নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধুর!

বিকট

হাসান মাহবুব

আমার অপদার্থতাকে মাহাত্ম্য ভেবোনা...

হাসান মাহবুব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প- সাইরেন

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪০


সোবহান সাহেব বসে আছেন বারান্দায়। বয়স তার তিয়াত্তর। তিনি দেখছেন সবুজ পাতাবাহার গাছের মৃদু হয়ে যাওয়া ছায়া। অনেকটা তার জীবনের মতোই যেন। ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে সব আলো। তার পায়ে নেই দীর্ঘ পথচলার শক্তি। হাতে নেই শক্ত করে কোনোকিছু আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা। বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটার কাজ করতে বড় আলসেমি। প্রায়ই চলে যাওয়ার পায়তারা করে। জীবনে আনন্দ বলতে তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই আর। নেই তার প্রজননের ইচ্ছে, নেই চুম্বনের স্বাদ পাওয়ার সাধ। কিছুই নেই, আছে তবু বাঁচার ইচ্ছে। একটা জীর্ণ বাসায় থাকেন তিনি আর তার স্ত্রী জাহানারা বেগম। বছর পঞ্চাশ আগে তাদের ছিল বাহারি কোনো এক ডাকনাম। এখন সে নাম মনে নেই কারো। অশক্ত সোবহান সাহবের পাশে বসে থাকেন অসুস্থ জাহানারা বেগম। তাদের বাসায় খাবার নেই। উপার্জন নেই। অবসর জীবনের কথা ভেবে কিছু টাকা তারা জমিয়েছিলেন। তাদেরও ইচ্ছে ছিল শেষ বয়সটা কাটাবেন বিশ্রাম আর আয়েশে, ঝঞ্জাটবিহীনভাবে। সেজন্যে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবার থেকে দূরে চলে এসে এই প্রত্যন্ত, নির্জন এলাকায় বেঁধেছেন নিজের ঘর। এখানে আছে প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্য আর অশেষ নির্জনতা।


আছে আরও কিছু। সময় বড়ই নির্মম ঘাতক! সে কেড়ে নেয় পাখির ডাকের মাধুর্য, সবুজের স্নিগ্ধতা, আর জলের পাড়ে বসে থাকার নির্লিপ্ততা। কোনো কিছুই থাকে না সহজ আর সুন্দর। জীবন মেলে ধরে তার কর্কশতা।

রোগ আর জরা তাদের প্রাণশক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সামর্থ্যও কেড়ে নিচ্ছে চোঁ চোঁ করে। ব্যাংকের সঞ্চিত সমস্ত টাকা প্রায় শেষের পথে। বেশি সুদ পাওয়া যাবে বলে একটা নতুন গজিয়ে ওঠা বেসরকারী ব্যাংকে টাকা জমা রেখেছিলেন তারা। প্রতি মাসে তা থেকে যে টাকা আসত, তাতে দুজনের চলে যাওয়ার কথা ভালোভাবেই। সমস্যা হলো, ব্যাংকটা নানা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে এখন বন্ধ হবার উপক্রম। সুদ তো দূরের কথা, আসল পাওয়া যাবে কি না তাতেও সন্দেহ।


-আমরা কী খাব? গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে। রান্না করা যাবে না কিছু। নগদ টাকা নেই হাতে। ইনস্ট্যান্ট খাবার সব প্রায় শেষ। ব্যাংক থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে না। আমাদের কী উপায় হবে?

প্রশ্ন করলেন জাহানারা বেগম।

-আমি বের হবো। দেখি কী করা যায়।

সোবহান সাহেব বললেন। তিনি জানেন না বের হয়ে কোথায় যাবেন। পৃথিবীর কোন পথে তার জন্যে দিক নির্দেশিকা আছে, জানা নেই তার। তার নেই কায়িক শ্রম দেয়ার ক্ষমতা, নেই নতুন কিছু উদ্ভাবনের শক্তি। ক্ষুধার তীব্রতা তাকে আবারও রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। কিছু একটা উপায় তো নিশ্চয়ই বের হবে! নির্জন কোণে বাড়ি হবার কারণে তাকে মানুষের খোঁজে হাঁটতে হয় দীর্ঘপথ। আসলে খুব দীর্ঘ নয়, এক কিলোমিটার মোটে। কিন্তু এটুকু হাঁটতেই তার লেগে যায় পঁচিশ মিনিট। অবশেষে পেয়ে গেলেন একজন প্রতিবেশীকে। এর আগে একবার ব্যাংকে দেখা হয়েছিল তার সাথে। গায়ে পড়ে কথা বলা সেই লোকটাকে এড়িয়েই গিয়েছিলেন সেই সময়। কারণ, তিনি চাইতেন নিরুপদ্রব এবং শান্তিপূর্ণ একটি জীবন। যত বেশি মানুষের সাথে কথা হবে, ততই বিঘ্নিত হবে শান্তি। কিন্তু আজ এই অবস্থায় তার কাছে শান্তির চেয়ে খাদ্যই বেশি প্রার্থিত। তাই তিনিই যেচে পড়ে কথা বললেন তার সাথে।

-কেমন আছেন আপনি? ভালো আছেন তো? আমাকে চিনতে পেরেছেন আশা করি।
-হ্যাঁ, আপনি ভালো আছেন? অনেকদিন পর দেখা হলো। খুবই ভালো লাগল।

সহৃদয় প্রতিবেশী তার আন্তরিকতা প্রকাশের চেষ্টা করলেন। তিনি খোঁজ খবর নিলেন সোবহান সাহেবের ঘর-বাড়ি এবং গৃহস্থালির। খবর নিলেন তার মানসিক অবস্থার। কুশলাদি চলাকালীন এই সময়টা সোবহান সাহেবের অত্যন্ত দীর্ঘ লাগছিল। তিনি চাইছিলেন ক্ষুধার কথা জানাতে। সহৃদয় লোকটি নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবেন! ভদ্রতা বিনিময়সুচক কিছু কথাবার্তা বলার পর সহৃদয় ব্যক্তিটি তাকে মর্নিংওয়াকে শামিল হবার আহবান জানালেন। এমনিতেই সোবহান সাহেব ছিলেন ক্লান্ত, ক্ষুধার্থ এবং বিদ্ধস্ত। এই সময় আরো হাঁটা তার জন্যে কষ্টকর ছিল। তারপরেও তিনি হাঁটতে শুরু করলেন। তার শরীরের প্রতিটা কোষ তখন চাইছে বেঁচে থাকার রশদ, চাইছে খাবার। সেজন্যে কষ্ট স্বীকার করতেও আপত্তি নেই। হয়ত তিনি হেঁটে চলে যেতে পারেন পাশের জেলায় কিংবা পাশের দেশেও। সহৃদয় প্রতিবেশীটি হাঁটতে হাঁটতে স্বাস্থ্যরক্ষার উপকারিতা সম্পর্কে বলতে লাগলেন।

-বুঝলেন ভাই, আমি নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটছি। শুধু ক্যালরি নিলে হবে না, ক্যালরি খরচ করতে হবে। নাহলে কী হবে বলুন তো?
বলে তিনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন বৃদ্ধের দিকে। আশা করছেন বুদ্ধিদীপ্ত কোনো উত্তর। কিন্তু সোবহান সাহেব তাকে হতাশ করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন।
-না হাঁটলে শরীরে জমবে মেদ। খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাবেন।
তার বলার ভঙ্গিতে একটা প্রচ্ছন্ন অবহেলা ছিল, যাতে প্রকাশ পায় “আপনি মনে হয় খুব বেশি হাঁটেন নি, তাই এত বুড়ো হয়েছেন”।

সোবহান সাহেব কষ্ট করে মাথা নাড়লেন। তার মাথা কাজ করছে না। তিনি জানেন না কোথায় যাবেন, কী করবেন। এই নির্জনতা, ফুল, পাখি, গাছ, সদয় ব্যবহার আর সুপরামর্শ কিছুই তার ক্ষুধা মেটাতে পারবে না। তিনি চান খাদ্য। তিনি চান ভদ্রতার মুখোশটা খুলে ফেলতে। কোন অজুহাতে প্রসঙ্গটা তোলা যায়? তার দুর্বল মস্তিষ্ক প্রবল ব্যর্থতার পরিচয় দিলো ফন্দী বের করতে।

-আপনাকে বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। আপনি কি কিছু নিয়ে পেরেশান? একটু পর আমরা টং দোকানের বেঞ্চিতে আমাদের স্থানীয় প্রসিদ্ধ তরল শরবত খেতে খেতে গল্প করব। শুনব আপনার উদ্বিগ্নতার ব্যাপারে।

বলল সহৃদয় প্রতিবেশী।

-আমি তো শরবত খেতে পারব না, খালি পেটে শরবত খেতে নেই। তাহলে এসিড উৎপন্ন হবে।

বললেন সোবহান সাহেব। অবশেষে কথাটা বলতে পেরেছেন বলে স্বস্তি পেলেন।

-ওহ আচ্ছা, আপনি নাস্তা করেন নি এখনও, এই এত বেলা করেও?
-আমি আসলে গত দুইদিন ধরেই বলতে গেলে কিচ্ছু খাই নি।
-আচ্ছা। এজন্যে নিশ্চয়ই আপনার মন খারাপ?
জিজ্ঞেস করলেন সহৃদয় প্রতিবেশী।

মন ভালো না খারাপ এই প্রশ্নের সামনে থমকে গেলেন সোবহান সাহেব। খেতে না পেলে ক্ষুধা লাগে। হতাশা তো সৃষ্টি হয়ই। সে হিসেবে বলা যায় মন খারাপ। তাই তিনি সায় জানালেন। এ কথা শুনে চোখ ছলছল করে উঠল সহৃদয় প্রতিবেশীর।
-আসুন তো বসি। আজ আমার সময় আছে। আপনার কষ্টের কথা শুনব।

তারা বসলেন দোকানের বেঞ্চে।
-এখন বলুন আপনার দুঃখের গল্পটি।
সোবহান সাহেব শুরু করলেন তার দুঃখের গল্প। বললেন তার একসময়কার স্বচ্ছল জীবনের কথা, বললেন নিঃসন্তান হবার যাতনার কথা, বললেন সঞ্চয় ফুরিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করতে অসমর্থ হবার কথা।
-আপনি এই কথাগুলি এতদিন বলেন নি কেন আমাদের?

ততক্ষণে তাদেরকে দেয়া হয়েছে পানীয়। এই এলাকার স্থানীয় একটি গাছের পাতা প্রক্রিয়াজাত করে তার সাথে স্বাদু তরল মিশিয়ে প্যাকেটজাত করে বিক্রয় করা হয়। বেশ জনপ্রিয়।

পানীয়টিতে চুমুক দিয়ে ব্যথাতুর কন্ঠে প্রশ্নটি করলেন সহৃদয় প্রতিবেশী। আর্দ্রতায় সিক্ত প্রশ্নটি শুনে অভিভূত হলেন সোবহান সাহেব। খুলে দিলেন তার মনের অর্গল। জানালেন তাদের আর্থিক সমস্যা এবং খেতে না পাবার কষ্টের কথা। সহৃদয় প্রতিবেশী এটা শোনার পর শুধু যে নিজে দুঃখিত হলেন তা নয়, বেঞ্চে উপবিষ্ট অন্যদেরও জানালেন এবং সবাই দুঃখিত হলো।

-কতদিন ধরে খেতে পান নি আপনি?
জিজ্ঞেস করলেন কলা আর কেক খেতে থাকা একজন।
-্কাল দুপুরের পর শুকনো টোস্ট ছাড়া আর কিছুই খাই নি।
-খুবই দুঃখজনক।
ডিম সেদ্ধ দিয়ে বনরুটি খাওয়া শেষ করে বললেন আরেকজন।

তখন বেজে উঠল কারখানার বাঁশি। কাজে যাবার জন্যে তড়িঘড়ি শুরু করল সবাই।

-আপনি আপনার দুঃখের কাহিনী আমাদের বলেন নি এতদিন, কিন্তু এখন থেকে বলবেন। কিছুই গোপন করবেন না। ঠিক আছে?

অনুরোধের সুরেই বলা হলো তাকে।

তখন বেজে উঠল কারখানার বাঁশি। তাকে ফেলে চলে গেল একে একে সবাই। শুধু রয়ে গেলেন সহৃদয় প্রতিবেশীটি। তিনি আরো কিছুক্ষণ রইলেন সেখানে। জানতে চাইলেন প্রতিদিন কত টাকার ঔষধ লাগে, শেষ কবে খেয়েছে তারা ভালো স্ন্যাক অথবা মাংস। শোনার পর তার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যে শুভকামনা জানিয়ে চলে গেলেন। এও বললেন যে নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে কাজ করে চললে একটা সময় দুঃসময় কেটে যাবেই। কিছুক্ষণ সময় দেয়ার পর বিদায় প্রার্থনা করলেন, কারণ তার নাতনিকে স্কুল থেকে আনতে হবে।

সোবহান সাহেব স্থির হয়ে বসে রইলেন দোকানের বেঞ্চে। কারখানার বাঁশি বেজে চলেছে তখনও। চায়ের দোকানদার চা বানানোর উপকরণ নিয়ে ব্যস্ত। এখন তার ব্যস্ততা কম। দোকানের খুঁটিনাটি কাজ এগিয়ে রাখছেন তাই। প্রায় পুরো একদিন অভুক্ত থাকার পর প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করাটা ঠিক হবে না বলে ভেবেছিলেন সোবহান সাহেব। কিন্তু সেই খাদ্যের মধ্যেও তো আছে কিছু পরিমাণ শক্তি। আছে উদ্ভিজ্জ উপাদান আর চিনি। কিছুটা হলেও চাঙ্গা করেছে তাকে। এই বয়সে খাদ্যের চাহিদা কমে যায়। খাদ্য প্রক্রিয়াকরনেও সময় লাগে। তারপরেও তার আরো কিছু খেতে ইচ্ছে করছে। এক কাপ চা, সাথে পাউরুটি, ডিম, কলা-এমন কিছু সুখাদ্য না, কিন্তু তিনি জুলজুল করে তাকিয়ে রইলেন দোকানের শেলফে । দোকানদার তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। হয়ত বা বলবেন কোনো দয়ার্দ্র কথা, এই আশঙ্কায় উঠে গেলেন সোবহান সাহেব।

বাসায় ফিরলেন পরাজিতের মতো। তার কাছে ছিল না কোনো আশার বাণী। স্ত্রীর বেদনাক্লিষ্ট, কুঞ্চিত মুখ তার অক্ষমতাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল বারবার।

-আজকেও আমাদের শুকনো টোস্ট বিস্কুট খেয়ে থাকতে হবে?

প্রশ্ন করলেন জাহানারা।

-তাই তো মনে হচ্ছে। তবে আমাকে একজন বলেছে যে সে আশাবাদী, আমরা কোনো একসময় খাবারের সমস্যার সমাধান করতে পারব।

-টোস্ট বিস্কুট আছে আটখান।
-চলে যাবে চারদিন।
-তুমি কাদের সাথে কথা বলে এসেছো? তারা তোমাকে খাবার দিতে পারল না?
-আরে প্রথমদিনেই কি সব হয়? আজকে পরিচিত হলাম কেবল। ভদ্রতা বলে একটা জ্ঞান আছে না?
-তুমি কি কালকে বের হবে না?
-হ্যাঁ। বের তো হতেই হবে। আজ কষ্ট করো।

সোবহান সাহেব বের হয়েছিলেন পরের দিনও। তার নতুন কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়েছে। এই এলাকার ভালো যে ব্যাপার তা হলো, মানুষ সহৃদয় এবং বিবেচক। দ্বিতীয় দিনও তারা তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করল, তাকে আশার বাণী শোনালো এবং বেশ কিছু গল্প বলল যেখানে খারাপ অবস্থা থেকে ফিরে আসার অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ রয়েছে।

এবং তারা তাকে খেতে দিলো সেই পানীয়। প্রচুর ফ্লেভার এবং চিনি যুক্ত। এই সুমিষ্ট পানীয়টি খেতে খেতে সোবহান সাহেবের মনে পড়ল জাহানারার কথা। সে শুধু শুকনো টোস্ট খেয়েই থাকবে। বেচারা! তার জন্যে যদি এই পানীয়টি নিয়ে যাওয়া যেত? তার বেঁচে থাকাটা আরেকটু সহনীয় হতো হয়ত।

-স্ত্রীর কথা ভেবে মন খারাপ হচ্ছে? আপনি একজন অসাধারণ মানুষ। এই দয়া আর সহানুভূতির বোধই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।
বললেন একজন প্রতিবেশী।
-আমরা এই চর্চাটাই করছি। ভালোবাসা, মমতা আর মূল্যবোধের চর্চা। আমরা চাই মানুষ একে অন্যের দুঃখ বুঝুক। মানুষ মানবিক হোক। জাগ্রত হোক তাদের বিবেচনাবোধ, আচরণে প্রকাশ পাক নম্রতা। এবং মানুষ করুক উৎপাদন।

সোবহান সাহেব মাথা নীচু করে শুনলেন। কী অসাধারণ এই মানুষেরা! তার আরো শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে আশাবাদে পরিপুষ্ট এই স্বাস্থ্যবান বাণীগুলি। তখন আবারও বেজে উঠল কারখানার বাঁশি। সবাই পড়িমরি করে ছুটল কাজে।

সোবহান সাহেবের জন্যে পড়ে রইল নির্জনতা, পাখির গান, ফুলের গন্ধ, টাটকা বাতাস আর অবাধ সবুজতা। অনেক দিন আগে ঠিক এসবই তিনি চেয়েছিলেন। ঠিক এভাবেই কাটাতে চেয়েছিলেন জীবনের শেষ দিনগুলি। তিনি কি তবে তার স্বপ্নের জীবনটাই কাটাচ্ছেন? একা বসে থাকতে থাকতে তিনি স্মরণ করতে লাগলেন দয়ার্দ্র প্রতিবেশীদের, যারা তাকে দিয়ে গেল অনুপ্রেরণা। প্রক্রিয়াজাত পানীয়ের বোতলে শেষ চুমুকটা দিয়ে তিনি উঠে দাঁড়ালেন ঋজু ভঙ্গিতে। এই মায়াভরা, সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছুদিন বেঁচে থাকার উৎসাহ পেয়েছেন তিনি।
তিনি হতে চান উৎপাদনশীল।

ঐ যে দেখা যায় সবুজ বন, পাহাড়ের পাদদেশে। ঐ দেখো কী সুন্দর মেঘ আকাশে! দূরে কোথাও বইছে ঝর্ণার জল। কুলকুল শব্দ। আর তার থেকে আরো দূরে রয়েছে সেই অতি আকাঙ্খিত জায়গাটি। সেখানে চলছে যন্ত্র, বাজছে সাইরেন, ঘুরছে কল।

বন, পাহাড় আর মাঠ পেরিয়ে যেতে হবে সেখানেই। কারখানার কলের ভেতরেই আছে পৃথিবীর হৃৎপিন্ড। সেখানেই উৎপাদন হয় এই প্রসিদ্ধ পানীয়।

সোবহান সাহেব হাঁটতে শুরু করলেন অর্থপূর্ণ সেই নতুন গন্তব্যের দিকে।


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫

বিজন রয় বলেছেন: বাহ!

আপনাকে ব্লগে দেখলে ভালো লাগে।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫২

হাসান মাহবুব বলেছেন: অনেকদিন পর একটা গল্প ছাড়লাম! বেশ নস্টালজিক লাগছে।

২| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬

শেরজা তপন বলেছেন: একটা ভিক্ষুকের কথা খুব মনে পড়ে গেল, স্কুলজীবনে রাজবাড়ি ট্রেনে যাবার সময়ে পাচুরিয়া স্টেশনে খুব বৃদ্ধ একটা ভিক্ষুক জানালার পাশে এসে হাত পেতে বলত, দুইটা পয়াসা দে বাপ- প্যাটের কি জ্বালা ব্যাটার কি শোক তোরা বুঝবিনা্রে বাপ!!!
তখন আসলেই বুঝিনি। আপনার লেখাটা পড়ে তাঁর কথা খুব মনে হল।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: মানুষ একে অপরের দুঃখ যদি বুঝতই, তাহলে পৃথিবী এরকম হতো না।

৩| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯

বিজন রয় বলেছেন: লেখক বলেছেন: অনেকদিন পর একটা গল্প ছাড়লাম! বেশ নস্টালজিক লাগছে।

আমারো লাগছে।

একসময় আপনার গল্প বা আপনার পুরা ব্লগিংটাই এই ব্লগটাকে মাতিয়ে রাখতো।

সে কথা আর বলে কি লাভ................!!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: অমূল্য স্মৃতি। আমরা ভাগ্যবান যে সেই সময়টা উপভোগ করে যেতে পেরেছি।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩০

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ হাসান, খুবই নৈর্ব্যক্তিক ভঙ্গিতে লেখা। পড়তে পড়তে মনে হলো যেন অনুবাদ গল্প পড়ছি।

ছোটবেলায় পড়া ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করা মোটামুটি সব গল্প/উপন্যাসগুলি অনেকটা এই ঢঙেই লেখা হতো। পড়তাম, কিন্তু মনে হতো কিসের যেন একটা ঘাটতি আছে। অবশ্য সেবা প্রকাশনীর কিছু অনুবাদ-গ্রন্থগুলির ব্যাপারটা একটু ভিন্ন ছিল।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: কোনো কোনো লেখায় অনুবাদের এই ভঙ্গিটা এসে যায়। ইচ্ছে করেই রেখে দিয়েছি।

৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: চমৎকার গল্প!
কেমন আছেন হামা ভাই?

৬| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



অদূর ভবিষ্যতের গল্প, গল্প ভালো হয়েছে।
তাছাড়া যেইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে ভবিষ্যতে কেমন দিন অপেক্ষা করছে চিন্তার বিষয়।


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.