নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আলু চাষীদের বাঁচান... আলু চাষীরা বাঁচুক...আলু ব্যবসায়ীরা বাঁচুক-- সাল ২০২৫

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৪৯



বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায় হলো চাষীরা। গত সিজনে আম আনারস চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এবার হচ্ছে আলু চাষীরা। আলু আমাদের অন্যতম প্রধান সবজি। জাতিগতভাবে ভাতের পরেই আমারা আলু বেশি খাই । আলুর মত অতটা গম নির্ভর নই আমরা ।

ভাত এবং আলু দুটোই কার্বহাইড্রেট জাতীয় খাবার। ১০০ গ্রাম চাল থেকে যে ভাত হয়, তাতে ৩০গ্রাম কার্বহাইড্রেট থাকে আর ১০০ গ্রাম সেদ্দ আলুতে থাকে ২০ গ্রাম। এদিকে ভাতে ফাইবার থাকে মাত্র ০.৬ গ্রাম আর আলুতে প্রায় ৫ গ্রাম। সে অর্থে ভাতের চেয়ে আলু স্বাস্থ্যকর খাবার। আলুতে অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেল বা খনিজ উপাদানও ভাতের তুলনায় বেশি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আলু প্রধান খাদ্য। কিন্তু ভাত খাওয়া তো আমরা বাঙালীরা ছাড়তে পারব না। ভাত ছাড়া চলেই না। যেটা করতে পারি, যে বেলাই যতটুকু ভাত খাই, সেখানে একটু পরিবর্তন আনতে পারি আমরা। যেমন, যতটুক ভাত খাই, তার অর্ধেক ভাত বাকি অর্ধেক সবজি। আবার সেই অর্ধেক সবজিতে ৭৫% আলুর পদ রাখতে পারি। কারন এখন বাজারে আলু সবচেয়ে স্বস্তা সবজি।



১ কেজি চালের দামে ৪ কেজি আলু পাওয়া যাচ্ছে। গত মৌসুমের প্রায় ৪০% আলু এখনও কোল্ড স্টোরেজে রয়ে গেছে। অথচ নতুন আলু আর এক মাসের মধ্যে বাজারে পাওয়া যাবে। কৃষকরা আলু তুলতে গেলে বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা লস দিতে হবে। যেটা আসলে কোন মানে হয় না। এখন কোল্ড স্টোরেজের মালিক পক্ষ হয়ত বিক্রি করতে পারে যদি ক্রেতা থাকে। নয়ত কোল্ড স্টোরেজের মালিকরাও লস খাবে।

দেশে যদি কম করে ধরলেও ৪০লক্ষ পরিবার থাকে, আর যদি সামনের ৩০ দিনের ভেতরে ৫০কেজি পরিবার প্রতি আলু কেনে তাহলে দাঁড়ায় ৪০,০০,০০০ * ৫০= ২০,০০,০০,০০০ কেজি বা ২,০০,০০০টন (দুই লক্ষ্য টন)। বাংলাদেশে প্রতিবছর আনুমানিক ৩২ লক্ষ টন আলু উৎপাদিত হয়। এখন প্রায় ১০লক্ষ টন আলু অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। আমরা যদি ২ লক্ষ টন সামনের ৩০ দিনের ভেতরে কিনে ফেলতে পারি তবুও অনেকটা রক্ষা হয়।



এর পাশাপাশি যা করা যেতে পারে:
১) সরকার আলু এক্সপোর্ট বা রপ্তানি করার উদ্দ্যোগ নিতে পারে। মালেশিয়াতে আজ আলুর দাম প্রায় ৭.৮২ রিঙ্গিত প্রতি কেজি। সৌদিআরবে দেশি গোল আলু ২০রিয়েল, আর আমেরিকায় ২ ডলার। যেখানে বর্তমানে আলুর পাইকেরি রেট ১৮ থেকে ২০টাকা প্রতি কেজি বাংলাদেশে ।
২) চিপস কম্পানিগুলো আলু সংগ্রহ করে রাখতে পারে বা্ উৎপাদন বাড়িয়ে, সমমূল্যে বেশি পরিমান চিপন প্যাকেটে পূরে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারে।
৩) কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা নভেম্বর ক্লোজিং টাইম না করে আরও ১ মাস পরে ক্লোজিং টাইম করতে পারে।
৪) খোলা বাজারের আলুর পাপড় প্রস্তুতকারীরা বেশী পরিমান আলুর পাপড় বানিয়ে রাখতে পারে। মা বোনেরাও আলুর পাপড় বানিয়ে মুখ রোচক খাদ্য হিসেবে বাচ্চাদের খাওয়াতে পারে।
৫) আলু বাছাই করে নষ্ট আলু কমিয়ে ফেললে কোল্ড স্টোরেজের অনেক জায়গা ফাঁকা হবে।
৬) আলু পশু খাদ্য হিসেবেও সাশ্রয়ী হবে। ১ কেজি গরুর ভূষির দাম গড়ে ৪০টাকা। সেখানে ১ কেজি আলু ২০ টাকা। খামার মালিকরা ভেবে দেখতে পারে। যদিও ভুষির বিকল্প আলু নয় বা পশু নাও পছন্দ করতে পারে।
৭) আলুর ভাল উৎপাদনের জন্যে ভাল বীজ আলু দরকার হয়। কিন্তু আলুর শাক উৎপাদনে ভাল বীজ আলু দরকার হয় না। যে কোন আলু ঘন করে জমিতে লাগিয়ে দিন, শাক হিসেবে ১ মাসের মাথায় সব বিক্রি করে দিন। যেখানে বর্তমানে অন্যান্য শাক কম পক্ষে ৫০টাকা কেজি, আর আলু শাক যদি ৪০ টাকা কেজিও হয়, হিসেবী মানুষ আলুর শাক-ই কিনবে।
৮) বড় বড় মৎস খামারীরা মাছের ঘেরে চাল বা কচু সেদ্ধ করে খাওয়াচ্ছেন দিনে প্রায় ২০০০ মন, তারা অনায়াসে আলু সেদ্ধ করে মাছকে খাওয়াতে পারেন। কোল্ড স্টোরেজের আলু স্টোরেজ থেকে বের করলে প্রায় ১ মাস ভাল থাকে। এই সময়ে হিসেব করে আলু কিনে সংগ্রহ করে রাখলে প্রচুর সাশ্রয় হবে। কারন বাজারে ৫৫ টাকার নিচে কোন চাল নেই বা ৫০টাকার নিচে কোন কচু নেই। যেখানে আলু ২০ থেকে ২৫টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
৯) যাদের সন্তান শহরের মেছে থেকে পড়া লেখা করছে, বস্তায় বস্তায় আলু পাঠিয়ে দিন। তাদের সারা মাসের আলু হয়ত কেনা লাগল না। বা কাজের বুয়া একটু বেশি চুরি করে খেলো, তাই কি আসে যায়। দাম তো কম। জিনিস টা তো কাজে লাগল।
১০) যারা দানশীল, এতিম খানায় আলু কিনে পাঠিয়ে দিন। দরকার হলে সারা মাসে কত মন আলু লাগে, জেনে নিয়ে কিনে দিয়ে আসুন। হাস্যকর হতে পারে। কিন্তু দেখুন নভেম্বরে সব স্টোরেজ আলু ফেলে দিবে, পরে থেকে নষ্ট হবে। চোরাকারবারীদের ধরা ইলিশ মাছ যদি প্রশাসনের লোকেরা এতিম খানায় দান করতে পারে, আপনি সাধারন মানুষ হয়ে কৃষক বাঁচাতে আলু দান করতে পারেন না?





আলু চাষীরা যে ভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন:
১) বহু চাষী ভীত সন্ত্রস্ত্ব হয়ে, আসছে মৌসুমে আলু আবাদ করবে না। মানে পরবর্তী বছরে আলুর যথেষ্ট ঘাটতি থাকবে। মানে সামনের বছরের মে মাস থেকেই আলুর দাম চড়া থাকবে। কাজেই হতাশ না হয়ে যদি এবছর প্রচুর আলু আবাদ করেন, আপনি লাভবান হবেন।
২) আগাম জাতের আলু আবাদ করবেন না এবার। এমন সময়ে আবাদ করুন, যাতে আপনার আলু সব শেষে ওঠে। কোল্ড স্টোরেজের টিকিট আগেই তুলে রাখুন। কিন্তু আলু জমা করবেন শেষ সময়ে।
৩) যে আলু কোল্ড স্টোরেজে রেখেছেন, সেখান থেকে যতটুকু পারেন তুলে এনে আলুর শাক আবাদ করুন, আলু গরু ছাগলকে খাওয়ান। নষ্ট আলু গবরের সাথে পঁচিয়ে সার হিসেবে ব্যবহার করুন।
৪) লজ্জা শরম ভুলে আলু নিয়ে ভ্যানে করে কাছাকাছি শহরে অলি গলিতে ঢুকে পড়ুন। অনেকে বাজার যাওয়ার আলসেমিতে আলু কেনে না। তারা বাসার উপর আলু পেলে অবশ্যই কিনবে। মহিলারা বাজার থেকে ভারি বোঝা নিয়ে আসার চেয়ে ২ টাকা বেশি খরচ করতে আগ্রহী থাকে। আর আপনার কেজি প্রতি ২ টাকা লাভ হলেও ৮০কেজির বস্তায় ১৬০টাকা লাভ। মানে কোল্ড স্টোরেজের চটের বস্তার দাম উঠে গেল। আপনি লসে পড়লেন না।
৫) আলু চাষীরা শহরের দোকান গুলোতে এটাও অফার করতে পারেন, আলুর বিনিময়ে অন্য কিছু কিনবেন। যেমন হতে পারে ৫লিটার তেল নিয়ে আপনি সম পরিমান টাকার আলু দিবেন পাইকারী রেটে, মানে ১৮টাকা কেজিতে। দোকানদার অবশ্যই নিবে, কারন তার পরিবহন খরচ বাঁচবে। এভাবেও দ্রুত আলু বিক্রি করতে পারেন।
৬) উত্তর বঙ্গে আলুঘাটির বহুল প্রচলন আছে। যাদের বাবা দাদারা মারা গেছেন, সামান্য গোসত মাছ দিয়ে আলুঘাটি করে হাজার হাজার মানুষকে খাইয়ে এই সুযোগে দোয়া হাসিল করতে পারেন। জানেন তো, বাঙালী ফ্রি তে আলকাতরাও খায়।
৭) ওয়াজ মাহফিলের সময় শুরু হয়ে গেছে। হুজুদের এখন রমরমা ব্যবসা। মাহফিল শেষে যে খানাপিনা হয়, সেখানে রাখুন আলু ঘাটি/আলুর ডাল, আলুর চপ, আলুর দম, আলু ভর্তা.. বদের বদনাগুলা যাবে কৈ... ইচ্ছামত খাওয়ান।


টক ক্রিম এবং পেঁয়াজের কলির সঙ্গে সেদ্ধ আলু:


আলুর ফ্রেন্ঞ্চ ফ্রাই:


পাউটিন, ভাজা আলু, পনির দই এবং গ্রেভি:


পাপা রেলেনা লাতিন আমেরিকা:


গরুর গোসতের আলু ঘাটি: উত্তর বঙ্গের জনপ্রিয় বাংলা খাবার:


একেবারেই নিজস্ব: গরুর মাংসে আলুর ঘাঁটি উপকরণ

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:০৪

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: খুব ভালো লাগলো । আলুর নানা রকমের ব্যাবহার দেখে খেতে ইচ্ছে করছে ।

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:০৮

অপলক বলেছেন: জেনে ভাল লাগল। :)

ধন্যবাদ।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:০৫

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: মিষ্টি আলু গ্রিল করে খেতে খুব মজা এটাও যোগ করে দিতে পারেন ।

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:১৫

অপলক বলেছেন: জ্বি অনেক মজার। রেসিপি তো দেয়া্ইযায়। লেখাটা বিষয় বস্তু অন্য কিছু নিয়ে। তাছাড়া মিষ্টি আলু এখন দেশীয় বাজারে নেই। এখানে সমস্যা চলছে দেশী আলু নিয়ে যেমন, লাল পাকরী, ফাটা পাকরী, সুন্দরী, সিঁদুর আলু, কালো পাকরী, হল্যান্ড, হাগরায় বা চিক্টা আলু... ইত্যাদি দৈনন্দিন কমন জাতের সংরক্ষিত আলু নিয়ে।

আশাকরি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ ভোর ৬:৫৩

কলাবাগান১ বলেছেন: হাসিনা যখন ভাতের বদলে আলু খেতে বলল..............তখন দেখেছিলাম রিয়্যাকশন

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

অপলক বলেছেন: হা হা হা... ঐ কথা বইলেন না রে ভাই। সরকার প্রধান আর ম্যাংগো পিপুল আলাদা কথা।

সরকারের কাজ জনগনকে বাঁচানো, চুরি না করে রাপ্তানি আমদানি সুষ্ঠভাবে স্বাভাবিক রাখা, হিমাগারে কার্যকরী পলিসি তৈরী করা। সেটা এদেশে হয় না।

আর আমি বলছি ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ থেকে, যদি একটা ভাইয়েরও উপকার হয়। মনে অনেক অনেক শান্তি পাব। যদিও জানি, চাষা ঘোষারা ব্লগে আসে না। তাদের জন্যে মাঠ পর্যায়ে যাওয়া দরকার। তবুও অরেন্যে রোদন আর কি !!!

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সবজীর চড়া দামের বাজারে আলু-ই সাধারণ মানুষের ভরসা। এবার সস্তা থাকায় স্বস্তি যদিও কৃষকের লোকশান।

২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:১৭

অপলক বলেছেন: কৃষকের লোকসান হবে না যদি অন্তত আগামী ১ মাসে আমার দেখানো মতে জনগন + ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসে।

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: আলু চাষীদের কি হয়েছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.