![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(এবারের গল্পগুলো আমার ছোটবেলার ঘটনাগুলোকে নিয়ে।
শৈশবের কথাগুলো প্রতিটি মানুষই অনেক আগ্রহ নিয়ে বলে। তাই শ্রোতা যদি মনোযোগ দিয়ে না শোনে,তবে বক্তা বেশ বিরক্ত হয়, কষ্ট পায়। আমি মুখে বলছি না, লিখছি। তাই পাঠক কম হলেও আমার কষ্ট পাবার কথা নয়। কারণ, যে লিখতে পারে তার কষ্ট পেতে নেই।)
১৩
বিছানায় ক্রিকেট!
খুব ছোটবয়সে, যখন আমার কিছুই বোঝার কথা নয়, তখন থেকেই বাবা আমাকে নিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখতে বসতেন। আমাকে শচীন টেন্ডুলকার চেনাতেন, স্টিভ ওয়াহ্ চেনাতেন। আমি কিছুই চিনতাম না।তবে সেই সময় থেকেই ক্রিকেটের উপর যে একটা আকর্ষণ তৈরী হয়ে গেল, সে আকর্ষণ দিন দিন বাড়তে লাগল। বাড়তে বাড়তে সে আকর্ষণ ভালোলাগায় বা ভালোবাসায় পরিণত হল। তারপর শুরু হল পাগলামো।
মাঠে-ঘাটে,অলিতে-গলিতে;এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ক্রিকেট খেলতাম না। কিন্তু এভাবে খেলাধুলা করাটা বেশ কষ্টকরও ছিল। খুব স্বাস্থ্যবান ছিলাম, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। তাই একটি কার্যকর উপায় বের করতে হবে, যাতে করে ক্রিকেট খেলার আমেজও পাওয়া যায়, আবার ক্লান্তও হয়ে না পড়ি।
মাথায় এলো বিছানায় ক্রিকেট খেলার কথা। খুব আরামের একটা জায়গা, খেলা যায়, ক্লান্ত হলে শুয়েও পড়া যায়। বিছানায় ক্রিকেট খেলার জন্য কিছু উপকরণ ছিল আমার। যেমন, সেসময় লাল রঙ্গের হক ব্যাটারি পাওয়া যেত। চারটা হক ব্যাটারি জোগাড় করলাম। একপাশে দু’টো অন্যপাশে বাকিদু’টো একই সমান্তরালে বসাতাম। এগুলো স্ট্যাম্প। ব্যাট হিসেবে ব্যবহার করতাম মেরিল কোম্পানির একটি তেলের বোতল। তেলটি এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। তবে ব্যাট হিসেবে বোতলটা খুবই কার্যকর। এবার লাগবে বল। বল হিসেবে প্রথমদিকে মারবেল নিতাম। সে দিয়েই বেশ খেলা চলত।তারপর লাগবে ফিল্ডার। দাবা খেলার গুটিগুলোকে সাজিয়ে দিতাম বিছানার বিভিন্ন পাশে। আর সর্দি-কাশির সিরাপ পানের জন্য প্লাস্টিকের তৈরী যে গোলাকৃতির উপকরণ থাকত, সেটিকে বানিয়ে দিতাম উইকেটকিপারের প্যাড।
সব প্রস্তুতি শেষ। এবার খেলার পালা। বাঁ হাতে ব্যাট, আর ডান হাতে মারবেলের বল। ডান হাতে বল ছুড়তাম। বাঁ হাতে ব্যাট দিয়ে মারতাম। বিছানা বেয়ে মারবেল গড়িয়ে পড়লে চার আর উড়ে গেলে ছয়। মারবেল হক ব্যাটারিতে গিয়ে লাগলে আউট।
সেমসয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ছিল শ্রীলঙ্কা। তাই শ্রীলঙ্কার প্রতি একটু দুর্বলতা ছিল। শ্রীলঙ্কার বিপরীতে কারও সাথে খেললে আমি যেভাবেই হোক, শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে দিতাম। অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা প্রায় ম্যাচে সেঞ্চুরি করতেন। যে ম্যাচগুলোতে তিনি পারতেন না, সে ম্যাচে দায়িত্ব নিতেন অরবিন্দু ডি সিলভা অথবা আতাপাত্তু অথবা জয়সুরিয়া!
সমস্যা হল, মারবেল খুব দ্রুত ছোটে। প্রায়ই হারিয়ে যায়। খুঁজতে গিয়ে বেগ পেতে হয়। তাই একটু ভারি বলের কথা ভাবতে লাগলাম। আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো ভারি বলেই খেলা হয়, টেনিস বলে হয় না। তাই, ভারি বলের সন্ধানে নামলাম। পেলাম, শোকেসের একটা তালা। বাহ্, দারুন তো।এ তো বল হিসেবে বেশ মানিয়ে যাবে।
শোকেসের তালা দিয়ে ভালই খেলা চলতে লাগল। কিন্তু সমস্যাও শুরু হল। শোকেসের তালা যেহেতু অনেক ভারী, তাই সেটার আঘাতে দাবার হালকা গুটি গুলো ভেঙ্গে যেতে লাগল। এখন কি করার। তাই অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে। ফিল্ডার হিসেবে বেছে নিলাম বিভিন্ন ঔষুধের কৌটা, মুখে দেবার ক্রিম এর কৌটা ইত্যাদি ইত্যাদি। এদেরে মধ্যে যে কৌটাটি একটু মোটা, ওটাকে ভেবে নিতাম আকরাম খান। একটু চিকন হলে আতাহার আলী খান বা খালেদ মাসুদ পাইলট। এবার আর বলের আঘাতে ফিল্ডার আহত হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমি নিজেই বারবার আহত হতে লাগলাম। শোকেসের ভারি তালা প্রায় প্রায়ই আমার হাতে এসে সজোরে আঘাত করত। চোখ-মুখ বন্ধ করে আঘাত সহ্য করতাম।যন্ত্রণা কমে গেলে আবার খেলা শুরু করতাম।
ক্লাস সেভেনে উঠেও আমার এ খেলা চলত। বাড়ির দেয়াল আর বিছানার কাঠে আমার বলের আঘাতের দাগগুলো বিশ্রিরকম নকশা তৈরী করত। আলমারির কাঁচ ভেঙ্গে যেত। খেলার সময় আশপাশদিয়ে চলাচলকারীরা আ্হত হত। খেলতে খেলতে আমার এমন অভ্যাস তৈরী হল, আমি অবচেতনেই হাত দুটো এমনভাবে নাড়াই,যেন একহাতে বল ছুড়ছি, অন্য হাতে ব্যাট করছি। একসময় হাতে ব্যথা শুরু হয়ে গেল। এতগুলো নেতিবাচক দিক আর উপেক্ষা করা সম্ভব হল না। রাগ করে বাড়িতে কাজ-কর্ম করা এক মহিলা আমার অনুপস্থিতিতে একদিন আমার খেলার ব্যাগটা বাহিরে ফেলে দিলেন। বিছানায় ক্রিকেটের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি আমার সেখানেই।
কিন্তু হাত দিয়ে বল আর ব্যাট করার অভ্যাসটা থেকেই গেল। এখনও আমি মাঝে-মধ্যে ডান হাত দিয়ে বলছুড়ি, বাঁ হাত দিয়ে ব্যাট করি। বন্ধুরা দেখে অবাক হয়ে যায়, জানতে চায়- এটা আমি কি করছি?আমি হাসি, এমন অদ্ভুত কাহিনী বিস্তারিতভাবে বলা কি আর সম্ভব? ভাবছি, এ লেখাটি পড়ার পর থেকে হয়ত আর কেউ আমার এমনভাবে হাত নাড়ানোর কারণ জানতে চাইবে না।
‘এভাবে হাত নাচাচ্ছিস্ কেন?’ কেউ যখন এমন প্রশ্ন করে, সত্যিই তখন বেশ লজ্জায় পড়ে যাই। কিন্তু তাই বলে এই বদঅভ্যাসটা ছাড়া হয়ত সম্ভব হবে না। অবুঝ বয়সে উদ্ভট রকমভাবে ক্রিকেট খেলেযে আনন্দ পেয়েছি, তা কি কখনও ভোলা যায়?
১৪
পেটুক আর জেদী
ছোটতে আমার একটা অদ্ভুত ধারণা ছিল। সেটি হল, রাতে ভাত খাবার পরপরই ঘুমিয়ে পড়তে হবে। দেরি করলে আর সারারাত ঘুম আসবে না। তাই রাতে ভাত খাওয়া মাত্রই শুয়ে পড়তাম। কোন কারণে যদি মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যেত, তাহলে পুণরায় ভাত না গিলে কোনভাবেই ঘুমোতে যেতাম না। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমার একথাল ভাত গিলতেই হবে।
ডিম ছিল আমার অনন্য প্রিয় এক খবার। কোন বেলা ডিম ছাড়া ভাত খেতাম না। সেসময় একটি ডিমের দাম আড়াই থেকে তিনটাকা ছিল। খুব বেশি নয়।
একবার রাগ করে বাড়ির লোকজন আমাকে দুপুরের খাবারে ডিম দিল না। আমি বেশ রাগ করলাম। তবে খেয়ে নিলাম। দুপুরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে একা একা চুপি চুপি ফ্রিজের কাছে এসে, ফ্রিজ খুলে, একটা আস্ত ডিম হাতে নিয়ে, ডিমটা ফাটিয়ে, তেল-লবন সবকিছু ছাড়াই, পুরো ডিমটা মুখের ভেতর দিয়ে….।
একদম ছোটতে, আমি নাকি অসম্ভব রকম স্বাস্থ্যবান ছিলাম। ঘাড় একপাশে ঘোরালে অন্যপাশে ঘোরাতে পারতাম না। বসলে পেটে চারটা ভাঁজ পড়ত। যখন কেবল হামাগুড়ি দেয়া শিখেছি, তখন নাকি বেশ নোংরা কিছু কাজ করতাম। যেমন, গোটাবাড়ি হামাগুড়ি দিয়ে দরজার কাছে এসে স্যান্ডেল হাতে নিয়ে তার তলাটা মুখে দিতাম! আমার এসব বিশ্বাস হয়না, কিন্তু গুরুজনেরা বলেন। মেনে না নিয়ে যাই কোথায়?
ছোটবেলায় খেলনার গাড়ি-ঘোড়ার প্রতি দুর্দমনীয় আকর্ষণ ছিল। আমি রাস্তা দিয়ে গেলে দোকানদাররা নতুন নতুন খেলনার গাড়ি বের করে নাচাতো। সাথে সাথে শুরু হয়ে যেত আমার গলাফাটানো কান্না আর জেদ। এলাকাবাসী চিনে গেল, এই পিচ্চিটা খুব একগুঁয়ে আর বেয়াদপ। একদম কথা শোনে না। তবে পুলিশ খুব ভয় পেতাম। পুলিশ আসছে শুনলে চুপ হয়ে যেতাম।
সেই দোকানদার আঙ্কেলগুলোর সাথে এখনও মাঝে-মধ্যে দেখা হয়। তারা আমাকে আমার অলৌকিক জেদ আর কান্নার কাহিনী মনে করিয়ে দেন। বেশ লজ্জা লাগে। মাথা নামিয়ে হাসি। হঠাৎ মুখ তুলে দেখি,দোকানদার আঙ্কেলও হাসছেন, জীবনের অনেক ঝুট-ঝামেলার কথাগুলো ভুলে গিয়ে প্রাণ খুলে হাসছেন।তাঁদের হাসিভরা মুখগুলো দেখে শান্তি পাই। অতীত মানুষকে যে শুধু কাঁদায় তা নয়, বরং এভাবে হাসাতেও পারে।
১৫
মা
খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার শৈশবের পুরোটা জুড়েই ছিলেন মা। তাই তাঁকে নিয়ে দু-চারটি কথা লিখছি।
অতিরিক্ত জেদ করার কারনে মা একবার আমার হাত-পা বেঁধে রেখেছিলেন। দুপুরে বাড়িতে মাসি এলেন। আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। কান্না শুনে মাসি ছুটে আসলেন। আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলেন।আমি মুক্ত হলাম।
মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন আজ ১১ বছর পেরিয়ে গেল। তাই মায়ের স্মৃতিগুলো কেমন যেন ধূসর হয়ে আসছে দিন দিন। অনেক কিছু মনে করতে পারছি না। তাই মা কে নিয়ে খুব বেশি কিছু লিখতেও পারছিনা। এমনকি মাঝে মাঝে মা’র চেহারাটাও ভুলে যাই। কেমন যেন আবছা আবছা লাগে!
যেমন,মা কিভাবে আমার সাথে রাগ করতেন, সেগুলো মনে আছে। কিন্তু কিভাবে আদর করতেন সেগুলো প্রায় ভুলে গেছি। মনে করতে পারি না। মনে করতে যে খুব বেশি ইচ্ছে করে তা নয়, বরং যত ভুলে থাকা যায় ততই ভালো।
ভুলে যাবার এই বোধহয় কারণ। চারপাশের ব্যস্ততা, ভালো-মন্দ আমাকে এখন অনেক ব্যস্ত রাখে। স্মৃতি হাতড়ানোর সময় একদমই নেই। আমার জীবন-যাপনও আগের মত নির্ভাবনা আর আনন্দে ভরা নয়।
তবুও,মাঝে-মধ্যেই স্বপ্নে দেখা পাই। অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটি অস্পষ্ট ফর্সা মুখ, সিঁথিতে সিঁদুর, সম্ভবত মুখ ভর্তি হাসি; আমার দিকে এগিয়ে আসে। ভালো করে বোঝার আগেই আবার মিলিয়ে যায়। বুঝতে পারি, তিনিই আমার মা ছিলেন। অনেক সুন্দর তিনি। একদম যেন দেবীর মত।।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: জানিনা, লিখে কতটুকু বোঝাতে পেরেছি। তবে ব্যাপারটা আসলেই মজার ছিল। মন অনেক খারাপ থাকলেও এসব মনে করে হাসি পায়। একদম নির্ভেজাল হাসি হাসতে পারি।
২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫০
সাহিত্যিক মীম বলেছেন: পুরোটা পড়তে পারি নি। যতটুকু পড়লাম মাঝ থেকে ভেঙে ভেঙে, ভালো লেগেছে। শৈশবের স্মৃতি মনে করা নিশ্চয়ই ততটাই বেদনার যতটা মজার, কারণ শৈশবের সোনালি সময়টুকু চাইলেও ফিরে পাওয়া সম্ভব নয় আর।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৩
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: খুবই সত্যি।
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অনেক মজা পেলাম স্মৃতিময় শৈশবের গল্প শুনে। শেষটা একটু দুঃখবোধ ও জাগালো মনে।
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৭
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ।
৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১০
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ১ম ভালোলাগা ++++++++
আপনার স্মৃতিচারণা খুব ভালো লেগেছে ভ্রাতা
ভালো থাকবেন
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৮
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। আপনিও ভাল থাকবেন।
৫| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪৮
তুষার কাব্য বলেছেন: শৈশব স্মৃতিচারণ দারুন লাগলো...
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২৩
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮
কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারন । ++++
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৬
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩
সকাল হাসান বলেছেন: আপনার শৈশবের ক্রিকেট খেলার ইতিহাসটা সত্যিই মজাদার!
নিজেই বোলার নিজেই ব্যাটসম্যান! হাহাহা! শৈশব আসলেই চমৎকার!