নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'মামলেট’ ‘ওমলেট’ ডিম ভাজা, ডিম পোচ, এগ ফ্রাই, এগ রোল আরও কতো কী .....

০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৩০

'মামলেট’ ‘ওমলেট’ ডিম ভাজা, ডিম পোচ, এগ ফ্রাই, এগ রোল আরও কতো কী .....

মাছে ভাতে বাঙালির আমিষ হেঁশেলে সেকেন্ড চয়েস গরুর গোসত আর মুরগি। কিন্তু ডিম? তাকে কি বাঙালি কখনও ‘আমিষ’ বলে ভেবেছে? সত্যি বলতে- বাঙালির আমিষ-চৈতন্যে ডিম কখনওই একটা ‘খাদ্য’ বলে পরিগণিত হয়নি। অথচ এই কালপর্বে ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার পর্যন্ত হাম্পটি ডাম্পটির মতো গড়াগড়ি খেয়েছে ডিম আর ডিম। অথচ বাঙালি তাকে সে ভাবে মনে রাখেনি।

কালচারালি ডিমকে বাঙালি জীবনে প্লেস করতে গেলে হ্যাপা অনেক। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ কাহিনি ‘সজারুর কাঁটা’-র কথাই যদি ধরেন, দেখতে পাবেন, রক্ষণশীল বামুন বাড়ির মেয়ে দীপা প্রগতিশীল বামুন দেবাশিস ভট্টের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পরে ব্রেকফাস্টে ডিম খেতে দ্বিধা করে। কারণ, দীপার বাপের বাড়িতে আইবুড়ো মেয়েদের ডিম খাওয়ায় মানা ছিল। মেয়েরা ডিম খেলে কী হতে পারে, তা জানা নেই। তবে, অন্তঃসত্তা মেয়েদের ডিম খাওয়া হিন্দু বাঙালিবাড়িতে যে নিষিদ্ধ ছিল, তার সাক্ষী অনেকে আজও জীবিত আছেন। এই সব লিঙ্গবৈষম্য পেরিয়ে যদি আবার ডিমের দিকে তাকানো যায়, তবে দেখা যাবে, বাঙালি হিন্দুর বাড়িতে হাঁসের ডিম তেমন কোনও নিষিদ্ধ বস্তু ছিল না, যতটা ছিল মুরগির ডিম। বাঙালি হিন্দু অন্তঃপুরে মুরগিকে ‘রামপাখি’ বলা এবং তার মাংস ও ডিম নিয়ে হ্যঙ্কিপ্যাঙ্কি ছিল এক নৈমিত্তিক ব্যপার। পোলট্রির মুরগির ক্ষয়াটে স্বাদের ডিম সে সময়ে বাঙালির রান্নাঘরে ঢুকত না। দেশী মুরগির ডিম খেতেন কেতাদুরস্ত বাঙালি।

সেইসব দিন ১৯৭০-এর দশকেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তদ্দিনে বাঙালির সঙ্গে ডিমের সংযুক্তি পাকা হয়ে গিয়েছে। রোজকার নাশতায় ডিম না থাকলেও রাতে ডিমের ডালনা ছিল বাঙালি পরিবারের ইমার্জেন্সি মেনু। সেই কালে অধিকাংশ বাঙালি পরিবারেই ফ্রিজ ছিল না। তাই হরতালের আভাস পেলেই বাঙালি ঘরে ডিম মজুত করত। পাঁউরুটিও সেই সঙ্গে। কিন্তু ডিম-পাঁউরুটির যুগলবন্দি তত দিনে খুব পপুলার পাড়ার চায়ের দোকানের কল্যাণে। সেখানে অ্যালুমিনিয়ামের মাগে স্টিলের পাতলা চামচ দিয়ে ডিম ঘুঁটে ওমলেট বানানোর প্রস্তুতিশব্দ ছিল আড্ডার অ্যাড্রিন্যালিন ক্ষরণের অনুঘটক। বাঙালির সংগ্রামী সত্তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই শব্দ। মেসবাসী, হোস্টেল বাসী ছাত্র, চাকুরীজীবি, খেটে-খাওয়া শ্রমিক সকলেই সেই শব্দের কাছে ঋণী, ঋণী ডিমের কাছে।

ওমলেটকে বাঙালি তার নিজনিজ আর্থিক অবস্থান থেকে দেখেছে। চায়ের দোকানের ওমলেট ছিল পাতলা, তার কিনারের রং হতো বাদামি। তার দেহে বিরাজ করতো কাচা মরিচ আর পেঁয়াজকুচি। বাঙালির আমদরবারে তার নাম সেই সময়ে ‘ওমলেট’ নয়, তাকে ডাকা হতো ‘মামলেট’ বলে। বহু বাঙালি পরিবারে যাকে ‘ডিমভাজা’ বলা হতো, সে আবার এই ওমলেট বা মামলেট সংস্কৃতির বাইরের একটা জিনিস। কালো লোহার কড়াইয়ে পেঁয়াজ-কাচা মরিচ-ধনেপাতা সহ ডবল ডিম দিয়ে কড়া করে ভাজা সেই পদটির স্বাদ গ্লোবোলাইজেশনের পরে লুপ্ত। তবে এটাও ঠিক, যখন তখন মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে ‘ডিমভাজা’ হতো না। পোচ বাংগালীদের মধ্যে তেমন জনপ্রিয় ছিল না। ডিম সেদ্ধ করা হতো কেবল ডালনা রাঁধার জন্যই।

ডিমের ডালনা এক অতি আশ্চর্য বস্তু। মধ্যবিত্ত বাড়িতেও ডালনায় আস্ত ডিম দেখা যেত না। ডিমের ভিতরে মশলা প্রবেশ করানোর জন্য সেদ্ধ ডিমকে আধা-আধি কেটে ফেলা হতো। বাড়ির ছোটরা আধখানা ডিমই পেত। বড়রা গোটা। তবে মেয়েদের কী ব্যবস্থা ছিল, তা বলা মুশকিল। ডিমের ডালনা আর ডিমভাজার মধ্যে যোজন যোজন ব্যবধান।

ডিমকে কি বাঙালি ক্যাজুয়ালিই নিয়েছে চিরকাল? অথচ বাঙালির সাধের মোগলাই পরোটায় ডিম তো অপরিহার্য! গত পাঁচ দশকে বাঙালি তো কম এগরোল চিবোয়নি! রাতের পথচারী খিদে মিটিয়েছে রাস্তার পাশে স্টোভ নিয়ে বসে থাকা পাঁউরুটি-ডিমের কারবারির সামনে দাঁড়িয়ে। কালো কুচকুচে সসপ্যানে ফুটন্ত তেলের উপরে গোলা ডিমের ‘ছ্যাঁ-ক’ শব্দ আজও বাঙালির জীবনে অমলিন। ডিম সেখানে পরিত্রাতা। আবার দূরপাল্লার ট্রেনে সেদ্ধ ডিম সুতো দিয়ে দু’আধখানা করে তাতে হালকা বিটলবণ ছড়িয়ে তারিয়ে তারিয়ে খেয়েছে বাঙালি রেল-বাস যাত্রীরা।

দাঁত থাকতে যেমন দাঁতের মর্ম বোঝা কঠিন। এই যে বাঙালির হেঁসেল থেকে ক্রমশ উধাও হল ডিমভাজা, মামলেট, তার জায়গা নিয়ে নিল এগ স্ক্র্যাম্বল আর স্টাফড ওমলেট, সেই লস অফ সেলফ-এর কাহিনি কে সংরক্ষণ করবে। কোনও ডক্যুমন্টেশন রইল না। আগামী প্রজন্মকে বোঝানোই যাবে না, মামলেটের সঙ্গে ওমলেটের ফারাক ঠিক কতটা।
সাধে কি বলে, বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাত!

(সাত বছর আগে ফেসবুকে লিখেছিলাম। কৃতজ্ঞতা জানাই ফেসবুক মেমোরিকে)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:১৬

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে সাধারণত "বেগুন ভাজা"কে একটু জাঁকজমকপূর্ণ নামেই পরিবেশন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একে বলা হতে পারে:

"Pan-seared Eggplant Medallions"
অথবা
"Aubergine Fritters with Spiced Oil Infusion"

যেখানে eggplant বা aubergine হচ্ছে বেগুন, pan-seared মানে হালকা তেলে ভাজা, আর infusion শব্দ দিয়ে তেলে থাকা মশলার গন্ধকে রুচিশীলভাবে বোঝানো হয়। :)

০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৯

জুল ভার্ন বলেছেন: মূল কথা হচ্ছে- ব্যক্তি, আর্থিক অবস্থান এবং পরিবেশ অনুযায়ী সবকিছুর মূল্যায়ন হয়!

২| ০৫ ই মে, ২০২৫ দুপুর ২:২৭

ঊণকৌটী বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো, এই প্রসঙ্গে একটা স্মৃতি মনে পড়লো আমাদের ছোট বেলায় প্রতি রবিবার পাঁঠার মাংস আসতো কিন্তু মনে পরেনা মুরগি খেয়েছি বলে তো মাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম! মা বললো বাবা কুমিল্লার ইশ্বর কলেজ বা পাঠশালা তে পড়তেন তখন বন্ধুদের সঙ্গে মুরগির মাংস খেয়েছিলেন শুনে আমার ঠাকুরমা বাবার সাথে একমাস কথা বলেন নি তো বাবা চিরদিনের মত ওই টা আর খায়নি ,আগে খুব খেতাম পাঁঠার মাংস এখন দেশী মুরগি দিয়েই চালাই আর কি |

০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ৮:৫০

জুল ভার্ন বলেছেন: মুরগী বিদ্বেষটা বোধ করি এখনও কিছুটা বজায় আছে। আমার সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধু স্বজনদের মধ্যে এখনো হাঁস, হাঁসের ডিম যতটা জনপ্রিয় ততটাই অপ্রিয় মুরগী এবং মুরগির ডিম। আমার ফ্রন্ট ডোড় নেইবার স্বামী স্ত্রী দুজনেই সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার অফিসার। ছেলে মেয়ে আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের মধ্যেও মুরগী, স্পেশালী দেশী জাতের মুরগী এবং ডিম অপছন্দের।

৩| ০৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:২৭

শায়মা বলেছেন: মামলেট ওমলেট নিশ্চয় একই জিনিস। কেউ কখনও ভুল করে বা ঢং করে বলে এই নামের ফারাক বানিয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.