঐ দিকে পদ্মা ভারতের দূষিত পদার্থ নিয়ে মেশে মেঘনায়। কিছুটা সুন্দরবন হয়ে সাগরে। মেঘনার শেষ গন্তব্যও বঙ্গোপসাগর।

অন্যদিকে হালদা, কর্নফূলির দূষণ নিয়ে রীতিমত আন্দোলন হয়। চট্রগ্রাম শহর এবং কক্সবাজার সমূদ্র সৈকতের পুরো এলাকাটাই সমুদ্র দূষনে ব্যস্ত। ইনানী বিচ, লবনীপয়েন্ট বা ডলফিন পয়েন্টে দেখবেন, ড্রেনের পানি উপচিয়ে বিচ দিয়ে গড়িয়ে সাগর তটে মিশছে। লাখ লাখ পর্যটক সেখানেই সাগরে ঢেউয়ে গা ভাসাচ্ছে। এই যে লক্ষ লক্ষ পর্যটক যাচ্ছে সীবীচে সেখানে, ডিটার্জেন্ট, শ্যাম্পু, সাবান, ডিস ক্লিনার, বাথরুম ক্লিনার, হারপিক, মানব মল মূত্র ঘুরে ফিরে সমূদ্রে পড়ছে। কোন ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা নেই। ২০০০ সালেও কক্সবাজার সীবীচের বালি চকচক করত, শামুক ঝিনুকের প্রলেপ পড়ে থাকত। আর এখন দেখবেন, কাল গাদ বা কাল পলি মাটির মত তলানি বস্তু সাগর তটের বালিতে ভরা। ড্রেনের পানি সাগরে মিশলে কি আর হবে ? এখন গোসল দিলে গা চুলাকায়।



থাক এসব কথা। অনেকের পছন্দ হবে না। এসবের পাশাপাশি মরার উপর খাড়ার ঘা হল, সীতকুন্ডের বা অন্যান্য জায়গার সীপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। দুনিয়ার ৫৫% জাহাজ ভাঙ্গা হয় বাংলাদেশে। কম টাকায় পুরান জাহাজ বিক্রির নামে বিভিন্ন দেশ রাসায়নিক বর্জ্য, পারমানিক বর্জ্য, বিভিন্ন দূষিত পদার্থ বা তেলের গাদ সে সব জাহাজে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি পাকিস্তান যে সব জাহাজ ফিরিয়ে দেয়, সেসব জাহাজও বাংলাদেশ গিলে ফেলে। যেহেতু নজরদারী নেই, বাংলাদেশের জাহাজ ব্যবসায়ীরা নির্বিঘ্নে ঐসব দূষিত বস্তু বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়। দারুন না ব্যাপারটা?

গবেষনায় দেখা গেছে, কমবয়সী ইলিশ মাছের পেটে ডিম বেশি দেখা যাচ্ছে। এর কারন হল, জীবন চক্র সংক্ষিপ্ত হয়েছে এবং পানির দুষণ। নিজেদের টিকিয়ে রাখতে তাদের জেনেটিক্যাল চেন্জ এসেছে।



এবার আসুন যন্ত্র চালিতে নৌ যানের হিসাব দেখি। ইলিশ বিচরন করে এমন নদী গুলোতে বা বঙ্গোপসাগরে প্রায় ৪৫,০০০ ইঞ্জিন চালিত নৌকা, বাল্কহেড, ট্রলার, স্পিড বোট, লঞ্চ, স্টীমার, জাহাজ, ফিশিং ট্রলার ইত্যাদি চলে। সেই সাথে চলে বালি তোলার ড্রেজিং মেশিন বা নদী খননের কাজ। একেতো পানির স্বাদ নষ্ট, অক্সিজেন বা জৈব্য খাদ্য কম, রাসায়নিক দূষণ বেশি তার উপর পানিতে যন্ত্রের ভাইব্রেশন বা ভীতিকর বহুমাত্রিক বাহনের প্রচুর আনাগোনা। সেটা নদী হোক বা সাগর। এত কিছুর পরে কিভাবে লাজুক স্বভাবের আদুরে মাছ টিকে থাকবে? আপনারাই বলুন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে যখন ইলিশ ধরা বন্ধ, তখন ভারত সেই ডিম ওয়ালা মাছগুলোকে সীমানা পেরিয়ে সাগর থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মানে ডিমের পরিমান কমে যাচ্ছে মৌসুমের শুরুতেই। আবার কম বয়সী ইলিশ মাছ অপুষ্ট ডিম ছাড়ছে, ডিম ফুটে পোনা উৎপাদন হচ্ছে কম। সে তো গেল, যখন ২-৬ ইঞ্চির জাটকা সাগরে ফিরতে যাচ্ছে, কারেন্ট জালে ধরে ফেলছে মৎস্য জীবীরা। সাগরে যেতেও বাধা, ফিরতেও বাধা। পালাবে কোথায়? টিকবে কি করে?




মোট কথা, পানির দূষণ আর অস্বস্তিদায়ক যন্ত্র চালিত নৌ যানের বিচরন কমাতে পারলে, জাটকা সংরক্ষণ করলে, অবৈধ পাচার আটকানো গেলে, ভারত ইলিশ নিধন বাংলাদেশের সাথে একই সময়ে বন্ধ করলে ইলিশের পরিমান বাড়বে। এখনি এসব না করতে পারলে ১০ বছর পর বস্তায় করে টাকা নিয়ে ব্যাগে করে ইলিশ কিনে আনতে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আপনার পোষ্টের ভিঊ অস্বাভাবিক।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪৬

অপলক বলেছেন: তাই তা দেখছি। অবাক হলাম। কিন্তু কেন বলতে পারেন?

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৮

নতুন নকিব বলেছেন:



পানি দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নদী খেকো সাগর খেকো শিল্পপতি নামের সর্বভূক রাক্ষসদের হাতে নদী-সাগর-প্রকৃতি সবই আজ বড় অসহায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খাল বিল নদী নালা আর সাগরের প্রাকৃতিক উৎসসমূহের মাছ শুধু স্বপ্নেই দেখা যাবে, বাস্তবে নয়।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২২

অপলক বলেছেন: হুমম... যথার্থ বলেছেন। ধন্যবাদ্।

৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪২

শায়মা বলেছেন: ইলিশ শুনলেই সোনাবীজভাইয়ার ইলিশ পোলাও এর গল্পটা মনে পড়ে!!!

৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৯

জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:



ইলিশ ধরার সময় কি ভুত ও জ্বীনের ভিড় হয়?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.