নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার আজকে মেজাজ খুব খারাপ। অফিসে দীর্ঘ সময় মিটিং করতে হয়েছে। আগামী কয়েকদিনও করতে হবে। ইয়ারলি বাজেটের মিটিং বলে কথা। কোটি কোটি টাকার ব্যাপার। চুলচেরা বিশ্লেষণ, তর্ক-বিতর্ক চলছে, চলবে। সব হিসাব হবে রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট এর ওপর। টাকা খরচ করো, সমস্যা নাই, কিন্তু একশত টাকা খরচ করলে পাঁচশত টাকা ফেরত আসবে তো? সেই নিশ্চয়তা দিয়ে তবেই খরচ করা যাবে। তা সে একশত টাকা হোক বা দশ লক্ষ টাকা হোক।
মিটিংয়ে আমার কোন আইডিয়া যদি গৃহীত হত তাও একটা কথা ছিলো। তাহলে ফুরফুরে মনেই অফিস থেকে বের হতে পারতাম। কিন্তু আমার কোন আইডিয়াই ধোপে টেকে নি। আমি বলেছিলাম পত্রিকায় আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেবার কথা। ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ সেটা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। সিইও মোসাদ্দেক সাহেব চশমাটা শেয়াল পণ্ডিতের মত চোখ থেকে নাকের দিকে কিছুটা নামিয়ে এক অবজ্ঞাসূচক কোণ থেকে ভ্রু নাচিয়ে বললেন,
-ফিজিকাল মার্কেটিংয়ের কি সেই যুগ আছে হাসান সাহেব? লাখ লাখ টাকা খরচ হবে, কিন্তু রিটার্ন আসবে না। চিন্তাভাবনা আপগ্রেড করা কবে শিখবেন? থিংক ডিফারেন্ট। থিংক স্মার্ট।
আমাকে অপ্রস্তুত করাতে তাকে বেশ প্রসন্ন মনে হলো। চারিপাশ থেকে সম্মতির কদর্য ঐকতান উঠলো। তারপরের দুই ঘন্টা আমি আর কোন কথা বললাম না। আমার নীরবতায় ইমিডিয়েট বস বিরক্ত হলেন।
-কী হাসান সাহেব, খালি চুপ করে বসে থাকলে হবে? সবাই মিনিংফুল কন্ট্রিবিউশন না করলে তো মিটিং করা অর্থহীন।
আমার ঝিমুনি লাগছিলো। কোথাও গিয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে ঘুমানো যায় কি না ভাবছিলাম। এই মুহূর্তে মিটিংয়ে মিনিংফুল কন্ট্রিবিউশন করা আমার জন্যে অসম্ভব। মরিয়া হয়ে ফোনটা হাঁটুর ওপর রেখে মার্কেটিং আইডিয়া গুগল করতে লাগলাম। দুঃখের ব্যাপার হলো, সেসব আইডিয়া বেশিরভাগই কেউ না কেউ বলে দিয়েছে। আমার জন্যে কিছু বাকি নেই। এদিকে লাঞ্চের বিরতির আগে কিছু একটা না বললে মান ইজ্জত থাকে না। যা আছে কপালে ভেবে নিয়ে অবশেষে আমি বলেই ফেললাম,
-একটা থিম সং বানালে কেমন হয়?
এবার রসিয়ে রসিয়ে বিরোধীতা করলো একজন বাকপটু জুনিয়র। সে বললো,
-হাসান ভাই, আমরা ব্যবসা করবো নাকি গান বাজনা করে সময় অতিবাহিত করবো? একটা গান বানানো কি সোজা কথা? গীতিকার, সুরকার, কম্পোজারদের ম্যানেজ করার পর আবার মিউজিক ভিডিওর জন্যে বাজেট লাগবে। বাস্তবসম্মত কিছু বললে ভালো হয় না?
সিইও এবার নিজের কর্তৃত্ব জাহির করলেন-
-গান বানাতে যে খরচ হবে তা কি উঠে আসবে? ROI পজিটিভ থাকবে? যদি আপনি কনফিডেন্ট থাকেন, তাহলে লাখ পাঁচেক টাকা দেয়া যায়। কিন্তু এটার রিটার্নের দায় দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। নিবেন সেটা?
আমার আমতা আমতা নীরবতার মাধ্যমে অসম্মতি প্রকাশ পেলে মিটিং তখনকার মত মূলতবী ঘোষণা করা হয়। লাঞ্চের পরে আবার বসা হবে।
বাকি সময়টা আমি হ্যাঁ হু করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিলাম, আর নিজের নিরেট মাথাটাকে আইডিয়াহীনতার কারণে দোষারোপ করতে লাগলাম। অবশেষে মিটিং সেদিনের মত শেষ হলে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে বাসে উঠে বসলাম। আমার গন্তব্য মতিঝিল থেকে মিরপুর।
শাহবাগ পর্যন্ত এসে আমার পেটে তরল পদার্থ অস্বস্তির বার্তা দিতে লাগলো। প্রস্রাব করতে পারলে ভালো হত। শাহবাগের জ্যামে বাস কতক্ষণ আটকা থাকে কে জানে! নেমে পড়বো না কি? অনেক কষ্ট করে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত চেপে বসে থাকলাম। কলাবাগান আসার পর আমার মনে হলো, নাহ নেমেই যাই!
কিন্তু কথা হচ্ছে, এখন নেমে গিয়ে আমার লাভ কী? প্রচুর পানি পান করেছি, এর রিটার্ন হিসেবে পাচ্ছি পেচ্ছাপ। কিন্তু পেচ্ছাপটাকে একটা বিনিয়োগে পরিণত করলে ভালো হয় না? আমাদের বংশে ডায়াবেটিসের প্রকোপ আছে। আমার বয়সও চল্লিশ পেরিয়েছে। রক্ত আর পেচ্ছাপ টেস্ট করে ফেলার কথা বাসা থেকে বলছে অনেকদিন। এখন আমার পেটভর্তি পেচ্ছাপ। সেটা কেন খামোখা কোন ল্যাম্পপোস্টের নিচে অথবা ড্রেনের ধারে বিসর্জন দেবো? পাশেই অনেকগুলি হাসপাতাল আছে। কিন্তু ধানমন্ডি এলাকার হাসপাতালে সম্ভবত এসব পরীক্ষার জন্যে চার্জ বেশি রাখে। আমাকে মিরপুরের ডেল্টা হাসপাতাল থেকেই টেস্ট করতে হবে। ওখানে চেনাজানা ডাক্তার আছে। চার্জ কম রাখবে।
আমি পেরিয়ে যাই শ্যামলী, কল্যাণপুর পেটের মধ্যে সমুদ্র নিয়ে। দারুসসালামে বসে অযথাই কন্ডাক্টরের সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দেই। ডেল্টা হাসপাতাল আর কতদূর!
অবশেষে ডেল্টা হাসপাতালের সামনে বাস থামে। আমি পড়িমড়ি করে কয়েকজনের পা মাড়িয়ে দিয়ে বাস থেকে নামি।
হাসপাতালের রিসিপশন থেকে বিল পরিশোধ করে টেস্টের কাগজপত্র নিয়ে স্যাম্পল কালেকশন বুথে গিয়ে জানতে পারি যে খালিপেটে আসতে হবে রক্ত আর পেচ্ছাপ দেয়ার জন্যে। এদিকে আমি দুপুরে ভরপুট খেয়েছি বিরিয়ানি। অর্থাৎ আমাকে আবার কাল সকালে আসতে হবে।
আমি রেগেমেগে কাউন্টারে গিয়ে বচসা শুরু করলাম। বললাম যে ভরাপেটে পেচ্ছাপ দেয়া যায় এমন কোন টেস্ট থাকলে দিতে। কিন্তু তারা আমাকে এ ব্যাপারে তৎক্ষনাৎ সহযোগিতা করতে পারলো না। বললো ডাক্তার দেখিয়ে আসতে। আমি প্রতিবাদস্বরূপ তাদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলাম। ওদের হাসপাতালে আমি মূত্র বিসর্জন দিবো না। কালকে যখন খালি পেটে, প্রচুর পানি খেয়ে আসবো, তখন দেখা যাবে অখন।
পাড়ায় ঢোকার মুখের ড্রেনটাতে আমি বিষণ্ণ মনে জলত্যাগ করছি। পেচ্ছাপের ঝিরিঝিরি ধারায় ঐ ভেসে যায় আমার জীবনের সকল ইনভেস্টমেন্ট! আমি বিষণ্ণ মনে ঢিলা কুলুখ করার জন্যে ইটের টুকরা খুঁজতে থাকি।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: হাসছেন যখন তাইলে ঠিক আছে।
২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:২৯
ঈশান মাহমুদ বলেছেন: আসলেই নিয়োগ-বিনিয়োগে নয়, 'ত্যাগে'ই শান্তি।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: যথার্থ বলেছেন।
৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫৮
আহমেদ জী এস বলেছেন: হাসান মাহবুব,
হা....হা.... সেই তো মূত্র ত্যাগ করলেনই, তবে এতো কষ্ট করে টেনে আনলেন কেন মতিঝিল থেকে মিরপুরের ড্রেনে ?
চল্লিশ বছরে যা যা ত্যাগ করেছেন তার ভেতরে এই মূত্রত্যাগের মতো আনন্দ আর কোথাও পেয়েছেন ? মনে হয় না! সকল ত্যাগই কষ্টের কেবল মলমূত্র ত্যাগ ছাড়া।
পেচ্ছাপের ঝিরিঝিরি শব্দে নয় ঝরঝর শব্দেই গল্পটি ছয়লাব।+++++
১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ জী এস ভাই। শুভেচ্ছা রইলো।
৪| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩১
অপু তানভীর বলেছেন: গল্পেই না বাস্তবেও জীবনের সব ইনভেস্টমেন্ট সব জলে গেছে । সামনে যে আবার ইনভেস্ট করবো তার যে রিচার্ন আসবে সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই । সব নেগেটিভ !
গল্প ভাল লেগেছে !
১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ অপু।
শুভেচ্ছা রইলো।
৫| ১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: শাহবাগ থেকে সাঃল্যাব যাওয়ার পথে অন্তত তিনটা মসজিদ পরে। রিকশা থামিয়ে পিশাব করে নিলেই তো হতো। তাছাড়া রাস্তার দুইপাশে মার্কেট এঁর অভাব নেই। বিনা কারনে কষ্ট!!!!
১৯ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠের জন্যে।
৬| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৫
আমি তুমি আমরা বলেছেন: ভেবেছিলাম মিটিং-এই গল্প শেষ হবে। যেভাবে শেষ করেছেন-বেশ ভাল লেগেছে।
২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ আমি তুমি আমরা।
ভালো থাকবেন।
৭| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৩:০০
সোহানী বলেছেন: এরকম ক্যাচর ম্যাচর মিটিং মানে নিজেকে জাহির করার কৈাশল, বসকে তেল দেবার প্রতিযোগিতা, ছাপোষা জাহির সাহেবকে বাঁষ দেয়া। চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এরকম একটি আবহ।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০২
হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ সোহানী। ভালো থাকবেন।
৮| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৭
সাসুম বলেছেন: আপনার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবার আইডিয়া টা জোস। আপনার প্রোডাক্ট যাদের কাছে দরকারী তারা পত্রিকার গ্রাহক। আসলে সেটা ডাইরেক্ট না বরং ইন্ডাইরেক্ট। ধরুন- বাবা মা পড়ল আর বিজ্ঞাপন দেখে ইন্টারেস্টেড হল। কিংবা ছোট বাচ্চা মানে যাদের কাছে আপনার প্রোডাক্ট চলে তারাও পড়তে পারে।
এই যায়গায় একটা ক্যাচ আছে। আপনার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন চলার কথা। সেজন্য বাজেট টা একটু বড় করতে হবে এই আর কি। পুয়ালু, বসুন্ধরা কণ্ঠ , বাবুলান্তর , নৈম প্রতিদিন - সব গুলা পত্রিকা টার্গেট করে সাথে মফঃস্বল এরিয়ার লোকালাইজেশান টার্গেট করে যদি মার্কেটিং করা যায় বেশ ভাল আর ও আই আসার কথা।
তবে আপনার এই আর ও আই আনার জন্য বেস্ট উপায় হবে ছাড় দেয়া বা কূপন দেয়া।
মানে সিস্টেম টা এমনঃ
ধরেন আপনি বিজ্ঞাপনে লিখলেন ২৫% ছাড় যদি এই বিজ্ঞাপন টা কেটে ফিজিকাল দোকানে নিয়ে যায়।
৩০% ছাড় যদি এই বিজ্ঞাপনের ছবি আপ্লোড করে আপনার ওয়েবসাইট থেকে বা ফেবু পেইজ থেকে অর্ডার করে।
১৫% ছাড় যদি রকমারি বা দারাজ থেকে একটা স্পেসিফিক কোড ইউজ করে অর্ডার করলে ( সেই কোড টা দিয়ে দিবেন বিজ্ঞাপনে )
আর সাথে ক্যাশব্যাক করবেন এক্সট্রা ৫% যদি কেউ ফেসবুকে একটা রিভিউ দেয় কেনার পর। ( বিকাশ বা মোবাইল লোড হিসেবে )
আপনি আপনার সি ই ওর যায়গায় হলে- আপনার আইডীয়া টেক করে সেটাকে রিডিফাইন করে এভাবে এক্সিকিউট করতে বুদ্ধি দিতাম।
কারন দুনিয়া যতই ডিজিটাল হোক, বাংগুস্তান এখনো এনালগ আছে। ঢাকা মেট্রো ব্যবসায় শেষ কথা না। পত্রিকা স্টিল বেশ বড় যায়গা বিজ্ঞাপনের ।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৩৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভুল জায়গায় কমেন্ট করে ফেলেছেন মনে হচ্ছে।
৯| ২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৫
মিরোরডডল বলেছেন:
অনুগল্প ??? এতো বড় !
গল্প ভালো লেগেছে
২৪ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৭
হাসান মাহবুব বলেছেন: আসলে মোবাইলে লিখে ফেলেছি তো, তাই এটাকে খুব বেশি বড় মনে হয় নি। তবে কিছুটা বড় হয়েছে বটে অণুগল্পের তুলনায়।
ধন্যবাদ মিরোরডডল।
১০| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:৩৩
সাজিদ! বলেছেন: বেশ তো। মজা পেলাম পড়ে।
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ সাজিদ!
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৯
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাবছিলাম পেচ্ছাপ না জানি আবার বিপনের চিন্তা লেখকের সবশেষে এই করুন ত্যাগে বড্ড হাসিই পেল।