![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছরটা প্রায় শেষ হলে এল। অনেককেই দেখেছি একটি বছরকে পর্যালোচনা করতে গিয়ে যে ভাবেই হোক না কেন, সেই বছরটিকে বিশেষ বলে দাবী করে। আমি এই বছরটির বিশ্লেষণ করতে যাব না, এত ক্ষমতা আমার নেই। তবে গেল বছরটিকে যদি বিশেষ বলে দাবী করতে চাই, তার জন্য আমাকে বেশক’টা কারণ দেখাতে হবে। প্রথম কথা, আমি তার চেষ্টা করব না। কারণ, এবছরটা মোটেও বিশেষ কিছু ছিল না। তবে এবছরের শুরুটা হয়েছিল ভয়ঙ্কর রকম একটা অনিশ্চয়তা নিয়ে।
৫ জানুয়ারি ছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে বি.এন.পি নেই, বরং নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা, হরতাল, অবরোধ, প্রায়দিনই মানুষ মারা যাচ্ছিল, বাসে আগুন দেয়া হচ্ছিল, আগুনে পুড়ে মরছিল সাধারণ মানুষগুলো- আকাশে-বাতাসে এমন একটি পোড়া পোড়া গন্ধ আর একরাশ অনিশ্চয়তা নিয়েই শুরু হয়েছিল এবছরটি।
এসময়টিতে বিশেষ প্রয়োজনে আমি ছিলাম ভারতে। সেখানকার পত্রিকাগুলো পড়তাম, বাংলাদেশ নিয়ে ভালই নেতিবাচক খবর ছাপাতো ওরা। আমি সেগুলো পড়তাম, পড়ে পড়ে হতাশ হতাম। ইন্টারনেটে দেশের খবর রাখতাম। অবশেষে ৫ জানুয়ারি আসল। বি.এন.পি’র বিরোধিতার মুখে নির্বাচন হল। আওয়ামীলীগ আবার সরকার গঠন করল।
কিন্তু সেই ৫ জানুয়ারিতেই ভোট দেবার অপরাধে যশোরের অভয়নগর ও দিনাজপুর এলাকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করা হল। সেই হামলায় অসহায় মানুষগুলোর ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে গেল, সহায়-সম্বল হারিয়ে গেল। তারা নদীতে ঝাপ দিয়ে প্রাণ রক্ষা করল। খুব কাছের মানুষদেরকে বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখে তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। দেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা দিন দিন কমছে বলে উদ্বিগ্ন হন বিশেষজ্ঞরা। ভারতে আমি অনেকের সাথেই কথা বলি, জানিতে পারি, তাদের আদিনিবাস বাংলাদেশে, নানা অনিশ্চয়তায় পরদেশী হয়েছেন। হামলা হবার কিছুদিন পর সবাই সবকিছু ভুলে যায়। যেমন, গতবছরের সেম্টেম্বরে রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলা হয়। তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য অল্পকিছু সময়ের মধ্যেই ধুলিস্মাৎ হয়ে যায়। সরকার এ নিয়ে খুব কর্মতৎপরতা দেখায়। সর্ষে ক্ষেতেই ভূত থাকায় সেগুলো একসময় থেমে যায়। সময়ের সাথে সাথে সবাই ব্যাপারটা ভুলে যায়। অপরাধীরা দিনের আলোয় ঘোরাফেরা করতে থাকে। আর বিশেষজ্ঞরা মাথায় চুল ছেড়েন এটা আবিষ্কার করার জন্য যে, কেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা এখন শুধু ৯ শতাংশ?
২
লেখাপড়া করা আর কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া এবছর যেন আরও অনেকগুণে কঠিন হয়েছে। যেহেতু সাধারণভাবে পড়ালেখা করে, ভর্তির সুযোগ পাওয়া অনেক বেশি কঠিন, তাই শুরু হয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া। কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অত্যন্ত লাভজনক এই ব্যবসায় নিজেকে উজার করে দিয়েছে। প্রভাবশালীদের প্রভাবের ভয়ে আমরা সবাই ভীত হই, এমনকি ভীত হয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। সেই প্রশ্ন পেয়ে ছেলে-মেয়েরা উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফলের ফুলঝুড়ি ছোটায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসে আবারও প্রশ্ন কিনতেই হয় তাদেরকে। আতঙ্কের কথা, এবছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা মোটেও কম না। ভয়টা আর বেড়ে যায় যখন দেখা যায়, পিএসসি,জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হতে থাকে। সংশ্লিষ্ট মহল দায় অস্বীকার করে। অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কাদের দ্বারা বাংলাদেশের উন্নতি হবে, এই পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীগুলোকে দিয়ে?
আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রায় ও রায় কার্যকর করা নিয়ে এবছরও প্রচুর ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড হয়েছে। সেগুলো খুব মন খারাপ করা গল্প। বলতে ইচ্ছে করছে না।
৩
ছাত্র রাজনীতি,আমাদের গর্ব। আজ আমাদের বড় বড় নেতারা তো ছাত্র বয়স থেকেই তৈরী হয়েছিলেন। এখন দেশ চালান। তাঁদেরকে নিয়ে আমরা গর্বিত। কিন্তু এই ছাত্রদের রাজনীতি করার ব্যাপারটা কিছু বোদ্ধা ব্যক্তি ভালো চোখে দেখেননি, তারা বলেছিলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিন অথবা এর লাগাম টেনে ধরুন। এসবের জন্য তাঁদেরকে শুনতে হয় ভর্ৎসনা। শুনতে হয় ছাত্ররাজনীতির মাহাত্ম্য। আর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাড়ে পাতি নেতা আর ক্যাডারদের দৌরাত্ম্য। প্রতিটি হলে হলে বাড়ে দেশীয় অস্ত্রের পরিমান। এত কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে কেউ খাতা-কলম আর বই নিয়ে ছোটে। আর কেউ হাতে করে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ছোটে। অনেকে পঙ্গু হয় চিরতরে। কেউ কেউ জীবন হারায়। তাদের জন্য আবার আন্দোলন হয়। এদেশটা এখন আন্দোলনের তীর্থভূমি| যে যার ইচ্ছেমত যেখানে-সেখানে বসে-দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছে। রাস্তা-ঘাটে হাঁটলে তাই ‘আন্দোলন’ ও ‘প্রতিবাদ’- এই শব্দ দুটি সবথেকে বেশি চোখে পড়ে। সব আন্দোলন অসৎ, এটা অবশ্য সত্য নয়।
আবার কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কোন কাজ নেই, একটি মাত্র কুকাজ ছাড়া। সেটি হল, নেশা করা। শুধু মাত্র নেশার কবলে পড়ে জীবন নষ্ট করেছে ও করছে, এমন ছাত্রের অভাব নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবথেকে কলঙ্কিত ছাত্র নিঃসন্দেহে তারাই। ২০১৪ সালে যদি এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে থাকে, তবে তা মোটেও অবাক হবার মত নয়।
এবছর আরও একটি ভয়ংকর তথ্য হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাওয়া। এ ব্যাপারটি নিরবে ঘটে, শুধু যার যায় সেই বোঝে। মাঝে মাঝে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরের মত ব্যক্তিরা নিহত হলে সবাই সচেতন হয়ে ওঠে। তারপর আবার ভুলে যায়।
৪
দেশের বাহিরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে সবথেকে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বছরের মাঝামাঝি সময়ে, ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি হামলা। শত শত বেসামরিক মানুষের তাজা রক্ত দেখে গোটা পৃথিবী কেঁপে উঠেছিল। যদিও যুদ্ধে বিরতি হয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের পূর্ণ সমাপ্তি কেউ টানতে পারেনি। অন্যান্য ঘটনাগুলোর মধ্যে স্কটল্যান্ডের যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হবার দাবী, সে নিয়ে ভোটাভুটি, ঘটনাটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত স্বাধীন হওয়াটা আর হয়ে ওঠেনি স্কটল্যান্ডের। স্বাধীনতা কি এতই সোজা? সেদেশের জনগণই চায়নি যে তারা স্বাধীন হোক!
এবছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান উপমহাদেশের দুই জন মানুষ। একজন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই, অন্যজন ভারতের কৈশাল সত্যার্থী। তাঁদের নোবেল পাওয়া নিয়ে চারপাশে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়। বিশেষ করে মালালার নোবেল জয়কে এখনও অনেকে মেনে নিতে পারেন নি।
এবছর বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয় ব্রাজিলে। চাম্পিয়ন হয় জার্মানি। ফাইনালে হৃদয় ভাঙ্গে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের। এবছর ইবোলা ভাইরাসের আক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। সতর্ক হয় ভারত। তার মানে, সতর্ক হওয়া উচিত বাংলাদেশেরও। এ ভাইরাসটি বায়ুবাহিত। বাতাস ও আক্রান্ত ব্যক্তি- দুই প্রকারেই এটি ছড়াতে পারে। এর চিকিৎসা নেই। তাই, আক্রান্ত হলে মৃত্যু মোটামুটি অবধারিত।
সবশেষে, এবং সবথেকে গর্হিত একটি অপরাধকর্ম সংগঠিত হয় পাকিস্তানে। তালেবানরা সেখানে একটি স্কুলে হামলা করে ৭ থেকে ১৫ বছরের ১৩২ জন শিশু সহ ১৪৫ জনকে হত্যা করে। ছিঃ ছিঃ করে ওঠে গোটা বিশ্ব। এই জঙ্গীগোষ্ঠী কতটা নৈতিকতাবর্জিত ও কাপুরুষ, তা জেনে যায় সবাই।
৫
তবে এটা ভাবা ঠিক নয় যে এবছর ভালো কিছুই হয় নি। এবছর দেশের ব্যবসা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য সূচকে বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। মানুষের বার্ষিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বাল্যবিবাহ কমেছে। পরিসংখ্যানগত ভাবে, শিক্ষাক্ষেত্রেও উন্নতি ঘটেছে বাংলাদেশের। নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। আলোচিত পদ্মাসেতুর কাজ এগিয়ে গেছে কিছুটা।
এছাড়াও আরও অনেক ভালো-মন্দ ঘটনা আছে। সবতো আর বলে শেষ করা যায় না। যেমন, এবছর বিমানবন্দরে অল্পকিছুদিন পর পর কোটি টাকার সোনার বার উদ্ধার করছে পুলিশ। কিন্তু এসমস্যার কূল-কিনারা হচ্ছে না। ধরা পড়ছে শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের অপরাধীরা। কিন্তু মূলে যাওয়া যাচ্ছে না। আবার ভালো খবর দেয়া যায়, যেমন, আগামী বছরের শুরতেই লাখ লাখ ছেলে-মেয়ের হাতে বিনা পয়সায় নতুন বই তুলে দেয়া হবে।
শুধু, বছরের একদম শেষের দিকে, নভেম্বরের ২৪ তারিখে, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনাটা না ঘটলেই যেন বছরটা ভালো ভালোয় চলে যেত। কিন্তু তা হল না। আসলে, এমনটা একসময় হবারই ছিল। সাড়ে তিনলাখ লিটার ফার্নেস তেল সুন্দরবনের নদীতে ছড়িয়ে যায়। পরিবেশের বিরূপ প্রভাব দেখা যায় প্রায় সাথে সাথেই। ডলফিন মরে যায়, মাছ মরে যায়,নদীর জলে মুখ ডোবানো পাখি মরে যায়। ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও কেউ নির্ণয় করতে পারে নি। এই ক্ষতিপূরণ কিভাবে করা যায়, সে উপায় বের করতেও সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থ।
আর গত ২৭ তারিখে শাহাজানপুরের একটি পরিত্যক্ত ম্যানহোলের পাইপে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় সাড়ে তিন বছর বয়েসী শিশু জিহাদের। অবহেলার অভিযোগ ওঠে উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত বাহিনীর উপর। জিহাদের বাবাকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের উপর। ২৩ ঘন্টার জন্য উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ।
৬
ভুল হতেই পারে। কিন্তু ভুলকে অস্বীকার করা আরও একটি ভুল এবং প্রথম ভুলের থেকে বড় ভুল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে বলুন যে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, আমরা তা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুন্দরবনের ক্ষতি হলে বলুন যে, সুন্দরবনের ক্ষতি হয়েছে, আমরা তা পূরণের চেষ্টা করছি। বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ, ভুলকে অস্বীকার করে দ্বিতীয় বারের মত ভুল করবেন না। ভুল শুধরাতে হলে সবার আগে ভুলকে স্বীকার করতে হয়, ভুলকে অস্বীকার করে কখনও তা শোধরানো যায় না।
নতুন বছর আসছে। জ্যোতিশশাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান না রেখেও বলে দেয়া যায় যে আগামী বছর বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রেই উন্নতি হবে। শুধু পুরোনো ভুলগুলো করা যাবে না। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা সবারই কাম্য। যদিও তার অবনতি ঘটতে পারে যেকোন সময়েই। গত ২৪ তারিখ বকশী বাজারের ঘটনা এবং গাজীপুরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, হরতাল এবং যানবাহনে আগুন দেয়া তেমনই ইঙ্গিত দেয়।
তবুও, আগামী বছরের জন্য শুভকামনা রইল প্রতিটি মানুষের জন্য। সবাই অল্প অল্প ভালো কাজ করলেও বছর শেষে ভালোকাজের পরিমাণটা বেড়ে যায় অনেকগুণে। অল্প কয়েকটি ভালো কাজ আমরা সবাই করতে পারব, আমি জানি।।
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০
পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: ধন্যবাদ। নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০২
নির্বাক রাজপূত্র বলেছেন: হুম সৃতিচারন । ভালো লাগলো