![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৬০০ মানুষ। একজন দুজন নয়, ১৬০০ জন মানুষ। তারা অনশনে বসেছে। তাদের অবশ্য আরও একটি পরিচয় আছে। তারা শ্রমিক। তারা ‘তোবা গার্মেন্টস্’ এর শ্রমিক। তারা একই সাথে মানুষ এবং শ্রমিক। মানুষ পরিচয় দেবার পর শ্রমিক পরিচয় দেবার কি দরকার? শ্রমিকরা কি মানুষ নয়?
প্রশ্নটা এখানেই। শ্রমিক পরিচয় দেবার পর তাদেরকে মানুষ বলেই যেন আর মনে হয় না।
গার্মেন্টস্ এ কাজ করা শ্রমিক মানেই গ্রামে ভাতের কষ্টে ভুগতে থাকা, অর্থের সন্ধানে চোখে রঙ্গীন স্বপ্ন নিয়ে শহরে আসা কিছু অল্প বয়সী, মধ্যবয়েসী নারী-পুরুষ। লেখাপড়া তেমন শিখতে না পারা এই মানুষগুলোর জন্য সবথেকে সহজে পেয়ে যাওয়া কাজ হল শহরের গার্মেন্টেস্ গুলোর শ্রমিক হওয়া। শহরে তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসে। কিছুদিন কাজ করার পর তারা বাস্তবটাকে বুঝতে পারে। এটা এমনই এক বাস্তব, যেটা শুধুমাত্র যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তারাই বুঝবে। আমি বা আমরা বোঝাতে পারব না। গার্মেন্টস্ এ কাজ করেছে, এমন কয়েকজনের সাথে আমার কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের কাছে জেনেছি কি পরিবেশে তারা কাজ করেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অনিশ্চিত ভবিষ্যত এমনকি যৌন হয়রানির শিকারও কাউকে কাউকে হতে হয়।
এসবের কেউ কোন প্রতিবাদ করেনা। পাছে চাকরিটাই না চলে যায়। চাকরি চলে গেলে খাবে কি? থাকবে কোথায়? বাসায় পাঠাবে কি? এমন হাজারটা দুঃশ্চিন্তা তাদেরকে পিছিয়ে দেয়, তাদের প্রতিবাদমুখরতাকে দমিয়ে রাখে। কখনওই তারা কারখানার পরিবেশ নিয়ে কথা বলেনা, হাড়ভাঙ্গা খাটুনি তারা মুখ বুজে সয়ে যায়, প্রয়োজনের তাগিদে ওভারটাইমে কাজ করে। কাজশেষে মাইলের পর মাইল হেঁটে ঘরে ফেরে। কিন্তু যার জন্য তারা এত কষ্ট সহ্য করে, শেষ বেলা যখন সেই টাকাই পায় না, তখন তারা আর চুপ করে থাকতে পারে না। তারা নেমে আসে রাস্তায়। কারখানায় ইট-পাটকেল ছোড়ে, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
সেগুলো আমরা টেলিভিশনে দেখি। আর শ্রমিকদের অশিক্ষিত-মূর্খ বলে গালি দেই।
২
বাংলাদেশে এর আগে এত লোক একসাথে অনশনে বসেছে বলে আমার জানা নেই। ‘আমরণ অনশন’ শব্দটা শুনলেই ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে ওঠে। নিজের চোখে অনশন দেখেছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের সময়। দেখেছিলাম, কি পরিমান মনোবল নিয়ে ছেলে-মেয়েরা অনশন করেছিল। তাই অনশনের কথা শুনলেই আমার সে দৃশ্যগুলোর কথা বারবার মনে পড়ে আর ভেতরটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
আমরণ অনশন দাবী আদায়ের চুড়ান্ত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি। শ্রমিকরা কেন আমরণ অনশনে গেল? এটা একটা প্রশ্ন।
খুব সরলভাবে ব্যাপারটা ভাবি। একজন সাধারণ চাকুরিজীবী মানুষ তার প্রতিমাসের বেতনের উপর নির্ভরশীল। একজন ছা-পোষা মানুষ আগে-ভাগেই পরের মাস কি করে চলবে, তা হিসেব করে রাখে। তাই কোন কারণে যদি সে পরের মাসের বেতন না পায়, তাহলে তার নিশ্চই খুব দুর্দশা হবে। এভাবে যদি সে পরপর তিনমাসের বেতন না পায়? সে কি স্থির থাকতে পারবে?
গার্মেন্টস্ শ্রমিকদের জীবন-যাপন সাধারণ চাকুরিজীবীদের থেকে অনেক নিম্নমানের। তারা যদি পরপর তিনমাস বেতন না পায়, তারা স্থির থাকে কি করে। ঈদের আগে যে টাকাগুলো পেয়ে তারা খুশি হত, তাদের পরিজনরা আনন্দিত হত- সে খুশি-আনন্দ তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার অধিকার আছে কার? আছে কি সে অধিকার ‘তোবা গার্মেন্টস্’ এর মালিকপক্ষের? নাকি আছে বিজিএমই এর।
৩
আজ অনশনের চারদিন হয়ে গেল। শুনেছি, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর শুনলাম, বিজিএমই এ আশ্বাস দিয়েছে আগামী সাত(৭) দিনের মধ্যে তারা শ্রমিকদের সব বকেয়া শোধ করে দেবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বোধোদয় কেন শ্রমিকদের অনশনের পরে হচ্ছে? কেন এতগুলো শ্রমিক অসুস্থ হবার পর এ সিদ্ধান্ত নিতে হল? কি ভেবেছিল মালিকপক্ষ? তারা কি শ্রমিকদের টাকাগুলো আত্মসাৎ করবে? নাকি ভেবেছিল দেরী করে দেবে, দেরী করে দিলে কতদিন বাদে দেবে? ঈদের সময় কেন বোনাস সহ শ্রমিকদের বেতন আটকে রাখা হল? বকেয়া টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার তো এর আগেও মালিকপক্ষ দিয়েছিল, কেন তা রাখা হল না? এই প্রশ্নগুলো কিন্তু উঠে আসছে স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু এগুলোর উত্তর চাইব আজ কার কাছে?
৪
আমাদের শ্রমিকরা কাজ করে পেটের তাগিদে। কিন্তু তারা হয়ত জানেও না যে তারা কি বিশাল বিশাল কাজ করে ফেলে। তাদের বানানো পোষাক পড়ে বিশ্বকাপে ফুটবলাররা ফুটবল খেলে। তারা হয়ত তার খবরও রাখে না। তাদের শ্রমে কত বড় বড় বিল্ডিং তৈরী হল, তা তারা জানে না। তারা জানে না তাদের জন্য দেশ কি পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করে। প্রতিবছর দেশের অর্থখাতে তাদের অবদান কত শতাংশ তাও তারা জানে না। যেখানে তিনবেলা খাবার চিন্তাই মুখ্য, সেখানে অন্যসব চিন্তার স্থান থাকতে পারে না।
আমাদের শ্রমবাজার অচিন্তনীয় রকমের সস্তা। এত সস্তায় মানুষ খাটানো যায়, উন্নত দেশের লোকজন তা ভাবতেও পারেনা। আর আমাদের গার্মেন্টস্ শ্রমিকরাও সর্বংসহা। আগুনে পুড়লেও তাদের কিছু না, বিল্ডিং ধসে পড়লেও তাদের কিছু না। শুধু মাস শেষে টাকাটা পেলেই হল। কি দুর্ভাগা তারা, সেটুকু পেতেও আজ তাদেরকে আমরণ অনশন করতে হয়।
হুমায়ুন আজাদ স্যারের ‘গরীবের সৌন্দর্য’ নামে একটি কবিতা আছে। কবিতার শেষ ক’টি লাইন এমন,
“গরিবদের চুলে উকুন আর জট ছাড়া কোনো সৌন্দর্য নেই।
গরিবদের বগলের তলে থকথকে ময়লা আর বিচ্ছিরি লোম সব জড়াজড়ি করে।
গরিবদের চোখের চাউনিতে কোনো সৌন্দর্য নেই,
চোখ ঢ্যাবঢ্যাব ক'রে তারা চারদিকে তাকায়।
মেয়েদের স্তন খুব বিখ্যাত, কিন্তু গরিব মেয়েদের স্তন শুকিয়ে শুকিয়ে
বুকের দু-পাশে দুটি ফোড়ার মতো দেখায়।
অর্থাৎ জীবনযাপনের কোনো মুহূর্তেই গরিবদের সুন্দর দেখায় না।
শুধু যখন তারা রুখে ওঠে কেবল তখনি তাদের সুন্দর দেখায়।”
আমাদের গার্মেন্টস্ শ্রমিকরা গরীব। তাই তাঁদের কোন সৌন্দর্য নেই । শুধু তারা যখন আন্দোলন করে কেবল তখনই তাঁদের সুন্দর দেখায়।
এখন তো তারা আন্দোলনই করছে। তাদের অনশনরত শুকনো মুখগুলো কি অপূর্ব সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে চারপাশে। সে সৌন্দর্যচ্ছটায় কেঁপে উঠেছে অত্যাচারী মালিকের ভিত।
সত্যিকারের সৌন্দর্য তো একেই বলে। তাই না?
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৩০
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: দারুণ বলেছেন। ওদের বোধোদয় যে কি করলে হবে ? গরীবের টাকা মেরে যে কি সুখ ওদের, কে জানে ।
২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৫০
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে!
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৩৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: এগুলো মনেহয় সরকারি হস্তক্ষেপেই হয় ।
৩| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:০৯
মিজভী বাপ্পা বলেছেন: আমাদের দেশের শ্রমিকরা শুধু খেঁটেই মরে। তাদের দেখার কেউ নেই ।শোষণ,বঞ্চণার শিকার অবহেলিত নিরীহ অসহায় ওরা।
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৩৯
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ঠিক বলেছেন ।
৪| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ২:২৩
রাজিব বলেছেন: আমাদের মেহনতি মানুষের নির্মম বাস্তবতা। পোষ্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪০
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ গ্রহণ করলাম।
৫| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:০৭
দুঃখ বিলাস বলেছেন: দ্রুত সমাধান চাই।
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪১
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: একমত, দ্রুত সমাধান চাই ।
৬| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২১
মামুন ইসলাম বলেছেন: দ্রুত শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করতে হবে ।
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪২
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: একমত, দ্রুত শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করতে হবে ।
৭| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৯
মহানাজমুল বলেছেন: দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা
শুধিতে হইবে ঋণ...
গ্রামের ওই গরিব কৃষক, ঢাকার ওই গরিব গার্মেন্টস কন্যা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের ওই প্রবাসী যুবক এরাই যে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে তা তথাকথিত ভদ্রসমাজ বুঝতে চায় না, স্বীকার করতে চায় না। অথচ তাদের উদরপুর্তি আর উদ্দাম ফুর্তির টাকা দেয় কে? কার পরিশ্রমে বিএনপি-জামায়াতি তান্ডবের পরেও প্রবৃদ্ধি উর্দ্ধমুখী?
আমাদের জাতে ওঠা মেকি ভদ্ররা আসলে না বুঝে রাজনীতি না বুঝে অর্থনীতি। তারা একটা জিনিসই বুঝে - ভোগবাদ। যার সার কথা হলো মানুষকে ঠকাও। যে ঠকবিদ্যায় যত পারদর্শী সে আজ তত যাতে উঠেছে! তারা রিকশাওয়ালাকে ঠকাতে চায়, ঠকাতে চায় গৃহকর্মীদের। আর যদি নিজের কারখানা থাকে তবে শ্রমিকদের। শেষোক্তরা ভদ্রদের চেয়েও ভদ্র, তারা এই সমাজের অচ্ছুত, আইন কানুন তাদের ছুঁলে প্রয়োগকারীর জাত যাবে।
তারা ধর্মকেও কেয়ার করে থোরা। যেখানে বলা আছে ঘাম শুকোবার আগেই মজুরি দাও। মোটকথা, তারা সবকিছুর উপরে। তারা যে ভদ্রলোক!
৮| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:০৯
মহানাজমুল বলেছেন: দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা
শুধিতে হইবে ঋণ...
গ্রামের ওই গরিব কৃষক, ঢাকার ওই গরিব গার্মেন্টস কন্যা কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের ওই প্রবাসী যুবক এরাই যে আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে তা তথাকথিত ভদ্রসমাজ বুঝতে চায় না, স্বীকার করতে চায় না। অথচ তাদের উদরপুর্তি আর উদ্দাম ফুর্তির টাকা দেয় কে? কার পরিশ্রমে বিএনপি-জামায়াতি তান্ডবের পরেও প্রবৃদ্ধি উর্দ্ধমুখী?
আমাদের জাতে ওঠা মেকি ভদ্ররা আসলে না বুঝে রাজনীতি না বুঝে অর্থনীতি। তারা একটা জিনিসই বুঝে - ভোগবাদ। যার সার কথা হলো মানুষকে ঠকাও। যে ঠকবিদ্যায় যত পারদর্শী সে আজ তত যাতে উঠেছে! তারা রিকশাওয়ালাকে ঠকাতে চায়, ঠকাতে চায় গৃহকর্মীদের। আর যদি নিজের কারখানা থাকে তবে শ্রমিকদের। শেষোক্তরা ভদ্রদের চেয়েও ভদ্র, তারা এই সমাজের অচ্ছুত, আইন কানুন তাদের ছুঁলে প্রয়োগকারীর জাত যাবে।
তারা ধর্মকেও কেয়ার করে থোরা। যেখানে বলা আছে ঘাম শুকোবার আগেই মজুরি দাও। মোটকথা, তারা সবকিছুর উপরে। তারা যে ভদ্রলোক!
৯| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:১৭
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বড় কষ্টের কথা। শ্রমিকরা মানুষ নয়। চোখের সামনে মাৎসান্যায় ঘটে চলেছে, দেখার কেউ নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:২৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
আজকে দেখলাম বি জি এম ইর গোলটেবিলে বৈঠক। কিন্তু এই বৈঠকে কোন সিদ্ধ্যান্ত না নেয়া হলেও যে পরিমান খরচ এই বৈঠক করতে গিয়ে হয়েছে তা দিয়েইতো কিছু মানুষের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা যেতো।