নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ছন্নছাড়া, মুক্ত ও বাস্তববাদী একজন মানুষ...

অতঃপর বাউন্ডুলে

অতঃপর বাউন্ডুলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুন্ঠিত মানবতা ও বিবেকের আত্মহত্যাঃ

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৪

গত রমযানের শেষের দিকের কোন এক সন্ধ্যায় ইফতারির পর পদ্মা গার্ডেনে বসে ছিলাম। তো রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি একজন রক্তের ডোনারকে কল দিয়ে ডলফিন ক্লিনিকের উদ্দ্যেশ্যে সেখান থেকে রওয়ানা দিলাম, সেখানে সাড়ে নয়টায় একজনের অপারেশন হবে। পথিমধ্যেই আমি লক্ষ্য করলাম মুন লাইট কনফারেন্স সেন্টারের সামনে একজন মানুষ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে এবং গড়াগড়ি করছে।



পাশে গিয়ে দেখি তিনি ছুরিকাঘাতে আহত, তার পুরো শার্ট রক্তাক্ত, তার রক্তের রঙে রাস্তা রাঙিয়ে গেছে। আশেপাশের উৎসুক জনতা তার এই পরিণতি দেখছে আর একটা করে বিরুপ মন্তব্য করে চলে যাচ্ছে। কারো মতে সে হিরোইন খোর, কারো মতে চোর, কারো মতে সন্ত্রাসী... কিন্তু, তার চিকিৎসার বিষয়ে কারো কোন মতামত নেই। আরে বাবা সে মাতাল হোক, চোর হোক আর সন্ত্রাসীই হোক...... এখন তো সে আমাদের সাহায্যপ্রার্থী। মানবতার প্রশ্নে তো সে আমাদের নিকট থেকে সাহায্য পাওয়ার অধিকার রাখে।



তাছাড়া যারা তার সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করছিলো, তাদের কয়েকজনকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে; তারা এই লোকটিকে চিনে নাকি.? কিন্তু কেউ বলেনি যে, আমি চিনি।



আমি দেখলাম প্রথম যিনি এগিয়ে আসলেন তিনি একজন মেয়ে, তারপর আমি, তারপর মুন লাইট থেকে বেরিয়ে আসা আরো একজন আপু ও তার ডাকাডাকিতে আরো একজন ছেলে। মজার বিষয় হলো; দুই পথ থেকে এগিয়ে আসা ঐ দুই আপু সেই অজ্ঞাত সেই আহত লোকটির চিকিৎসার জন্য যতটাই ব্যতিব্যস্ত হচ্ছিলেন, আমাদের বিবেকহীন এই সুশীল সমাজের সদস্যরা ততটাই পিছনে সরে যাচ্ছিলেন।



আমরা যখন তাকে মেডিকেলে পাঠানোর জন্য যখন অটো খুঁজছিলাম, তখন সেখানে ২০ জনের মত দাড়িয়ে থাকলেও কেউ একটা অটো ডেকে আনেনি। আমি অটো ডাকতে গিয়ে দেখি ঐ দুই আপুর একজন একটা অটো ডেকে নিয়ে আসছেন, আর ২০ জন পুরুষ হিজরা'র মতো সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। অটো আসার পরে তাকে ধরে অটোতে উঠানোর জন্য চারজনের দরকার, কিন্তু হাতে ধুলো ও রক্ত লেগে যাবে তাই কেউ ধরছিল না।



অবশেষে নাম না জানা ঐ দুই আপুর অনেক ডাকাডাকিতে আরো দুই জন এগিয়ে আসলে, আমরা চার জন মিলে তাকে ধরে অটোতে তুললাম, আর সাথে গেল আমাদের সাথের প্রথমের ঐ ভাই।



এর মিনিট পাঁচেক পরেই অবশ্য আমার কাছে কল এল যে রক্ত ক্লিনিকে নয়, মেডিকেলে দিতে হবে তাই আমি ডোনারকে নিয়ে মেডিকেলে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমি জরুরী বিভাগের জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম সেই ভাই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে টিকেট ও ফরম কিনে তা পূরন করে তার ভর্তি সম্পন্ন করল। আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানায় নাম না জানা সেই ভাই ও ঐ দুই আপুকে।

আজ যা করা উচিৎ ছিলো দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ২০ জন পুরুষের প্রত্যেকের, তা করল দুই জন মেয়ে...!

তাই মনে প্রশ্ন জাগে; আমাদের মধ্যকার মানবতা কি লুন্ঠন হয়ে গেছে...?

আমাদের বিবেক কি আত্মহত্যা করে ফেলেছে...?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৭

মোমেরমানুষ৭১ বলেছেন: নাম না জানা সেই দু আপু ও ভাইয়া কে অসংখ্য ধন্যবাদ সাথে আপনাকেও....। ধিক সেই কাপুরুষ হিজড়াদের

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

অতঃপর বাউন্ডুলে বলেছেন: স্বাগতম :)

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২

শায়মা বলেছেন: তোমার ও তাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ভাইয়া।


অনেক ভালো থেকো।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৮

অতঃপর বাউন্ডুলে বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। কারণ ঐ বিষয়ের মূল চরিত্রই ছিল আপনার মত ২ জন মেয়ে, কোন ছেলে নই! তাই নাম না জানা ঐ দুই আপুর জন্য সারাজীবন আমার কৃ্তজ্ঞতা থাকবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.