নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসা যত বড়, জীবন তত বড় নয়

Someone become successful and someone not but man loves and will love

এইচ, এম, পারভেজ

Request for everybody : If you like/love someone then tell him/her as soon as possible otherwise you will lost / miss him/her..... so pls....

এইচ, এম, পারভেজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প নয় সত্যি ! : মনা (সব পর্ব একসাথে)

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৪১



তখন আমি খুব ছোট। আমাদেরই গ্রামের পাশে আরেকটি গ্রাম। নাম সোনাপুর। এ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। নদীর নাম বহড়া। বেশ সুন্দর ও ছায়াঘেরা পরিবেশ এই সোনাপুর গ্রাম। এ গ্রামেই কেটেছে আমার শৈশব। আমি ছেলে বেলা থেকেই একটু চঞ্চল প্রকৃতির। আমি তিন ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। আমার বড় ভাইয়ের নাম সুমন, বোনের নাম মিলা এবং আমার নাম ইমন। বাসায় সাধারণত আমাকে ক্যাচরা বলে ডাকা হয়। আমার মা একটু খুতখুতে প্রকৃতির। কোন কিছু মন মত না হলে তার চলে না। বাড়িতে একটি কাজের ছেলে অনেকদিন যাবৎ কাজ করছে। তার নাম মনা। সে কালো বলে তাকে আমরা দুষ্টুমি করে কালা ডাকতাম। মনা ছেলেটা আসলে ভীষণ ভালো। ছোট বেলায় ওর মা আমাদের বাড়িতে কাজ করত। হঠাৎ করে একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ওর মা মারা যায়। মা তাই অসহায় এই শিশুটিকে বাড়ির বাইরে ফেলে দিতে পারেননি। ওর তখন চার বছর বয়স। বলতে গেলে মনা ও আমি একই বয়েসী।



ছোট বেলা থেকেই ওর সাথে আমার খুব ভাব। ওর যে কোন কিছু আমার কাছে অজানা থাকতনা। আবার, আমার কোন কিছু ওর কাছে অজানা থাকতনা। এর পর বছর পাঁচেক পরের ঘটনা। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। তখনতো ওর সাথে আমার খুব ভাব। পালা করে আমি ওর পড়া ধরতাম এবং ও আমার পড়া ধরত। খাবার সময় পাল্লা ধরে খেতাম যে কে কার আগে খাব। রাতে ঘুমোবার সময় ওর ঘরে বসে এক দেড় ঘন্টা নানা ধরনের গল্পগুজব করতাম।



আমার সাথে মনার এরকম বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখে প্রতিবেশীরা একটু একটু নিন্দা যে করত তা বেশ বোঝা যেত যখন পাড়ার সব ছেলেরা একসাথে খেলাধুলা করতাম। অনেকে অনেক কথা বলে গেলেও আমি তা গায়ে মাখতাম না। কিন্তু মনা ভীষণ মন খারাপ করত।



তার কিছুদিন পরের কথা। একদিন মনা বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশ্যে বের হলো। আমি চলে গেলাম স্কুলে। ক্লাস শেষে স্কুল থেকে ফিরলাম বিকেল সাড়ে চারটায়। আর ফিরেই শুনলাম এক খবর। মনা সেই সকালে যে বাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিল এখনও পর্যন্ত সে বাড়ি ফেরেনি। বাবা ও ভাইয়ার ধারণা যে সে বাড়ি থেকে বাজারের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তাই বাবা মনাকে বকা ঝকা করতে লাগলেন। কিন্তু মা ভাবলেন হয়তো সে কোনও বিপদে পড়েছে বা হারিয়ে গেছে। তাই বাবাকে বললেন খোঁজ লাগাতে। ভাইয়া তার বন্ধু বান্ধবদের বলে দিল যদি এলাকায় তার খোঁজ মেলে তবে তাকে যেন ধরে নিয়ে আসা হয়। শুধু আমি আর মা একমত যে, মনার কোন বিপদ ঘটেছে। সেদিন কেটে গেল এমনিতেই। পরদিন সকাল থেকে আমার ভীষণ মন খারাপ। কারণ আমার খেলার সাথী আর রইলনা। স্কুলে গেলামনা সেদিন। বিকেল পোনে চারটার দিকে বাবার পরিচিত এক ওসি আঙ্কেল হঠাৎ করে এসে হাজির। আমি ঘুম থেকে উঠে ঘরে বড়দের কথোপকথনে ড্রইং রুমে গিয়ে দেখি ওসি আঙ্কেল বসে আছেন সোফায় এবং তার পাশে বসে আছে মনা নিশ্চুপ ভঙ্গিতে। আমি মনাকে ডাকতেই সে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন সে আমাকে চিনতেই পারছেনা। কিন্তু ওর চোখের চাহনিটা যেন আর আগের মত নেই। আমি ওর এ ব্যবহার দেখে একটু হতভম্ব হলাম। পরে মার মুখ থেকে জানতে পারলাম, গতকাল যখন মনা বাজারের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা করেছিল তখন বাবু বাজারের মেইন রোড ক্রস করতে গিয়ে এক মিনি বাসের সাথে ধাক্কা খায়। আঘাতটা খুব জোরে না লাগাতে ও প্রাণে বেঁচে যায় ঠিকই কিন্তু যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে কোন কিছুই বলতে বা চিনতে পারছিলনা। ডাক্তার জানালেন যে মনা স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে আর কাউকে চিনবেনা। তখন ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত বাবার সুপরিচিত সেই ওসি আঙ্কেল উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমাদের বাসায় এর আগে মনাকে দেখেছিলেন। তাই চিনতে পেরে তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করিয়ে নিয়ে এলেন। এদিকে মনার মাথা খানিকটা কেটে যাওয়ায় সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন মনা যদি স্মৃতি শক্তি সত্যিই হারিয়ে থাকে তবে ওর নাম ধরে যখন ডাকলাম তখন ও আমার দিকে তাকাল কেন। সে যা হোক ব্যপারটায় তেমন একটা আমল না দিয়ে আমি আবার স্বাভাবিক ভাবেই রইলাম। একটু একটু খারাপ লাগলো এই ভেবে যে ও এখন আর কাউকে আগের মত চিনতে পারবেনা। এমনকি আমাকেও না।



মনা ফিরে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেললেও বেশ অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই একটু স্বাভাবিক হয়ে আসতে লাগলো। একদিন তো ওর আর আমার কুকুরের ধাওয়া খাওয়ার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে আমাকে একেবারে অবাক করে দিয়েছিল।



বেশ কয়েকদিন হলো মনা ফিরে এসেছে। কিন্তু ওর আচরণ একেবারে ভিন্ন আবার একেক সময় মনে হয় ওর আগের সব স্মৃতিই বোধ হয় মনে আছে। এছাড়াও একদিন তো রাতের বেলা ওকে দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। সেদিন রাতে ঘুম থেকে উঠে দেখি মনা বিছানায় নেই। ভাবলাম হয়তো বাথরুমে আছে। অনেকখন যাবৎ ও ফিরছিলনা। ওদিকে রান্না ঘরে খুটখাট কি যেন একটি আওয়াজ ভেসে আসছিল। আমি আগ্রহভরে বিছানাছেড়ে উঠতেই দেখি মনা ফিরে আসছে রান্নাঘর থেকে আমার ঘরে। ও ফিরে আসতেই সারা ঘরটা একটা বোটকা দুর্গন্ধে ভরে গেল। ঠিক যেন মনে হচ্ছিল ও বুঝি ময়লা ও নোংরা ঘাটাঘাটি করে এসেছে। ওকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম, ‘কিরে মনা রান্না ঘরে কি করছিলি?’ ও আমার দিকে তাকাতেই আমার বুকটা হিম হয়ে গেল। কারণ ওর চোখদুটো অন্ধকারে ধক ধক করে জ্বলছিল। মনা কোন জবাব না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। আমিও আর কোন কথা জিজ্ঞেস না করে ভয়ে ভয়ে শুয়ে পড়লাম।



সকালে উঠে মনার সাথে যখন দেখা হলো তখন কাল রাতের কথা জিজ্ঞেস করতেই ও যেন কিছুই জানেনা ভাব দেখাল। এদিকে রান্নাঘরে এঁঠো ময়লা যে বালতিতে রাখা হত সেই বালতি উপুড় করানো অবস্থায় এবং সারা রান্না ঘর ময়লা দ্বারা আবৃত। মা এসব দেখে ভীষণ বিরক্ত হলেন। তিনি মনাকে জিজ্ঞেস করতেই মনা এমন ভাব দেখাল যেন সে কিছুই জানেনা।



এ ঘটনার পর থেকে মনার সাথে আমার একটু দূরত্ব সম্পর্ক তৈরী হতে থাকে। এবং ওর প্রতি আমার সন্দেহও হতে থাকে। এবং আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এ মনা আগের সেই মনা নয়। এরই মধ্যে ওর আর আমার একই বিছানায় শোয়া বন্ধ হয়ে গেল। এটি অবশ্য আমার কথাতেই হয়েছিল। ও আমার ঘরে মাটিতে বিছানা করে শোয়।



একদিন বাবা বাজার থেকে ফেরার পথে চারটি কবুতর কিনে আনলেন। কবুতর গুলো খুবই সুন্দর ছিল দেখতে। বেশ নাদুস নুদুস চেহারার ঘন পালকে আবৃত ছিল কবুতর গুলো। সেদিন খুব মজা করেই কেটেছিল কবুতর গুলো নিয়ে। কিন্তু সন্ধ্যে বেলা যখন ওগুলো জবাই করার কথা উঠল সবার আগে বাধ সাধলাম আমি। আমি বললাম, ‘আমি ওগুলো জবাই করতে দেব না’। অনেক অনুনয় করে কবুতর গুলোর আয়ু সেদিনের মত রাখা গেল।



পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে বারান্দায় গিয়ে দেখি কবুতর গুলো যে খাঁচিতে রাখা ছিল তার আশেপাশে শুধু পালক ছড়ানো। একটা কবুতরের শুধু দুটো পা ছেড়া অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। অন্যদিকে আর তিনটে রক্তমাখা অবস্থায় পা ছেড়া অবস্থায় পড়ে আছে। এগুলোর কোনটিরই শরীরের অর্ধাংশ নেই। দেখে আমি মাকে ডেকে দেখালাম। মা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন যে হয়তো কাল রাতে বিড়ালে এরকম অবস্থা করেছে। মা আমাকে পরে আরও সুন্দর কবুতর কিনে দেবেন বলে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।



ওদিকে মা যখন আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন তখন হঠাৎ করে মনা কবুতর গুলো বাড়ির বাইরে নর্দমায় ফেলার জন্য মাকে জিজ্ঞেস করল। মা ওগুলো উঠিয়ে নিয়ে যেতে বলতেই মনা আগ্রহ ভরে সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে পলিথিন ব্যাগ নিয়ে এলো। ওর চোখ দুটো যেন এক অনাকঙ্খিত খুশিতে জ্বলে উঠছিল। মনা ওগুলো নিয়ে যেতেই আমি চুপি চুপি ওর পিছু নিলাম।



যেতে যেতে দেখলাম ও নর্দমার ওখানে না দাড়িয়ে নর্দমার পাড় ধরে নিচে নামতে লাগল। আমি নর্দমার পাড়ে এসে এক গাছের ছায়ায় বসে ওর কান্ড কারখানা দেখতে লাগলাম। ও ইচ্ছে করলে ব্যাগটি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে আসতে পারে কিন্তু তা সে করছিল না। হঠাৎ সে এক বিকট হাসি হাসতে লাগল। মধ্য দুপুরে এরকম নোংরা নির্জন যায়গায় ওর (মনার) অট্টহাসি বাতাসে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। ঠিক তার পরই ব্যাগ থেকে মৃত ছিন্ন ভিন্ন কবুতর গুলো বের করে তা কামড়ে কামড়ে খেতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে আমার মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেল। মনে হলো আমি বোধহয় মনুষ্য জগতের অনেক বাইরে। গাছের ডালটি ধরে আমি চুপ করে বসে ওকে দেখতে লাগলাম।একি সেই মনা যাকে আমি চিনতাম ? নিজেই বিস্ময়ে নিজের কাছে এ প্রশ্ন রাখলাম। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে এ মনা আগের সে মনা নয়। হয়তো মনার রূপধারী অন্যকোন খারাপ কিছু। এসব কথা যখন আনমনে ভাবছিলাম এমন সময় হঠাৎ এক ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার ভাবনার রেশ কেটে গেল। চমকে উঠে পেছন ফিরে দেখি মনা দাড়িয়ে আছে, মুখে তার চাপা হাসির ভাব। ওর চোখদুটো সেদিন রাতের মত ধক ধক করে জ্বলছিল। ওকে দেখে আমার শ্বাস রোধ হবার উপক্রম। আমি ওর বরফের মত ঠান্ডা হাতটা আমার কাধ থেকে ছাড়িয়ে দাঁড়ালাম। নর্দমার নিচে চেয়ে দেখি মনা সেখানে নেই এখন আমারই সামনে দাড়িয়ে। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম -



- কে তুমি ?

- কোথা থেকে এসেছো আর কেনই বা এসেছো ?



সে জবাবে বলল -



- তুমি ঠিকই ধরেছ, আমি তোমাদের পরিচিত সেই মনা নই। মনার মৃত দেহে আশ্রয়ধারী এক প্রেতাত্মা।



- আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তবে কি মনা সত্যিই সেই রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল?



- উত্তরে সে বলল হ্যা, ঠিক তাই। এখন তুমি হয়তো বলবে যে কেন আমি এখানে মনার রূপ ধরে এসেছি। এসেছি মনার কাছে তোমাকে নিয়ে যেতে। যে মনাকে তুমি এত ভালোবাসো, যার সাথে তোমার এত ভাল বন্ধুত্ব তাকে ছেড়ে তুমি এ পৃথিবীতে সুখে থাকবে কি করে। তাই মনার অনুরোধেই আমি তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি। এখন আমি তোমাকে পালাবার সুযোগ দেব, যদি তুমি এরই মধ্যে দৌড়ে কোন মানুষকে ধরতে পারো তবে আমি চিরদিনের মত এ পৃথিবীর বুক থেকে মিলিয়ে যাব। আর কোন দিন তোমার ধারে কাছে আসতে পারব না। আর যদি আমার হাতে ধরা পড়ে যাও তবে তোমার অবস্থাও হবে ঐ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন পায়রা গুলোর মত। এখন পালিয়ে বাঁচ না হয় মর।



মনার রূপধারী প্রেতাত্মার এ কথা শুনে আমার প্রাণ বায়ু যেন তৎণাৎ বুক চিরে বেরিয়ে যেতে চাইছিল। ভাল মন্দ কোন কথা চিন্তা না করে প্রাণপণে উল্টোমুখি দৌড় দিলাম । দৌড় দেয়ার সাথে সাথেই আবার সেই অট্টহাসি আমার দৌড়ানোর গতিকে যেন শ্লথ করে দিতে চাইছে। আমার মনে হচ্ছিল আমার পা যেন আর চলতে চাইছেনা। এরকম ভর দুপুরে কাকে হাতের কাছে পাব যে তাকে ধরব।



- না ধরতে পারলে আজ আমি এখানেই ....., ওফ, আর পারছিনা।



নর্দমা, জঙ্গল পেরিয়ে যখন বাবু বাজার মেইনরোডে গিয়ে উঠেছি ওমনি আচমকা রাস্তার বাদিক থেকে একটি মিনি বাস এসে আমাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। আমি মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে পড়ি ফুটপাতের কাছাকাছি কোথাও। ব্যাথায় কাতরাতে থাকি, মুখ দিয়ে একটি শব্দ বেরুচ্ছিল 'আমাকে বাচাঁন'। কয়েকজন এসে আমাকে ধরল ....... তারপর আর কিছুই মনে নেই.............



এর পর যখন জ্ঞান ফিরল তখন আমি এক মানসিক হাসপাতালে। জ্ঞান ফেরার পর আমার হাত পা গুলো অস্বাভাবিক লম্বা লাগছিল। আমার মুখভর্তি দাড়ি ছিল। 'আমি কোথায়' জানতে চাইতেই ডাক্তার বললেন তুমি মানসিক হাসপাতালে। আমার ডান হাতটি গলার সাথে ব্যান্ডেজ করে বাধা। মানুষের হাত ভেঙ্গে গেলে যেরকমটি করা হয়। কিন্তু আমার তো চোট লেগেছিল মাথায়। মাথায় ছোট একটি ব্যান্ডেজ। মনে হচ্ছে ভেতরটায় সেলাই হয়েছে। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম --



- ডাক্তার সাহেব আমিতো বাস এক্সিডেন্টে মাথায় আঘাত পেয়েছিলাম কিন্তু আমার হাতে ব্যান্ডেজ করলেন কেন ?



ডাক্তার এবং পার্শ্ববর্তী নার্সদের মুখে একটা খুশির ঝলক দেখা গেল। ডাক্তার বলল -



- আমার মনে হয় তুমি স্মৃতি ফিরে পেয়েছো। এখন থেকে আট বছর আগে তোমার বাস এক্সিডেন্ট হয়েছিল ঠিকই কিন্তু তুমি তখন স্মৃতি শক্তি হারিয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলে এতকাল। তার পর তুমি এতদিন আমার চিকিৎসাধীন ছিলে। গতকাল বিকেলে নার্স যখন তোমাকে দোতালায় নিয়ে যেতে থাকে তখন তুমি পাগলামোর বশে দোতালার রেলিং থেকে লাফ দিয়ে পড়ে যাও। পড়ে গিয়ে তোমার হাত ভেঙে যায়। এবং মাথায়ও চোট পেয়ে খানিকটা কেটে যাওয়ায় ওতে সেলাই করা হয়েছে। তুমি স্মৃতি ফিরে পেয়েছো এ খবরটা তোমার বাবাকে দিলে তিনি নিশ্চই খুশি হবেন। এরই মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে যা হয়তো তুমি দেখেও দেখনি কারণ তুমিতো স্মৃতি হারিয়ে ছিলে। যাক সেসব কথা, তোমার বাবাকে খবরটা দিয়ে দেই।



আমি যেন হতভম্ব হয়ে গেলাম এরই মধ্যে আট বছর পার হয়ে গেছে অথচ আমি জানতেও পারলামনা। নিজের ভাগ্যের এই নির্মম পরিহাস জানতে পেরে নিজেকে অলস অসাড় কীটের মত মনে হলো। নানা ধরনের চিন্তার মধ্য দিয়ে সময় কাটছিল। আপার বিয়ে হয়েছে কিনা, ভাইয়ার কি অবস্থা, মার কি অবস্থা এই সব নানান রকমের চিন্তা করে পরের দুটি ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম।



হঠাৎ ডাক্তার সাহেব কাকে নিয়ে যেন কেবিনে আসছেন। ভেতরে ঢুকতেই দেখি, বাবা। বাবা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন -



- তুই সুস্থ হয়েছিস বাবা, তুই কি আমাকে চিনতে পারছিস ?



আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললাম -



- হ্যাঁ বাবা, আমি তোমাকে চিনতে পারছি, আমার সব মনে পড়েছে।



বাবা কান্না ভাঙা গলায় বললেন -



- আর কটা দিন আগে কেন সুস্থ হলিনা। তোর মা তো তোর চিন্তা করে করে ...

- কি হয়েছে মায়ের ?

- বল বাবা বল, কি হয়েছে মায়ের ?

- তোর মা আর নেই বাবা।

কথাটা শোনার পর আমার মাথায় যেন বজ্রপাত হলো। মাকে আমি ভীষণ ভালোবাসতাম। মাকে এভাবে হারাতে হবে আমার তা জানা ছিলনা। নিজের ভাগ্যকে এবং বিধিকে নানা ভাবে দোষারূপ করতে লাগলাম নিজের এই দুর্ভাগ্যের জন্য।

বাড়ি ফিরে গেলাম বাবার সাথে, ভাইয়া নাকি কানাডা চলে গেছে। ওখানে বিয়েকরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেশ ভালই আছে। ভাইয়াকে জানানো হলো যে আমি সুস্থ হয়েছি। ভাইয়া আমাকে ও বাবাকে কানাডা নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাবার মন বেশী দিন না টেকায় আবার বাংলাদেশে চলে আসেন এবং এখানেই এক সময় মারা যান। আজ প্রায় বার বছর হয়ে গেছে। কানাডায় কোম্পানি কিছুদিন বন্ধ রেখে এক শীতে বাংলাদেশে আসি। এখানে এসে পুরোনা দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনে পড়ে যায় কৈশরের সেই উত্থান পতনের ছন্দময় আংশিক এলোমেলো সেই দিনগুলোর কথা এবং তারই একটি অংশ আজ লিখলাম।



আসলে মানুষের জীবনে মাঝেমাঝে উত্থান পতন হয় লৌকিক ও অলৌকিক নানা কারণে। কিন্তু আমার জীবনে এই যে ঘটে যাওয়া বিরাট অংশের ছিন্নতা এর জন্য দায়ী কে জানেন ?



এর জন্য দায়ী শুধুই মনা। আজ এখানেই কলম রাখলাম।

---------------------

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৪৮

রাজসোহান বলেছেন: ভালো

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৫৭

এইচ, এম, পারভেজ বলেছেন: আমি ভাল নেই।

২| ১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৫৯

স্বপ্নকথক বলেছেন: হুম... ভাউত!

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১১:০৩

এইচ, এম, পারভেজ বলেছেন: ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.