নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সাদামাটা মানুষ। ভালবাসার কাঙ্গাল। অল্পতেই তুষ্ট। সবাই আমাকে ঠকায়, তবুও শুরুতে সবাইকে সৎ ভাবি। ভেবেই নেই, এই মানুষটা হয়ত ঠকাবেনা। তারপরেও দিনশেষে আমি আমার মত...

অপলক

তত্ত্ব, তথ্য ও অনুভূতি ভাগাভাগি করা আমার অভিপ্রায়। কারও যদি ইচ্ছে হয় তবে যে কেউ আমার এই ব্লগের যে কোন কিছু নিজের সংগ্রহে রাখতে পারে।

অপলক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাত্র ৪টি বীজ (SEED) কম্পানির ভয়ঙ্কর খেলায় বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হতে পারে

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:২৩



১৯০০ সালের গোড়ার দিকেও বিশ্ববাপী প্রায় হাজার খানেক বীজ কম্পানী ছিল। ২০০২ সালে এক জরিপে প্রায় ১২০০ মত ছোট বড় কম্পানীর রেকর্ড পাওয়া যায়। হঠাৎ করে কমে ২০২০ সালের পর মাত্র ৭০ টার মত সিড কম্পানি টিকে আছে। বেশির ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে বা অন্য কম্পানির সাথে সম্বন্বিত ভাবে ব্যবসা করছে। ভয়ের কথা এটাই যে, বর্তমানে মাত্র ৪ লিডিং কম্পানি সারা বিশ্বে ৫৬% বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করছে। মানে এদের যে কোন বিপর্জয় বা অপত্যাশিত কর্মকান্ড বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি ঘটাতে পারে।

সেই ৪টি কম্পানি হলো:
১. Bayer Crop Science (Germany): এরা প্রজনন চক্রকে কয়েক বছর থেকে মাত্র কয়েক মাসে নামিয়ে আনতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করছে। বায়োলজিক্যালী মডিফাই করে, বিভিন্ন টুলস এবং শস্য সম্পর্কিত কেমিক্যাল ইমপ্যাক্ট নিয়ে গবেষনা করে বীজ উৎপাদন করে।

২. Corteva Agriscience (USA) : এরাও বায়োলজিক্যালী মডিফাই করে এবং ট্রেডিশনাল বালায়নাশক পরিহারের বিষয়ে গবেষণা করে বীজে পরিবর্তন এনে বীজ উৎপাদন করে ।

৩. Syngenta Group (China/Switzerland): একটি সমন্বিত সমাধান মডেল (Integrated Solutions Model) ব্যবহার করে, ফসল সুরক্ষা এবং শস্যভিত্তিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের গবেষণা করে এবং বীজ বিক্রির সময় ঐ জিনিসগুলো প্যাকেজ আকারে যুক্ত করে।

৪. BASF SE (Germany): বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে BASF তাদের উন্নত রসায়নকে কৃষি বিজ্ঞানের সাথে একীভূত করে। তারা বীজের জীনম পরিবর্তন করে ও রোগ বালায় প্রতিরোধের উপর গবেষণা করে বীজ উন্নত করে।



এই কম্পানি গুলোর বাহ্যিক উদ্দেশ্য পড়লে মনে হবে, এরা তো মানুষের ভালোর জন্যেই কাজ করছে। কিন্তু ভেতরের গল্পটা ভিন্ন। যেমন:

ক) এরা অন্যান্য কম্পানিকে খেয়ে ফেলেছে, যার ফলাফল একছত্র আধিপত্য এবং সেটা কাজে লাগিয়ে বীজের দাম ৩০০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।
খ) এরা যে বীজ সরবরাহ করে, সেখান থেকে পরবর্তীতে উৎপাদিত ফসলের মাতৃবীজ পাওয়া যায় না। মানে প্রতি বছর ঐ কম্পানি থেকে আপনি বীজ কিনতে বাধ্য।
গ) এরা কম সময়ে ফসল পাওয়ার মত বীজ দিবে কিন্তু তাদের কম্পানির বালায় নাশক বা হরমোন ব্যবহার না করলে তা কার্যকরী হবে না। তাই তারা প্যাকেজ বীজ সুবিধা অফার করে। মানে কৃষকরা এক রকম জীম্মি হয়ে পড়ে।
ঘ) এরা পুষ্টি উপাদানে পরিবর্তন আনে। ফলে উৎপাদিত খাদ্য শষ্য দীর্ঘদিন ভক্ষনে দূরারোগ্য বাধী বাসা বাধে।
ঙ্) এরা বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন প্রজাতির ছত্রাক ও বিভিন্ন রোগবালাই নির্দিষ্ট ভূ=ভাগে ছড়িয়ে দেয় যাতে সেই সব সংক্রমন দমনে কৃষক তাদের কম্পানির কেমিক্যাল কিনতে বাধ্য হয়।
চ) এদের প্রচলিত টুলস ব্যবহার না করলে বীজের অঙ্কুরগম অনেক কমে যায়। ফসলের মান ভাল আসে না। মানে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়ে।
ছ) যেহেতু এদের বীজগুলো বেশির ভাগ GM (Genetically Modified) ফল, সবজি বা শষ্যদানার হয়, তাই ট্রেডিশনাল চাষাবাদ পদ্ধতি খুব একটা কাজে আসে না। কৃষককে নতুন পদ্ধতি বা টুলস বা অবস্থার সাথে নিজের ব্যবস্থাকে সম্বন্বয় ঘটাতে হয়।

এগুলো মোটা দাগের কথা। আরও বহু কিছু আছে যা আমি জানি না। অসংখ্য কম্পানি কেন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, হয়ত এখন একটু বুঝতে পারছেন। এরা একেক মহাদেশের জন্যে বা ভিন্ন ভিন্ন ফসলের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন প্রোডাক্ট তৈরী করে। কৃষক কে প্যাচে ফেলে কম্পানির প্রোডাক্ট বিক্রি করাই এদের ধান্দা। দেখুন ওদের টার্গেট কত বড়:




Grand Naine G9 কলা খেতে তো খুব মজা। এখন আবার লাল কালারের কলা বের হয়েছে। আমের স্বাদের কলার কথাও শুনেছি। বেশি করে খান। ক্যান্সারকে আমন্ত্রন জানান। বিচি কলা হল আদি কলা, যেটা খেলে গলগন্ড রোগ হয় না, পেট ও পায়খানার সমস্যা দূর হয়। গত ২০ বছরের মধ্যে কেউ বিচি কলা খেয়েছেন ? খাননি আমি নিশ্চিত।





আমরা যে গম বা চাল -ভুট্রা খাই সবই GM শস্য। ২০০০ সালের আগেও আটা বা চালে অনেক স্বাদ পাওয়া যেত, একটা আলাদা গন্ধ-বর্ন ছিল। এখন কিছুই নেই। আপনি আমি GM শস্য খেয়ে অসুস্থ্য হবো, আবার সেই ইউরোপ আমেরিকার উদ্ভাবিত ফর্মূলার বাংলাদেশী কম্পানীর ওষুধ খাব। আহা... ভাবতেই ভাল লাগে।

যাই হোক, শুরুতে যা বলতে চেয়েছিলাম, এই বৃহৎ ৪-৬টি কম্পানি যদি চায় বিশ্বকে অভুক্ত রাখবে, সেটা হাতে তুড়ি ফোটানোর মত সহজ ব্যাপার। আমাদের উচিত সরকারী ভাবে বীজ ব্যাঙ্ক গড়ে তোলা। বর্তমানে যেমন পেয়াজের বীজ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। ৪৫% দেশীয় বীজ দিয়ে মেটানো যাচ্ছে। একই ভাবে ধান গম সহ অন্যান্য ফসলের বীজ ব্যাঙ্ক বা সংরক্ষনাগার তৈরী করা দরকার। ভারত ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা বীজ মার্কেটেও ভাল ব্যবসা করছে। এছাড়াও ভারত ট্রেডিশনাল বা কনভেনশনাল উপায়ে বীজ সংরক্ষনের প্রশিক্ষণ দেয় কৃষকদের।

আমেরিকার ভুট্রা বা গম ভারত কিনবে না জানিয়ে দিয়েছে। কারন শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়, বায়োকেমিক্যাল ব্যাপারও হয়ত লুকিয়ে আছে।





রেফারেন্স লিঙ্ক:

Seed Market Size, Share, Growth Analysis 2034

Top 10 Leading Companies in the Seed Industry: A Look at Global Market Leaders in 2024

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৪৮

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বৃহৎ ৪-৬টি কম্পানি যদি চায় বিশ্বকে অভুক্ত রাখবে,
.....................................................................................
এসব উন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য
আমাদের দেশের কৃষিবিদরা নিজস্ব পন্হায় বীজ সংরক্ষন,উৎপাদন
করে আসছে ।
২/১ টি আইটেম ছাড়া আমাদের খামারীরা এখন আর বিদেশের দিকে
তাকায়ে থাকে না ।

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১২

অপলক বলেছেন: জ্বি ভাই, আমাদের কৃষকরা নিজেদের মত করে কিছু বীজ সংরক্ষণ করে থাকে যতটুকু সম্ভব। তবে তারাও আংশিক জিম্মা হয়ে আছে লোকাল কিছু সরকারী বেসরকারী সীড কম্পানীর কাছে।

আমার লেখার টাইটেল টা ছিল সারা বিশ্বকে নিয়ে। ইতি টেনেছি দেশে আমাদের অবস্থা নিয়ে। আপনি হয়ত জানবেন, প্রতি বছর ১.৩ - ২ মিলিয়ন টন চাল আমদানী করতে হয়। গম প্রায় ৬.৫ মিলিয়ন টন, ভুট্রা ১.৫-২মিলিয়ন টন। দানাদার গো খাদ্য সিংহভাগ আমদানি করতে হয়।

তাই রাশিয়া, ইউক্রেন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভারত, মিয়ানমার এসব দেশের খাদ্য শস্য ছাড়া আমাদের চলেই না। আর ওরা মুনাফা করতে ব্যবসায়ীক মনোভাব নিয়ে GM বীজ ব্যবহার করে। এবার একটু নতুন করে ভাবুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.