নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পল্লব রেজওয়ান

বাস্তববাদীতা আর ভাববাদীতার সিক্সটি-ফোরটি মিক্সচার

পল্লব রেজওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিকশাঅলা মজিদ মিয়া, সোবহান সাহেব, শাহেদ এবং অনন্যার গল্প

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০৬




মার্চের শুরু ।
গত ১০ বছর ধরে শীত থেকে গরমের শুরুর এই সময়টা পর্যন্ত মজিদ মিয়া ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছে । দুই-তিন মাস রিকশা চালিয়ে দেশে ফেরত যায় । ঢাকায় থাকে মোহাম্মাদপুরের টিনশেডে।

গেল বছর মজিদ মিয়া বিয়ে করেছে । বউ পোয়াতি । সে সারাদিন এর ওর মুখে ঢাকার কথা শোনে, এই গাড়িতে আগুন, ওই খানে মারামারি, আর দুশ্চিন্তা করে । ফোন করে বড় যন্ত্রণা করে, “আপনে চইলা আসেন । আমার ডর করে । ওই খানে খালি মারামারি অয়।”
মজিদ মিয়া আশ্বাস দেয়, “আরে বউ, কিছু অইবে না, আমি ১০ বছর থাইকা এই রিকশা চালাই । আমি বুঝি কখন কই ঝামেলা হইবার পারে । কিচ্ছু অইবনা। তুমি চিন্তা কইরনা। এইবার টাকা লইয়া বাড়িত আইসা, আর ঢাকায় যামু না। ”
বউ বুঝতে চায় না ।

মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করে । মজিদ মিয়া সবই বোঝে । কিন্তু উপায় নেই ।
মজিদ মিয়ার বাড়িটা বন্ধক হারু ব্যাপারীর কাছে । দুই বছর আগে মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক দেনা হয়েছিল । মা বাঁচে নি, বরং অনেক টাকা দেনা হয়ে গেছে । সেসব শোধ করতে যেয়ে বাড়ি, বাপের রেখে যাওয়া ১ বিঘা ধানী জমি বন্ধক রাখতে হয়েছিল।
আর কয়টা টাকা হলে সে সেসব ছাড়িয়ে আনতে পারবে ।
তাছাড়া মজিদ মিয়ার বোন রাজিয়া বানুর বিয়ের কথা চলছে । ছেলে ভালো । বাজারে মুদির দোকান আছে । বিয়েতেও তো খরচপাতি আছে । ছেলে একটা সাইকেল আর নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েছে । এটুকু তো করাই লাগবে ।
টাকা রোজকার করা মজিদ মিয়ার ভীষণ দরকার ।
এবারে সব রোজগার করে মজিদ মিয়া দেশে ফিরে যাবে । পোয়াতি বউয়ের পাশে থাকা দরকার । বোনের বিয়ে দিয়ে বাজারে নিজেও একটা দোকান দিবে ।

প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর সময় সে তার বাড়ির কথা ভাবে । পোয়াতি বউয়ের কথা ভাবে। আসন্ন বাচ্চা কিরকম হবে তার কথা ভাবে। তার দোকান কেমন হবে সেসব কথা ভাবে । বোনের বিয়ের কথা ভাবে ……। সামনের ভালো দিন গুলো ভাবলেই, আনন্দে মজিদ মিয়ার চোখে পানি চলে আসে । তার মনে হয়, জীবনটা অত খারাপ না তো !






সোবহান সাহেব সকালে বারডেম হাসপাতালে এসেছেন তার ডায়বেটিসটা দেখানোর জন্য । কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না । রাতে ভালো ঘুম হয় না । শেষ রাতে বারবার প্রসাবের বেগ হয় । প্রসাবে জ্বালাপোড়া করে । সোবহান সাহেব আজকাল চশমা দিয়েও চোখে কম দেখেন । ডায়বেটিসটা মনে হয় অনেক বেড়েছে ।
বয়স হয়ে গেলে মানুষ সংসারের বোঝা হয়ে যায়, সোবহান সাহেব সম্প্রতি এই ধারনায় থিতু হয়েছেন । তাঁর বয়স ৬৫ । সোবহান সাহেবের ধারনা তিনি তার পরিবারের বেশ ভারী এক বোঝায় পরিনত হয়েছেন । সোবহান সাহেব ছোট চাকরি করতেন । কিন্তু কখনও কারো কাছে হাত পাতেন নি । ঘুষ নেন নি । স্ত্রী মারা যাবার পর, আর বিয়ে করেননি । একাই তিন ছেলে এক মেয়েকে মানুষ করেছেন ।

সবার বড় মেয়েকে ভালো ঘর দেখে বিয়ে দিয়েছেন । মেয়ে আমেরিকায় স্বামীর সাথে আছে , প্রায়ই ফোন দেয় । বড় ছেলে- ছেলের বউ , দুজনেই ব্যাংকে অনেক বড় চাকরি করে।
জিগাতলায় আলাদা বাসা নিয়ে থাকে । ছেলের বউ শ্বশুরবাড়ির কাউকে দেখলে অজানা কোন কারনে বিরক্ত হয়! সচারচর কেউ ওই বাড়ীতে যায় না । বড় ছেলের সাথে সোবহান সাহেবের বছরে দুইবার দেখা হয় , দুই ঈদে ।

সোবহান সাহেব থাকেন মেজো ছেলের বাসায়, শান্তিনগরে ।
ছেলে ওয়ালটন গ্রুপে চাকরি করে । মেজো বউমা টিচার । দুই জনেই অতি ব্যস্ত থাকে। সোবহান সাহেবের অধিকাংশ সময়ই কাটে নাতনি টুকটুকির সাথে ।
টুকটুকি গত ডিসেম্বরে তিনে পা দিয়েছে ।

সোবহান সাহেবদের শান্তিনগরের বাসায় আরও দুই জন থাকে । তাঁর ছোট ছেলে শাহেদ । আর কাজের মেয়ে ফুলি ।
শাহেদ এবার সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে । এখন বেকার । সোবহান সাহেবের একটাই আফসোস ছোট ছেলেটি তাঁর বড় দুই ভাইয়ের এখনও নিজের পায়ে দাঁড়ালো না !

বারডেম এ আউটডোরে ১২৯ নম্বর রুম এর বাইরে দাঁড়িয়ে এসব কথাই ভাবছিলেন তিনি ।
ডায়বেটিস দেখানো হয়ে গেছে । এখন চোখ দেখাবেন । একটু পরেই তার সিরিয়াল ।








অনন্যার সাথে শাহেদের ছয় দিন আগে ছয় বছরের প্রেমের সমাপ্তি ঘটেছে । অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় অনন্যা ব্রেক আপ করেছে ।
অনন্যার অবশ্য তেমন একটা দোষ নেই । একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের সারাজীবন থাকার যেসব কারণ তৈরি করতে হয় তার কোনটাই শাহেদ গত ছয় বছরে তৈরি করতে পারেনি । অনন্যা যতটা রূপবতী গুনবতী, শাহেদ ঠিক তততাই গুণশূন্য মানুষ ।
শাহেদের ধারনা অনন্যা নিতান্ত নিখুঁত একটা ভালো মেয়ে বলে এত বছর তাদের রিলেশন টিকে ছিল ।

প্রায় এক বছর হতে চলল শাহেদের পড়াশোনা শেষ হওয়া । এখন পর্যন্ত সে বেকার । আর অনন্যা সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল থেকে ফাইনাল প্রফ দিয়েছে এবার । গত তিন বছর ধরে গণ্ডায় গণ্ডায় আসা বিয়ের প্রস্তাব সে একা সামাল দিয়েছে । বার বার একটাই কথা সে বাসায় বলেছে ফাইনাল পরীক্ষার আগে সে বিয়ে করবে না । এবার অনন্যার বাবা মেজর আসলাম সাহেব একেবারে উঠেপড়ে লেগেছেন মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য । অনন্যার মা একা জানতে চেয়েছেন, “সে কাউকে পছন্দ করে কিনা?”
অনন্যা জানে শাহেদকে তার পরিবার কিছুতেই মেনে নেবে না , তার উপর শাহেদ এখনও বেকার । সে কিছু বলেনি । চুপ করে থেকেছে ।
অনন্যা শাহেদকে নিজের চেয়েও বেশী চিনত বলে তার ধারনা । শাহেদ কোন কথার পর কোন কথা বলবে, কি শুনলে কি রিঅ্যাকশন দেখাবে, কি তার ভালো লাগে, কি খারাপ সবই সে জানে ।
শাহেদের স্বভাব হাল ছেড়ে দেয়া ।
সে এখন গা ছেড়ে দিয়েছে । কোন কিছুই তার গায়ে লাগে না ।
অনন্যার জন্য তার কোন চিন্তা নেই ।
অনন্যাকে হারানোরও যেন কোন ভয় নেই তার ।
কোন কিছু করার ইচ্ছা নেই ।
সব কিছুর দায়িত্ব যেন অনন্যার একার! বিরক্তের চূড়ান্তে উপনিত হয়ে অনন্যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর না ।

এমনকি শাহেদকে যখন সে বলেছে, “তোমার আমার রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না । আমি আর পারছি না । আর কত । তুমি কিছুই করছনা । কিছু করার আগ্রহ পর্যন্ত নেই । যে ছেলের উপর ভরসাই করা যায় না, তার সাথে সারা জীবন থাকা অর্থহীন।”

শাহেদ তখন তাকে অবাক করে শান্ত স্বরে বলেছে, “আমারও তাই মনে হয় । অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম এই কথা গুলো তোমাকে বলব।”

যে ছেলে দায়িত্ব নিয়ে পারে না, তার সাথে সারা জীবন থাকার কোন মানে হয় !!!







এদেশে টাকা নয়ত লিংক ছাড়া এখন কোন চাকরি জোটে না । শাহেদ একটা স্টুডেন্ট পড়াত। গত মাস থেকে সেটাও বন্ধ । সিগারেট খাবার টাকা পর্যন্ত মেজো ভাবীর কাছ থেকে চেয়ে নিতে হচ্ছে ।
মারফিস ল’ বলে একটা কথা আছে, যখন কোন কিছু খারাপ যেতে থাকে তখন সবই খারাপ যায় । শাহেদের হয়েছে এখন সেই দশা । এখন সকাল দশটার মত বাজে । সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটে গেছে ।

মেজো ভাবী সকালে শাহেদকে ঘুম থেকে তুলে বলেছেন, “শাহেদ, তুমি কি জানো তোমার বাবা কোথায় গেছেন?’
-“না । কেন, কি হয়েছে?”
-“কিছু মনে করো না। তোমাকে কিছু কথা ফ্রাঙ্কলি বলা দরকার।”
-“হুম, বল ভাবী । এত ভনিতা করছ কেন?”
-“টি-টেবিলে ১৫ হাজার টাকার একটা বাণ্ডিল রাখা ছিল সেটা সকাল থেকে নেই । তোমার বাবাও নেই।”
-“ভাবী!!! কি বলছ এসব??? মাথা ঠিক আছে তোমার?”
-“আমার মাথা ঠিকই আছে। গত মাসেও উনি না বলে তোমার ভাইয়ার আলমারি থেকে চার হাজার টাকা বের করে তোমার ছোট চাচাকে বিকাশ করে পাঠিয়েছে । পরে তোমার ছোটচাচা আমাকে ফোন করে টাকার কথা বলে ধন্যবাদ দেয়। আমি তো অবাক । পরে ব্যাপারটা বুঝলাম । তাও তোমার বাবা আমাকে কিছু বলেনি।”
-“হয়ত ভুলে গেছে। বয়স হয়েছে। ভুলে যেতে পারে না? হয়ত ছোট চাচার কোন দরকার ছিল...।।”
-“এখন প্লিজ বোলো না, চাচার পরিবারকেও আমাদের টানতে হবে! এম্নিতেও তোমাদের বিনা বাক্যে টেনে যাচ্ছি। কই তোমার বড় ভাই-ভাবী তো ঘুরেও তাকায় না কখনও। কত টাকা পায় তোমার মেজোভাই!! সব দায়িত্ব কি আমার ...”

দুমদাম কথা গুলো বলে মেজো ভাবী গটগট করে হেটে চলে গেল ।
অন্যকেউ এই মুহূর্তে এই বাসা ছেড়ে বের হয়ে চলে যেত । শাহেদ বেকার বলে সেটা সম্ভব না । বেকাররা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে না । বেকারদের হতে হয় গণ্ডারের চামড়া ।
শাহেদের রাগ হচ্ছে প্রচণ্ড । ভাবীর উপরে না । তার নিজের উপরে !!






মজিদ মিয়ার মন আজ বেজায় খারাপ ।
বউ এর সাথে সকালে ফোনে হয়েছে । বউ কান্নাকাটি করেছে । সে নাকি মজিদ মিয়াকে নিয়ে কি সব বাজে খোয়াব দেখেছে ।
মজিদ মিয়া বউকে সান্ত্বনা দিয়েছে । বলেছে, কিচ্ছু হবেনা । বউয়ের একই কথা, “আপনে চইলা আসেন।”

মজিদ মিয়ার মনটা সেই তখন থেকে ভারী হয়ে আছে ।
রিকশা নিয়ে বের হবার আগে ঘরের কোনায় রাখা কাঠের যে কৌটাটার মধ্যে মজিদ মিয়া টাকা রাখে সেটা খুলে টাকা গুনে দেখেছে । মোট চৌত্রিশ হাজার সাতশ উনিশ টাকা । আর কিছু টাকা হলেই মজিদ মিয়া বাড়ি ফেরত যাবে ।

আজ মোটামুটি ভালোই ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে । ঢাকায় বিএনপির অবরোধ চলছে । অবরোধ- হরতালে বড়লোকরা ভয়ে রাস্তায় গাড়ি বের করে না । তখন ভি আই পি রাস্তাতেও রিকশা চালানো যায় । আনসাররা কোন যন্ত্রণা দেয় না । ট্রাফিক পুলিশকেও কোন টাকা দিতে হয় না । এদিক থেকে ঢাকায় হরতাল- অবরোধ রিকশাঅলাদের জন্য ভালোই ।

মজিদ মিয়া আজ অনেক রাত পর্যন্ত রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নিলো ।





শাহেদ সকালে কিছুই খায় নি । অথচ খিদে নেই । ভাবীর কথাগুলো হজম করতে সম্ভবত আরও সময় লাগবে ।
সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে প্রচণ্ড । মানিব্যাগ ঘেঁটে ১০০ টাকার একটা নোট পেল । নিচে গিয়ে বাবুলের দোকানে সিগারেট খাওয়া যায় ।
শাহেদের অনন্যার কথা মনে পড়ছে খুব । যতই পড়ুক, অনন্যাকে সে আর ফোন দিবে না । তার জীবনের সাথে অনন্যাকে জড়ানোর কোন মানেই হয় না । কত সুন্দর একটা জীবন হতে পারে মেয়েটার !
সিগারেট ধরানোর সাথে সাথেই অনন্যার ফোন।
মাত্র ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের কথা, “মনোযোগ দিয়ে শোন । আমি রাগ করে তোমার সাথে ব্রেকআপ করেছিলাম । তোমাকে ছাড়া আমার থাকা কোনদিনই সম্ভব না ।
গত পরশু আমাকে এক আর্মি অফিসার দেখতে এসেই পছন্দ করেছে । এখন সে আমাকে বিয়ে করতে চায় । বাবা এক রকম ইমোশোনালি ব্ল্যাকমেইল করেই আমার বিয়ে দিচ্ছে । সেই ছেলে কি একটা কোর্স করতে লন্ডন যাবে, হাতে সময় কম বলে দ্রুত বিয়ে করে সাথে করে বউ নিয়ে যেতে চায় । আমার কাছে কোন ফোন ছিলনা দুই দিন ধরেই । আজ সন্ধ্যায় বিয়ে । কিছু একটা করো। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
অনন্যা একটানা একনিঃশ্বাসে কথা গুলো বলেই ফোন রেখে দিলো ।

আমিও তোমাকে ভালোবাসি অনন্যা, কিন্তু আমার কিছুই করার নেই……।।
বিড়বিড় করে বলা গুলো বাতাসেই যেন হারিয়ে গেল …।






ডাক্তারের ঘর থেকে বের হতেই সোবহান সাহেবের শরীর একদম ভালো হয়ে গেল । কি ভালো ডাক্তারটার ব্যবহার! মাসাল্লাহ , কোন মা-বাবাই না মানুষ করেছে !
গতবার সোবহান সাহেবকে যে ডাক্তার দেখেছিল সে ছিল একটা আস্ত ছোটলোক । মানুষের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলাই শেখেনি, ডাক্তার হয়ে বসে আছে ।

হাসপাতালের বাইরে বের হয়ে সোবহান সাহেব দেখলেন একদম ঝকঝকে রোদ উঠেছে । ওষুধ কেনার পর বাঁচল মাত্র একুশ টাকা । কাছে টাকা থাকলে রিকশায় ঘরে ফেরা যেত । অবরোধের মধ্যেও এখন বাসে ফিরতে হবে । কি আর করা !





মজিদ মিয়া মৎস্যভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়ি টানছিল । সকাল থেকে মোটামুটি ভালোই কামাই হয়েছে ।
চা-সিগারেটের দোকানে এখন বেশীরভাগ সময়েই রাজনীতি নিয়ে কথা হয় । মজিদ মিয়া রাজনীতি তেমন একটা বোঝে না । শুধু এতটুকু বোঝে আওয়ামিলীগ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, আর বিএনপি এসব হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে ।

সাত- পাঁচ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ শব্দ । মজিদ মিয়ার কয়েক হাত দুরেই একটা বাসে কে বা কারা পেট্রোল বোমা ছুড়ে মেরেছে ।

মুহূর্তের মধ্যেই বাসে আগুন ধরে গেলো । প্রায় সব যাত্রীই বের হয়ে এলো । তাদের মধ্যে এক জনের অবস্থা খারাপ । বৃদ্ধ করে একজনের ।
কমপক্ষে একশো জন মানুষ দূর থেকে দেখছে । কিন্তু কেউ আগাচ্ছে না । কেউই ঝামেলা নিতে চায়না ।

কালো খাটো মতন একজনকে দেখা গেল এগিয়ে যেতে । সে আমাদের গল্পের মফিজ মিয়া !




মজিদ মিয়া তার রিকশায় করে বৃদ্ধ মানুষটিকে ঢাকা মেডিক্যাল এ নিতেই পুলিশ মজিদ মিয়াকে ধরে ফেলল ।

ওসি ইকবাল উপর থেকে প্রেসারের উপর আছেন কয়দিন ধরেই । একের পর এক গাড়িতে আগুন দিয়ে যাচ্ছে অথচ পুলিশ কাউকে ধরতে পারছে না । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির কড়া নির্দেশ এবার যাকে পাবেন, ধরুন, তারপর বিএনপির বলে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসুন ।

একটু আগে মজিদ নামের একজন কে আটক করা হয়েছে । সে বলেছে সে কোন দল করে না, সে রিকশা চালায় । রাস্তা থেকে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে ।
ওসি ইকবালের মনে হয় না মজিদ মিয়া মিথ্যা বলছে । কিন্তু কিছুই করার নেই ।

বৃদ্ধের নাম জানা গেছে, আব্দুস সোবহান । একটা ফোন নাম্বার ও পাওয়া গেছে ।

ওসি সাহেব সেকেন্ড অফিসারকে ডেকে বললেন, “মজিদকে থানায় নিয়ে হালকা ডলা দাও, মজিদ মিয়া হালকা ডলা খেলেই নিজেকে বিএনপির কর্মী বলে স্মীকার করবে।”
মজিদ মিয়া ওসির পা চেপে ধরল , “স্যার আমারে ছাইড়া দেন । মাপ কইরা দেন স্যার । আজই বাড়িত চইলা যামু।”
ওসি সেকেন্ড অফিসারকে বললেন, “দেখেন তো, এর কাছে কি কি আছে?”
সেকেন্ড অফিসার চেক করে বললেন, স্যার একটা ফোন আর সাড়ে চারশোর মত টাকা”
ওসি সাহেব নির্বিকার গলায় বললেন, “ তিনশো আমাকে দিয়ে বাকিটা আপনি নিয়ে যান । সিগারেট খাবো ভাংতি টাকা নাই । আর এইটারে ভালো মতন ডলা দিয়ে নিয়ে আসেন । যান।”

ওসি সাহেবের অনেক কাজ সারা ঢাকায় সকাল থেকে এরই মধ্যে ৪ টা বাস এ আগুন দেয়া হয়েছে । সেগুলোর মধ্যে তার থানাতেই ২ টা । সেগুলো রাস্তা থেকে সরাতে হবে । ওই বৃদ্ধের বাড়িতেও ফোন দেয়া দরকার । মানুষ হিসেবে এটা তার দায়িত্ত ।




১০

মেজো ভাবী একটু আগে তার পনের হাজার টাকা খুঁজে পেয়েছেন । আলমারির নিচে পড়ে ছিল ।
শাহেদ একটা শার্ট গায়ে চাপিয়ে অনন্যার বাসায় যাবার সিদ্ধান্ত নিলো । সে অনন্যাকে ভালবাসে । এত সহজে সে ভালবাসাকে হারিয়ে যেতে দেবার কোন মানে নেই ।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় তার একটা ফোন আসলো । অপরিচিত নাম্বার । সে ও প্রান্তে যা শুনল তাতে দম বন্ধ হয়ে যাবার মত অবস্থা হল ।

শাহেদ সিদ্ধান্ত বদলিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল বার্ন ইউনিট এর দিকে রওনা হল ।
শাহেদের কপালে আসলে অনন্যা নেই ।




পরিশিষ্টঃ


রাত বেশী হয় নি । নয়টার মত বাজে ।
অথচ শাহেদের কাছে মনে হচ্ছে অনেক রাত ।
একটু আগে শাহেদের বাবা সোবহান সাহেব মারা গেছেন । যে মানুষটা নিজের জীবনের দিকে না তাকিয়ে , নিজে একটা মাথা গোঁজার ঠিকানা না করে সন্তানদের মানুষ করেছেন, তিনি আজ শেষ ঠিকানায় চলে গেছেন ।
শাহেদ এই খবরটা কাউকে জানাতেও পারছে না । কারণ তার কাছে কোন টাকা নেই। ফোনেও কোন টাকা নেই । কোন একজনের ফোন থেকে বড় ভাই আর মেজো ভাইকে ফোন দিতে হবে ।
শাহেদের বুক ফেটে কান্না আসছে । হু হু করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে ।
শাহেদের কেন জানি মনে হচ্ছে অনন্যা আসে পাশেই কোথাও আছে । এই বুঝি এসে শাহেদকে জড়িয়ে ধরে বলবে, “আমি কথাও যাবো না। আমার ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদো।”
অনন্যার আজ বিয়ে । শাহেদ কখনওই বাবাকে যেমন পাবে না । অনন্যাকেও তেমন পাবে না ।
তার ই তো আজ কাঁদার দিন !

শাহেদ কলিডরে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো ।
আসে পাশে দূর থেকে অন্যান্য রোগীর লোকজনরা মনেই অজান্তেই বলল, “আহারে!”

ভেজা ঝাপসা চোখে শাহেদ দেখল গোলাপি বিয়ের শাড়ি পরা অনন্যা এগিয়ে আসছে। ধীর পায়ে ।
কোথা থেকে খবর পেল কে জানে!




মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

আসিফ হোসেন বলেছেন: keep it up bro (Y) B:-/

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০২

পল্লব রেজওয়ান বলেছেন: thanQ bro :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.