নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুর!

বিকট

হাসান মাহবুব

আমার অপদার্থতাকে মাহাত্ম্য ভেবোনা...

হাসান মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বরিশাইল্যা হুজুর আর বিহারী নাপিতের কথোপকথন, এবং জীবনের আয়রনি

২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৫১


সেলুনে গিয়েছিলাম ছেলেকে নিয়ে। উদ্দেশ্য, তার চুল কাটানো এবং আমার শেভ করা। যদিও দুজনের চুলই যথেষ্ট বড় হয়েছিলো, কিন্তু চুল বিষয়ে বাপ-ব্যাটার দর্শন আলাদা। রুহিন চুল একটু বড় হলেই অস্থির হয়ে যায়, আর আমি চুল সহজে কাটাতে চাই না। কিন্তু চেয়ারে বসার পর বিহারী বাকপটু নাপিত কীভাবে কীভাবে যেন আমাকে চুল কাটতে প্ররোচিত করে ফেললো। তার কথা হচ্ছে, আমি লম্বা মানুষ, মাথাটা বড়, চুল বড় রাখলে আরো বড় বড় লাগে ইত্যাদি। খুব কনভিন্সিং যুক্তি না যদিও, তবুও রাজী হয়ে গেলাম।

নাপিতটা টিপিক্যাল বিহারী নাপিতদের মতই। প্রচুর কথা বলে, আর গান শোনে। সে ছেড়ে দিয়েছিলো উর্দু ইসলামিক গান। গানের কথা তেমন বুঝি নি, তবে বোঝা যাচ্ছিলো আল্লাহ’র প্রশংসা জাতীয় কিছু। সে তো একদম ভক্তিতে গদগদ! গানের তালে প্রায় দুলে দুলে চুল কাটছে। এর মধ্যে এলেন হুজুর চেহারার একজন বয়স্ক লোক। খাঁটি ইসলামিক লেবাসের একজন বরিশাইল্যা। কথা কম বলেন। নাপিতের কথায় হ্যাঁ হু করছেন। এদিকে নাপিত তখন আবেগের নাইনথ ক্লাউডে! ভক্তির চরম শিখরে! এই সময়ে সে লেবাসধারী বরিশাইল্যা হুজুরকে পেয়ে তো খুবই আহ্লাদিত। সে চিন্তাভাবনা করে হুজুর খুশি হবেন এমন লাইনে কথা চালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করলো-
-বলেন তো হুজুর সবচেয়ে বড় ধর্ম কী?

উত্তর আমাদের সবারই প্রত্যাশিত। যেহেতু প্রশ্নটা করা হয়েছে একজন হুজুর লেবাসধারী ব্যক্তিকে। কিন্তু তিনি উত্তর দিতে তেমন একটা উৎসাহিত নন। বিহারী নাপিত আবারও জিজ্ঞাসা করলো,
-বলেন না হুজুর সবচেয়ে বড় ধর্ম কোনটা?
হুজুর এবার অনুত্তেজিত কন্ঠে উত্তর দিলেন,
-ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবা না। তুমি সবার চেয়ে বড় এমন অহংকার করা ভালো না।

বিহারী নাপিত কিছুটা দমে গেলো। কিন্তু সেও হাল ছাড়ার পাত্র না। বললো,
-যেটা সত্যি, সেইটা কি চাপা থাকে? এই যে আপনি আমার চেয়ে বয়সে বড়। এটা তো না বললেও সবাই জানে। তেমনই মুসলমানের ধর্ম সবচেয়ে বড় আর সেরা এই কথাও সবাই জানে। না কি হুজুর?

কিন্তু হুজুরকে মোটেও টলানো গেলো না। তিনি নিজের ধর্মকে অবশ্যই ভালোবাসেন, এতে কোন সন্দেহ নেই, তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে উচ্চবাচ্য করার মত মানুষ তিনি না। কিছুক্ষণ নাপিতের সাথে টুকরো টুকরো কথাবার্তা চালিয়ে নিজের কথা বলার সংকোচ কাটিয়ে এবার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলেন,
-আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গেলো। তখন আমার বয়স কম। যাত্রাবাড়ীতে এক হোটেলে খাইতে গেলাম। হিন্দুর হোটেল। খুবই বাজে খাবারের কোয়ালিটি। ঠিক করলাম যে আর জীবনেও হিন্দুর হোটেলে খাবো না। তার পরের দিন, আমি এক জায়গায় বেড়াইতে যাবো। মিষ্টি কেনা দরকার। মিষ্টি কিনলাম এক দোকান থেকে। কেনার পর দেখি যে মালিকের গলায় পৈতা। মানে ঐটাও হিন্দুর দোকান।

ভদ্রলোকের কাহিনী শুনে আমি মুগ্ধ। কী চমৎকার ভাবে জীবনের আয়রনি অনুধাবন করেছেন, এবং নিশ্চিত যে এ থেকে তিনি শিক্ষাও নিয়েছেন।

আমি জীবনে এই প্রথমবারের মত চুল কাটার সময় চলতে থাকা গল্পে অংশ নিলাম। নাপিতকে গল্পটার শিক্ষা বুঝিয়ে বললাম। সেও বেশ মাথা নাড়ালো।

উর্দু ইসলামিক গান তখনও চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও নাপিতের জোশ ফিরে এলো। এই বেকায়দা স্বভাবের হুজুরের সাথে একটা দফারফা করে ফেলা দরকার। তাই সে আরো একটা জ্বলন্ত বিষয় সামনে তুলে আনলো,
-তবে যত যাই কন। একটা শ্রেণিরে আমি খুবই ঘৃণা করি এতে আমার পাপ হোক আর যাই হোক।
-তারা কারা?
-তারা হইলো শিয়া।
-শিয়াদের খারাপ লাগলেও তুমি ঘৃণা করতে পারবা না।
-আরে হুজুর, ওরা জাইনা শুইনা ভুল করতেছে।
-ভুল করুক। যদি সে তার ভুল বুঝে তওবা করে, দেখা যাবে সে তোমার আগে বেহেশতে যাবে। তাই কাউকেই ঘৃণা করা যাইবে না।

এ কথার পর হতাশ হয়ে বিহারী নাপিত আর তেমন কথা না বলে চুল কাটতে লাগলো মন দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে চুল কাটা শেষ হয়ে গেলো। আমি একজন সত্যিকারের মুক্তমনা মানুষের কাছ থেকে জীবন এবং ধর্ম বিষয়ক চমৎকার কিছু অনুধাবন শোনার সুন্দর অনুভূতি নিয়ে ছেলের হাত ধরে বাড়ির পথে রওনা দিলাম।

এই বরিশাইল্যা হুজুর কথা কম বলেন। কিন্তু তার প্রচুর কথা বলা উচিত। সম্ভব হলে ওয়াজের সুপারস্টার হওয়া উচিত। আমাদের ভেতরের সংকীর্ণতা দূর করার জন্যে তারাই যোগ্যতম মানুষ। তার জন্যে ভালোবাসা।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৫

আহমেদ জী এস বলেছেন: হাসান মাহবুব ,





শিক্ষনীয়।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুভ সকাল জী এস ভাই।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:১৫

অপু তানভীর বলেছেন: এইটাই পরিতাপের বিষয়। যারা জানেন বেশি বুঝেন বেশি তারাই কম কথা বলেন অথচ তাদের কথা বলার দরকার বেশি। আর যারা জানে কম, কোন বিষয়ে পরিপক্ব জ্ঞান নাই তারা সমানে বকে যাচ্ছে। সেলুন থেকে ব্লগ সব জায়গাতে একই চিত্র।
পোস্টে প্লাস।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুভেচ্ছা অপু।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পোষ্ট।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৯

ইসিয়াক বলেছেন:






শিক্ষনীয় পোস্ট।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ ইসিয়াক ভাই।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:০৬

সোহানী বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।

আমার জীবনে হুজুরের দেখা খুবই কম কারন তাদের কোন প্যাচাল বাবা এলাউ করতেন না। তারপরও আমাদেরকে আরবী শেখানোর জন্য বেশ ক'জনের মাঝে ঠিক এরকমএকজনকে পেয়েছিলাম। আপনার লিখা পড়ে উনার কথা মনে পড়ে গেল। লিখবো নিশ্চয় একদিন।

লিখায় ভালোলাগা।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: নিশ্চয়ই লিখবেন সোহানী।

শুভেচ্ছা।

৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



নিজের সাথে মেলাতে চেষ্টা করছিলাম। জায়গাটা কোন এলাকায় ছিল বুঝতে পারলে হয়তো আরেকটু সুবিধে হতো।

যা হোক, মজা করলাম একটু। আপনার দেখা 'বরিশ্যইল্যা হুজুরের' জন্য শুভকামনা। সত্যিকারার্থে এই মানসিকতাই ইসলাম আমাদের শেখায়। আমরা ভুল শিখি। ভুল বলি। ভুল ধারণা ছড়িয়ে দিই। একটি হাদিস মনে পড়ছে-

হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে (স্নেহপূর্ণ ভাষায়) নির্দেশ প্রদান করেছেন,

“হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তোমার পক্ষে যদি সকাল-সন্ধ্যা রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত করা সম্ভব হয় যে, তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো (গিশ্শ) হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে, তবে তা-ই করো।”

তিনি আরও বলেন, ‘'এটা আমার অন্যতম সুন্নাত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নাত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে, তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে; আর যারা আমাকে ভালোবাসে, তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।'’ -তিরমিজি: ২৭২৬

শুভকামনা।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ নকিব।

৭| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩৮

জ্যাকেল বলেছেন: আজকে সরকার গণতন্ত্রে যেমনভাবে মানুষ নাগরিক অধিকার/সুবিধা প্রাপ্তির কথা সেইটা কি আছে? সুইডেন/নরওয়ে/নিজিল্যান্ড/কানাডা আরো গুটিকয়েক দেশ ছাড়া আর কোথাও সঠিক পাওয়া যায় না। জনগণের জন্য আইন লেবেল দিয়ে জনগনের মুখ বন্ধ করা হইতেছে যাতে ক্ষমতার গদি শক্ত থাকে।
ঠিক এইভাবে ইসলামকে এমনভাবে ওভারল্যাপ করা হইছে যে সঠিক ইসলাম এইরকম লাখে এক মানুষের মইধ্যে পাওয়া যায়। আর লাখে ৯০ হাজার হয় এইরকম নাপিত মার্কা(মনন) লোক।

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: হ। আফসোস!

৮| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৪৭

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: বরিশাইল্যা হুজুর সমাজে অনেক দরকার আছে

২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: জ্বী, ঠিকই বলেছেন।

অনেক ধন্যবাদ।

৯| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০০

মিরোরডডল বলেছেন:



ধর্ম দিয়ে জাজ না করে, কর্ম দিয়েই একজন মানুষকে মূল্যায়ন করা উচিৎ ।
নো ম্যাটার সে কোন ধর্মের অনুসারী অথবা বেধর্মী ।
এভরিওয়ান ডিজার্ভস রেসপেক্ট ।


২৭ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: খাঁটি কথা মিরোরডডল।

শুভরাত্রি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.