![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাহাদুর শাহ জাফরের একটি বিখ্যাত কবিতার পঙক্তি :
কী দুর্ভাগ্য জাফরের,
যে জমিন সে ভালোবাসতো
সেই জমিনে তাঁর সমাধির জন্য দুই গজ জায়গা হলো না।
সত্যি, ভারতের শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহের ঠাঁই হয়নি ভারতের মাটিতে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়ে ব্রিটিশ শাসকেরা তাঁকে মায়ানমারে নির্বাসনে পাঠান।
সিপাহি বিদ্রোহ যখন শুরু হয় তখন বাহাদুর শাহ দিল্লির একটি বাড়িতে ছিলেন। মিরাট থেকে ৩০০ জনের একটি বিদ্রোহী দল এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করে, যার মধ্যে সিপাহি ও অন্যান্য পেশার মানুষ ছিল। তারা তাঁকে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিতে বললে তিনি রাজি হন। এরপর বাহাদুর শাহ হয়ে ওঠেন ভারতের কোটি কোটি মানুষের বিদ্রোহ ও ঐক্যের প্রতীক। ১৮৫৭ সালের জানুয়ারিতে মিরাট ও ব্যারাকপুরে শুরু হওয়া বিদ্রোহ সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পরে।
কিন্তু চার মাসের মাথায় ব্রিটিশরা বিদ্রোহ দমন করে এবং তারা কবি ও যুবরাজ মোল্লা ও কামাক্ষা, সুফি ও পণ্ডিত -সবাইকে পাকড়াও করে ফাঁসি দেয়, ধ্বংস করে প্রাসাদ, মসজিদ,ঈদগাহ, বাগান ও বাড়ি। ২১ সেপ্টেম্বর বাহাদুর শাহ আত্মসমর্পণের পরদিন মেজর উইলিয়াম হাডসন তাঁর দুই পুত্র মির্জা মোগল ও মির্জা খিলজি সুলতানকে গুলি করে হত্যা করে।
১৯৫৮ সালের ২৭ জানুয়ারি দিল্লিতে বাহাদুর শাহের বিচার শুরু হয় এবং শেষ হয় ৯ মার্চ। আদালত তাকে মিয়ানমারে নির্বাসনে পাঠানোর সুপারিশ করে। প্রথমে দিল্লি থেকে কলকাতা এবং কলকাতা থেকে জাহাজে করে তাঁকে ইয়াঙ্গুনে পাঠানো হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী জিনাত মহল, দুই পুত্র জওয়ান বখত ও আব্বাস বখত, পুত্রবধূ রওনক জাহান ও এক নাতনি।
১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর, শুক্রবার ভোর পাঁচটায় বাহাদুর শাহ মারা যান। ওই দিন বিকেল ৫টায় তাঁর দাফন সম্পন্ন করা হয় ইসলামি রীতি অনুযায়ী। তার কবরের চারপাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয় এবং উপরে ঘাসের আচ্ছাদন। ১৮৬৭ সালে বাহাদুর শাহের পরিবারের সদস্যদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
১৯০৫ সালে ইয়াঙ্গুন এর মুসলমানরা বাহাদুর শাহের সমাধি চিহ্নিত করার দাবি জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০৭ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁর সমাধির উপর পাথরখচিত ফলক বসায়। যাতে লেখা ছিল : বাহাদুর শাহ, দিল্লিরর সাবেক রাজা ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর এর কাছেই মারা গেছেন।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিমপনের ভাষায়, বাহাদুর শাহ ছিলেন একজন ক্যালিওগ্রাফার, সুফি, ধর্মতত্ত্ববিদ, মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ের পৃষ্ঠপোষক ও আধ্যাত্মিক কবি। 'খুল্লিয়াতে জাফর' নামে তার একটি কবিতার সংকলন আছে। তিনি ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি সমুন্নত রেখেছিলেন।
স্থানীয় মুসলিমরা বাহাদুর শাহকে ক্ষমতাবান সুফি বাদশাহ হিসেবে সম্মান করেন এবং এখনো তার কাছে দোয়া নিতে আসেন।
অবিভক্ত ভারতের মানুষের কাছে বাহাদুর শাহের সমাধি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯৪১ সালে বাহাদুর শাহের সমাধিতে ফুল দিয়েই 'দিল্লি চলো' প্রচারণা শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁর 'আজাদ হিন্দ ফৌজ' মিয়ানমার পার হয়ে ভারতের ইস্ফল পর্যন্ত দখল করে নেয়।
বর্তমান সমাধি ভবনটি নির্মাণ করা হয় ১৯৯১ সালে ভারত সরকারের সহায়তায়। এর দেয়ালে লেখা আছে, 'এই হলটি সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের স্মৃতির প্রতি উতসর্গিত।
©somewhere in net ltd.