নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুর!

বিকট

হাসান মাহবুব

আমার অপদার্থতাকে মাহাত্ম্য ভেবোনা...

হাসান মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশি ড্রিম- ৩

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:০৪


প্রথম অংশ
দ্বিতীয় অংশ
ব্যাকটেরিয়া


-এই একটা সমস্যা! ছেলেপিলেগুলার মাথা অতিরিক্ত গরম।

ক্ষমতাসীন দলের পোষা ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন হর্তাকর্তা, সাবের আহমেদ মৃদু অসন্তোষ প্রকাশ করলেন।
-আপনি টিটুরে একটু কন না ওদের সামলাইতে ভাই! এমনেই নানা প্রেসার, তার ওপর এইসব টুটকা ফাটকা জিনিস নিয়া যদি সময় দেয়া লাগে তাইলে তো সমেস্যা।
ওসি বরুণ অনুযোগ জানালেন। তিনি খানিকটা উদ্বিগ্ন। এই এলাকায় সারাক্ষণ ঘটনা ঘটতেই থাকে। এসব নিয়ে তার ব্যস্ততার সীমা নেই। খুব উপভোগ্য কোনো কাজ না। যারা ছোটবেলায় “জীবনের লক্ষ্য” রচনায় পুলিশ হতে চাইত, তারা বাস্তবতা জানলে কখনও সেই কথা লিখত না। ওসি বরুণের আক্ষেপ হয়। তিনি তো একজন ব্যাংকার অথবা ভূমি অফিসের করণিকও হতে পারতেন! ! তাদের কাজ কি পুলিশের চেয়ে কম মহৎ?
-টিটুর অত টাইম আছে না কি? আর প্রবলেমটা কি? ছেলেটা কি মারা গেছে?
নিরুত্তাপ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করেন সাবের আহমেদ।
-না, মরে নাই, তবে মরমর অবস্থা।
-আচ্ছা। ইনস্ট্যান্ট লাশ পড়ে গেলে ঝামেলা হওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল। হাসপাতালে নেয়ার কতক্ষণ হইছে?
-২৪ ঘন্টা।
-আইসিইউতে নিছে?
-আইসিইউ এ ছিল। এখন সরায়া এইচডিউতে রাখছে।
-ওহ, তাইলে ঐ টপিকটাই বাদ দেন। ছেলেটার কি মস্তান বন্ধুবান্ধব আছে? বাপের কি পলিটিকাল কানেকশন আছে?
-কিছুই নাই। গোবেচারা যারে কয়।
-তা আপনি গোবেচারাদের নিয়ে বোকাচোদাদের মতো পকপক করতেছেন কেন?

বরুণ কিছুটা লজ্জিত হলেন। তিনি বিব্রত মুখে হাতের আঙ্গুল মটকাতে লাগলেন। তার অবস্থা দেখে সাবের আহমেদের হয়তো কিছুটা মায়াই হলো। সে আসলে অন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করতে চাচ্ছে। তবে তার আগে চিন্তিত ওসির মাথা থেকে এই অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর করা দরকার।

-ঘটনাটা আসলে কী নিয়ে যেন হইছিল? মাইরপিটের কারণ কী?
-ঐ আর কী, ওর বোনকে বিরক্ত করত ওরা, পরে এটা নিয়ে ঝামেলা।
-আচ্ছা। জিডি করছিল আগে?
-না।
-মামলা টামলা?
-এখনও করে নাই।
-হসপিটালে বলে আসেন ছেলেটার প্রোপার কেয়ার নিতে, যেন না মরে। অন্তত আগামী সাতদিন। বাপের সাথে কথা বলেন, মামলা যেন না করে। ওনাদের আবার আবেগ উথলে উঠলে সমেস্যা,বুঝলেন? কেউ দেখা গেল যে বুঝ দিতেছে যে “এই অন্যায়ের বিচার হতে হবে, এভাবে আর কত সহ্য করবেন, কত মার খাবেন?” আছে না কিছু পাতি বিপ্লবী? এরা নিজেরা কিছু করবে না, মানুষকে উশকাবে খালি।

পাতি বিপ্লবীদের দৃপ্ত বক্তৃতাকে বেশ নৈপুণ্যের সাথে নকল করে উদ্বিগ্ন ওসিকে কৌতুকময় মুহূর্ত উপহার দিয়ে তার টেনশন লাঘব করতে সাহায্য করলেন তিনি। তবে অভিনয় নৈপুণ্য প্রদর্শনের পরের অংশে ‘বিপ্লবী’দের প্রতি তার জোরালো উষ্মা আর ক্ষোভই প্রকাশ পেল।
-ঐ বিষয়টা আমি দেখব। মেইন কাজ এখন এটাই। মামলা না করলে পুলিশের কোনো ঝামেলাই নাই। আমরা ঐ ঘটনার কথা ভুইলা যাব তখন।
-তা কী কী স্টেপ লইবেন তাদেরকে মামলা না করানোর জন্যে?
-নতুন কিছু করব না। এই ঝুটঝামেলার কথা বলব আর কী। বারবার হাজিরা দেয়া, স্বাক্ষীসাবুদ, যোগাড় করা, উকিলদের দুর্নীতির কথা, এইসব আর কী!।
-ইয়েস ম্যান! ট্রাস্ট দ্যা মেথড। ওল্ড অ্যান্ড ফেইথফুল। এই পদ্ধতিতে যুগ যুগ ধরে কাজ হয়ে আসছে, এখনও হবে। ডু ইয়োর ডিউটি।

তার ডিউটি আসলে কী, তা নিয়ে দুই-এক কথা হয়তো বলার সুযোগ ছিল এখানে, কিন্তু ওসি বরুণ চেপে যাওয়াই শ্রেয় মনে করলেন এটাকে।
-ঠিক আছে। এখন ঐ হোস্টেলের ঘটনাটা…
-হ্যাঁ, আপনাকে তো এইটা নিয়েই আলাপের জন্যে ডাকছি।

হোস্টেলের ঘটনাটা যে কারণে গুরুতর, তা হলো, সেখানে যে খন্ডযুদ্ধটা ঘটেছে, সেখানে দুই পক্ষই শক্তিশালী এবং ক্ষমতাসীন দলের । তাদের হাতে আছে অত্র অঞ্চলের আকাশ, বাতাস আর জমিনের সর্বময় ক্ষমতা। তাদেরকে এভাবেই ভাবতে শেখানো হচ্ছে। ক্ষমতাময় এই দুই পক্ষের খন্ডপ্রলয়ে কেউ তেমন আহতও হয় নি, তবে এ নিয়ে দুই দলের ছেলেপিলেরাই ফুঁসছে।

-হোস্টেলের ডাইনিং নিয়া হঠাৎ ক্ষেপল কারা?
-আরে, আগের যে ম্যানেজার ছিল, সেই ক্ষ্যাপাইছে স্টুডেন্টদের। সে অথবা তার পক্ষের কেউ গত ছয় মাসে ম্যানেজারিতে নাই। তাদের তো রাগ করার কারণ আছে।
-নতুন প্রভোস্টটাকে একটু ডাইকেন তো। আমি তাকে কত করে বললাম যে ব্যালান্স ঠিক রাখেন, ব্যালান্স ঠিক রাখেন, সে বুঝেই না বিষয়টা।
-হ্যাঁ ভাই, সে একটু বেশিই পার্শিয়াল্টি করে। তাকে রুমনরা বেশি ভাগ দেয়। ভাগ খাবে খাক। কিন্তু সবার দিকই তো দেখতে হবে! আরে বাবা, এত লালচ করলে কী চলে? বেশি টাকা খাইতে গেলে বেশি ঝামেলাতেও পড়তে হবে। এইগুলা যদি না বুঝে এখন…
- সিচুয়েশনে ফালাইতে হবে। সিচুয়েশনে না ফেললে বুঝবে না। এইগুলা তো আসলে জাস্টিফাইড হইতে পারে না। স্টুডেন্টদের পালস না বুঝলে তুমি কোন বাল ফালানোর টিচার হইছ? নতুন ভার্সিটি এইটা, সামনে কতগুলা প্রজেক্ট পইড়া আছে! কিছু কিছু প্রজেক্ট আমি নিজে ম্যানেজ করছি হাই লেভেলে কথা বলে। এইসব তারা বুঝবে না। আরে, এতে কি আমার একার লাভ? এখনকার দিনে আসলে এখানে ইউনিটি, ন্যায়-নীতির এত অভাব!

সাবের আহমেদকে দেখে মনে হলো তিনি বেশ মুষড়ে পড়েছেন। তার মনে পড়ছে অতীতের সোনালী দিনগুলির কথা, যখন ছাত্র রাজনীতিতে ছিল ন্যায়-নীতি। সাবের আহমেদের ছাত্রত্বের দিন শেষ হয়ে গেছে বছর বিশেক আগেই। তারপরেও এখনও তিনি কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন। এখনও চাইলে পুরোনো হলের কক্ষে গিয়ে রাতযাপন করতে পারেন যতদিন ইচ্ছা ততদিন।
ওসি বরুণ তার সেই স্মৃতিমগ্নতায় ব্যাঘাত ঘটাতে চাইলেন না। স্মৃতিকাতর কিছু মুহূর্ত কাটানোর পরে সাবের আহমেদ ফিরে এলেন অন্যায় আর অনাচারে ভরা বর্তমান দুনিয়ায়।

-ভিসি স্যারের নলেজে রাখতে হবে একটু এই প্রভোস্টের ব্যাপারটা। আমার দলের দুই পক্ষের মধ্যে ইনইকুইটি তৈরি হচ্ছে। অসন্তোষ সৃষ্টি হইতাছে। সেন্ট্রাল মিটিংয়ের আগে এসব ঠিক করে না ফেললে জবাবদিহিটা তো আমাকেই করতে হবে। আপনি একটা প্ল্যান করেন। আমি বেসিক আইডিয়া দেই। প্রভোস্টের পাস্ট নিয়ে একটু ঘাঁটেন। পুরান একটিভিটিজ দেখেন। এখনকার অনিয়মের একটা লিস্টও করে ফেলতে পারেন দরকার মনে করলে। ছাত্রদের কাজে লাগান। দুই পক্ষকেই। বুঝান যে মেইন দোষ প্রভোস্টের।
-জ্বী। আর যেই দুইটা ছেলের মাথা ফাটছে? দুইজনই কিন্তু মেইন প্লেয়ার এখনকার। এরিয়ায় একটা হোল্ড আছে তাদের। বহিরাগত দুইজনই।
-আপনি না, কী আর কমু! মেইন পয়েন্টগুলা পরে বলেন। বহিরাগত, এটা আগে বলবেন না? কয়েক বছর আগের ঘটনা মনে নাই আপনার, রাজশাহীতে কী হইল? ক্যাম্পাসের ছেলে হইলে তো ঘটনা না। বাইরের ছেলে আইলে কিন্তু ঘটনা এমন প্যাঁচ খাবে! এখানকার মানুষ হাড় হারামী। এদের পলিটিক্সের মাথাই অন্যরকম। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না করলে হবে না। আপনি এসব এতক্ষণ পরে বলতেছেন? আবার কে ফোন করল? কমিশনার না কি? ধরেন, ধরেন।

-না, হাসপাতাল থেকে।

কিছুক্ষণ কথা বলার পরে ওসি বরুণ জানায় কাজলকে আবার আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। অবস্থা সংকটাপন্ন।

-কোন কাজল? কার কথা কন?

বিরক্ত হন সাবের আহমেদ।
-ঐ যে পাইকপাড়ার ঘটনার ভিকটিম। স্ট্যাম্পের বাড়ি।
-ওহ! আমি ভাবলাম কী না কী। যদি ইনসিডেন্ট ঘটেই যায় তাহলে সেটাও কম্পেনসেট করার ব্যবস্থা করতে হবে। না হয় দুই চাইরটারে আটক করলেনই! খালি দেখতে হবে পেপারে যেন বেশি রং না চড়ায় এই ইনসিডেন্টের।
-ধরাও তো আবার প্রবলেম। মেইন যে পোলাটা, বিটলু, ওর বাবার স্ট্রং হোল্ড আছে। কয়েকটা মার্কেটের মালিক। টেম্পুর গ্যারেজ আছে কয়েকটা। পেট্রোল পাম্প আছে। বাকি ছেলেপিলেগুলির গার্ডিয়ানদেরও ভালো কানেকশন।
-সবাইকে তো খুশি করা সম্ভব না বরুণ দাদা! মাঝেমধ্যে কাউরে না কাউরে স্যাক্রিফাইস করতেই হবে। স্যাক্রিফাইস ছাড়া কিছু অর্জন করা যায় না।


আলাপের এই পর্যায়ে চলে আসে চা, নোনতা বিস্কুট আর স্থানীয় বেকারির প্রসিদ্ধ ফ্রুটকেক। রাত আরও বাকি আছে। গরম চায়ের চুমুকটা খুব প্রয়োজন এখন। দুজনেরই আছে রক্ষিতার কাছে ফেরার তাড়া। চা আর হালকা নাস্তা সেরে নিয়ে শক্তি অর্জন করে তারা তাদের সদাজাগ্রত ক্ষুধার বন্দোবস্ত করতে বের হবে। তাদের অনিঃশেষ ক্ষুধার যোগান দিতে পৃথিবী এখনও অকৃপণ।

চায়ের কাপে ভাসছে পিঁপড়া। সাবের আহমেদ শান্ত চোখে তাকালেন। এ নিয়ে কাউকে ধমক দেয়ার ইচ্ছে নেই তার। তিনি চামচ দিয়ে মনোযোগের সাথে পিঁপড়া বের করে হাত দিয়ে পিষে ফেললেন।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৩০

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ হাসান, এই পর্বটা চমৎকার লেগেছে পড়তে। চমৎকার মানে - অসাধারণ। দু'জনের মধ্যকার কথোপকথন ছিল ভিজুয়ালাইজ করার মতোই সুন্দর। পরবর্তী পর্বগুলির জন্য অপেক্ষা করছি।

যাই হোক, গত বছর দেশে যাওয়ার সুবাদে বইমেলাতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। আহ, কি যে মিস করি সেই দিনগুলি! ধুলোর গন্ধ, মানুষের কোলাহল, শূন্য পকেটে পছন্দের বই কিনতে না পারার আক্ষেপে শুকনো মুখ, সেই সাথে গলদা চিংড়ির মাথা ভাজার ঘ্রাণ -সব স্মৃতিই আমার মস্তিষ্ক এখনো ধরে রেখেছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ধন্যবাদ। বইটি কোনোভাবে সংগ্রহ করে পড়ে ফেললে ভালো লাগত।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: পড়ে যাচ্ছি।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: ঠিক আছে। তবে ওয়ার্নিং দেয়া আছে একটা। সেটা যেন মনে থাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.